কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
ফুল্
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
‘স্বদেশী বাজার’  পত্রিকায় প্রকাশিত

হে’ গরবী করবী পারুল ?
স্বরগের গন্ধ বহির্মত্তে সবে তব-বেয়াকুল !
মাটীর ভূবন পরে ফুল হয়ে যাক শুধু ফুটে---
মিশায়ে হাসির রেখা | শুভ্র প্রেম ভরি ওষ্ঠ পুটে
তুলি রাখ অতি সযতনে |
কেবল ফোটার লাগি ফুটে থাক মাটীর ভূবনে |
ব্যথিতের কত দগ্ধ বুকে----
মধু ঢালো | পাগল হাওয়ার সাথে তৃপ্তিহীন সুখে,----
গন্ধে ভরো সুন্দর নিখিল !
বিপুল দহন-মাঝে বেদনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ---
.                      ঢেলে যাও প্রেম অনাবিল --
মহান্ আনন্দে মাতি !
কত ঘোর অমানিশা আসে কত জ্যোছনিয়া রাতি---
বয়ে-চলা তোমাদের পথে |
হাসে কভু জ্যোছনার সাথে, সৌন্দর্য্যের উচ্ছলিত স্রোতে |
বয়ে-চলা তোমাদের পথে !
হয়ত’ বা ব্যথির দুয়ারে
খুঁজি ফের কোথা ব্যথা তার  ? আসা যাওয়া তাই বারে বারে
দিতে তারে এতটুকু স্নেহ,  একটু পরশ !
সোনা আঁধারের বুকে তোমাদের স্নেহ ভালোবাসা,--
.                              সুসুপ্তি’র স্বপনে সে ঢলে পড়ে ফুল গন্ধ সনে
নিয়া বুকে একটু কামনা একটু সান্ত্বনা তার মনে |

রাতে কারা এসেছিল বাসিতে এ তপ্ত বুকে কালো ?
অগ্নি সজল স্নেহে সকলে স্নেহের মায়া ঢালো !
আর কেঁদে কেঁদে চলে যাও----
.                           নিয়া বুকে ব্যথিত বেদন |
হাস্যময়ী নিখিলের সুখে দুঃখে, তোমাদের
.                           হাসি  ও কাঁদন |

প্রশান্তি লভহে শেষে দেবতায় চরণ বান্ধিয়া
স্বরগের ফুল সরাহে পারুল নাম দেব প্রিয়া |

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
‘চাষী’
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
‘সম্মিলনী’ তে প্রকাশিত

চাষী কয় ব্যাকুলিয়া মোর কথা শোন ধনী ভাই  ?
তোমাদের চাষ করি তবু মোর দানা পেটে নাই |
বরষার কাদা মাখি ভরিয়াছি তোমার ভান্ডার
এক কণা দিলেনা’ক তবু রাখিলেনা একটু আমার ?
কহিলে মধুর ভাষে, ওরে মধো’ কি করিবি ধান ?
আমার গোলাতে তোল নিয়ে যাবি পরিলেই টান |
লক্ষ্মী নাই তোর ঘরে অলক্ষ্মীর সদা সেথা বাস
সেথায় বিলায়ে লক্ষ্মী করিব কি নিজ সর্ব্বনাশ ?
অসহায় আমি হায় পথে পথে শুধু যাই ভাবি
মাটীতে গতর ছেঁচা ও’ ধানে কি নাই মোর দাবি ?
যবে ভাবি অনাহার বাছাদের খাবার কি ‘হবে ?
গরীবের রক্ত চুষে ধনীরা কি চিরধনী রবে ?
ওম্নি বিদ্রোহী-মন জ্বালাবারে বিশ্বখানা চায়
সমস্বরে যত দুঃখী ক্ষুধাতুর যারা মৃত প্রায়
এ’ বিশ্বে বঞ্চিত যারা পায় নাই স্নেহ ভালবাসা
যাহাদের দগ্ধ-বুকে হানিয়াছে শেল্  সর্ব্বনাশা
নিঃস্ব রিক্ত প্রাণ আর যাহাদের ব্যথাহত বুকে
দারিদ্রের জ্বালা যারা জ্বালিয়াছে দরিদ্রের ভূখে
মৃত্যুর কঙ্কাল তাদের কহি ওঠে সবাকার লাগি
সাম্যের শাসনে বিভূ করিয়াছে সবে সম-ভাগী
কেহ নাই রাজা প্রজা বড় ছোট নিখিল ভূবনে
আসে নাই বেঁচে কেহ যেচে নিতে কেবল মরণে
কেহ’ রবে তে’তালায় আরামেতে শুধু বসে বসে !
ভিখারী হইবে কেহ ? দাও দাও ওটা ভেঙ্গে চষে
না’ হলে দুঃখী ও ধনী এস মিলি করি আলিঙ্গন
মিসে যাক্ বিশ্ব হতে দরিদ্রের ব্যথিত ক্রন্দন ||

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
মোহিনী
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
পূর্ণিমা পত্রিকায় প্রকাশিত তৃতীয় সংখ্যা, মাঘ, ১৩৩৩

চাক্ রী রূপা হে’ রূপসী কতই তুমি ভেল্কি জানো ?
জীবন-পথে লাগিয়ে ধাঁধা বাবুর বুকে বজ্র হানো |
গাধার মতন আজ্ঞাবহ সুবুদ্ধি এই বাবুর জাতি
ভজছে স্যরে গুঁতো খেয়ে পর্চ্চে গলে শেকল গাঁথি
এমন সাধের স্বপন-পথে জীবন তাদের বলি দেওয়া
জেনেও তারা উপায়-বিহীন কাজেই মরণ যেচে নেওয়া
অফিস-ঘরে জীবন-খানি নিয়ে যেতে দেরী হলে
ফাইন করি আইন মত ক্ষ্যান্ত হন্ ষ্টুপিড্ বলে
হায়গো কবে ঘুচবে বল গোলামীর এই মোলাম-নেশা
মনের ভুলে সব খোয়ানো উমেদার এই দাড়ির পেশা
জীবন-সাগর মথন করি আসবে নাকি মুক্তি হাওয়া
ভাসবে নাকি জাতির তরী নতুন সুরে হবে বাওয়া
না জানি কোন্ সিন্ধুকূলে মিলন-রাতে বাজবে বাঁশী
আজাদ পথে মুক্তি হাওয়া আন্ মনেতে বাসবে ভাসি
মেহিনী গো তোমায় সেদিন যেতে হবে অনেক দূরে
বিভুর আশিষ্ ঝরবে যবে মোদের প্রাণের অন্তঃপুরে ||

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
নীরিহ-জাতি
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
বিকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত অগ্রহায়ণ, ১৩৩০


সমাজপতি-বামুনের-পো
.             মান’কি তোমার গেলেই হলো ?
ব্রহ্মত্বটা গেলেও সত্য,
.             মান্ টা কোথায় যাবে বলো ?

,             বাঁধ্ তে ছাঁদা ফলার দিনে ---
.                    উড়িয়ে টিকি গাম্ ছা হাতে |
.              এখনো ধাও হরষ-মনে,---
.                    দিস্তে কয়েক বাঁধ্ তে পাতে |

পৌরহিত্যে তুমিই-না সে,
.               দাতা’র শ্রাদ্ধ সেরেই ফেল ;
ফলার’ও হায় ফুরিয়ে গেছে,
.               তোমার শ্রাদ্ধ ঘনিয়ে এ’লো  |
.               সমঝে চল সমঝে চ’ল  |

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
অন্ধতায়
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়


চিন্তা করি আমি যবে কিসে হ’ল লুপ্ত মোর জ্যোতি ?
আধেক জীবন আগে, আঁধারের মাঝে এই বিপুল জগতে,
আর দয়ালের দান ব’ল বিফল মরণ তব লুকাইয়া প্রাণের পরতে--
মোর পাতা হ’ল মিছাই আসন, যদিও প্রবল মোর আত্মা বেগবতী
তাই দিয়ে পূজিবারে মোর দেবতায়, আর চায় নিবেদিতে
সত্য এই জীবনের কাজ, পাছে তিনি করেন ভৎসনা,
“আলোয় বঞ্চিয়া মোরে শ্রম নেওয়া তাঁর কি কামনা” ?
ব্যগ্র হয়ে শুধাই আপনি :- ধৈর্য্য কিন্তু মোর নিবারিতে
অসন্তোষ, শীঘ্র করে উত্তর প্রদান, ভগবান চান্ না কখনো
মানুষের কর্ম্ম, কিম্বা তার দেওয়া দান | সকলের চেয়ে যারা --
বহে তাঁর ইচ্ছার আদেশ, পূজে তাঁরে সবা চেয়ে | তিনি সারা
নিখিলের একচ্ছত্র রাজা ; আজ্ঞা তার বহে কত অসংখ্য জীবন-ও,
অবিশ্রান্ত চলিয়াছে গতি, স্থল আর জলধির পর,
তাহারাও পূজে শুধু যারা করে দেব পরে অনন্ত-নির্ভর |

Jhon Milton  এ’র On his blindness হইতে |

.                **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর