কবি কেদার ভাদুড়ীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
মুমু
কবি কেদার ভাদুড়ী

পরপুরুষের হাত ধ’রে
মুমুর মা চলে গেছে আইনত বিচ্ছেদ ঘটিয়ে |
মুমুর বয়স কত ? শুধু কি বছর দুই ?  হবে |
রোগা, টিঙটিঙে, প্রায় ফর্সা, মাথায় একরাশ চুল |
দুটো চোখে গঙ্গার তামাটে জল,
কিছুটা বা হরিদ্রাভ, বিবর্ণ সত্যের মতো নীল |
পরপুরুষের হাত ধ’রে
মুমুর মা চলে গেছে আইনত বিচ্ছেদ ঘটিয়ে |
মুমু কি আইন বোঝে  ? ছাই !
ও ভেবেছে ওরই মুখ চেয়ে আমি আজো আছি বেঁচে,
ও জেনেছে ওরই জন্যে দুধ আনতে যাই,
ওরই ডন্যে ডিম সেদ্ধ করি,
ওরই জন্যে ফেনা ভাত, মাগুরমাছের ঝোল, ন্যাসপাতির স্টু  |
প্যান্টি, ফ্রক,এসব আমিই কাচি,
পুতুল পুতুল খেলি, সবগুলো মোমের পুতুল |

এই ক’রে দিন যায়, শ্রাবণের দিন |
এই ক’রে মাস যায়, শ্রাবণের মাস  |
বর্ষা কি নেমেছে তারো আগে ?
রোগা, টিঙটিঙে, ফর্সা, মুমু বর্ষার কিছু বোঝে ?
আলনা থেকে মায়ের শাড়িটা কেন যে নামিয়ে দ্যাখে---
কী দ্যাখে ? কিছু দ্যাখে ? অ -- ত--
সাজানোগোছানো কেন  ? স্তরে স্তরে, স্তবকে স্তবকে ?
শুধু শাড়ি নয়, ব্লাউজও, সায়া, তিনটে রঙিন ব্রা---
মুমু কাঁদে, কেন কাঁদে ? আধো আধো, অস্ফুট অনেক ?

এও কি আমারই কান্না ? আমি বলি, মুমু তুই চুপ কর্, একবারে চুপ |
শাড়িটা জড়িয়ে নিয়ে, নাকটা কুঁচকিয়ে এনে, মাথাটা বেঁকিয়ে
একটু একটু ঘোমটা তুলে, হা পোড়া কপাল---
মুমু বলে, মুমু কী বলে ? মুমু বলে, না
আমি বলি মুমু, তুই চুপ কর্, একেবারে চুপ
মুমু বলে, মুমু কী বলে  ? মুমু বলে, না
আমি বলি,  মুমু,  তুই আমার মা
মুমু বলে, আহা অইটুকুনই তো মেয়ে !
মুমু বলে, বড় হ’লে আমি তো তোমারই বউ হব,
.                                বউ হব, বাপি, বউ হব না ?

.                    *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
প্রেম, সুপারফাস্ট
কবি কেদার ভাদুড়ী

কন্টেসা করে যাচ্ছিলাম | পথে
হাত দেখিয়ে, থামিয়ে, মেয়েটি বললো : লিফ্ ট দেবেন ?
এক পলকেই বুঝে নিলাম, মেয়েটি সুন্দরী
মেয়েটির চুল আছে
মেয়েটির বক্ষদেশ ভালো
শ্রোণিও সমুদ্র নিয়ে দিব্যি কোনারক |

পাশেই বসলো | বললো : নেসলের চকোলেট,
শুনেছি পিতামহের কাছে, আগে পাওয়া যেতো,
এক অস্ট্রেলিয়ায় শুধু, খাচ্ছেন বুঝি ?
একটু দেবেন ? এক কামড় ? প্লীজ |

এটুকুই চাইছিলাম | পরে জ্ঞানহীন মেয়েটাকে
আমার কোটরে এনে বক্ষদেশ ভাজা করে খেলাম,
শ্রোণির মাংসটুকু রেখে দিলাম ফ্রীজে
বডিটাকে ডিসপোজ করে স্কাল
রং মাখিয়ে এমন সেলুলয়েড করে তুললাম যে
মনে হবে শিল্প |

এখন ওর সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয় | কিউরিয়ো |
বলি : লিফ্ ট চাইবে, আর ?
চকোলেট খাবে না, দিলেও ?
ও দেখি প্রত্যুত্তের বলে উঠলো : এখনো
বাচ্চা আছো | মেয়দের কিচ্ছুটি বোঝো না
তুমি |

.          *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সমকামিতার স্বপক্ষে
কবি কেদার ভাদুড়ী

শত সহস্র ফটোগ্রাফার, সাংবাদিক, নাগরিক নিমন্ত্রণ পেলো
আর আমিই পেলাম না  ? এ কেমন হল জাঁ লাইলফ্ ?
আমি দুনিয়াজোড়া কবিতা লিখি তুমি জানতে,
আমার নিমন্ত্রণ তাই অবশ্যম্ভাবী ছিলো,
কিন্তু তুমি ভুলে গেছো  | স্বাভাবিক |
যেখানে বিদ্রোহ একচল্লিশ বছরের সেই আটচল্লিশ থেকে
সেখানে বিপ্লবীদের মাথার দিব্যি দিয়েই বলছি আমার মনে কিচ্ছুটি নেই

কোপেনহেগেন ! কোপেনহেগেন ! তোমাকে শুভেচ্ছা
আমি একবার ড্যানিশ সসেজ খেয়েছিলাম অসম্ভব ভালো |

তোমার বরের নাম, কাগজে পরলাম, জোক ভকম্যান
জার্মান জার্মান গন্ধ পাচ্ছি যেন  | সে যাই হোক
নইলে এমন করে সমকামিতাকে স্বর্গভূমে নিয়ে আসতে পারতো না |
আসলে সভ্যতা জানুক, শিক্ষা জানুক, সংস্কৃতিও জানুক
যেখানে দেহ ও মনের মিল, মিলন, সেই তো বিবাহ
আমরা অপোগন্ড, দেহ বলতে স্ত্রী বুঝি, মন বলতে পুরুষ

কোপেনহেগেন !  কোপেনহেগেন ! তোমাকে শুভেচ্ছা
আমি একবার ড্যানিশ পনীর খেয়েছিলাম অসম্ভব ভালো

.                 *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবিতা
কবি কেদার ভাদুড়ী

প্যারীতেযখন ছিলাম
মিস ফ্রাঁসোয়াঁকে বললাম : কত
পাঁচশো ফ্রাঁ ?

রাজী হলে
ঘরে এনে উদোম ন্যাংটো করে
শুইয়ে দিয়ে
রং নয়
তুলি নয়
রং নয়
ইজেল টিজেল কিছু নয়
স্রেফ একটা সাদা কাগজে
শব্দ বসিয়ে শব্দ
কবিতা লিখতে বসলাম

লিখলাম
কিন্তু তার আগে
শ্যাম্পেনে মুখ দিলাম
লিখলাম
কিন্তু তার আগে
হুগোকে স্মরণ করে বললাম
সমুদ্র
তার ছেলেকে স্মরণ করে বললাম
সেক্সপীয়র
তারপর তার মাই দুটোকে মনে করলাম
আমার মা
পাছাকে মনে করলাম
আমার জন্মভূমি
কিন্তু তার আগে
লোরকা হয়ে যাব ভাবছিলাম
কিন্তু পিকাসো এসে হাত ধরলে
আমি শুধু বললাম
নমস্তে

হাসতে হাসতে
মাইয়ল বললেন : খোকা
আমি বোকা হয়ে
‘তরস দ্য ভেনাস’
মুন্ডুহীন
মূর্তির দিকে---
হার
ফ্রাঁসোয়াঁ কী বললে,
সময় হয়ে গেছে
আমি যাই

শ্যাম্পেনে মুখ দিলাম

সিদ্ধার্থ কি---
থুড়ি
গৌতম বুদ্ধও কি
পরমান্নের ভিতরে
সুজাতাকে ভালোবেসেছিলেন

জিসাস কি
সুহাবানের প্রেমে পড়েছিলেন

আমি উথালপাতাল ঢেউ
আফ্রিকার অরণ্যে
লিভিংস্টোনের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে
ট্যাঙ্গানিকা হ্রদের ধারে
আমার মেয়েকে দেখলাম
বললো
বাবা, তুমি অনেকদিন খাওনি, খাও
বলেই
মাই দুটোকে আমার মুখের মধ্যে দিলো
আমি চুষতে চুষতে
মা
ঈশ্বরের আশীর্বাদ
বাবা
ঈশ্বরের আশীর্বাদ
দুধ
সোহম্ সুন্দর
সোহম্ সুন্দর হয়ে গেলাম

ঠিক তখুনি
পৃথিবীর সমস্ত মানুষ
পৃথিবীর সমস্ত জনপদ
লক্ষ বছরের সভ্যতাকে বুকে নিয়ে
সমস্বরে বলে উঠলো :
সোহম্ সুন্দর
সোহম্ সুন্দর

.  *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সুয়েজ ক্যানাল
কবি কেদার ভাদুড়ী

পুরুষের মতো পুরুষ পেলে, জানেন ? গর্ভধারণেও সুখ,
বলেছিলো মেয়ে যাকে এতোদিন তাচ্ছিল্য করেছি |

শুধু সুখ নয়, লোহিত সাগরে গিয়ে
২৮০ দিনের দিন, যখন ফসফরাস জ্বলে,
ছোট ছোট ঢেউ এসে যখন দোলায় তলপেট,
তখুনি শুশুক জাতীয় প্রাণী ডলফিনেরা এসে---

এসে  ? এসে প্লেসেন্টাগুলো চেটেপুটে খেয়ে নিয়ে
শিশুটিকে নিয়ে জলকেলি করে, উড়ুক্কু মাছেরা
এডেন বন্দর থেকে ক্রমে ক্রমে সুয়েজ ক্যানালে,
ও তুমি, লোহিত সাগর ! আমারও শরীরে কি নও ?

পুরুষের মতো পুরুষ পেলেই, জানি গর্ভধারণেও সুখ
বলেছিলো মেয়ে যাকে এতোদিন, যাকে এতোদিন আমি তাচ্ছিল্য করছি |

.                  *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর