করিমুন্নেসা খানম  - জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার
পায়রাবন্দ গ্রামে। পিতা জাহিরউদ্দীন মহম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের এবং মাতা রাহতন্নেসা সাবেরা
চৌধুরানী।
বেগম রোকেয়া কবির ছোট বোন ছিলেন।

পিতা জাহিরউদ্দীন মহম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের নিজে ছিলেন জ্ঞানপিপাসু মানুষ, তাই তিনি তাঁর
সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য উত্সাহ ছিল প্রচুর। কিন্তু সামাজিক গোঁড়ামীর ঊর্দ্ধে তিনি উঠতে পারেননি। তাই
পিতৃগৃহে করিমুন্নেসাকে কঠিন পর্দাপ্রথার ভেতরেই কাটাতে হয়েছিল। একদিন গোপনে পুঁথি পড়তে গিয়ে
তিনি পিতার কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে যান। ১৮৬৯ সালে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় সাবেক
ময়মনসিংহ জেলার দেলদুয়ারের জমিদারবাড়ীতে আবদুল হাকিম গজনভীর সঙ্গে।

মাত্র নয় বছর বিবাহিত জীবনযাপনের পরে দুটি পুত্র সন্তান রেখে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্বামী
পরলোক গমন করেন। দুই কৃতী পুত্র স্যার আবদুল করিম গজনভী এবং আবদুল হালিম গজনভীর
শিক্ষাজীবনের সাফল্যের ক্ষেত্রে মা করিমুন্নেসার লড়াই ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত সে যুগে বিরল ছিল। স্বামীর মৃত্যুর
পর তাঁকেই তাঁর জমিদারীর হালও ধরতে হয়। এরই কোনো সময়ে তাঁর গজনভী এস্টেটের ম্যানেজার হয়ে
কাজ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের আরেক দিকপাল সাহিত্যিক মীর মোশার্রফ হোসেন।

করিমুন্নেসা খানম অনেক গুণের অধিকারিণী ছিলেন। তিনি নিজের চেষ্টায় আয়ত্ত করেছিলেন আরবী, ফারসী
ও বাংলা। তাঁর বিদ্যাশিক্ষার প্রতি আগ্রহই শুধু নয়, তাঁর সাহিত্যপ্রতিভাও উল্লেখের দাবী রাখে।
করিমুন্নেসা তাঁর সমকালীন অনেক প্রগতিশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছোট বোন
বেগম রোকেয়ার (ডাক নাম রকু) জীবনে তাঁর দাদা আবোল আসাদ ইব্রাহিম সাবের এবং দিদি করিমুন্নেসার
অবদান ছিল অপরিসীম। বেগম রোকেয়াকে তিনিই বাংলা ভাষা শিখিয়েছিলেন।
বেগম রোকেয়া তাঁর
বিখ্যাত “মতিচুর” গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডটি বড় বোন করিমুন্নেসার নামেই উৎসর্গ করেন। উত্সর্গ-পত্রে বেগম
রোকেয়া লিখেছিলেন . . .

আপাজান!
আমি শৈশবে তোমারই স্নেহের প্রসাদে বর্ণপরিচয় পড়িতে শিখি। অপর আত্মীয়গণ আমার উর্দ্দু ও পারসী
পড়ায় তত আপত্তি না করিলেও বাঙ্গালা পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। একমাত্র তুমিই আমার
বাঙ্গালা পড়ার অনুকূলে ছিলে। আমার বিবাহের পর তুমিই আশঙ্কা করিয়াছিলে যে আমি বাঙ্গালা ভাষা
একেবারে ভুলিয়া যাইব। চৌদ্দ বছর ভাগলপুরে থাকিয়া, বঙ্গভাষায় কথাবার্ত্তা কহিবার একটি লোক না
পাইয়াও যে বঙ্গ ভাষা ভুলি নাই, তাহা কেবল তোমারই আশীর্ব্বাদে। অতঃপর কলিকাতায় আসিয়া ১১
বত্সর যাবত এই উর্দ্দু স্কুল পরিচালনা করিতেছি ; এখানেও সকলেই---পরিচারিকা, ছাত্রী, শিক্ষয়িত্রী ইত্যাদি
সকলেই উর্দ্দুভাষিণী। প্রাতঃকাল হইতে রাত্রি পর্য্যন্ত উর্দ্দু ভাষাতেই কথা কহিতে হয়। আবার বলি, এতখানি
অত্যাচারেও যে বঙ্গভাষা ভুলিয়া যাই নাই, তাহা বোধহয় কেবল তোমারই আশীর্ব্বাদের কল্যাণে! স্নেহ
ভক্তির নিদর্শন স্বরূপ এই গ্রন্থখানি তোমার করকমলে সমর্পণ করিতেছি, গ্রহণ করিলে ধন্য হইব। এ পুস্তকে
তোমার বড় সাধের “ডেলিশিয়া হত্যা”ও দেওয়া হইয়াছে।

করিমুন্নেসা স্বভাবকবি ছিলেন। পারিবারিক ঘটনা এবং সামাজিক বিষয়ে অনেক কবিতা লিখেছিলেন।
বেনামিতে তাঁর কবিতা সেকালের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শুধু কবিতাই নয় বেনামীতে
সেকালে তাঁর বইও প্রকাশিত হয়েছিল বলে শোনা যায়। বাংলায়, সেকালের হিন্দু এবং ব্রাহ্ম সমাজের
মহিলাদেরও অন্য নামে বা ছদ্মনামে কবিতা, লেখা ইত্যাদি প্রকাশ করার রেওয়াজ ছিল, সামাজিক
গোঁড়ামির কথা মাথায় রেখেই। ঠাকুর পরিবারও এর থেকে বাদ যায়নি।
রবীন্দ্রনাথের দিদি স্বর্ণকুমারী
দেবীর
( ১৮৮৫ -১৯৩২ ) প্রথম দিককার লেখা “দীপ নির্বাণ রচয়িত্রী” নামে প্রকাশিত হয়।

আমরা কৃতজ্ঞ কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সইফুল্লা-র কাছে যিনি আমাদের কবির “আত্ম-
সমর্পণ” শিরোনামের কবিতাটি তাঁর সংগ্রহ থেকে আমাদের দিয়েছেন।


আমরা মিলনসাগরে  কবি করিমুন্নেসা-র কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এই
প্রচেষ্টাকে সার্থক মনে করবো।


কবি করিমুন্নেসা-র মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


উত্স - ডঃ মীরাতুন নাহারের সম্পাদনায় “রোকেয়া রচনাসংগ্রহ”, ২০০১।
.         অধ্যাপক সইফুল্লা, অধ্যাপক, বাংলা,
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা
.         
ওয়েবসাইট সোসিয়ালবাংলা


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতা প্রকাশ - ২৯.৬.২০১৪
...