পিতা কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়, ছিলেন সেকালের বহু প্রতিষ্ঠিত কবিদের পরম সুহৃদ্। তাই
কাঞ্চনকুমারের  অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানে তাঁরা পাঠিয়েছিলেন তাঁদের প্রাণভরা আশীর্ব্বদ, কবিতার কলিতে
বসিয়ে। তাঁর পরিবার থেকে সেই সব আশীর্ব্বাদী কবিতা ও লেখা নিয়ে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা ছাপা হয়! যাঁর
নামকরণও করা হয় “আশীর্ব্বাদী”। সেখানে আমরা পাই

কবির স্কুল জীবন কাটে বেনারসের রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরে। এরপর কলা বিভাগে স্নাতক হয়ে, এম.এ. পাশ
করেন এপ্লায়েড সোসিওলজি নিয়ে কাশী বিদ্যাপীঠ থেকে ১৯৬৪ সালে। তার পরেই তিনি, বর্তমান
ছত্তিসগড়ের জসপুর রি-ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং সেন্টারে (টীচার্স ট্রেনিং) অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন।

কলেজ জীবনেই তিনি বামপন্থী ভাবধারায় শ্রদ্ধাবান ছিলেন কিন্তু পার্টিতে যোগদান করেন আরও পরে।
নকশালবাড়ী আন্দোলন শুরু হতেই তিনি নকশালবাড়ী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে থাকেন। ১লা মে
১৯৬৯ এ প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদী লেলিনবাদী
(CPI ML)। তিনিও তাঁর সংগঠনকে
নিয়ে পার্টিতে যোগ দেন।

১৯৬৮ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বৈরাচারী কার্যকলাপের ফলে ছাত্রদের উপর দমন-
পীড়ন শুরু হয়। তারই প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন কবি কাঞ্চন কুমার। সপ্রাজিত মজুমদারের লেখা একটি
পথনাটিকা “সঞ্জয় উবাচ”, দিল্লীতে কনৌট প্লেসে,
BHU এবং দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিলে অভিনয়
করেন, যা তখনকার ছাত্রসমাজ এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রভূত সাড়া জাগায়। কবি কাঞ্চন কুমার,  উত্পল
দত্তের পথনাটিকার ধরণে প্রভাবিত হয়েই “সঞ্জয় উবাচ” পরিচালনা করেন। উত্তর ভারতে,  কোনো
আন্দোলনে পথ নাটিকাকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন সম্ভবত কাঞ্চন কুমারই  প্রথম
(নওভারত টাইমস, ২০ ডিসেম্বর ১৯৬৮)।

কলেজে পাঠরত অবস্থায় তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হোতো হিন্দী পত্রিকা “মরাল”। মরাল-এর "নওলেখন
অঙ্ক" সংখ্যায় (জানুয়ারী ১৯৬৫) প্রকাশিত করেছিলেন বাংলার কৃত্তিবাস পত্রিকা এবং
হাংরি আন্দোলনের
সাহিত্যিকদের লেখা। তাদের মধ্যে ছিলেন
সুনীল গাঙ্গুলী, শ্যামল গাঙ্গুলী, তারাপদ রায়, হাংরী আন্দোলনের
মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় সহ বহু প্রতিষ্ঠিত বাঙালী সাহিত্যিক।

তাঁর সম্পাদিত আরেকটি হিন্দী পত্রিকা “আমুখ”। এই পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করেই বেনারস হিন্দু
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে উপরোক্ত আন্দোলনে নামতে হয়েছিল ছাত্রদের। এই "আমুখ" পত্রিকাটির
অনিয়মিতভাবে ৪৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল (১৯৬৫ - ২০০২)। বিভিন্ন হিন্দী এবং ইংরেজী সংবাদপত্রে
সেই আন্দোলনের কিছু ক্লিপিংস আমরা কবির অনুমতিক্রমে এখানে প্রকাশ করলাম। সেই সব ক্লিপিংস
পড়তে
এখানে ক্লিক করুন

১৯৭০ সালে তিনি প্রথমবারের জন্য কারারুদ্ধ হন হিন্দীতে দুটি বই প্রকাশিত করবার  অপরাধে! একটি
"নকসলবাড়ী আউর সহী লেখকোঁ কী প্রতিবদ্ধতা" এবং "লাল তড়াই" যা তিনি অনল গুপ্তের লেখা বাংলায়
"রক্তের রং" এর অনুবাদ করেন। কবি, দ্বিতীয়বার কারারুদ্ধ হন ২৭ জুন ১৯৭৫ তারিখে, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী
ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী অবস্থা লাগু হবার পর দিন সকালেই, বেনারসে!   

নকশালবাড়ী আন্দোলন ধাক্কা খেলেও, তিনি তাঁর বিশ্বাসে অবিচল থেকেছেন। মানুষের উত্তরণের  জন্য
সেদিন যে পথ বেছে নিয়েছিলেন, সেই পথই যে সঠিক পথ ছিল, তা তিনি এখনও মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন।
তার পর থেকে তিনি লেখা পড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন।

২০০১ সাল থেকে তিনি কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। অকৃতদার এই মানুষটিকে বিয়ে না করার কারণ
জিজ্ঞেস করতে বলেন যে ভেবেছিলেন নকশালবাড়ী আন্দোলন সফল হয়ে নতুন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হ’লে
পরেই তিনি বিয়ে করে থিতু হবেন! কিন্তু আন্দোলন ধাক্কা খাওয়ায় তা আর হয়ে ওঠে নি!

তিনি মূলত গদ্য-সাহিত্যের রচয়িতা। বাংলা সাহিত্যে অনুবাদক হিসেবে তাঁর  ভূমিকা বিশাল। তাঁর,
হিন্দীতে অনুবাদের মধ্যে রয়েছে
সুকুমার রায়ের “হযবরল”, “পাগলা দাশু”, শিবরাম চক্রবর্তীর “যখন তারা
কথা বলবে” নাটক, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের “আগন্তুক” নাটক,
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "ছোট বকুলপুরের
যাত্রী", "হারানের নাতজামাই" সহ বহু বাংলা গল্প, পরশুরামের রচনা প্রভৃতি।
হাংরী আন্দোলনের  মলয়
রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় সহ বহু প্রতিষ্ঠিত বাঙালী সাহিত্যিকদের রচনা অনুবাদ করে তিনি হিন্দী
পাঠক-পাঠিকাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

অন্যান্য ভাষার সাহিত্যিক, যাঁদের তিনি বাংলার পাঠকের সঙ্গে পরিচিত করিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন
ওয়ার ওয়ার রাও (তেলুগু), গদর (তেলুগু), শহিদ পাশ (পাঞ্জাবী), গোরখ পাণ্ডে (হিন্দী), সুব্বারাও পাণিগ্রাহী,
গুগি-ওয়া থিয়ঙ্গো প্রমুখ।

তাঁর নিজস্ব রচনা সম্ভার বিপুল। তার মধ্যে রয়েছে কেদার-বদ্রির বর্ণনা নিয়ে ট্র্যাভেলগ্ “পাষাণ কন্যা”, ৭০
থেকে ৮০-র দশকের সময় কে নিয়ে তাঁর দীর্ঘ কবিতা "ঘোষণাপত্র" (হিন্দী ও বাংলায়) (১৯৮০) প্রভৃতি।
বাংলায় এই  কবিতাটি নিয়ে তিনি প্রকাশিত করেন তাঁর প্রথম বাংলা কাব্যগ্রন্থ "সদর দপ্তরে কামান দাগা
পোস্টার" (২০০২)। আরো রয়েছে "থকে হুয়ে" (উপন্যাস), "অনজানদ্বীপ বদনাম ঘাটি" (কিশোর উপন্যাস),
"রাগ-বিরাগ", "স্মারক" (গল্প), "শোকসভা" (ব্যঙ্গরচনা), "কোচিং ক্লাস", "বন্দরগাহ" (একাঙ্ক সংকলন),
"চল মেরে ঘোড়ে", "নটখট জব্লু" (শিশু সাহিত্য), "জনবাদী চেতনা ঔর সাহিত্য", "নকসলবাড়ী ঔর সাহিত্য",
"দ্য আদার হরাইজন" (প্রবন্ধ সংকলন), "সত্তা কে সঙ্গীনোঁকে খিলাফ", "আর কত ঘুমাবে গো ভালোমানুষের
পো" (গোরখ পাণ্ডে), "তেলেগু কবিতায় লাল পতাকা" (অনুবাদ), "জনযুদ্ধকে রুখতে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ"
(সম্পাদনা), প্রভৃতি।

তাঁর সম্পাদনায় রয়েছে "আহ্বান" (বাংলা), "নাগফণী" (হিন্দী ব্যঙ্গ পত্রিকা), "মরাল" (হিন্দী  মাসিক), "
ZERO"
(ইন্দিরা মুদ্রারাক্ষসের সঙ্গে) সাপ্তাহিক, "আমুখ" (হিন্দী), "
Spring Thunder" (কে ভি আর ও গদরের সঙ্গে),
"হাওয়া ৪৯"-এর (অনিল করঞ্জাই সংখ্যা)

সম্প্রতি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-লালগড় আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন বহু কবিতা এবং সম্পাদনা করেছেন একাধিক
পত্রিকা। তার কিছু কিছু আমরা মিলনসাগরে, আন্দোলন চলাকালীনই সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। সিঙ্গুর
নন্দীগ্রামের সময়ে তাঁর লেখা ব্যঙ্গাত্মক ছড়া, “মালিক”-এর ছবির সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল। তা থেকেও
আমরা কিছু ছড়া এখানে তুলে ধরছি, ছবি সমেত।

হিন্দী ও বাংলায় তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ এবং সম্পাদিত পত্রিকা ও সংকলনের সূচি বিপুল। আমরা তার থেকে
কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার মলাটের ছবি এখানে তুলে ধরেছি।
সেই পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন

তাঁর সাম্প্রতিক সম্পাদিত গ্রন্থ ও পত্রিকার মধ্য রয়েছে “নকশালবাড়ী ও সাহিত্য” (২০০৬),“অসময়ের
ইতিকথা” (২০১০), “যুদ্ধে ছিলে স্বপ্নে আছো” (২০১২) প্রভৃতি।

তিনি বিভিন্ন সংঘটনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি দিল্লীতে পিপল্স ইউনিযন ফর ডেমক্র্যাটিক রাইটস (পি
ইউ ডি আর)-এর কার্যনির্বাহী সদস্য, দমন বিরোধী মোর্চার আহ্বায়ক, সেভ গঞ্জালো কমিটির  আহ্বায়ক,
দিল্লী জনবাদী অধিকার মঞ্চের সদস্য, সারা ভারত বিপ্লবী সাংস্কৃতিক লীগের
(AIRLC)-র যুগ্ম সম্পাদক আর
কলকাতার বন্দী-মুক্তি কমিটির সদস্য।

তাঁর কবিতা হাতে পেলেও কবির সাথে পরিচয় হ'তে আমাদের এতদিন লেগে গেল! তাই আমাদের
ওয়েবসাইটে কাঞ্চন কুমারের কবিতা থাকা সত্ত্বেও তাঁর আলাদা কোনো পাতা প্রকাশিত করতে পারি নি।
এই ত্রুটি সংশোধিত করতে পেরে আমরা আনন্দিত।


আমরা
মিলনসাগরে  কবি কাঞ্চন কুমারের কাছে কৃতজ্ঞ, আমাদের একটি সাক্ষাত্কারের সুযোগ দেবার জন্য
এবং আমাদের ওয়েবসাইটে তাঁর কিছু কবিতা নিবাচন করে দেবার জন্য।

কবি কাঞ্চন কুমারের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন

কবির সঙ্গে যোগাযোগ -
চলভাষ - +৯১৯৮৩১১৪৭৪১৯
ঠিকানা - ১০/১ ইব্রাহিমপুর রোড, যাদবপুর, কলকাতা ৭০০০৩২


উত্সঃ - কবি কাঞ্চন কুমারের সঙ্গে, ৬ ও ৭.৩.২০১২ তারিখের সাক্ষাত্কার, তাঁর যাদবপুরের বাসায়।
মিলনসাগরের পক্ষে সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন মিলন সেনগুপ্ত।

আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতার প্রকাশ - ১০.০৩.২০১২
...
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,
কনকভূষণ মুখোপাধাযায়
যতীন্দ্রমোহন বাগচী,
কুমুদরঞ্জন মল্লিক,
কালিদাস রায়,
উদয়চন্দ্ মহাতব্,
রবীন্দ্রনাথ সেন,
রাধারাণী দেবী,
নরেন্দ্র দেব,
হেমচন্দ্র বাগচী,
লীলা দেবী,
কবি কাঞ্চন কুমার - জন্মগ্রহণ করেন বর্ধমান জেলার পানাগড় ও দুর্গাপুরের মাঝে অবস্থিত “বিরুডিহা”
গ্রামে। তাঁর পদবী মুখোপাধ্যায়। পিতা
কনকভূষণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন স্বনামধন্য কবি। তাঁর রচিত কবিতা
“চারণ” এবং “লীলাময়ী” যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। মাতা অন্নপূর্ণা দেবী ছিলেন হার্টের রুগী। কবিকে
যখন নকশালবাড়ী আন্দোলনের সময়, আত্মগোপন করে অন্যত্র থাকতে হচ্ছিল, তখন অন্নপূর্ণা দেবী,
তত্কালীন সরকার ও কংগ্রেস দলের আশ্রিত গুণ্ডাদের মানসিক অত্যাচারের ফলে, মারা যান।
এই নামগুলির উপরে মাউসটি রাখলেই ভেসে উঠবে তাঁদের লেখা শিশু কাঞ্চনকুমারকে পাঠানো আশীর্ব্বাদী কবিতা। মাউস ক্লিক
করলে সেই সব কবিদের পাতায় চলে যেতে পারবেন, যাঁদের কবিতার পাতা আমাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে।   
এর মতো মনীষীদের নাম।