কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
ঋদ্ধি
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়

মঞ্জুল গুঞ্জন চাঁদের কিরণ্ -খান্
.       ইসারায় তায় ওরে ডেকে আন
আমার বুকের পরে গুঞ্জরি মর্ম্মর
.       অন্তর সঞ্চারি গাক্ গান |

মিটি মিটি জ্বলে আলো ঐ শুন্যে
.       খেয়ালী কি জানে কার পূণ্যে ?
চেয়ে দেখি ওপারের উত্সব দেয়ালী
.       নিভে যায়  গ্রহ-........

আলোর পাথারে ঐ মেখলাটী ঝলকে
.       উছল ফোয়ারা যেন ছলকে
দরিয়ার মাঝে দেখি হাসিটী মিলায়ে যায়
.       অনিমিখ্ চাওয়া আঁখি পলকে |
দূরু  দূরু হীয়া কেন বক্ষের স্পন্দন
.           অধীর পরাণে কেন ক্রন্দন ?
সুরমা চোখের পাতা বেলয়ারী আওয়াজে
.           নামেনা’ত প্রাণে মোর নন্দন ?

ধরার আঁচলখচা সোনালিয়া দৃষ্টি
.            সরবৎ সেরা এর মিষ্টি
জনম জনম পড়ে ব্যথাতুর নিশ্বাস
.            ছাই হোক্ বিধাতার সৃষ্টি |

অবুঝ সবুজ মন যৌবনে বৃদ্ধ
.           হয়নাকো মনোরথ সিদ্ধ
কোথা এস ভক্তের ব্যথাহারী ভগবান
.           আলোকিয়া কর মোরে ঋদ্ধ ||

.           **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
সুন্দরের সাধনা
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
নবশক্তি পত্রিকায় প্রকাশিত

বনের মহিমাখানি হাসে মোর মনের মর্ম্মরে
প্রশান্ত শীতল ছায়া বক্ষে নিয়া স্নিগ্ধ শ্যামলিমা --
তটিনীর কলগান মানবের হৃদয় নির্ঝরে
কি বাণী ঝরায়ে যায়, বেয়ে যায় কিসের মহিমা ?
পরিচিত বনরেখা পাশে শাল পিয়ালের শ্রেণী
আমার মানস কুঞ্জে দোলে যেন মৃদুল হাওয়ায়--
অপরূপ স্নেহময়ী যেন কোন্ তন্বী মুক্তবেণী
বিশ্বের সুষমা মাখি ভরে মোরে স্নেহের চুমায় |
বনের মর্ম্মরতলে নির্ঝরের স্বচ্ছন্দের গানে,
যে ভাষা লুকায়ে রয় তারই লাগি আমার কবিতা
প্রকাশ ব্যথায় চলে ব্যাকুলিয়া সুন্দরের পানে
বিপুল পুলকে হাসে প্রকাশের পুষ্প কুশুমিতা |
ভুবনের খেলাঘরে অন্তহীন বিচিত্র কামনা
ফিরিছে মানব মেনে ; হে সুন্দর তোমার সাধনা |

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
বনভূমি
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়


হে’ সবুজ  শোভাময়ী
.      নিখিলের শ্যাম বনভূমি
নীলিমার চাঁদোয়ার তলে,
.      মধুময় আঁচল বিছায়ে
বনের  মাটীর সনে
.      লহ তুমি কত মন চুমি |


তুমি  শ্যাম-তপোভূমি,
.       গৃহহারা কত বৈরাগীর
গদের বীণার তারে,----
.        আঘাতিয়া তোল কত ভাষা
প্রকৃতির তুমি শ্যামগান,
তাই শুনি উদাসীরা
.         ফেলে আঁখিনীর |

কত’কাল কত যুগ ধরি---
.      সহিতেছ বিরহের ব্যথা |
ওগো দেবী ?
নমণীয় অধরে তোমার,
সবুজের ব্যাথার আধার ;
দেখি তাই ঐ স্ফুট - রেখা |
পলাশের পাতায় পাতায়
দেখি ঐ একই ব্যাকুলতা |

শ্যামলিয়া কোলপার আমি
তব পাশে ছুটে যাই শুধু !
মরভূ’র তৃষা নিয়ে
এঁকে দিই চুমা-মুখে তব ;
মেটেনাক তবু মোর তৃষা,---
.       ওগো প্রিয়া ?
তবু মোর------
.              বুক জ্বলে ধুঃ -- ধুঃ --- ||

.           **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
রাত্রি
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
কুরুক্ষেত্র পত্রিকায় প্রকাশিত

ওগো রাত্রি মাতা ?
অন্ধকার- ম্লান বক্ষে তব ব্যথাহত কত দুঃখ পাতা ?
কত রুদ্ধ বেদনা’র অস্ফুট ক্রন্দন,---
ধ্বনিছে তোমার বুকে ? নিখিলের আলোর স্পন্দন --
হাসি গান আনন্দ উচ্ছাস,
শৃঙ্ঘলিত বন্দীসম ফেলিতেছে তপ্ত হা’ হুতাশ !
হে আঁধার তব বক্ষপুটে,
প্রতিক্ষণে লীন হায় আনন্দে সে মৃত্যু মৃত্যুসম ফুটে
চরণ-দলিত ব্যথা, জীবনের যতকিছু মনস্কাম
নিদ্রালস মগ্ন তুমি, চোখে আঁখি মরণ আরাম
যাপিতেছ ব্যাথানন্দে প্রাণ |
রক্ষে তব, অফুরন্ত ব্যথা রচিয়াছে----
.                               প্রশান্ত শয়ান্  ||

.           **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
সৈনিকের স্বপ্ন
(Thomas Campbell)
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়

মোদের বাঁশী বাজে সন্ধি হেতু নিশার আকাশ কালো রাতে
আর প্রহরি তারার দল দিতেছে প্রহরা নভোপরে---
হাজার-হাজার সেনা আছিল চেতন হারা ..ভূত ভূমে ঘুম্ সাথে
ক্লান্ত সে শয়ন বিছায়ে আহত সে মরিবার তরে --

প্রজ্বলিত কাষ্ঠগুলি ব্যাঘ্র হতে সেনাদেহ দিতেছে প্রহরা
পাশে তার শুয়ে আমি রাত্রি পরে খড়ের শয্যায়
হেরিনু স্বপনে আমি নিশি অন্তে মধুরিমা-ভরা
ঊষার আলোর আগে তিনবার হেরিনু তাহায় |

ভাবিলাম মনে যেন রণভূ’র ভয়ঙ্কর সৈন্য-শ্রেণী হতে
ভ্রমিয়াছি কতদূর আন্ মনে নিরালার ধারে
তখন শরৎ-বেলা ফুটেছিল অরুণ আলোক মোর পথে
পিতার ভবন-মোর অভ্যর্থিয়া ডেকেছিল মোরে বারে বারে |

কত মোর বিচারিত মোহন ভূমিতে গিয়াছিনু আমি ত্বরা করি
জীবনের ঊষাকালে হীয়া মোর যবে ছিল কুসুম কোমল
শুনিলাম আমি মোর পাহাড়িয়া ছাগগণ ডাকে উচ্চোপরি
আর কৃষকের মধুময় শষ্য কাটা গান বুঝিনু সকল |

পরে মোরা স্বাস্থ্য করি পান করিলাম স্নেহের শপথ্
হবনা পৃথক কভু গৃহ আর দুঃখী বন্ধু হোতে
কচি-কাঁচা ছেলেরা আমার চুমু দিল হাজার-হাজার মোরে কত
আর প্রিয়া মোর ফেলেছিল দীর্ঘশ্বাস জোরে প্রাণ..

রহ রহ সকাশে মোদের লভ শান্তি শ্রান্ত-শীর্ণ তুমি
আর সেথা র’লে সুখী ছিল রণক্লান্ত তাদের সৈনিক
প্রভাতের আগের বেলায় পুনরায় শোক এল বুঝি
আর মোর স্বপনের স্বর মিশে গেল শুন্যে অলীক ||

.                 **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর