১৭ই জুন রোববার রোববার সকালে জনসমক্ষে দু’ভায়ের ফাঁসি হয়ে গেলো | ঠিক সে সময়ে ঝড় উঠলো, আর দুই ভাই দোল দোল খেতে খেতে ফিসফিস করে বলতে লাগলো : মানুষগুলো কি বোকা ! মানুষগুলো---
কী করেছিলো দু’ভাই ? কিচ্ছু না | শুধু মাংসগুলো মাটি হয়ে যাচ্ছে দেখে কবরখানায় গিয়ে, খুঁড়ে, থাই, পাছা, মাই চুপিচুপি তালতাল কেটে নিয়ে এসে মৌরি | শুধু মৌরি নয়, মেথি, কিছুটা জিরেও, ভাজা |
ইটালিয়ান কুইজিনির ব্যাপারস্যাপার, যাক্ তারচেয়েও যে ভালো চাইনীজ, ওরা জানতো, তাছাড়া, মেধা বলে তো একটা বস্তু আছে, আইডিয়া, কতটুকু শুকনো লংকায় কতটুকু বা নিমক, ঝাঁঝঅলা সরষের তেলে গ্রাইন্ ড না ক’রে, পিষে
শুধু পিষে নয়, ভেজে, অল্প আঁচে ভেজে পুর দিয়ে ‘বানরুটি’ সস ও সালাডে যখন পরিবেশন করতো নিজস্ব দোকানে, ‘গুলমোহর’ তারিফ উঠতো হেভী, ঘুচে যেতো দারিদ্র্য, আনন্দে লাল সূর্য মাথায় করে নাচতো দু’বেলা |
চেলাকাঠে বাড়ি খেয়ে ১৭ই জুন, রোববার রোববার সকালে জনসমক্ষে দু’ভায়ের ফাঁসি হয়ে গেলো | ঠিক সে সময়ে ঝড় উঠলো, আর দুই ভাই দোল খেতে খেতে ফিসফিস করে বলতে লাগলো : মানুষগুলো কি বোকা ! মানুষগুলো----
কে এই পিরি ? কে এই সাইমন ? ল্যাপল্যাস ? পিরি সাইমন ল্যাপল্যাস ?
১৮২৭ আজ বড় ভীড় তাঁর ছোট্ট ঘরে শুয়েছেন তিনি চারদিকে ছাত্র, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিজন শেষ শ্বাস ফেলবার সময় আসন্ন কেউ বলছে ---- মহাশয় আপনার আবিষ্কার , একের পর এক আবিষ্কার তুলনাবিহীন কেউবা বলছে---- আপনার গাণিতিক গ্রন্থ সব আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম কাটিয়ে দেবে বিস্ময়ে বহুদিন সবাই উচ্ছ্বসিত, বুঝিবা প্রীত, প্রশংসায় এমন বরেণ্য শোভা দেখাই যায় না |
শায়িত বৈজ্ঞানিক তবুও করুণকন্ঠে বললেন না, ওসব এমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে ? তবে কি ? অধীর আগ্রহে জিজ্ঞাসা করলেন ফ্রাঁলায়া সোমার্ভ অ্যান্ড দ্য ওল্ড সুপার ম্যান, ফাইটিং ওয়ান মোর ব্রেথ, অ্যানসার্ড --লাভ |
যদিও আনন্দে ছিলো, মহিমায়, তবু, বিয়ে করার সতেরো বছর দুমাস দুটো দিন পরে বউ বললো, তোমার নাকটা যে প্ল্যাসটিকের, অস্বীকার করতে পার ? তোমার কানটা যে প্ল্যাসটিকের অস্বীকার করতে পার ? ঠোঁট, উপরের মাড়ি এবং আলজিভও যে প্ল্যাসটিকের প্ল্যাসটিক সার্জারীর অস্বীকার করতে পার ?
আমি বললাম, ন্না
তুমি এতোদিন আমাকে তাহ’লে ঠকিয়েছো, বলো
আমি বললাম, ন্না
না-আ ? সে কি ! তোমার নাকটা তাহ’লে প্ল্যাসটিকের-----
কখনো বলেছি বুঝি, নয় ? শোনো, জ্ঞান হলো এক হারামজাদা, তুমিও হারামজাদার পাল্লায় পড়েছো | শোনো ওর মতো সতীত্বহরণকারী রাঘববোয়াল আর নেই | গৌতমমুনির কথা ভাবো | জ্ঞানের উন্মেষ হ’লে অহল্যা পাষাণী হ’য়ে গেলো | তুমিও অহল্যা হবেনা তো, বউ ?
মীরজাফরের কবর দেখলাম, দেখে বড় দুঃখ হলো | শ্বেতপাথরগুলোয় একটুও শ্বেত নেই, শ্বেতী হ’য়ে আছে | দূরে দুটো হনুমান, সত্যিকার হনুমান, যাদেরকে চোখে দেখলে পরে মনে হবে, ওরা আমাদেরই বংশধর কিংবদন্তীর কাছে |
মীরজাফরের কবর দেখলাম, দেখে মনে হলো এই সেই মহান পুরুষ যে ইংরেজ এনেছে, এনে জন্ম দিলো একে একে রামমোহনের, ঈশ্বরচন্দ্রের, এবং ট্যাগোর, এবং অনেকে মিলে রেলওয়ে টেলিগ্রাফ জাতীয়তা সংবাদপত্রের | সবই জলসেচে জলসেচে
একদিন ইস্পাতে ইস্পাতে কার্ল মার্ক্স, কয়লায় কয়লায় কার্ল মার্ক্স, বেঁচে | দেখলে কি মনে হবে না ? ওরা আমাদেরই বংশধর কিংবদন্তীর কাছে |
পুরুষটির কাঁধে বাঁক | তার দুই প্রান্তে দড়িতে ঝুলছে দুটি ডালা | পেছনের ডালায় মাদুর হাঁড়ি কাস্তে আর ভুট্টা | সামনের ডালায় একটি শিশু, বাঁকে একটি বাঁশি শুধুই |
পুরুষটির বাঁয়ে যে রমণী তার বাঁ কাঁখে মাই-খাব-খাব-করছে আরো একটি শিশু, রমণী ডান হাতে ধরে আছে মাথায় ঝুড়ি, তার উপরে দেখা যাচ্ছে তালপাতার চাটাই, রাত্তির হ’লে শোবে, ভুট্টা পুড়িয়ে খেয়ে শোবে, আর, সামনের ডালার কাছে যে কুকুর চুপচাপ হেঁচে যাচ্ছে, সেও |
রাঢ় দেশের এই পারিবারিক জীবন ৪৭ বছরের | কর্কশ প্রস্তর যুগ থেকে মসৃণ তাম্রযুগে পৌঁছুতে রামকিঙ্করকেই মনে পড়ে | লোহার কাঠামোয় তাল তাল সিমেন্টের তাগাড় সেই ঝলসানো রোদ্দুরে ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছেন, আর গাইছেন, ‘দারুণ অগ্নিবাণে রে’----- সঙ্গে নন্দলাল, সঙ্গে চা ও বিড়ির বান্ডিল
ফুঁকছেন | কিছুই আশ্চর্য নয় | ৪৭ বছর পরে সেই সাঁওতাল পরিবারে
১০৪০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে গলানো ব্রোঞ্জ ঢালা হয়েছে মাথায়, বুকে, পেটে সর্বাঙ্গে ; ছেলেটা একটুও কাঁদেনি কুকুরটা একটুও ডাকেনি শুধু, ভুট্টার দানাগুলো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হলে জ্বালানি কাঠ-ই লেগেছে ৮০ টন প্রতি টন ৪৫০ টাকা এছাড়া, ৫০ টাকা কেজি দরে ৮০০ কেজি মোম ১২০০ টাকা দরে ১৫ টন প্লাস্টার ২০ হাজার টাকায় ওয়েল্ডিং রড হাত-করাতের ৫০০ ব্লেড ছাড়াও দড়িদড়া, তার, শিক, লোহার অ্যাঙ্গল, টি |
কী তুমি বলতে চাও ? রামকিঙ্করের সাঁওতাল পরিবার এখন দিল্লী যাবার জন্য তৈরী | শুধু প্রস্তর যুগের ৫০০ টাকা তাম্র যুগে ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেলেও ৪ টন ওজনের ব্রোঞ্জ ৫৫ টাকা দরে কিনতে কি পারে, বোলপুর ? বীরভূমের শালবন ? ঘোড়ানিম ? সেগুনে গাছ ? লাল পলাশ ? ঝরনার জল জলের তিতির ? ঠাঠা রোদ্দুরে ? কোদালের ঘাই ? বাঁশির আওয়াজ ? ঘামতেল ? ধুলো ?
সন্ধ্যা ফুরোতেই অকারণ তুমি চ’লে গেলে বাড়ি | রাত্তিরে কেমন থাকি, তুমি জিজ্ঞেস করলে না ব’লে আমিও দিইনি উত্তর, শুধু যে ব’লেছি নির্জনে অনেক কথার কথা মন্ত্রণার মন্ত্রপূত জলে | এই নিয়ে দিন কাটে, চুল দাড়ি সবই পাকে, মিড় অনন্ত সৌন্দর্য নিয়ে একা একা এসেছে গোপনে | তাকে যদি সত্য বলি | সে সত্য স্বীকৃত তথ্য নয় ভয় হয় মনে আমি একান্তই বংশবদ ঋণে |
কিন্তু ওরা আমাকে দক্ষিণা ভাবে করতলগত | উঠেছে নক্ষত্রপুঞ্জ, বায়ুভরে জ্বলছে নিভেছে, আমিও লৌকিক স্বরে আড়ম্বরে চেয়েছি নিভৃত অকরুণ প্রার্থনার মতো | ততো হিম জলায় ডুবেছে
সন্ধ্যা ফুরোতেই অকারণ তুমি চ’লে গেলে বাড়ি ঘোড়া নেই, ধনুর্বাণ, ভেঙে আছে শেষ তরবারি
যদি শোনো আমি আর নেই, ম’রে গেছি, কেঁদোনা বরং বুক ভ’রে শ্বাস নিয়ো, দেখ, সমুদ্র হাওয়ার গন্ধ পাও কিনা শরীরে তোমার !
রাত্তিরের যে নিজস্ব আলো আছে নক্ষত্রখচিত শব্দ আছে সতীদেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্যের রূপ আছে ব্রহ্ম-অস্ত্রে ছিন্ন-করা সেই একান্ন খন্ডের দেখ দেখি পাও কিনা শরীরে তোমার !
যদি শোনো আমি আর ‘নেই’, ম’রে গেছি, কেঁদোনা বরং সহাস্য-সবুজ পাড় গরদের শাড়িখানা প’রে নিয়ো, নিয়ে ছাদে উঠে অঞ্চল উড়ায়ে দিয়ে ছড়াও কুন্তল, তখুনি তো মেঘডম্বুরুর মতো জলদগম্ভীর স্বর সহস্যসুন্দর দেখ দেখি পাও কিনা শ্রুতিতে তোমার ! যদি শোনো --ও--ও
সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কী ? মানুষের ? কেউ বললো : ঈশ্বর কেউ বললো : আগুন কেউ বললো : চক্র, সুদর্শন চক্রের মতনই যা ঘোরে | কেউ বা বললো : ইলেকট্রনিকস স্যার, ইলেকট্রনিকস, যার শিল্প-সম্ভাবনা সুদূর |
আমি বললাম : তা নয় | বড় হলো, সবচেয়ে বড় হলো--- যে কাজে মানুষের মন বসে না, যে কাজ বিরক্তিকর, একঘেঁয়ে, মনোটনাস, মনোবেদনার কারণ, হতাশা আর দুশ্চিন্তার ভরে তোলে, এককথায় ঘৃণ্য, অথচ যা করতেই হয়, হবে, সেই কাজে আনন্দ আনন্দের আবিষ্কার, আবিষ্কারই হলো সবচেয়ে বড়, মানুষের |
এর ঠিক দু’মাস পরে একটি বউ, অসাধারণ ব’লেই মনে হলো হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে ঘরে ঢুকলো, বিনা কৈফিয়তে আমার পায়ের উপর রাখলো, বললো : আমি অনিন্দিতা, আনন্দ আমার বর, ব’লেই যেমন এসেছিলো, চ’লে গেলো | অথচ, আশ্চর্য, সেই ফুল এখনো পায়ের ওপরেই, সেইরকমই সুন্দর, সেইরকমই গন্ধবাহী, সেইরকমই তাজা |
১ যে নারী রন্ধন জানে ভালো-মন্দ অনেক কিছুই যে নারী গুছিয়ে রাখে আলনা ও ওয়ারড্রোব পরিপাটি খুব য়ে নারী ধৌত-বিদ্যায় ডি-লিট, কাপ ও ডিশ, এসব প্রচুর মেজে ঘষে ধুয়ে মুছে ঝকঝক তকতক, তার
কাছে ঋণী তো বটেই, কিন্তুচিনি নাহ’লে চা ভালো লাগে ? বলিনি বলিনি বিবাহ করেছি কিন্তু প্রেমিকা করিনি |
২ যে নারী মেয়েকে দেখাশুনা করে ন্যানির মতন স্কুলে যায়, স্কুল থেকে আনে অঙ্কন শেখায় নাচ তানপুরা হাতে নেয় ধ্রুপদী সঙ্গীতে যে নারী বিবাহে যৌতুক পাওয়া সবকটি শাড়ি বিছে হার বাজুবন্ধ সিঁথির টায়রা তুলে রাখে অতি যত্নে তুলে রাখে, কবে মেয়ে বড় হবে, তাই তাকে তুমি চেনো ? আমি চিনি উত্তর ফাল্গুনী জানে তাকে আমি বিবাহ করেছি, কিন্তু প্রেমিকা করিনি |
৩ যে নারী এখনো ঘোমটা দেয় অন্ততঃ খোঁপায়, যেন সেই রহস্যজনিত রসালো মধুর যে নারী এখনো অপেক্ষায় থাকে দরোজার কোণা ধরে লাজুক লাজুক যে নারী বসিয়ে খাওয়ায় যেন-বা আমিই দেবতা যে নারী অসুখে রাত্রিও জেগেছে, জেগে থাকে উদ্বেগজনিত যে নারী বোনের মতন বন্ধুর মতন মায়ের কখনো কখনো তাই
কখনো কখনো, সারাক্ষণ নয় তুমি তাকে চেনো ? আমি চিনি কিঙ্কিণি বাজায়ে গেলে আমি তাকে বিবাহ করেছি কিন্তু প্রেমিকা করিনি |
৪ যে নারী বাত্স্যায়ন নিয়ে এলে পাণিনির গর্ভগৃহে যায় সন্ধ্যাদীপে আলো মাখে, তুলসীতলায় নত, সতত দক্ষিণে পঞ্চমুখী মুখ রাখে প্রতিমার, মঙ্গল আরতি করে, কেনে শঙ্খ, কারুকার্যময় চাবিকে আঁচলে বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে ফুঁ দেয় দু’বার তিনবার, পরে পিতলের কোশাকুশি জল ভরে গঙ্গাজল. ছিটোয় অমৃতধারা, তিনি আমার কে ? গরদের শাড়ি-পরা, লাল পাড় শাড়ি-পরা তিনি আমার কে ?
ইনিই তো যাজ্ঞসেনী, বিবাহ করেছি কিন্তু প্রেমিকা করিনি |
৫ যে নারী আঙুল পুড়িয়ে দেখছে সতীদাহে যাবে কি না যাবে, একা একা, অগ্নির দহনশক্তি কত তীব্র, কতটা ধারালো, যতোই বোঝাই, বউ, ততোই সে চেয়ে থাকে পলকবিহীন এ কোন্ উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি, অথচ মিষ্টি ও মধু ঝরেছে খানিক, ঝরেছে শিশিরবিন্দু, অশ্রুভেজা দুটি চোখে চেয়েছে অবাক আমিও যে খুশি নই তা নয়, পুরুষ তুমি এমন, এমনতরো নাকি ?
মনোবিদ্যায় বলেছে বটে এমনই, তাহলেও আমাকে তো চিনি আমি চিনি বাউল আনন্দে আমি বিবাহ করেছি কিন্তু প্রেমিকা করিনি |
৬ যে নারী পরের বউ, অথচ কারণ নেই রাগে ভাত খায়, ঘুম দেয় বিকেলে ব্লাউজ পরে আগে টিপ দেয় দশাসই, সিন্দুরে সিন্দুরে টানে সিঁথি পরিপাটি বড় খুব, অথচ যমুনাতীরে একাকিনী বসে থাকে, কেন ?
রোদনবৃক্ষের লতা সেই কথা বলেছে প্রচুর, চিনিও না, তবু চিনি কালক্রমে বিবাহ করেছি কিন্তু প্রেমিকা করিনি |
৭ যে নারী আমার বউ আমারই একার---- এ কথার কোনো অর্থই হয় না, বাজে কথা, ফালতু ও কি কানিকটা নিজের-ও নয়, আকাশের নয়, বাতাসের নয়, মাটিদেবতার ? মাঝে মাঝে অপরের নয় ? তাহলে গোপন অবসাদে কেন ভোগে এতো ? যতু মুখার্জ্জীর ছেলে জানেনি এখনো, বৌদি ব’লে ডাকে, যাওয়া আসা করে, জানেনি এখনো সঙ্গম কাহাকে কয়, বস্ত্রহরণের কাব্যে বাঁশির আওয়াজ শেখেনি তো, অঙ্গনা শব্দের অর্থ রঙ্গনায় ফুটে গোপনচারিণী আমি কি তার-ই ফুটনোট ? নারী, বিয়েই করেছি আমি বিবাহ করিনি |
৮ যে নারী দেহকে মনে করে দেবী, ফলভারে নত এক গাছ বিক্রয় করলেই টাকা, যে টাকায় বাবা মাকে দেখে ভাইবোনদের পড়ায়, মানুষ ক’রে তোলে, বিপ্লবী পাড়ায় কাজকর্ম করে, চাঁদা দেয়, রাত্তিরে কবিতা লেখে মায়াকোভস্কির মতো দিনে গল্প যেন-বা লন্ডন, কিন্তু ছাপায় না, ফেরে রাখে ফলভার নত তাকে তুমি চেনো ? তোমার পাড়ায় তাকে, এক বেণী দুলিয়ে সতত যাওয়া আসা করে চেনোই না ? তুমি বোকা, তুমি বুদ্ধু, তুমি বোকা, গালে চড় এই যে কষেছি আমি তাকে আমি তাকে আমারই পূর্ণতা দিয়ে বিবাহ করিনি কিন্তু প্রেমিকা করেছি |
৯ যে নারী বনের ধারে, বন নয়, জঙ্গল, জঙ্গল নয়, অরণ্য, অরণ্য নয়, মহারণ্যে বাস করে পাশে নদী খরস্রোতা, যে নদীতে মহাশের প্রেম প্রেম খেলা ক’রে থাকে উপরে আকাশ নীল, উত্তরে পর্বত সাদা, দক্ষিণে প্রগাঢ় সেই সমতলভূমি, বজরার চাষ হয়, চাষীদের কেউ কেউ প্রতিদিন দুধ ও আনাজ নিয়ে আসে, হরিণ শিশুরা আসে, খায়, বাঘিনীরা আসে. সঙ্গে বাচ্চা, পা চাটে গা, ভালোবাসে খুব সে নারীকে চেনো ? আমি চিনি | তার মাতাজীকে চেনো ? আমি চিনি | তারা ভূমিহারা ছিলো . একদিন, আজ নয়, দরিদ্র ব্রাহ্মণী ছিলো একদিন, আজ নয়, আজ তারা সঙ্গী ও সঙ্গিনী অনন্তের আকুলতা নিয়ে তাই প্রেমিকা করেছি জানি বিবাহ করিনি |
১০ যে নারী রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে কাজ করে, ইট তোলে, মাটি কাটে, তাকেও দেখেছি আমি নারী ; বাড়ি গিয়ে গিয়ে ছাদ পেটানোর সঙ্গে যে সঙ্গীত মিলিত কোরাস মনে হয় দুরপনেয় ব্যথার এই যে আবহ আবহমানকালের যুদ্ধের শ্রমের মনের থেকেও মনের পরিণয়ের, ক্ষয়ের প্রতিষেধক যে তাই, তুমি তা বোঝো ? আমি বুঝি, এতো ভালো করে বুঝি যে মরেছি পাছে ভুল বোঝে আমাদের ক্লাশ কনসাস বিবাহ করিনি তাই প্রেমিকা করেছি |
১১ যে নারী দাঁড়ায়েছিলো জানালার ধারে, দূরে মেষশাবকের দল, ওকি কখনো যোয়ান অব আর্ক হবে ? হতে পারে, যদি পরিবেশদূষণের কাব্য ততোদূর অগ্রসর হয়, কমন্ডলু বেয়ে নামে নেপথ্য ভাষণ ঈশ্বরের, আসে সৈন্য গ্রাম থেকে, রণসাজে সুসজ্জিত হয়, প্রাণীন জীবন ঢেলে দেয় গ্রামীণ যৌবনে, পরিবর্তে অগ্নিদহনের ভাষ্য যদি আসে আসুক, এইমতো কি ভেবেছিলো সেই নারী, তাই কি দাঁড়ায়েছিলো জানালার ধারে, মেঘমুক্ত পাখিগুলি বলেছিলো আহা চমত্কার, শুনেই কেঁদেছি, বিবাহ করিনি তাই প্রেমিকা করেছি |