কবি কাঞ্চনকুন্তলা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
অভঙ্গ
কবি কাঞ্চনকুন্তলা মুখোপাধ্যায়

টাউনের কথা কয় গাঁয়ের খঞ্জনা
কতকাল এসেছে সে গ্রাম ছেড়ে
.                অন্ধকার বট
কখন পেছনে রেখে
বেনাচিতি ঝোঁপের আড়ালে
বাসা তার, বাসার ভিতরে ছিল ডিম।

চন্দন বেতোর ঝাড়ে পৌরাণিক পদ্মগোখুরার
চালচিত্রে আজ শুধু অভঙ্গ বাংলার
ভাঙাপট,
চারধারে ধূলোর আলপনা,
এখন সে-সব ঘরে দিন গেলে জ্বলে না পিদিম।

.         *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
গ্লানি
কবি কাঞ্চনকুন্তলা মুখোপাধ্যায়

আমাকে আমেয় এক পিপাসার মধ্যে রেখে
কে যেন মনের থেকে
মননের শুঁড়িপথ দিয়ে
জলপাইয়ের বনে চলে গেল।

চঞ্চলিত মর্মরিত বলে খুব খ্যাতি ছিল
.                        জলপাই পাতার,
এখন সেখানে স্তব্ধ কঙ্কাল বনস্পতি
ডাইনি লতা যত ;
অখ্যাতি কুখ্যাতি আর ফিসফাস কথাই অবিরত

বহুদিন দেখা নেই তার।

.         *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বৈকালিক
কবি কাঞ্চনকুন্তলা মুখোপাধ্যায়

দুপুরে ভীষণ বৃষ্টি হয়ে গেছে
.                এ-বৃষ্টিতে ঘরে থাকা ভালো
কথা তবু বিকলো না হাটে,
উবু হয়ে চুপচাপ বসে থাকে তেরাস্তার ধারে।
রৌদ্রজীবী কাকগুলি সারাদিন বাধা পেয়ে
.                        মেঘের পাঁচিলে
নিরুত্সক, বোবা
ক্রমশ মাটির থেকে, মেঘ থেকে পৃথিবীর
.                        অন্ধকার বিভা
ফুটে ওঠে।
.        বহুদূর চেয়ে দেখে রাজপথ

ভিজে ম্লান বাড়ির প্রতিভা,
পিছন-বাগানে জল আমরুলের পাতায় অথবা
কোনো এক হাফপ্যান্ট-কিশোরের মত হেসে
.                        বিকেলের আলো
লাফাতে লাফাতে ফের চলে যায় ফুটবলের মাঠে।

.    
        *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অথর্ববেদ
কবি কাঞ্চনকুন্তলা মুখোপাধ্যায়

কমলফুলের গন্ধে কতদিন বসে নি আসর
আটচালায়, মহামায়াতলা
পড়ে থাকে, বিজন মন্দিরে ঘাস, ফাটলে দুর্বার
নুন ঝরে ; বয়স হয়েছে পৃথিবীর
স্নায়ুতে বিচিত্র শ্রান্তি, কবে রজস্বলা
ছিল, আজ ধূমাবতী ; জরাজীর্ণ সময়ের ভার

অথচ এ পৃথিবীর মন ছিল আকাসের দিকে
একদিন
পাতাল ক্রমশ আজ করে আসে ভীড়
আকাশে রোদ্দুর নেই,
.                অবসাদ, খড়।

.            *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বীজাঙ্কুর সবুজ উপত্যকায়
কবি কাঞ্চনকুন্তলা মুখোপাধ্যায়

বীজাঙ্কুর সবুজ উপত্যকায়
এসো আমরা হাঁটি।
উপত্যকার এ-প্রান্তে ও প্রান্তে
আমরা দু’জন স্বজন-পরিজন
দুই প্রদেশের পায়ের তলার মাটি,
সর্বাঙ্গীন পৃথক, তবু,
.                আমরা দু’জন বেরিয়ে এসে
.                এই সবুজের অমোঘ বীজাঙ্কুরে
মিল পেয়েছি, উভয়ত
নক্ষত্রের অসীম বিশ্বজুড়ে।

.         *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিনিময়
কবি কাঞ্চনকুন্তলা মুখোপাধ্যায়

চলো, তোমাকে নিয়ে যাই
এক ঝুপঝুপে গ্রামে,
বৃষ্টি পড়ছে, দু’ধারে বাঁশঝাড়
অন্ধকার মায়াময়---
এসো
এই নিদারুণ রৌদ্রদিন পেরিয়ে
সোঁদা মাটির কাছাকাছি
আউচ ফুলের গন্ধে ম ম . . .
বাঘ-ভেরেণ্ডা ঝোপের পাশে
গোয়াল-বাড়ি,
খড়ে চালে শিশু চালকুমড়ো
ঘুমিয়ে রয়েচে নিশ্চিন্তে ;
একটি বার ঘুরে এসো সেই আঁধার-গাঁয়ে . . .

সন্ধে হলে আলো জ্বলে না,
চলো
তুমি নেবে তার স্নিগ্ধতা,
জ্বেলে দেবে এক চিলতে টেমি
ওদের ভেতরের ঘরে,
অন্ধকার উঠোনে।

.  *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর