ভুলি নাই আজো বন্ধু অপরূপ সে জীবন-ছবি জীবন-নন্দিত-করা সে মাধুরী ভুলিবার নয়— মৃত্যুর মুহূর্ত্ত আগে জানিত না অবজ্ঞাত কবি তুমি ছিলে এত প্রিয় হৃদয়ের আনন্দ সঞ্চয় |
মৃত্যুর তীর্থের পারে যেথা বন্ধু মিলিয়াছ আজ সেথা কি পড়িবে মনে সর্বহারা নিরন্নের দল – যাদের অন্তর্লোকে নির্বিচারে ছিলে অধিরাজ শেষের শয়ানে যারা নিবেদিল বেদন-বাদল ?
পরিশ্রান্ত হে সৈনিক নিদ্রা যাও কবরের কোলে অনাগত ভবিষ্যতে রবে লেখা তব ইতিহাস--- তোমার সে সৌম্যরূপ গেল মিশে অনন্ত কল্লোলে ধন্য তুমি কর্ম্মবীর জীবনের প্রদীপ্ত আভাষ !
জীবন আনন্দহীন ; লেখনী সে চলেনাক আর তবুও লিখিতে হবে মূল্যহীন কথা ও কবিতা--- অভাগা স্বদেশ মোর, দারিদ্র্যের দহন-সম্ভার জ্বালিল নূতন রূপে লেলিহান জীবনের চিতা |
শেষের দিন কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায় প্রথমে প্রকাশিত হয় ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার আষাঢ় ১৩৫১ ( জুন ১৯৪৪ ) সংখ্যায় | কবিতাটি কবির মৃত্যুর পরে, পুনঃপ্রকাশিত হয় এই পত্রিকারই অগ্রহায়ণ ১৩৫২ ( নভেম্বর ১৯৪৫ ) সংখ্যায় কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের নামে |
চারিদিকে ধূ ধূ করে লেলিহান দারিদ্র্য কঠোর একা আমি বসে দেখি জনহীন গ্রাম মরুময়— কল্পনার মায়ামৃগ আজ ভাবি কোথা গেল মোর ? শৈশবের যাত্রাক্ষণে যার সাথে ছিল পরিচয় | জীবনের কোলাহল গ্রামে গ্রামে আনন্দ প্রচুর কে কোথায় গেল চলি ছাড়ি নিজ সাধের ভিটায়— আনন্দের বেণুবনে সুর কোথা তন্দ্রালু মধুর বিরহের স্বপ্নলোকে ভরে প্রাণ স্মৃতির জ্বালায় | জননীর শেষ দিনে আজো মাখা গ্রামের কুটীরে অশোক শেফালী কাঁদে যে ঘরের গুচ্ছ আঙিনায় তাহার স্মরণে প্রাণ দূরে আজ ভাসে আঁখিনীরে স্বদেশ জননী মোর প্রবাসীর আনন্দ কোথায় ? যেথায় যে ভাবে রহি হে জননী তোমা ভুলিব না প্রবাস বিরহী মন নিত্য রবে তোমার ধূলায়— অশ্রুর উত্সব মাঝে কুড়াইব স্মরণের কণা আমার শেষের দিন তব সাথে লইব বিদায় |