কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
“ওগো ভুলে যাই আমি যে অধীন”
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
“কুরুক্ষেত্র” পত্রিকায় প্রকাশিত

ওগো যন্ত্ররাজ ?
কি কুক্ষণে ঘর্ঘরিয়া বাহিরিলে এই বিশ্বমাঝ ?
থামে নাই আজো সেই ঘুর্ণন --
তব দগ্ধ জীবনের | অশান্ত ক্রন্দন
ফিরিতেছে নগরীর দ্বারে |
বাষ্পাকুল ধূমরাশি মিশে যায় ব্যর্থ হাহাকারে
উচ্ছশিয়া কেঁদে কহে বাঁশী |
প্রাণ মোর আলো চায়, আলো আমি বড় ভালোবাসি |
মানুষের কূটবুদ্ধি বাঁধিয়াছে আমার বিজ্ঞান,
স্বর্ণের শৃঙ্খলে |  শৃঙ্খলিত মোহমুগ্ধ প্রাণ
ভূলে কভু নেহারি শৃঙ্খল,--
কভু মোরে বন্ধনের জ্বালা করে মোর অন্তর বিকল |
আমি ছুটে যেতে চাই-----
.                       ভূলে যাই আমি যে অধীন ;
এ নিখিলে অসহায় ভিখারীর চেয়ে আরো দীন |
হৃদি মন সব সমপিয়া,  শেষে শুধু তার দয়া মাঙি !
মূহুর্তে যে ভোলানাথ হয়ে, জীবনের ভূল দেয় ভাঙি ||

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
“ম্যাক্ সুইনী”
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
১৩৩৩, ২৪শ সংখ্যা , “বিজলী” পত্রিকায় প্রকাশিত

তেজোদীপ্ত হে সন্ন্যাসী, নমি তোমা নবীন ভাস্কর !
বিশ্বে একা উদ্ভাসিয়া --- আত্মতেজে অনন্ত নির্ভর --
.                              দৃঢ়কন্ঠে নির্ঘোষিলে তুমি,
সবাই স্বাধীন ভবে, রাজা শুধু এক প্রেমময়
তাহারে যে দৃপ্ত বলে লঙ্ঘি, গাহে পশুত্বের জয়
.                           তার শত্রু সারা বিশ্বভূমি |
মোরে দিতে চাহ শাস্তি হে রাজন দীর্ঘ কারাবাস ?
মুক্তি লাগি চিত্তে মম উথলে যে আনন্দ নিঃশ্বাস
.                      জীবনের তালে তালে মোর,
সহস্র লৌহের কারা সে আনন্দ নিমেষে চূর্ণায় ,
ততোধিক রাজশক্তি আঘাতিয়া প্রাণের ঘুর্ণায়
.                     রুদ্র তেজে ভাবো সুপ্তি ঘোর |
এক মাসে মুক্তি লব করিব না মৃত্যু-অধীনতা,
বলেছিলে মুক্তকন্ঠে -- তুমি মূর্ত্ত মুক্ত মানবতা,
.                         মুক্ত হ’লে হে বীর মহান্ |
প্রজ্জ্বলন্ত আত্মা তব বিশ্বে জ্বালি প্রাণ হুতাশন
গেল কোন্ মুক্তি-পথে অবেলায় ত্যাজি এ জীবন
.                            নবশক্তি বিশ্বে করি দান |

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
আমি যে-প্রবাসী ভাই
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
দীনেশরঞ্জন দাশ ও গোকুলচন্দ্র নাগ সম্পাদিত “কল্লোল” পত্রিকায় ১৩৩৫ ভাদ্র (সেপ্টেম্বর ১৯২৮)
সংখ্যায় প্রকাশিত।

হে মোর পল্লী-রাণী ?
সুদূর প্রবাসে মোর চোখে ভাসে তোমার হাস্যখানি |
ভুলিতে পারি নি আজিও তোমার শস্যশ্যামল মাঠ,
গাঁয়ের প্রান্তে যমুনা দীঘির অশ্ থ তলার ঘাট |
যেথা নিরালায় সাঁঝের বেলায় গিয়াছি মায়ের সাথে,
জল খেলা করি কত আনন্দে আবার ফিরেছি রাতে ;
গুন গুনে বনে আজো শুনি যেন রাখালিয়া বাঁশী সুর,
সান্ধ্যলগনে আরতি মগন ও-ধারে গোপালপুর,
মনের স্মৃতিতে গাঁথা অলখিতে মিতাদের স্মৃতিখান ;
ভুলিনি এখনো রাস্তার পাশে রায়েদের আমবাগান |
সকলি রয়েছে মনে---
অতীত আমার আজিও কাঁদায় বাঁধিয়া আলিঙ্গনে ;
বরষার মেঘ আজিও হেরিলে নয়নে বাদল ঝরে,
পল্লী-মায়ের শান্ত কুটীরে চাষীদের মনে পড়ে;
ব্যথায় কাতর যারা জর্জর অত্যাচারীর দাপে
অসহায় সেই নারায়ণদের ছবি মোর বুকে কাঁপে |
আমি যে প্রবাসী ভাই !
আছে মোর কত ভালবাসিবার ভাবি বুঝি ভুলে যাই !

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
বিদেশী বন্ধু’র প্রতি
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
“সম্মিলনী” পত্রিকায় প্রকাশিত, ২০শে মাঘ, ১৩৩৩

তোমার সাথে আমার দেখা সে দিন কবে নাইক মনে |
খুশীর গুমর অমর করে রেখেচে সে শুভক্ষণে |
রথ হতে দেব পথে নেমে দীন পথিকে বাসলে ভালো,
উদার তব চিত্তখানি নিত্য আমার মন ভূলালো |
পূজলে তুমি রাজবাণী শুদ্ধ চিতে ভক্তি ভরে,
চরণ দুটী বক্ষে নিলে একান্ত মায় আপন করে,
সেদিন মেলার মহোত্সবে ফুলের বনে জাগ্ লো মেলা,
ফুলের রাণী গোলাপ হেসে বল্লে এস পারুল-বেলা |
প্রাণ ভরে আজ জাগাও সবে জাগুক সবাই নিখিল বাসী,
জীবন-মেলায় মিলতে বাজছে শোন মিলন বাঁশী  |
সেই বাঁশীটির সুরে সুরে চল্ ছি দোঁহে জীবন পথে,
জানিনা ভাই এ’ চলা কি পৃথক হবে মরণ হতে ?
শুধুই জানি মোর জীবনে মরণ এলে আঁধার কালো,
নিভ্ বেনাক প্রাণের শিখা ওপারো সে করবে আলো |
নাই ভেদাভেদ প্রাণ জগতে উচ্চ-নীচু সকল জাতি,
বল্লে তুমি, তাইতে বঁধু দিলাম প্রাণের মাল্য গাঁথি ||

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
মনোহর দাস
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়

আপন সাধন মাঝে ফুটেছ হে তুমি মনোহর
প্রেমের কমল অঙ্কে | রচিয়াছ প্রেম সরোবর
.                         জীবনের মোহন মাধুরী
জীবনের পথ বেয়ে কত রাহী নির্নিমেষ চাহি
ডুবে যায় ও’রূপ সাগর | সমাধির গীতি গাহি
.                         বক্ষে আঁখি হেম মায়াপুরী  |
তুমি হেথা নাই নাই আজো তবু বাজিতেছে বাঁশী
মানব অন্তর ছেয়ে | কত দূর বনান্তর ভাসি
.                         জানাইছে একটী ইঙ্গিত
কে’ কোথা ব্যথিত এসো ক্লান্ত শ্রান্ত এ’স তৃষাতুর ?
জীবনের পাত্রভরি হবে যদি প্রেমে মত্ত চুর,---
.                         গাহ তবে মাতাল সঙ্গীত |
সে চাহে পাগল সৃষ্টি এতটুকু মানুষের মনে,---
চাহে সে আঁকিতে চুমা অন্তরের অতি সঙ্গোপনে
.                         বিনিময়ে রাখেনাক আশা !
এ’ বিশ্ব পাগলকরা চাহে শুধু মধুভরা প্রাণ
যে কেবল প্রেমানন্দে আনন্দই করে যায় দান !
.                         বক্ষে যার শুধু ভালোবাসা |


তোমার সমাধি পাশে আজো “শীলা” ধীরে যায় বহি,
কুলু কুলু কল্ কল্ |  আপন মনের কথা কহি,--
.                          চায় তোমা ‘স্বর্ণমুখী’  প্রিয়া ?
জানিনা এ’ চাওয়া পাওয়া ? শুধু জানি,--- সকল অন্তর
ভরা তুমি | শূন্যতায় সবে তাই অনন্ত নির্ভর,
.                          হৃদি-মন তোমা সমর্পিয়া ||

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর