কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
কৃষ্ণকুমারী  
কবি কণক ভূষণ মুখোপাধ্যায়                            
[ চারণ (১৯৩০) কাব্যগ্রন্থ থেকে ]

“লোকললামভূতা হেলেনার অলোকসামান্য রূপলাবণ্য যেমন তাঁহার পতি ও তত্প্রতিদ্বন্দ্বীগণকে
অনন্তকালের জন্য সংহার করিয়াছিল, সর্ব্বাঙ্গসুন্দরী  কৃষ্ণকুমারীর সৌন্দর্য্যও সেইরূপ
তাঁহার পিতা ও প্রণয়ার্থিগণকে চিরদিনের জন্য নষ্ট করিয়া দিল |”------     রাজস্থান, ২৩৪ পৃঃ


কটী-দেশে ঝোলে শাণিত ছুরিকা দুরু-দুরু কাঁপে হিয়া,
যৌবনদাস চলে ধীরে ধীরে অন্তরে ব্যথা নিয়া |
রাণারে আজিকে উপদেশ সব দিয়াছে মন্ত্রীগণ---
কুমারীর প্রাণ-বলিদান দিলে অবসান হবে রণ |
মারবার সনে সিন্ধিয়া মিশি’ কুমারীর পানে চায়,
সবল শক্তি ভাবি মহারাণা যেন তাহে দিল সায় ;
অম্বররাজ জগৎ সিংহ সহিলনা অপমান ----
মেবারের পানে চলিল নবীন সমরের অভিযান |

রুখিয়া ফুলিয়া উঠিছে বক্ষ মেবারের হীনতায়,
বাগ্ দত্তায় অন্যে বিলাবে, মহারাণা  ভীরু হায়,
রণ-নির্ঘোষে বাজিল দামামা কাঁপিল রণস্থল,
সোনার মেবার ছারখার আজি কোথা আর তার বল ?
হাজার বিজুলী ঠিকরি’ পড়িছে, রাজার মুকুট ঝলে
মারবার-সেনা মার মার করি’ উল্লসি ছুটি’ চলে !

‘অম্বর’ তার নিশান উড়ায়ে করিছে উল্কাপাত,
জগৎ সিংহ শত্রুর বুকে হানিছে বজ্রাঘাত |
প্রাণ-বিনিময়ে চায় সবে আজি লড়িতে রণ-মরণ ;
মানের লাগিয়া শির বিলাইবে এই করিয়াচে পণ |
সর্দ্দারগণ ভাবি অনুখন করিয়াছে শেষ ঠিক---
কুমারীর প্রাণ বলি দিয়া আজি রাখিবে সকল দিক |
কুমারীর তরে আগুন জ্বলেছে তাহারে পাঠাবে সেথা---
শান্তির পুরে মরণের কোলে আগুন জ্বলেনা যেথা |
নিভে যাবে জ্বালা মুছে যাবে স্মৃতি ব্যথিতের কোলাহল ;
তার লাগি কেন স্বেচ্ছায় দেশ মিছে পিবে হলাহল ?
কাপুরুষ রাণা তাদের কথায় ‘মরণে’ করিল সহি---
হয়তো কাঁদিল পিতৃহৃদয় অনুখন রহি’ রহি’  |

‘যৌবনদাস’ রাণার আদেশে নিয়াছে খুনের ভার,
সমরের আর ভয় নাই তাই হাসে যত সর্দ্দার |
অপটু খুনিয়া কাঁপে থর থর প্রবেশি’ রাজপ্রাসাদ---
কোথায় কুমারী ?  বলিয়া হাঁকিল মনে গণি পরমাদ |
বীণা-নিন্দিত পরীর কন্ঠে, একটি মধুর স্বর---
‘কি কাকা আমায় ডাকিয়াছ’ বলি নমিল চরণ ‘পর |
মধুমাখা এই স্নেহময় নাম বহালো স্নেহের নীর
যৌবন হেরে অপলক চোখে রূপলীলা কুমারীর |
হেনকালে পড়ে কটী হোতে ছুরি শিহরি উঠিল বালা---
ও কি ও ?  বলিয়া কাঁপিয়া উঠিল বক্ষে বিঁধিল জ্বালা |
চুপ কর, কহে, খুড়া আমি তোর রাক্ষস শয়তান---
প্রাসাদ-ভিতর ছোরা হেনে তোর এসেছিনু নিতে প্রাণ !
কহিল কুমারী, কি করেছি বল, আমি মেবারের মেয়ে--
পলকে বিলা’ব জীবন আমার মেবারের মুখ চেয়ে !
কহে যৌবন, রূপের আগুনে জ্বেলেছে যো কালানল
হয়ত নিবিবে সে দাহের জ্বালা তাই হত্যার ছল !
এই ছার কথা--- কহিল কৃষ্ণা, আগে কেন বল নাই ?
দাও কাকা বুকে ছুরি বসায়ে হাসি মুখে চলে যাই |
আঃ, এ পারিনা কন্যা, আমার ব্যথা উ-হু বড় বেঁধে--
অন্তঃসলিলা খুড়ার প্রাণের ফল্গু উঠিল কেঁদে !
কহিল কুমারী, না পারিবে যদি ও ছেরা আমায় দাও !
হস্ত ধরিয়া কহে যৌবন ‘আমার জীবন নাও’ !
সাম্ নে আমার করোনা কৃষ্ণা মরণের অভিনয়--
চলিলাম পুনঃ কহে যৌবন, রাণা সে কি পিতা নয় ?
যৌবনদাস রাণারে বন্দি, কহি ওঠে ---- আফ্ শোষ
হায় মহারাণা অক্ষম তুমি কুমারীর হোল দোষ |

অন্দরে কথা হোল জানাজানি ক্রন্দনরতা রাণী---
আঁখির সলিলে মাতৃস্নেহের ভালিছে ব্যথার বাণী  !
মা কহিছে হায়., প্রাণ ফেটে যায়--- জীবনের সবই ভুল,
সোনার কমল কৃষ্ণা আমার রাজপুতনার ফুল  !
পিতা হয়ে হায়, রহে হত্যার মানে কি মায়ের প্রাণ  ?
অঞ্চল তার ধূলায় লুটায় ফুঁপি’ ওঠে অভিমান |
এমন সময়ে ধীরে আসি’ মার শিয়রে বসিল মেয়ে,
দেশের কথায় ভুলাইছে মার জল পড়ে চোখ বেয়ে,
সোনার মেয়েরে বেড়িয়া জননী আছাড়ি’ পড়িল ভূমে !
মিটলনা সাধ জননীর তৃষা বার বার মুখ চুমে |
কুমারী কহে --- মা, মেবার সেইত প্রতাপ পদ্মিনীর ---
যাহার ধূলায় লক্ষ বীরের মেশানো বক্ষ-ক্ষীর !
লুকানো কান্না পান্নার তরে, এরি অঞ্চলে পাতা---
অমর হইয়া তাহাদেরি মত কাঁদিও আমার মাতা |
পুত্ত জননী শত্রুর সনে যুঝিছে মরণ-খেলা
দুই ধারে নিয়া কন্যা ও বধূ ভাসায়ে চলেছে ভেলা !
এই মেবারের গোরা ও বাদল হাসিছে অমর-লোকে
পারিলে কাঁদিও জননী আমার অঝোরে তাদের শোকে !
এসেছিনু হেথা খেলিবারে আমি হয়ে গেল খেলা শেষ---
বিদায়-গোধূলি ছাইল এবার দাও মা মরণ-বেশ  !
সঁপিবে কন্যা মরণের কোলে এ ত মা নূতন নয়
অমরাক বুকে জন্মেছ তুমি কিসের মরণ-ভয় ?
দেশের জন্য বিদায়, জননী , দাও দেবতার দেশে,
বীর মাতা তুমি আমারে  সাজাও ভুবন ভোলানো বেশে |
সাধে কিমা কাঁদি কহিল জননী, নাহি যে মেবারে বীর ----
যাদের অসির ফলকে উঠিত ঝলকি’ ?   যশল্মীর !
যদি দেখতাম একটিও বীর পড়িয়াছে পরিয়াছে ভূমে লুটি-----
অমর-শয়ানে জননীর কোলে কেহবা উঠেছে ফুটি----
যদি দেখতাম রক্তলহরী বহিছে প্রাণের ঢেউ
দেখিতাম যদি প্রাণের প্রবাহে ভাসিয়া চলেছে কেউ----
তা হলে কি কভু আসিত মা বুকে এতখানি হাহাকার ?
মাতৃ-হিয়ার আকূল তিয়াসা জাগিত কি শাহারার ?

নিজহাতে তোরে সাজোয়া  পরায়ে পাঠাতাম আমি রণে ;
অসির আঘাতে খন্ড হইলে কাটিতাম হাসি মনে !
জহর-যজ্ঞে এলইয়া বেণী পরায়ে রক্তবাস,
চিতার অনলে সঁপিয়া দিতাম হাসিয়া অট্টহাস !
নেইকো মেবারে একটিও বীর সকলেই আজ হীন ----
স্বরগের ফুল, যা মা তুই ফিরে মরণে হইয়া লীন  !
শাশ্বত তোর অমর সত্য হয়েই রোক্ ----
তোর প্রাণদানে মেবারের বুকে শান্তির ধারা বোক্ !
বিদায়-বেলায় কহিল কৃষ্ণা, দাও মাগো পদধূলি  !
মরণের পথে সম্বল তব চরণের রেনুগুলি
রাজার দুলালী প্রবেশি’ কক্ষে হেরিল নির্ণিমিষ
ওই যে আনিছে  আজ্ঞাবাহক পাত্র ভরিয়া বিষ !
কন্ঠে ঢালিল মরণ-মদিরা পুরিলনা তার আশ
বারবার ঢালে তরল গরল করে খালি উপহাস !
কড়া বিষ এলো হেসে অবশেষে আকূল মরণ-ডাকে
মনপ্রাণ দিয়ে পিয়া হলাহল কৃষ্ণা ডাকিল মাকে----
ফেনিল গরলে নীল হোল প্রাণ অকালে ঝরিল ফুল ----
কাঁদে মাতা হায় প্রাণ ফেটে যায় জীবনের সবই ভুল |

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
গাঁয়ের মেয়ে
[ দীনু ও মীনুর কথা ]
কবি কণক ভূষণ মুখোপাধ্যায়                            
[ চারণ (১৯৩০) কাব্যগ্রন্থ থেকে ]

রাজবাঁধ গাঁ’র দীনু ঘোষালের মীনু ব’লে ছিল মেয়ে ---
বুড়া বাপ তার দুখ্ ভুলে যেত মেয়েটির মুখ চেয়ে!
মেয়েটির পানে নয়ন ভরিয়া চাহিত নিমেষহীন----
এম্নি কেবল চেয়ে আর চেয়ে বেয়ে যেত তার দিন!
কখনো খেলিত বালকের মতো মেনকারে নিয়া খেলা ---
কাঁধে করি’ তারে উঠিত হঠাৎ হ’লে দু’পহর বেলা |
নিজন গাঁয়ের পথে চলে যেত নীরবে আপন মনে -----
খানিক চ’লেই পুকুরের ধারে থামিত কতক্ষণে |
এইবার তার ঝরিয়া পড়িত দু’চোখে চোখের জল ;
অবাক্ হইয়া মীনু কহে যেত, “ হলো কিলে বাবা বল্ ?”
‘কিছু না মীনুমা --- তুমি যে আমার সোনার মেনকারাণী,
কহিয়া সে শুধু চুমায় রাঙাত মেয়ের বদন খানি |
মেনকা কহিত খিল্ খিল্ হেসে বাবা বল বদ্দাত্ !
পিতার বক্ষে সে হাসি করিত স্নেহের কিকণ-পাত |
দুহাতে জড়ায়ে মেয়েরে লইয়া এবার নামিত জলে,
সভয়ে কহিত মীনু তার বাপে‘ জলে থাকু আতে বলে ?
না’রে না পাগ্ লী, বলি’ তার বাপ্ মেয়েরে ক’রাত স্নান্---
ফিরে গিয়ে ঘরে, আখার ওপরে চাপাতো বগ্ নো-খান !
মীনু মনে মনে হাসিল আবার কাঁদিল গুমরি’ মরি!
পাড়ার মোড়ল গিন্নীরা কত বোঝাল’ আপন করি’ |
আবার হাসিল বুকের ব্যথায় আর একদিন মীনু ---
সেদিন পরাণ কাঁদিয়া কহিল কোথা গেলি ভাই দীনু ?
আজকে যে তোর বড় আদরের মেনকারাণীর বিয়ে,
তুই বিনে মোর ফাঁকা লাগে সব এই ভাঙা বুক নিয়ে!
সর্ব্বংসহা-পল্লী দুলালী মেনকা হেরিস বর,
বয়েস কেবল পঞ্চাশই নয় ? আর খুব বড় ঘর ?
নিজেরে তাই সে মানায়ে লইল চিরদয়িতের সাথে,
সোয়ামীর দেওয়া সীঁথির সিঁদুর শোভিল তাহার মাথে!
মীনু আনমনে সজল নয়নে নীরবে রহিল চেয়ে-----
ব্যথার পশরা বুকে নিল তুলে সে যে গো গাঁয়ের মেয়ে!

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
শেফালী
কণক ভূষণ মুখোপাধ্যায়                            
[ চারণ (১৯৩০) কাব্যগ্রন্থ থেকে ]

ছোট মেয়ে শেফারাণী,----
দেখিতে দেখিতে বাড়িল তাহার দেহের লাবণিখানি |
বাপ তার ছিল গরীব কেরাণী  সদাগরী অফিসের ;
কম মাহিনায় সারাদিন ধরে’ খাটতে হইত ঢের |
তবুও ছিলনা এড়ান তাহার ক্ষণে ক্ষণে থাকি’ থাকি’ |
চাহিত সভয়ে এই পড়ে বুঝি প্রভুর রক্ত আঁখি |
দিনেকার দিন পলে পলে হ’ত জীবনের বেচা-কেনা |
তবু মিটিতনা গয়লা এবং দোকানদারের দেনা |
মিলাইত হায় নীরবে হিয়ায় কত অস্ফুট আশা |
জীবন-অমায় উজলিত খালি প্রেয়সীর ভালবাসা |
সারাদিন ধ’রে হাড়ভাঙা খেটে যবে সে ফিরিত ঘরে,
পিতার পা দুটি ধুইয়া শেফালী মুছিত গামোছা করে |
আসিত তখন শেফার জননী খাবারের থালা নিয়া,
সেবার মহিমা ঝরিত তাহার সব দেহ উজলিয়া |
কহিত,---- ‘ নাওগো খেয়ে’---
অবাক্ হইয়া শেফালীরে নিয়া পিতা সে রহিত চেয়ে |
মার হাত হ’তে থালা নিয়া শেফা’ কহিত,---- বাবাগো খাও ;
মেয়েরে দুহাতে জড়ায়ে জনক কহিত ---দাও মা দাও |
মাধবী হেরিত অপলক চোখে স্নেহলীলা শেফালীর ----
মেয়ের পেলব বাহুর বাঁধনে পিতা সে রহিত থির |
তারপর হ’ত কন্যার সাথে কত কথা আলোচনা,
কাব্যের শেষে হইত মধুর সঙ্গীত আলাপনা |
দিনেকার দিন শেফার জীবনে সারা অন্তর জুড়ি’ |
মানুষ হওয়ার ফোটার কামনা কেবলি বেড়াত ঘুরি’ |
তার মৃলে ছিল পিতার সাধনা মহিমায় ভরা মন,
ভুল পথ হ’তে যেন তারে টানি’ তুলে নিত অনুখন  |
গরীব হ’লেও কেরাণী পিতার প্রাণভরা সযতনে,
নবীন হইয়া ফুটিল শেফালী সাথীদের সনে সনে |
ষোল বছরের পর---
একদিন শেষ মাধবী কহিল স্বামীকে অতঃপর---
দেখেও দেখনা মেয়ের বয়স, অত কি পড়ার ঝোঁক,
ঘরে থাকনাক’ শুনিবে কোথায় বলে কি পাড়ার লোক !
সাম্ নে ফাগুন--- এবার মেয়ের বিয়ে সেরে দেওয়া চাই |
বল যদি তবে পাঁজি নিয়ে আসি দেখে রাখ দিনটাই |
সোয়ামী কহিল, --- মাধু তুমি আজ এমন পাগল কেন,
জীবনের চেয়ে ভাবিছ মেয়ের বিবাহই বড় যেন |
শেফালী মোদের ওই সবে মেয়ে তাহারে মানুষ করি’ |
শান্তির শেষ নিঃশ্বাস ফলি’ যেন মোরা দোঁহে মরি |
মা কহিল রেগে, মেয়েরে পড়াও আইন, আই-সি-এস্---
তোমারে বলার প্রতিফল আমি হাতে হাতে পেনু বেশ |
আমি গেঁয়ো মেয়ে কিছুই জানিনা বেড়েছি গাঁয়ের বুকে---
সোয়ামীর প্রেম হিয়ার পরতে আঁকিয়াছি সুখে দুখে |
তার বেশী চাই নাই---
জীবনে এ ছাড়া নাই আজও কোন অসীম আকাঙ্ক্ষাই |
আমি খালি চাই সিঁথীর সিঁদুর আর শাঁখা দুই গাছি |
এই নিয়া আমি তোমার চরণে মরণের সুখ যাচি--- |
অশ্রু-শিশিরে মাধবীর আঁখি ভিজে হ’ল টল-টল |
হাত ধরি স্বামী কহে---মাধু কেঁদে দিওনাক প্রতিফল |
ক’টা মেয়ে বল তোমার মতন আছে আমাদের ঘরে,
সেবা ও প্রেমের মহিমার দীপ জ্বালা যে তোমার করে |
তোমার মতন করিতে পারিলে শেফালিকা, সংসার,
জীবন তাহার হইবে সুখের মধুময় পারাবার |
কত গ্রাম ঘুরি’ শেফালীর পিতা বিবাহের ঠিক করি’,
ঘরে এলো ফিরে প্রিয়ারে .বারতা জানাইল হাত ধরি’ |
মেয়ের সুখের ভাবী কল্পনা দোল দিল মোর প্রাণ |
যোড়পাণি করি ঊর্দ্ধে নমিয়া কহে ওগো ভগবান!
যদি এত দিলে মোরে---
দু’হাত ওদের এক করে’ দিয়ে বাঁধনা মিলন-ডোরে |
স্বামীর ব্যথায় সজল তাহার হইল দু’কালো আঁখি |
ভাবিল বিবাহে ভিটে-টুকু ছাড়া কিছ ত র’ল না বাকি |

রায়েদের ঘরে বাজিল সানাই একদিন মধুরাতে,
মিলনর ধারা ঝরিয়া পড়িল যেন সবাকার মাথে |

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
আকাশ জুড়ে ঘনায় ছায়া
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
শ্রাবণ ১৩৩৫, বঙ্গলক্ষ্মী পত্রিকায় প্রকাশিত

আকাশ জুড়ে ঘনায় ছায়া আঁধার কালো আঁধার কালো
আমার লাগি কাঁদবে বুঝি ? বাদলরাণী অশ্রু ঢালো
.             ওই নিলীমায় প্রিয়ার আঁখি
.             কেবল আমি খুঁজতে থাকি
চাউনি যে তার আকাশভরা ঐ নভে তার আঁখির কালো
কখন্ নীলে উঠ্ ছে ফুটে কখন ছায়ে আঁধার কালো

আমার কুঁড়ের পথটি দিয়ে ছোট্ট নদী বইছে বেঁকে
সবুজ তৃণ নুইয়ে সেথা তোমার চলার চিহ্ন এঁকে
.              আজো পাগল চাঁদের হাসি
.              ঘরের দোরে তেম্নি আসি
যায়গো ফিরে ডুক্ রে কেঁদে বক্ষ ব্যথা কক্ষে রেখে
সজল স্নেহে শিশির কাঁদে ঐ নিলীমায় আকাশ থেকে

আমার প্রিয়ার ঠিক্ ঠিকানা বাদলরাণী তুমিই জানো
দাও বলে সে কোথায় আছে আমায় কেন বেদন হানো ?
.               যখন প্রিয়া বিদায় নিলে
.               আঁখির ধারে বাদল দিলে
বাদল রাণী আমার লাগি তেম্নি আবার বাদল আনো
আমার প্রিয়া কোন্ ঠিকানায় তুমিই তুমিই জানো

.                  **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
পল্লী
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
“কুরুক্ষেত্র” পত্রিকায় প্রকাশিত

বসন্তের সাথে সাথে মনে পড়ে পল্লীর মাধুরী
পুষ্পিত শষ্যের শোভা |  সবুজের শ্যাম স্বপ্নপুরী
.                        ভাসে মোর নয়নের কোনে
একদা যেথায় খেলা খেলিয়াছিল বালক বেলায়
কিশোর জীবন বাহি | যৌবনের স্ফুটন মেলায়
.                        ফুটিয়াছি যেথা সঙ্গোপনে
আমার সে পল্লীমাতা ডাকে মোর বক্ষে আয় ফিরে--
গভীর বক্ষের ক্ষত দগ্ধ হাসি ঢাকে কভু কিরে ?
.                        শান্তি কোথা ব্যথিত পরাণে ?
ফিরে আয় বাছা মোর আছে হেথা স্নিগ্ধ শ্যামলিমা
প্রকৃতির সবুজ উত্সব | আকাশের উদার নিলীমা
.                         প্রশান্তি ছড়ানো সবখানে
কহিনু যাবই ফিরে জননীগো বক্ষে ফিরে তোর
কত হেলা করিয়াছি | অপরাধ ক্ষমিও মা মোর
.                         নমি মাগো তোমা পল্লীরাণী
কোকিলের কুহু স্বরে যাব ফিরে বসন্তের দিনে
বিরহী পল্লীর ডাকে | ‘বউ কথা কও’ শুনে চিনে
.                         পূর্ণ করি শুন্য প্রাণখানি ||

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর