কবি বীতশঙ্কের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।   অন্য কেউ – অন্য কোথাও      
২।   
তাড়াতাড়ি একটা কবিতা         
৩।   
রাজা  নেই – রাজা চাই; রঞ্জন আছে নাকি নেই?   
৪।   
এখন কি অসময়?          
৫।   
৬০ বছরের জন্মদিন        
৬।   
স্বাধীনতার পরে চাই সমুন্নতির স্বপ্ন            
৭।   
সিডনিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দ্বিতীয় দিনের আসরে   
৮।   
মেজদিকে শুভ জন্মদিনে                   
৯।   মমতার জন্মদিনে               
  
                  
    

[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা,
তথ্য, কবিতা বা তার অংশ বিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা
http://www.
milansagar.com/index.html
এ দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্ লগ্  
বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ]
অন্য কেউ – অন্য কোথাও

কেন কাজ করি কে জানে –
          করি – না – কেউ করায়?
কঠোর কর্ত্তব্য কেবল
          কবির কবিতা কোথায়?
কথা কেবল কাজেরই –
          কী হবে – কোথায় – কখনো?
দুহাজার সাতের নতুন নিয়তিতে
          মনে পড়লো আমরা আছি এখনো ।

হয়তো সেভাবে নেই – তবুও আছি,
          অন্য কোথাও, অন্য কোনোভাবে ।
অন্য কোনো তিরষ্কারে, পুরস্কারে,
          অন্য কোনো অভাবে, প্রভাবে, স্বভাবে ।।

মনে পড়লো আবার,
          আমরা একদিন অন্য কেউ ছিলাম,
তখন অনেক সংঘর্ষ-সমস্যা,
          তবু বুক বেঁধে করেছি সংগ্রাম,
সংঘমিত্র হোয়ে উঠতাম অনায়াসে ।

এখন অকাজের সময় নেই,
কাজের কথা বাদে কেউ নেই –
          বড়ো একা – অকারণে উড়ছি আকাশে ।।



.                      ************************                                       
উপরে


মিলনসাগর
তাড়াতাড়ি একটা কবিতা

উপন্যাসের সময় নেই, ছোটো গল্পও বড্ডো বড়ো,
কবিতার দুচার পংক্তির মধ্যেই কোরতে হবে জড়ো
আমার সারা দিনের ক্লান্তি, আমার জীবন জোড়া প্রয়াস ।
সমস্ত চেতনা-বেদনা-প্রেরণা নিয়ে আমার ছোট্টো নিঃশ্বাস
পৌঁছে দেবো তোমাদের – তোমার উপলব্ধির গোড়ায় ।
সে বেদনায় বিহ্বল হয়ে কাঁদার সময় তোমার কোথায়?
সে চেতনার রঙে স্নান করা হবে না তোমার,
গানের থমকে – হোলির দমকে মুক্তি হবে না প্ররণার ।
তবু তোমার প্রতিটি কথায় প্রতিটি কাজে
আমার জীবন দিয়ে নতুন জীবন উঠবে ভিজে,
আমার এই আমি – হাজার আমির মধ্যে
উঠবে ফুটে ঘাসের সবুজে সবুজে ।।

.             ************************                                                
উপরে


মিলনসাগর
রাজা  নেই – রাজা চাই; রঞ্জন আছে নাকি নেই?

চোখে মুখে উচ্ছ্বল উত্তেজনা
মগজ ঘিরে গভীর গবেষণা,
          ভুখা মানুষের জন্যে কাজ করছে রঞ্জন ।
সবার সঙ্গে পা মিলিয়ে ছন্দে ছন্দে,
নাচ-খেলা-গান ভরা আনন্দে,
          গড়ে তুলছে নতুন নতুন কয়েকটা জীবন ।।

“রঞ্জন, তুমি এসো এবার –
তোমাকে আর নেই দরকার ।“
          গম্ গম্ করে বাজলো রাজার কণ্ঠস্বর ।
“এই পৃথিবীর যা কিছু দরকার
করে দেবে সব দাণব আমার,
          অভাব নেই  কোনো, নেই আর কাজের অবসর ।“

“দাণবগুলো আমারো – আমারো”
-        রঞ্জনের চীৎকার নিরুপায়,
“আমার বাবা-মার রক্ত দিয়ে গড়া,
          শক্তির সমস্ত সঞ্চয় ওর প্রাণ প্রতিষ্ঠায় ।।“

কী করবো আমি এবার?
নতুন কিছু চাই যে গড়ার,
          হতে দেবো না স্তব্ধ - ছন্দপতন ।
থমকে দাঁড়িয়ে শেয়ার বাজার,
নাকি নীচের দিকেই নামলো আবার,
          ম্যারাথনের শুরুর রেখায় প্রতীক্ষায় রঞ্জন ।

কোথায় তুমি রাজা? –
ঝাঁপ দিলো রঞ্জন,
          শূণ্য দিগন্তে চিহ্ণ নেই রাজার ।
আই-ভি-আর এর এক সুরে
          বেজে চলে রাজার কণ্ঠস্বর ।।

রাজার যন্ত্রদাণেবর চূড়োয়
          রঞ্জন পড়লো ঝাঁপিয়ে এবার ।
খালি হাতে এক এক করে খুলে ফেলবে
          দাণবের প্রত্যেকটি হাড় ।।
তারপর –
ধ্বংস করে দেবে যন্ত্রদাণবের দলটাকে,
  তারপর নতুন করে গড়বে আবার ।
হয়েতা আবার আসার সময় হবে রাজার
  নতুন করে জেগে উঠবে শেয়ার বাজার ।।

নতুন রাজা চাই,
রঞ্জন এখনও আছে, - কাজ চাই ।।
            *****************

        বীতশঙ্ক   জুলাই ২০০৭

.               ************************                                             
উপরে


মিলনসাগর
এখন কি অসময়?
 
কোনো কোনো দিন কানে আসে না কোনো কথা,
বসে থাকি বোবা কালা হ’য়ে চোখ বুজে ।
মন খোলা কথায় ভোরে থাকে গল্প উপণ্যাসের পাতা
কপালভাঙা কয়েদীরাও থাকে মজে - আনন্দের খোঁজে ।

পৃথিবীটা যদি গল্পের মত হোতো
মানুষেরা মন খুলে প্রাণের কথা বলে দিতো,
তাহ’লে হয়তো আবার বলতুম কথা
কবিতা দিয়ে ভরে দিতাম পাতার পরে পাতা ।

জীবনটা কি অনেক সোজা ছিল, মাসিমা,
ফেলে আসা সেই বাঁধনছাডা সময়ে?
এত বোঝাভরা জীবনটা এখনও হয়নি বোঝা
সংশয় কেবল সময়ে আর অসময়ে ।।


.            ************************                                          
উপরে


মিলনসাগর
৬০ বছরের জন্মদিন

মনে করো আজ আমার প্রথম জন্মদিন,
ভুলে গেছি আমি পৃথিবীর যত ঋণ ।
ভুলে গেছি যত ‘কি করিনির’ শোক,
‘যদি করতুম’-এর নেই আর কোন ঝোঁক ।।

নতুন খাতায় নতুন করে লেখা ,
পৃথিবীটাকে নতুন করে দেখা ।

পৃথিবী, তোমার সুখেই আমার সুখ,
আমার সুখে সুখ সারা পৃথিবীর ।।
তোমাদের সকল দুঃখে আমার দুখ,
আমার জন্য না আসুক কোন বীর ।।

নতুন খাতার প্রথম পাতায় ‘আমি’,
ভাবছি কবে উঠবে হয়ে ‘তুমি’ ।।

.         ************************                                                        
উপরে

এই কবিতাটির সূত্র ধরে কবি প্রণব রায়চৌধুরীর লেখা এই কবিতাটি পড়ুন |
মিলনসাগর
স্বাধীনতার পরে চাই সমুন্নতির স্বপ্ন

বাঁচতে হ’লে গড়ে তোলার একটা স্বপ্ন চাই ।
ষাট বছরের জোয়ানেরা এসো লড়ে বাংলা বাঁচাই ।।

চাকরীর খাতায় নাম কেটে গেছে দিয়ে বয়সের দোহাই,
ঘরের খেয়ে এসো আমরা বনের মোষ তাড়াই ।

গায়ে খেটে ঘরে দুটো পয়সা আনার উপায় নাই,
মগজ আর জ্ঞান-গম্যি দিয়ে একটু দেশসেবা কোরে যাই ।

পয়সা যখন কামাই না, বৌ, আমার সময়ের আর দাম কই,
একটু সময়, বুদ্ধি-চেষ্টা দিয়ে এসো, দেশের কাজ করিয়ে নিই ।।



.         ************************                                             
উপরে

এই কবিতাটির সূত্র ধরে কবি প্রণব রায়চৌধুরীর লেখা এই কবিতাটি পড়ুন |


মিলনসাগর
সিডনিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দ্বিতীয় দিনের আসরে

কালকের উৎসবে আসা হয়নি,
                      তাই চায়ের আসরে এলাম ।
আমাদের ঘরটা এখন তোমাদের হয়ে গেছে,
                      মালার কাছে শুনে নিলাম ।

তোমার উপন্যাসে কতবার নীরার আনাগোনা,
সে হিসেব আনপড় আমার নেইকো গোণা ।
উপন্যাসের পাতায় চোখ পড়েনি বহুদিন,
                      সময় হয়নি ফিরে তাকাবার পাশের জনের দিকে,
একফোঁটা সময় নেই কবিতারও
                      শুধু শ্বাসটুকু টেনে নিই বুকে ।
তবু নিউইয়র্কের ট্রেণে
              বাংলা ভাষার জানলায় তাকিয়ে
              মনে হোলো ও ভাষাটা কোনোদিন ছিলো আমাদেরও ।

কালকের উৎসবে তোমাদের কথা শুনে মনে হোলো
              আমরা আছি এখনও,
হয়তো সেভাবে নেই – তবুও আছি
              অন্য কোনোভাবে, অন্য কোনোখানে ।
মনে পড়লো আবার
              আমরা একদিন অন্য কেউ ছিলাম,
অনেক সমস্যা সংঘর্ষের মধ্যেও
              সংঘমিত্র হয়ে করেছি সংগ্রাম ।
এখন অকাজের সময় নেই,
              কাজের কথা বাদে কেউ নেই,
              বড়ো একা অকারণে উড়ছি আকাশে ।

ক্লান্ত ডানা এবার সময় হোলো থামার,
আমার শিকলখানা এখনও হয়নি সোনার,
পাইনি সে পরশপাথর যার ছোঁয়া দিয়ে সোনা করে দেবো
                      আমাদের তোমাদের সেই ঘর ।
খালি হাতেই এবার নেবো অবসর ।।    


.         ************************ সিডনি, ২০০১ সাল       
                        উপরে


মিলনসাগর
মেজদিকে শুভ জন্মদিনে

ছোটবেলার জন্মদিনগুলো
                    আসতো যেন অনেক দেরী করে ।
চোখ বুলোতাম ক্যালেন্ডারের পাতায়
                    কবে আসবে সেই দিনটা ফিরে ।
উৎসবের ঘটা থাকতো না
                    মেয়েদের জন্মদিনে,
থাকতো না কলার বড়া,
                    থাকতো না পায়েস,
সেই কথা ফিরে ফিরে মনে পড়ে,
                    আক্ষেপের থাকেনা শেষ ।

এখন জন্মদিনগুলো যেন
                    বড়ো তাড়াতাড়ি আসে,
ছোটোবেলাটা চট্ করে চলে গেলো,
                    অনেক অনেকগুলো দিন বুড়ো বয়সে ।

২৩শে শ্রাবণের জন্মদিন
                    আসুক নিয়ে আরো কিছু নতুন খুশী,
তোর জন্মদিনে রাখীবন্ধনে
                    আমাদের প্রণাম দিতে চাই একটু বেশী ।
  


.         ************
  সিডনি, ২৩শে শ্রাবণ ১৪০৮ (২০০১)                   উপরে


মিলনসাগর
মমতার জন্মদিনে

এমনি একটা দিনে
                      তোমার তুমি হওয়ার শুরু,
ছোটো ছোটো হাতে কোনো রেখা নেই,
                      নির্মল কপালের একদিকে চুলের গোছ
                      অন্যদিকে দুটি ভুরু ।

তারপরে বড় হওয়ার পালা
হামাগুড়ি থেকে হাঁটা, হাত ছেড়ে দৌড়ে চলা ।

এক এক করে পাঁচে দিয়েছো পা,
হাতের মুঠোতে জড়ো করেছো অনেক রেখা ।

পাঁচ পাঁচে পঁচিশ –
চোখে মুখে এসেছে অনেক জানা
                      অনেক শেখার হদিশ ।

পঁচিশ আর পঁচিশে পঞ্চাশ –
কখনো হতাশ, কখনো উদাস,
              কখনো অপর্য্যাপ্ত উচ্ছ্বাস ।

চেয়ে দেখো কতো বড় হয়ে গেছো তুমি,
এমনি একটা দিনে তুমি হওয়ার শুরু করেছিলে তুমি ।

বছর বছর ধরে, ফিরে ফিরে,
এই দিনটা আসুক নতুন করে ।।
   


.         ************   ১৫ই ডিসেম্বর, ২০০২      
                           উপরে


মিলনসাগর