শোনো, রাজধানী এক্সপ্রেস ক’টায় ছাড়লো আমি জানি | কোথায় পৌঁছুবে, কখন পৌঁছুবে, তাও আমি জানি | লাগেজ বলতে আমার চারটে বস্তু আছে, যথা ১ ) লক্ষ্য যা স্বপ্নেরও স্বপ্ন হলেও বাস্তবে পূর্ণ করা যায়
২ ) বিশ্বাস. আত্মবিশ্বাস স্থির প্রাজ্ঞ সমুচিত দৃঢ় ৩) কল্পনা যা স্বচ্ছ, স্পষ্ট, যা দেবীসু কদাচন একেবারে নয় ৪ ) এবং ঈশ্বরী আমার, কর্ম-জ্যোত্স্নায় যাঁকে অংশীদার করেই নিয়েছি | তিরিশে স্টেশন এলো, সৈনিক হয়েছি , বাডগাম | চল্লিশে স্টেশন এলো, যে বউ নরম আলো, তার কাছে কবিতা পৌঁছুলো পঞ্চাশে স্টেশন এলো, বুধেশ্বরী তুমি জানো ? চা গরম প্রেমিকা পেয়েছি তারপর হু-হু ট্রেন, হু-হু ট্রেন, ঝিম-ঝিম ঝম-ঝম ছুটেই চলেছে সত্তরে ? পৌঁছেই দেখি, যে এক বয়স্ক বালক খতনত দিব্য পুরস্কার টিকিট চেকার তাকে বলি ? হ’তে পারে, কিন্তু এক সহজ-লভ্য কারণে আশিতে পৌঁছেই দেখি সুন্দরী মেয়েদের প্রতি অনুরাগ ক্রমশ অধীর এবং নব্বই এলো যখন, রাজনগর, পৃথিবীও কাঁদছে, কবিতা |
চকোলেট মুখে পুরে খেতে খেতে অরণ্যে প্রবেশ করলেম | ক’রে দেখি একটা গাছের বাড়ি, তাজ্জব কী বাত, একটা গাছের বাড়ি, সবুজ, সুন্দর | আমি থিয়োডর গাছে উঠে, উঁচু, দেখি কি একটা মেয়ে, সেই বাড়ির বাগানে একটা নেকড়ে, নেকড়েকে দৌড় শেখাচ্ছে | কি যেন মনে ক’রে আমি আমার হাওয়া-বন্দুক দিয়ে গুলি করতেই নেকড়ে লাফ দিয়ে শূন্যে উঠে আকাশে মিলিয়ে গেলো | মেয়ে নিজেকে স্তম্ভিত দেখে যেই না নিয়েছে চাবুক, রঙের, টুপি উড়ে গেলো, শুধু টুপি নয়, একে একে তার স্বর্ণ অলংকার, সাজগোজ, নিজস্ব পোশাক |
বড়ো বর্ণময় সেই ছবি | আমি গাছ থেকে নেমে অরণ্য বাগানে ঢুকে দেখি, তুলি পড়ে আছে, রং, প্রিয় ফুল সূর্যমুখী, শুধু ভ্যান গগ নেই |
অদ্ভুত সমাজ এই সমাজের নিয়ম-কানুন কতবড় বিসি হলে বাছাধন গণতন্ত্র চায় করে খাও বাপধন, করে খাও, কে মান্য করেছে লুটে খাও পুটে খাও এ-যুগের যেমন নিয়ম অদ্ভুত সমাজ এই সমাজের নিয়ম-কানুন নেহাত যে বেঁচে আছে, তোর ভাগ্য, তুই ঘরে তোল্ কেউ দেখবার নেই, কেউ শুনবার নেই, কেউ রাস্তা জুড়ে মুতে চল্ , ছিঁড়ে রাখ্ প্যান্টের বোতাম
মিনিটে মিনিটে দাম বেড়ে চলে জিনিসপত্রের অপগন্ড কবিগণ তবু দেখে আকাশ রঙীন ঘুষখোর সভ্যতার মুখে থুতু দিতেও জানিসনে মনে হয় বলে ফেলি, হে ইংরেজ, তুই ফিরে আয়
এসব রাগের কথা, বড় দুঃখে অর্ধেক সেলাম সারা দেশ মাগী হলে আমি তবে গড্ সে হয়ে যাব গুলি করবি ? ফাঁসি দিবি ? আয় শালা গুলি করে দ্যাখ রক্তবীজ ! রক্তবীজ ! ওরে শালা রক্তবীজ আমি
দেশের অবস্থা খুব ভালো নয় পুঁটিমাছের প্রাণ নিয়ে আমরা তবু বেঁচে আলীসাহেব তো মিনিটে ষোলো লক্ষ টাকা পেলেন ‘অমানুষ’ দেখতে গিয়ে হাউস-ফুল ভাবছি ‘মাগীবাজ’ নাম দিয়ে একটা বই করলে ক’লক্ষ টাকা আসে ?
দেশের অবস্থা খুব ভালো নয় এলাহাবাদ এক্সপ্রেসের একটা বগী উড়ে গেলেও শ্যামাপোকার চাইতেও মানুষের ভীড় কোলকাতায় আমাদের পাশের বাড়ির বউটা ডাকলেই সাড়া দেয় ডোমজুড় থেকে খবর আসছে মরা ইঁদুর খেয়ে তিনটে লোক মরেছে
পুঁটিমাছের প্রাণ নিয়ে আমরা তবু বেঁচে একটু পরে আমি অতীত হয়ে যাব যারা আসছে, যারা আসবে তাদের জন্যে মাইরী, কী রেখে যাই, বল্
ইন্দিরা, মা আমার তোমার স্নেহের সীমা নেই যে ক’হাজার ছেলেকে ঘরের মধ্যে পুরে রেখেছ তাদের বাবার কথা মনে পড়ে না ? বড় দুষ্টু বুঝি ? চাষাদের সঙ্গে মিশে পাছে নষ্ট হয়ে যায় এই ভয় ?
দেশের অবস্থা খুব ভালো নয় বোম্বে ফিল্ ম্ চলুক , চলবে মরা-কাঁধে টুইস্ট নাচ বেলেল্লাপনা আচ্ছা, বছরে, প্রায় দশ লাখ খুন হচ্ছে, না ? আসুন, এবারে সোফোক্লেসের ‘ফাইদ্রা’ নাটক হতে দুটে লাইন পড়ি : . ‘সেরূপ নগর কখনও নিরাপদ থাকে না, . যেখানে সব সুবিচার ও ভব্যতা . পদদলিত হয়, এবং মূর্খ বাচাল ব্যক্তি . যেখানে লোক-হানিকর দন্ড ধারণ করে, . ও দেশের মন্ত্রীর কাজ করে’ |
পুরুর সঙ্গে মিত্রতার পর চরম আনন্দে চাঁদের আলো খেলেন আলেকজান্দার | সেই সঙ্গে মশার কামড় | কারম, সেটা ছিলো ভারত নয়, ভারতবর্ষ, পাশে ছিলে সিন্ধুনদ, দি ইনডাস |
ব্যবিলনে গিয়ে শয্যা নিলেন | শূন্যোদ্যানে ইউক্যলিপটাস, যার শ্বাস দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মতো মনে হয় সময় সময় | তিনি মরলেন, কিন্তু তার আগে তিনি দেখলেন ষাট কোটি টাকার স্বর্ণরথ চৌষট্টি ঘোড়ায় টানছে |
আলেকজান্দ্রিয়ায় কবরস্থ হওয়ার আগে জেরুজালেমে দেখা হলো জেসাসের সঙ্গে | হ্যাঁ জেসাস, যাঁকে আমরা যীশু খ্রীষ্ট বলি, যিনি জন্মেছিলেন কুমারী মেরীর গর্ভে তিনশো তেইশ বছর পরে, রাইট |
জর্ডন নদীর জল ছিটোতেই লৌকিক ও অলৌকিক একই সঙ্গে গেঁথে গেলো আলেকজান্দার আরো একবার গার্ডিয়ান নট কাটলেন যার অর্থ অস্ত্রের কোনো মৃত্যু নেই, প্রেমেরও অনেকটা ন্যাপথলিনের মতো দেখতে, এই পৃথিবীতে---
সেই থেকেই মশার বীর্জপাত গর্ভ দিয়ে যাচ্ছে রক্ষী তুমি শোনো, অ্যান্টার্টিকা বাদে, সারা পৃথিবী তার সাক্ষী |
ষোল হ’য়েছে, অথচ ছেলেদের শরীর চেনেনি এমন বালিকা নেই, এই ব’লে চুপ করলো সদাশিব পান্ডে |
সদাশিব ওইরকমই | মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে যে হাসি পায় | দুঃখ হয়না, তা নয়, হয় | কিন্তু-----
ভাবি ওকে সাবধান করে দেব | তর্জনী দেখাবো একদিন | সংস্কৃতি অত ছেলেখেলা নয় যে নাচালেই নাচবে, সভ্যতা বলেও এক বস্তু আছে, পুরাণের সংগ্রহশালায় বেদব্যাস এখনো দাঁড়িয়ে, হোমারের জীবনী তো আগাগোড়া নীল, কী ভেবেছে ও ? বুদ্ধ জন্মায়নি আমাদের দেশে ? বৃতসংহারের পর এই স্পর্ধা সহ্যই হয়না |
সহ্য হলো | ঠিক ষোল বছরের একটি বালিকাকে বিবাহ করার পর সহ্য হলো | ও বলে দিতে পারলো আমার ২৬৫-খানা হাড়ে কতটুকু ফুঁ দিলে কতটুকুন বাজে, রক্তের ভিতরে শিরা আছে, জানে, ধমনী যে একখানা, অজানা নেই তো ! আমি রবীন্দ্রনাথের কথা শোনালে ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কথা বলে দিলদার খাঁ কে ছিলো, বলে | ওউরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ঔরঙ্গজেব আরও ভয়ানক হ’য়ে উঠেছিলো, বলে | পাশে শুতে গেলে পাশবালিশখানা মাঝখানে রাখে, যেন চীনের প্রাচীর, যেন তাতার মোঙ্গল হূণ এই মাত্র উড়ন্ত চাকির মতো লাফিয়ে পড়বে |
ভাবছি, সদাশিবের দেখা পেলে ওকে একটা আংটি উপহার দেব প্রাকৃত যে বাংলাভাষা তারই সব সম্ভার খচিত |
বাবা বলেছিলেন, অত গল্প পড়িস কেন, খোকন ? সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে মেশ, দেখবি গায়ে গল্প লেখা থাকে |
সেই থেকে আজতক আমি গোগোল পড়িনি সেই থেকে আজতক আমি জ্যাক লান্ডন সেই থেকে আজতক আমি টেগোরের গল্পগুলো চেকভের গল্পগুলো লু শুনের গল্পগুলো মোপাসাঁ ইস্তক |
শুধু একবার, চুরি করে, ভিক্টর হুগোর গল্প সেই-যে-সেই ছেলেটি, দ্বীপের মেয়েটি, জাহাজডুবি---- . যাচ্চলে, মনে নেই |
মনে থাকে কি কখনো এতসব বাঁদরের, ইঁদুরের, গল্প ? রোমানফ কী বলেন ? টলস্টয় ? আনাতোল কী বলেন ? ডুমা ? বৃদ্ধ মানুষটি এবং সমুদ্রের গল্প লিখে যে ছেলেটি গুলি খেলো, সেও ? রেমার্কে কী বলেন ? টুর্গেনিভ কী বলেন ? মম ? খেজুরগাছের দেশে মাদী চিতাবাঘের পাল্লায় পড়লে মেয়ের টুঁটিকাটা ছাড়া . উপায় থাকে না |
উপায় কি থাকে না কখনো ? আমি শুধু দুটি, দুটি মাত্র স্টেট এক্সপ্রেস খাইয়ে রুশী মেয়েটির গায়ে গল্প পেয়েছিলুম, দু’গালে দশ চুমো |
চারিদিকে বৃক্ষ অগুনতি | তারই একটা, হেভেনলি ফ্লেইম, ফ্লেইম ? না ইনফার্নো ? এই জেনে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে ইন্ডিয়ান লেবার নামের পাশে লুকিয়ে, হঠাৎ---- হঠাৎ-ই শুনতে হ’লো সেই স্বর, বাংলায় : অসভ্য ! বাঁদর !
মাধেরায়, গুর্জরদেশের এই মন্দিরের পাশে যে অরণ্য আছে সহস্র শিল্পের, শিল্পিত কর্মের, নবম কি একাদশ শতকের, আমি শুধু তার স্তনের উজ্জ্বল মসৃণতা দেখেছিলুম ব’লেই হাত দিয়ে, হ্যাঁ হাত দিয়ে, ছুঁয়ে, মসৃণতা দেখেছিলুম ব’লেই শুনতে হ’লো সেই স্বর, বাংলায় : অসভ্য ! বাঁদর !
কিন্তু বাংলায় কেন ? গুর্জরদেশের ভাষা ওকি ভুলে গেছে, মেয়ে ? উত্কল দেশেও তাই, একবার, কোনারকে, সূর্যের মন্দিরে, বিজয়নগরে, কেশব মন্দিরে, মদনিকা, আর্শিতে যখন মুখ দেখছিলো একা, হটাৎ তখুনি স্তনে হাত রেখেছিলুম ব’লেই -- আহা, মামাল্লাপুরমেও তা | লালচে, কালো, সাদা পাথুরে মেয়েরা ভাবতে ভাবতে লজ্জা , না লজ্জা নয়, শরমে মরে যাই শুধু |
কেননা, আমার ভিতর যে মেয়ে থাকে, চুল বাঁধে, নাচে, গায়, স্তনে সর মেখে শুয়ে থাকে, উপন্যাস পড়ে, পিয়ানো বাজায়, পার্টিতে চিকেন স্যূপ খায়, হরিদ্বারে গিয়ে পিদিম জ্বালিয়ে পিতৃপুরুষের দায়ে একবার ভাসিয়েছিলো গঙ্গায়, সেই |
তোমার একটি চুমোর জন্যে আমি রাজত্ব ছেড়েছি রাঁধুনীকে বলি আমি, আহা গিন্নী রান্নাঘর দেখ তোমার একটি চুমোর জন্যে আমি সাম্রাজ্য ছেড়েছি ধোপানীকে বলি আমি, আহা গিন্নী স্নানঘরে যাও
তোমার একটি চুমোর জন্যে আমি সাম্রাজ্য বেচেছি চাকরানীকে বলি আমি, আহা গিন্নী ঘরদোর মোছো তোমার একটি চুমোর জন্যে আমি রাজত্ব ছেড়েছি সেবিকাকে বলি আমি, আহা গিন্নী মাথা টেপো দেখি
তোমার একটি চুমোর জন্যে আমি অপমানি হব রক্ষিতাকে বলি আমি, আহা গিন্নী আলোটা নিবাও তোমার একটি চুমোর জন্যে আমি অপমানি হব বিয়োনীকে বলি আমি, আহা গিন্নী গর্ভবতী হও
তোমার একটি চুমোর জন্যে আমি মৃত্যুমুখি হব রাজত্ব সাম্রাজ্য ছেড়ে একেবারে নরকে পৌঁছবো
যখন তোমার চোখে চেয়ে দেখিতুমি হয়ে আছ এটা খাও, বলে স্তন অভিমানে দিয়েছ এগিয়ে অন্ধকার হয়েছিল ভীরু বুকে অন্ধকার ছিলো হয়তো ফিউজ ছিলো আকাশের টিউব লাইট
আমি কোনো দেয়ালের পিঠে রেখে আমার ওপিঠ দুহাতে দিয়েছি খাবলে মনে রেখে মানুষের সখ ঠোঁটের আঙিনা থেকে লালা নামে মোবিল অয়েল আশ্চর্য পিছল শান্তি বলেছিলো, অতদূরে নয়
হয়তো ফিউজ ছিলো আকাশের টিউব লাইট এটা খাও, বলে স্তন অভিমানে দিয়েছ এগিয়ে দুহাতে দিয়েছি খাবলে মনে রেখে মানুষের সখ হেমন্তের শেষ শীতে শিশিরের ফেনার ওপর