না | না | না | জমি আঁকড়ে থাকা চলবে না | মিথ্যে বসে থেকো না | ওঠো বসে রয়েছেন বিডিও চেক ধরো | দেরী করলে কিছুই পাবে না |
ভুলে যাও আন্দোলনের কথা শুধু পুলিশ নয়, এবার আসছে ব়্যাফ, কম্বাট ফোর্স আর ক্যাডার বাহিনীও কাজ শেষ না করে ফিরবে না কেউ | তার পরই ১৪৪ কাউকেই ঢুকতে দেবে না এলাকায় | টাটা জমি তো পাবেই শুধু তোমাদের বাঁচানোর কেউ থাকবে না |
খাল কেটে ওদের কুমীর আনার ঘোরে কৃষকের মাঠ আর ঘরে বুদ্ধের অশুভ ছায়া পড়ে উচ্ছেদ হয় বিপন্ন কৃষক |
বিডিও অফিস জালিয়ানওয়ালা বাগ হল মাঝরাতের পর | লোডশেডিং করে ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্বর পুলিশ প্রতিবাদীদের উপর লাঠি দিয়ে রমণী পুরুষ শিশু বৃদ্ধের গায় উল্কির মত এঁকে দেয় হুজুরের ফরমান : এ রাজ্যে বিরোধের নেই কোনো স্থান |
কালশিটের দাগ মিলিয়ে যাবে একদিন কিন্তু জমি দিতে না চাওয়ায় খুন হল যে রাজকুমার ভুল তার রক্তঋণ শোধ করবে কে ?
জানি, আপনি নন | শোধ করবে জান দেব, তবু জমি দেব না শপথ নেওয়া সিঙ্গুর | আচ্ছা আপনার ব্লাডহাউণ্ডের দল কি ভাঙ্গতে পারবে ঐ শপথ ? হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী মশাই, এ প্রশ্ন আমি আপনাকেই করছি |
গ্রামে গ্রামে বসেছে পাহারা শাঁখ বাজলেই লাঠি, ঝাঁটা, বঁটি হাতে হানাদেরদের আটকাতে ছুটে আসে খাসেরভেড়ি, সিংহেরভেড়ি, গোপালনগরের কৃষক রমণীরা | অস্থায়ী শিবির গড়তে যাওয়া পুলিশ ফিরে যায় কিষাণীদের ত্রাসে |
দশ বিশজন পুলিশ আর নয় দশ বিশ হাজার পুলিশ মুখোমুখি হোক মারমুখী জনতার ঠিক করে পাকা মাথা |
হুজুর, জানি আপনারা ২৩৫, ওরা শুধু ৩০ মাফিয়া, মাস্তান, ক্যাডার, পুলিশ, প্রশাসক, বুদ্ধিজীবী, প্রমোটার সবই তো রয়েছে আপনাদের তবুও দেওয়ালের লিখন অন্য কথা বলছে না কি ?
হরিপুর-জুনপুটে গড়ে উঠেছে ব্যারিকেড | কিন্তু কাল যদি গ্রামগঞ্জে গড়ে ওঠে ব্যারিকেডের পর ব্যারিকেড জমির দিকে বাড়ানো থাবাগুলো গুঁড়িয়ে দেবে না তো ওরা ?
সিঙ্গুর থেকে খড়গপুর জুনপুট থেকে নন্দীগ্রাম সর্বত্র দ্রুত বদলাচ্ছে হাওয়া জমি নিয়ে আপনার সব অসত্য ভাষণ ধরে ফেলেছে সবাই সুন্দর মেকআপ খসে পড়ছে ঝুর ঝুর করে তাই এ অসম যুদ্ধে সিঙ্গুর হারলেও আপনার কিন্তু পরিত্রাণ নাই |
খবরে প্রকাশ হারণের নাতজামাই এখন সিঙ্গুরেই এবং তিনি চষে বেড়াচ্ছেন সারা এলাকা | আর আপনি যখন ঠিকই করে নিয়েছেন কন আইন আপনি মানবেন না তখন জানবেন সারা বাংলায় আগুন এবার লাগলো |
হুজুরকে তোফা দিতে সাঙ্কোপাঞ্জাকে সঙ্গে নিয়ে বল্লম তাক করে কৃষি জমিতে থাবা বসালো শিল্পায়ণের ডন কিহেতো |
কালো মেঘ দেখে উত্তাল হয়ে উঠলো সিঙ্গুর জমি বাঁচানোর আন্দোলন টেনে আনলো সবাইকে | গোপন সার্কুলারে মুখ বন্ধ ওদের : সিঙ্গুর নিয়ে কোন কথা নয় |
শোষণের জমি ফুঁড়ে ওঠা কুঁড়ি ভূমিহীনের কন্যা-কিশোরী বাজেমেলায়ার তাপসী মালিক দারিদ্র তাকে স্কুল ছাড়িয়েছিল আগেই তার নতুন স্বপ্ন জড়িয়ে গেল মাটি আর মানুষের লড়াইয়ে কচি কাঁচাদের গণ আন্দোলনে অনশনরত ছিল সেও পাঁপড়ি মেলে উঠে আসছিল নতুন নেত্রী |
আন্দোলনের উপর নজর রাখা দাদারা রাত পাহারাদার একলা পেয়ে তাকে বেড়ার ও দিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল নেকড়ের দল | খোঁড়া মাটির জ্বলন্ত উনুনে চিৎ করে শোয়ান, জিভ বেরনো তাপসীর আধপোড়া দেহ দেখেছিল গ্রামবাসীরা |
তদন্কে ডোবাতে কুত্সিত চক্রান্ত সক্রিয় তাই পোস্টমর্টম বলতে পারবেনা ধর্ষণ হয়েছিল কি না সত্য প্রকাশ পেলে, অপরাধীরা শনাক্ত হলে, ওদের কি হবে যাদের ঈশারায় ঘটেছে এ ঘটনা তাই রহস্যাবৃত থাকবে সব কিছু |
রাজকুমার ভুলের হত্যা স্বাভাবিক মৃত্যু, তাদের কাছে | তাই তাপসীর এই নৃশংস হত্যাকে ঘাতকরা যে আত্মহত্যা, অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে পার পেতে চাইবে তাতে আশ্চর্যের আর কি আছে ?
তাপসীকে পুড়িয়ে ছাই করতে চেয়েছিল ওরা কিন্তু ওদের মৃত্যুবাণ হয়ে ফিরে এসেছে সে সারা রাস্তা জুড়ে শুয়ে ধিক্কার জানাচ্ছে মেয়েরা আর এ দাবী আজ নয় কাল উঠবেই ঐ হিংস্র জানোয়ারগুলোর দাঁত আর নখ এখনই উপড়ে ফেলা দরকার |
তিরিশ বছর ধরে ওরা শিখিয়েছে শুধু জবরদখল | জান দেব, তবু জমি দেবেনা এ যুদ্ধঘোষ কেড়ে নিল ওদের ঘুম |
আড়াই মাস ধরে | ঘনীভূত হয়েছে ক্ষুধার্ত নেকড়েদের হামলা প্রস্তুতি | নন্দীগ্রাম দখলের দিন হিংস্র পুলিশ-প্রশাসক উর্দিপরা ক্যাডার ও ভাড়াটে বাহিনীর হত্যালীলার হাড়-হীম করা বীভত্সতায়, শিউরে উঠল সারা দেশ ওদের মুখোশহীন মুখ দেখে |
আহত, নিহত, নিখোঁজ গণধর্ষিতা ও অত্যাচারিতের দীর্ঘ সূচী হাতে শোককে ঘৃণায় বদলে উঠে দাঁড়ান নন্দীগ্রাম আজ ঘুম ভাঙ্গানিয়া |
গণ আন্দোলনের জোয়ারে থর থর করছে সারা বাংলা ভাঙন ধরেছে অচলায়তনে মানুষ শিখতে চাইছে অস্ত্রের ব্যবহার | ফিরে আসছে ব্যারিকেডের দিন |
সকাল থেকেই পাকা ধানের জমি কপির ক্ষেত আলুর ক্ষেতের উপর দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল ভারী বুটের দল |
গুলির কান ফাটানো আওয়াজ ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় কাঁদানো গ্যাসের ত্রাস | বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ি, বেড়াবেড়ির যে চাষিরা জমি দিতে চায় নি উর্দিপরা ক্যাডার বাহিনী চিনিয়ে দিচ্ছিল তাদের ঘর |
"শুয়োরের বাচ্চারা বেরিয়ে আয়" রণহুঙ্কার দিয়ে শান্তিরক্ষকরা ঘরে ঢুকে ঢুকে টেনে বের করছিল যুবকদের, বর্বর পুলিশ আর উন্মত্ত ক্যাডারদের অত্যাচার থেকে মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ বাদ পড়েনি কেউই |
ধানের গোলায় আগুন ঘরে আগুন, ক্ষেতে আগুন সব কিছু তছনছ করলো লাঠি, বন্দুক, ঢাল হাতে পুলিশ, পুলিশ আর পুরলিশ |
বেড়া পোঁতা হচ্ছে না যুদ্ধ চলছে বোঝা যাচ্ছিল না |
পুলিশী তাণ্ডব চলবে অথচ মহিলাদের শ্লীলতাহানি হবেনা তাও কি হয় কখনো ?
বিভিন্ন চ্যানেলে এ সবকিছুই দেখেছেন আপনারা প্রতিরোধে প্রস্তুত চাষিদের মারমুখি পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়তেও দেখেছেন |
চাষিদের ছোঁড়া ইঁট তীর, এসিড বাল্ব, বোমা অথবা মহিলা পুলিশের ঘাড়ে ক্ষুর চালানোর দৃশ্য যাতে আহত হয়েছিল একজন ডি এস পি সহ কয়েকজন পুলিশ দেখেনি কেউই | দিব্যদৃষ্টিতে দেখেছে মুখ্যমন্ত্রী, ফ্রন্টের চেয়ারম্যান পার্টির রাঘব বোয়াল থেকে চুনোপুঁটিরা তাই তাদের ঘোষণা : পুলিশ যা করেছে ঠিক করেছে |
বলা যায় জয় হয়েছে ওদেরই | যেমন জয় হয়েছিল আডবানীদের মন্দির ওখানেই বানাবো সদম্ভ ঘোষণায় রক্তে ভিজেছিল দেশের মানচিত্র | একই দম্ভোক্তি শোনা যাচ্ছে টাটার কারখানা সিঙ্গুরেই হবে | রক্তে ভিজতে শুরু করেছে বাংলার মাটি |
যুদ্ধক্ষেত্র এখন শান্ত চাষিরা ছত্রভঙ্গ বহু লড়াকু বন্দী সংগ্রামী চাষীদের দেখা যাচ্ছে না পার্টির সেই সব ক্যাডাররা যারা মাথা তুলতে পারেনি এতদিন বেরিয়েছে এলাকা দখলে |
মহাকরণের মহাপাতককে মুকুট পরিয়ে বসিয়ে দেওয়া যায় সিঙ্গুরের সিংহাসনে তিনি চাইলে অনশনরত চাষিদের বুকের উপর দিয়েই বের করা যেতে পারে বিজয় মিছিল | এমন কি শিল্পায়নের প্রশ্নে বামফ্রন্টে যে কোন মতভেদ নেই প্রমাণ করতে শরিকদের পাশে নিয়ে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউণ্ডেই বিশাল জনসভা করা যেতে পারে |
সিঙ্গুর সিমিত নেই সিঙ্গুরেই বিক্ষোভের আঁচ এখন সারা বাংলায় |
এদের কানামাছি খেলা বন্ধ করতে চায় যারা তাদের কেউ কেউ খোঁজ নিচ্ছে জঙ্গলের, ঝাঁটা, লাঠি, বঁটি হাতে পুলিশ তাড়িয়েছিল যারা গেরিলার পোষাক পরে রাইফেল হাতে জাগরী বাস্কের মত তারা এগোতে চাইছে কিনা তা কেউ জানে না |
মার খেয়ে রা কাড়েনি যারা পাল্টা মারের সময় রেয়াৎ করবে না কেউই |
পুলিশ রয়েছে ভবিষ্যতেও থাকবে জানি | তাতে কি সন্ধ্যা হওয়া রাত নামা আটকায় ?
সিঙ্গুরেও সন্ধ্যা হবে পাখিদের সঙ্গে সঙ্গে শিবিরে ফিরে যাবে পুলিশও | নিরাপত্তা ফালা ফালা করে তোমার ঘুম কেড়ে নিয়ে বেরিয়ে আসবে রাতের সিঙ্গুর আলো ফোটার আগেই উবে যাবে কর্পুরের মত |
হঠাৎকোনদিন নিভে যাবে আলো আক্রমণ হবে অতর্কিতে একবার দুবার নয় বারবার | প্রতিটি আক্রমণ থেকে বেঁচে ফিরতে হবে তোমায় কারখানায় ধোঁয়া ওড়ার আগেই অফিসে অফিসে তোমার ছবি টাঙ্গিয়ে দিতে পারে সিঙ্গুর |
তুমি তো সিঙ্গুর ছাড়বে না তাতে অসুবিধা একটাই এখানে টাওয়ার অফ সাইলেন্স নেই খুঁটি দিয়ে ক্রস তৈরী করে যীশুখৃষ্টের ভঙ্গিমায় উঁচুতে তুলে দিলেই হল বাংলার শকুন সত্কার করবে সানন্দে |
জমি আমরা দিই নি দেবনা, তা জেনেই তো পুরোনো অস্ত্রাগারর থেকে বের করেছো ১৮৯৪-এর ঘাতকের তরবারি! তোমার সান্ত্রী শিপাই লেঠেল সব কিছু তেমনি করেছে যেমন তারা করে এসেছে তিরিশ বছর |
মরিচঝাঁপি থেকে চা বাগান জল, জমি, বসত থেকে উচ্চেদের ধারাবাহিকতায় বিরতি নেই কোনও |
শিল্পায়ণের কথা বলছো ? হাজার হাজার কারখানা বন্ধ | জমি দখলের জন্য কৃষকের বুকে চেপে শিল্পায়ণের ডুগডুগি বাজিয়ে কাকে ভোলাতে চাইছো ? বেকারদের ? ওরা চামড়া খুলে নেবে | তোমার উন্নয়নের ত্রাস গরীবদের ফুসফুসে ভরছে বিষাক্ত বাতাস |
এই ফ্লাইওভার, চকচকে শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স, সিটি সেন্টার, সাউথ সিটি শাসাচ্ছে গরীবদের পালাও এ শহর ছেড়ে |
তোলঙ্গানা, তেভাগা, নকশালবাড়ি থেকে শেখনি কিছুই, শুধুই ভাঙ্গিয়ে খেয়েছ দশকের পর দশক তোমরা করেছ চাষ | গুণ্ডার চাষ, মস্তানের চাষ, মাফিয়ার চাষ, ধর্ষকের চাষ, ঘাতকের চাষ, ফড়ের চাষ, প্রমোটারের চাষ, এই নিবিড় চাষের উচ্চ ফলনশীলরাই পার্টির ক্যাডার, পার্টির নেতা গ্রাম শহর সর্বত্র তারাই বিধাতা ভোটবাক্সের যাদু কাঠি |
প্রশাসক, পুলিশ, বিচারক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, কবি, অভিনেতা, তোমার রংয়ে ছোপানো এমন সব মানুষ যারা ন্যায় অন্যায় ভাবে না | বোধহীন উন্মাদ নয়, উন্নয়ণকামী ওরা স্বার্থের তাগিদে খুলে ফেলেছে শিরদাঁড়া শুধু লোভ আর ভয় নিয়ন্তা এখন ওরা তাই পশুর অধম |
এই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে তোমার বর্তমান, তোমার ভবিষ্যত | তোমার শিল্পায়নের গতিপথ নন্দীগ্রাম, বারুইপুর, হরিপুর, ভাঙর আজ জনরোষ দিয়ে ঘেরা তোমার পায়ের তলার মাটি আলগা এতই যে ও পথে এগোলে মুস্কিল হবে ফেরা |
তারপরও হার্মাদবাহিনী হানা দিয়েছে বার বার কিন্তু পেছতে হয়েছে প্রতিবারই |
মরিচঝাঁপি, কেশপুর, গড়বেতা দখলের ধাঁচেই তৈরী হয়েছিল নন্দীগ্রাম দখলের নীল-নকশা | পাঁচ দিন আগে থেকেই কেশপুর, গড়বেতা, খেজুরি, পটাশপুর, হলদিয়ার বাছাই করা খুনেরা জমায়েত হয়েছিল কুঞ্জপুর পার্টি দপ্তরে |
পানখাই, মসজিদবার, এক ও দুই নম্বর শের খাঁ চক ও খেজুরির পাঁচটি পয়েন্টে মতায়েন হয়েছিল ওদের যেখানে মজুত ছিল প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র পুলিশের উর্দি আর ঢালাও মদ |
পার্টি, পুলিশ, প্রশাসন বহুদিন ধরে একটু একটু করে তৈরী করেছিল নন্দীগ্রাম দখলের ছক | চণ্ডীপুর, তেরপাখা, হেড়িয়া, হলদিয়া তিরিশ মাইল ব্যাসে সব দিক থেকেই ক্যাডার বাহিনী ঘিরে রেখেছিল নন্দীগ্রাম |
যুদ্ধ প্রস্তুতিতে ঘাতকরা যখন অস্ত্র শানাচ্ছিল সাংবাদিক, রাজনীতিজ্ঞ ও জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল নন্দীগ্রামে |
বিভিন্ন জেলা থেকে আনানো হয়েছিল পুলিশ প্রশাসনের দলদাস আধিকারিকদের কুঞ্জপুর কন্ট্রোল রুম নিয়ন্ত্রিত করছিল অভিযান |
শাঁখ বাজিয়ে অশনি সংকেত জানাল মেয়েরা উলেমারা আজানে ছড়িয়ে দিল সেই বার্তা সাবধান | সাবধান | কার কত ক্ষমতা দেখতে আসছে শয়তান |
নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া, গাঙরা, সাত নম্বর জলপাই, গড়চক্রবেড়িয়া ও আশের পাশের গ্রাম থেকে জমি রক্ষার ডাকে গ্রামবাসীরা ছুটে এসেছিলেন ভাঙাবেড়ায় |
তালপাটি খালের ওপারে দেখা দিল ধীরে ধীরে পুলিশ বাহিনীর বিশাল কনভয় পার্টির ক্যাডার বাহিনী ভাড়াটে খুনের দল পুলিশের পোষাকে সবাই কোন নেমপ্লেট নাই চটি কারো কারো পায় |
অভিযান শেষ হবার পর অবাধ লুটপাট, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের জন্য আরও চব্বিশ ঘন্টা এলাকা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ | নম্বরহীন টাটা সুমো, অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক ভরে ভরে কোথায় নিয়ে গেল লাশগুলো ?
নিপীড়িতদের আর্তনাদের মাঝে ঘরে ঘরে লাল পতাকা তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে নন্দীগ্রাম উপহার দিতেই ধস নামলো পতাকা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সারা দেশের বুকে এখন নন্দীগ্রাম |
ধিক্কার জানিয়ে পদ আর সম্মানে লাথি মেরে লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা নেমেছেন রাস্তায় |
নন্দীগ্রাম তার বুকে বেঁধা প্রতিটি বুলেট তুলে রেখে দিয়েছে | মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার জলপাই জঙ্গল যেদিন এখানে আসবে তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঘাতকদের বুকে তারা ফিরিয়ে দেবে এক একটি বুলেট |
বসুন | বসুন | বসুন | উঠে যাবেন না, প্লিজ, সবে তো দ্বিতীয় অঙ্ক শেষ হল তৃতীয় চতুর্খ পঞ্চম অঙ্ক এখনও বাকী যা হবে আরও বিভীষিকাময় তার পর আর কাউকে ট্যাঁ ফোঁ করতে হবে না |
সেই থেকে প্রতিরাতেই খেজুরি, কাদিরাবাদ চক, পানখাই, রাণিচক, বাহারগঞ্জ, শের খাঁ চক থেকে ওদের ভয়াল ভয়ঙ্কররা উগরে দিচ্ছে গ্লি গোলা বোমা |
বীভত্স নাটকটি প্রথম দৃশ্যেই আটকে দিয়ে তৃতীয় অঙ্ক নামতেই দিচ্ছে না নন্দীগ্রাম | তাই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি করে চলেছে ওরা |
ক্ষমা করবেন, কুশীলবদের কোন দোষ নেই | নন্দীগ্রাম ওদের এক পাও এগোতে দেবে না আর বাঘবন্দী নাটক না দেখিয়ে ছাড়বে না আলিমুদ্দিন | ওদের দৃঢ় বিশ্বাস কেশপুর গড়বেতার মত ভয় নন্দীগ্রাম পাবেই বাঘের ঘস খাওয়া তখন দেখতে পাবে সবাই | জল আর একটু গড়াতে দিন |
আচ্ছা ঝটিকা বাহিনী, গুপ্তচর বাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন, সেনা প্রজাপতি-গোঁফ ওয়ালার কিছু কম ছিল কি ? তার রাইখ কত দিন চসেছিল ? ক্ষমতায় থাকলে ইতিহাস জানা বোঝায় দায় থাকে না, তাই রক্ত ঝরে বার বার |
চলুন, নন্দীগ্রামে ফিরি | প্রধান ভূমিকা এখানে ও গোলাবারুদের নয় সেই সাধারণ জনগণের একনায়কদের বার বার যারা সিংহাসন থেকে টেনে নামিয়ে জঞ্জালের স্তুপে ফেলে দিয়েছে | তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে এখানেও |
তাই এখুনি উঠে যাবেন না, শেষ পর্যন্ত থাকুন ওদের সন্ত্রাসের বেলুন ফুটো করে ইতিহাসের নায়করা ধীরে ধীরে মঞ্চে উঠবেন দেখে যান |
পতাকায় পতাকায় শুধু রংয়ের বাহার লাল, নীল, গেরুয়া, তেরঙ্গা যেই জিতুক ক্ষমতা ধূয়ে দেবে রং তার খোলস খসে পড়বে জীর্ণ পাতার মত বেরিয়ে আসবে কায়েমী স্বার্থের বিবর্ণ পাহারাদার নেকড়ের থাবায় সরকার টুঁ শব্দ করলেই ঝাঁপাবে সেনা, পুলিশ, প্রশাসন, আইন মানুষ মারা যাদের অধিকার |
এই একাধিকার ভেঙ্গে দমবন্ধ পরিবেশ বদলাতে মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়েছে বারবার কাস্তে হাতুড়ি চালানো হাত ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে এ সরকার, ও সরকার, সে সরকার গড়েছে নিজেদের সরকার জনতানা সরকার* | পালে হাওয়া লাগল সিঙ্গুরে রুখে দাঁড়ালো সশস্ত্র নন্দীগ্রাম থমকে দাঁড়াল গুলি গোলা বারুদ | রক্তনদীর বিনিময়ে অর্জিত এ শিক্ষা শান দিক চেতনায় মার খাওয়া আর নয় লুটেরার দল আসছে আসছেই | নিঃশব্দে সজ্জিত হচ্ছে জঙ্গল পাহাড় সময় কড়া নাড়ছে দরজায় ইতিহাস চেয়ে রয়েছে তুমি কোন দিকে ?
. ************** * দণ্ডকারণ্যে গণ সরকার এই নামে পরিচিত
রাজপথ আলো করা লেনিন এর মূর্তি রয়েছে এখানে কাছাকাছি রয়েছেন মার্ক্স এঙ্গেলসও ঘরে ঘরে সাজানো তাঁদের বই, তবু গ্রামে গঞ্জে এই বইগুলি আপত্তিকর হিসাবে চিহ্নিত |
আপনি একটু সতর্ক থাকবেন |
দেওয়ালে দোওয়ালে মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান যদিও আর মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা শনি ঠাকুরের মন্দিরগুলোর সঙ্গে তাদের বিচিত্র সহ-অবস্থান, তবুও
আপনি একটু সতর্ক থাকবেন |
এখানে সরণি রয়েছে লেনিনের নামে হো চি মিনের নামে কানু সিধুর ডহরও রয়েছে, কিন্তু কানু সিধুদের আঙ্গিনায় পা দিলেই পুলিশ ছেঁকে তুলবে আপনাকে তার পর থার্ড ডিগ্রী থেকে সংঘর্ষে মৃত্যু কিছুই হতে পারে আপনার |
আপনি একটু সতর্ক থাকবেন |
শ্রেণী সংগ্রাম পবিত্র শব্দ হলেও মনে রাখবেন পবিত্রতারও সীমা আছে তা লঙ্ঘন করে অনুশীলনের পরিণতি ভিখারী পাশোয়ান, ছোট আঙারিয়া, কেউ লাশ খুঁজে পাবে না |
আপনি একটু সতর্ক থাকবেন |
সীমান্তে নয়, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস টহল দিচ্ছে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায়, পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিতে উন্নয়নের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে তিনটি থানা ভেঙ্গে হচ্ছে ছটি থানা গড়া হচ্ছে তিনটি নতুন জেল আর গণতন্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র করতে এসেছে আরও সাত ব্যাটালিয়ান সি আর পি |
আপনি একটু সতর্ক থাকবেন |
দ্বন্দ্ব নয়, উন্নয়ন নিয়ে রেষারেষি চলছে কেন্দ্রের সাথে রাজ্য ও কেন্দ্রের সম্পর্ক এমনই যে মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুললেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্রীমুখের পদ্মগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে |
ব্যক্তি মালিকানার পবিত্রতা কেন্দ্রের মতই এ রাজ্যেও স্বীকৃত তাই মনে হতেই পারে গোয়েঙ্কা নেওটিয়ে টোডিদের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বাংলা ; কিন্তু আসলে শিল্পায়নের উজ্জ্বল স্থপতি ওরাই নালা-জলা-খানা-ডোবা ভরাট হয়ে ওদের হাতে শহরে শহরে চলছে উন্নয়নের মহোত্সব লেখা হচ্ছে কংক্রিটের কবিতা |
শিক্ষা স্বাস্থ সম্পদ লুণ্ঠনের মত ছোটখাট ব্যাপারে বুদ্ধিজীবিরা বিব্রত হন না মোটেই, আপত্তিকর বইপত্র থেকে মুক্তি পাওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর কৌশল সম্পর্কে একমত হতে তাঁরা ব্যস্ত থাকেন ; তাই বন্ধ কারখানা বা চা বাগানের শ্রমিকদের পেটে ভাত জুটুক বা না জুটুক নাচ গান নাটক সিনেমার তরজায় সারা বছর বুদ্ধিজীবিরা মাতিয়ে রাখেন নন্দন চত্তর |