কবি ভবেশ বসু-র কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
কে যেন ডাকে

কে যেন ডাকে আমাকে আলোর কাছে ;
যেতে দাও, মাটি ভেঙে সব রং মুছে |
কতদিন ছিলাম আমি তোমাদের
রাত্রির আঁচলে প্রেম, শ্বাস-প্রশ্বাস ;  বিশ্ব আকাশে |
এই কুরুক্ষেত্রে মাছরাঙা পাখির
স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা
এক বুক স্রোত হতে সহস্র মেলা ;
কালো রাত দীর্ঘ হলে কন্ঠস্বর বদলায়
যেতে দাও এবার, যাব অবাধ্য প্রবাহে
.                                রোদ ছায়ায় |
     
খুলে রাখি সভ্যতার পাপড়ি, শষ্যক্ষেত্র দিয়ে
যাই ; মাটি ও নদীর সংগীত সংবাদ
প্রতিদিন রৌদ্রে যা খেলা করে গাছ ও লতার অনুবাদ,
এই দেখ করতল, নিরস্ত্র আমি
কাঁটাতারের বেড়ায় বাঁধবে কি তুমি !


কতদিন দেখিনি চাঁদ, আমার আধার,
পথিকের ঝোলা কাঁধে আজন্ম পরবাসী
লুকিয়ে এনেছি শরীর, গান স্বরলিপি |
ফিরে যাব----
এসো প্রেম,
কতদিন দেখিনি তোমার সিঁথির সিঁদুর !!


.                   ****************                                                       
উপরে  

    
মিলনসাগর
*
এই মাত্র যে শব্দ
                                                                       
এই মাত্র যে শব্দ রয়েছে কাছে, সারি সারি
গাছ লাগিয়ে দেওয়া যায়
গাচ অক্ষর, তার পাতারা সব একটি একটি বাক্যে প্রার্থনা করে,
গন্তব্যে চলে যায় সারাদিন----শব্দ থেকে যায় |
পাতা সবুজ ! শব্দও |   যে বীজ হতে অফুরান পাতা গজায়,
তাকে নিয়েই অনন্তকাল খেলা | ঘরে ঘরে আগুন হাত---এক মুহূর্তের বাঁচা !
জেগে থাকো সব, চোখের সামনে দুখ-সুখের সাতকাহন
অথচ আকাশ বলছে, একটিই অক্ষর একটিই শব্দ তৈরি হয়েছে
যতই আলাদা গান ও সুর উঠে আসে সকালে
সব অতিথিরা মিলিত ভাবে সমুদ্রে পড়েছে |


গাছেদের দেখি, তাদের পাশে বসি, একটা অদ্ভুত কাঁপন যায় না আমার
গাছ যদি অযুত অক্ষরে ভেঙে যেত, তোমার চুলের মকো অসংখ্য
রূপ, আলিঙ্গনে ফুল কুড়িয়ে নিত শরীর !
তুমি একা, আমিও |  শত, সহস্রে ভাঙলে , বকুল গাছের নীচেই
পেতাম পাহাড়, নদী, জল
এখন সমুদ্রের কাছে যেতে হয় | তোমার স্নান দেখতে সমুদ্ররূপ
আমার প্রিয় বল |
চলো, পরস্পর ভেঙে যাই
অজস্র অক্ষর গাছ হই
উত্তাপে ঘর হতে বাহির, বাহির হতে সবুজ নৌকায় যাব
স্থবির আকাশ কি বলবে না, মেঘ নয়, আমিই বৃষ্টি---নদ হব ?


একটি শব্দ নিয়ে এসেছিলে কাছে
ভালোবাসা দিয়েছে, এইমাত্র দিয়েছে অক্ষর অনেক
গাছ পাতা আমাদের এই সব শব্দ চুরি করে---
একই চাঁদ, তাই অজস্র গাছের ডগায় লটকে আছে |


.                   ****************                                                              
উপরে  

  
মিলনসাগর
*
এবার আমি নিজেকে       

এবার আমি নিজেকে বিক্ষত করি, পোড়াই  |
পথ অবরোধ দীর্ঘ , স্রোতের অভাবে শূন্য মাঠ----
রং মুছে গেছে উত্তাপের , আমি বৃক্ষ নই আর ;
শুকনো কাঠ, আগুনে বন্দি |

অনন্ত আকাশ নেই, ঘরে ফেরার মতো বাড়ি
অনেক বিকলাঙ্গ মুখ উঠে আসে জন্মদিনে
গান ভেসে এলে তারা পাটাতন ভাঙে
বুকের ভিতর তবে ছিল অশুচি নারী  !


ফুলের বাগানে ঘন-জঙ্গল , কলঙ্ক সারা গায়ে
শরীর খায় পূজার  ফুল , এভাবেই কাটিয়ে দিলে |


হঠাৎ আগুন কাগজ পোড়ায়, কপালে
তোমার হাত
শোক নয়, শস্যমাঠে শঙ্খ বাজে সারারাত |


.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
একটি সূর্যোদয়ের জন্য

একটি সূর্যোদয়ের জন্য প্রার্থনা
একটি সূর্যাস্তের দীর্ঘশ্বাস কান পেতে শোনা
একটি সকালের জন্য গাছেরা সবুজ
একটি মেঘ বৃষ্টি হয় দুচোখে ;


মাটি জেগে ওঠে-----

ইতিহাস খোল অকৃপণ হাতে
পৃথিবীর কাছে মুক্তিপণ চায়
এই দিন
এই রাত্রি |


মৃতেরাই ফিরে আসে
শস্যক্ষেত্র বেঁচে আছে যতদিন
সূর্য কখনো অহংকারী হয় না |

ফিরে সতেই যে হবে
তোমাকেও !


.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
আকাশকে অনেক

আকাশকে অনেক বলেছি
শোনেনি  কথা
সে তার সর্বস্ব ঢেলে মাটি ভেজায়,

মাটিকে জেনেছি
পাতাল তার কথোপকথন
বদলাতে পারবে না
ভূমিক্ষয়ের কোনো পূর্বাভাষই !

সেই মতো গাছ-গাছালি
আট-পৌরে ঘর-গৃহস্থালি ও অন্যান্য
মুখোমুখি দুদন্ড দাঁড়িয়ে
আমার ক্রুশবিদ্ধ বুকের
রক্ত ঢেউ----

মৃত্যুদন্ডের কোন অর্থ নেই
তোমার, শব্দেরও না
যদি কোন আওয়াজ থাকে
স্বখাতে ফিরে এসো,

এই প্রাত্যহিক বর্ণমালায়
আকাশ মাটি রক্তের
কোন শোক নেই |

.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
আমাদের বাড়িটা

আমাদের বাড়িটা খুব অন্ধকার | কথা ছিল
মা এখানেই সীমাহীন জ্যোত্স্নায় মিশে থেকে
সারা দিনের গল্পকথা রাতকে শোনায়
গল্প জানে কার হাত ধরে সে বেশি রূপসী
কথারা সব স্বপ্ন খোঁজে , বাড়ি বানায়  |
আলোর রেখা ভাসছে ভাঁশ বাগানের কোণে
তাকে ধরে আনি |   জল ভরে নিই কুয়োতলার উঠানে
এইখানে একটু বসো, আমার খোলাচুলের ওড়না দেবো,
জোনাকির ঝিকিমিকি গোপনে |
মা বলবে , একটা রাত নৈবেদ্য এনে সাজিয়ে দিলে
তোর বাবা কি আর শ্মশানের ছবি আঁকতে  পারে  ?

মা আসবে ভেবে সারাবেলা একটা দিন নিঃশব্দে
এঁকে যাই ঘরভর্তি ছবি
সরিয়ে দিয়েছি যুদ্ধ জাহাজ, অস্ত্রাগার নিয়ে যাই মাটির নীচে
এখন নির্জন নির্ভয়ে তৃপ্ত হয় প্রাচীন কোন শষ্যবীজ |
ঘরের দেওয়ালে দেওয়ালে বৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে
জেগে থাকে বনভূমি, চাঁদ একাকী নদীর পাশে এসে বসেছে |
এবার শৈশব এসে ছড়িয়ে গেলেই
অসহায় ঘুম মৃত্যু পার হয়ে যাবে !

স্বপ্নচ্যুত ভাবনাগুলো ক্ষতিপূরণ চায়  |  আমি তাকাই আকাশের কোলে,
ছোট ছেলেটির হাত মুঠি, কী যেন প্রার্থনা করে ;       
এখানে শুধুই পাঠশালা জেগে থাকে, কৈশোরের শিউলি গেছে,
মেঘমল্লার সাথে শিমুল উত্সব নেই , অলস দুপুর কাটে
ব্যর্থ অনুরাগে |

আমাদের বাড়িটা খুব একা, একা একা কাঁদে
মা যদি আসে পতিত জমিতে স্বপ্ন এঁকে দেবে |

.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
একজন আহারে

একজন আহারে এলে অন্যজনের উপবাস, শিরায় শিরায় দীর্ঘশ্বাস
জ্যোত্স্না নিতে এলে অন্ধকার রেখে আসি ঘরে , তার আয়ু পুড়ে
গলা চিরে ডাকছে বাছুর সবাই শোনে, সেই ঝড়ো বাতাসে কার কি
যতদূর চোখ এমন নাচনই চারদিক, নদীজল নিঃস্ব হলে সমুদ্র উচ্ছাস  !

রোদ এলে মেঘ দাঁড়িয়ে থাকে, একজন অপরজনের ভাব আছে থাকে
ওরা দুজন বিপরীতমুখী হলেও ছুঁয়ে থাকে নিজেরাই , সকাল বিকাল বন্ধু
বালিয়াড়ি আর নদীর জল পাশাপাশি ঘুমায়, সবাই সকলের প্রভু ভয়হীন
হননের পথ, অভিনব এক বোধ মানুষের , কৃষ্ণচূড়া নিয়ে নিভৃত আবেগ |

বসন্ত এলে কথা কাটাকাটি তবু শীত মুগ্ধ, বসন্ত এসেছে ছেলেবেলার সুখ
তাই দেখে শুকনো ডালপালা জায়গা দেয় সব, কচি কচি পাতার উত্সব
ছেলে মেয়ে সকল নামতা পড়ে একসাথে , ছবি ছড়া ফোটে মায়ের ছোঁয়ায়
যৌবনের কড়া শাসন, মাতাল হতে হয় মুকুলের ঘ্রাণে-ফাগুনের ঝাঁঝ |

ভালোবাসা পুড়িয়ে ভালোবাসি, চিরকাল এ বাড়ির সাথে ও  বাড়ির বিবাদ
ছেলেবেলা ফেলে অলীক স্বপ্নে মালা গাঁথি, মানুষই হারাল বনবীথি
পুরোনো ভেঙে নির্মাণের পথ চেনা, ইতিহাসের চোয়াল ভাঙা, ভাঙা মুখ
সমাজ সাম্য সব কথার কথা , নিখুঁত ছাদের তলায় চিত্কার-লড়াই বাঁচার |

কোনো বিবাদ নেই, প্রকৃতি দিয়েছে গনগনে সূর্য শীতলকুচি  চাঁদ
মানুষ কান্নায় ভিজেছে, বলেনি তাকে কেউ ভালোবাসায়  বাঁধ !


.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
মায়ের গর্ভ

মায়ের গর্ভ থেকে সংগ্রাম আলো খোঁজার, খাবার খুঁটে খেতে হবে
কেউ নেই লন্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে, হৈ হল্লার ভিতর রাক্ষসের গল্প ভয়
রিক্সার মতো টেনে তোলা চড়াই উতরাই পথ, অন্ধকারের প্রাধান্য
হাতে পা দিয়েছে, আর কিছু শিরদাঁড়া , লাগাতার হেঁটে যেতে হবে !

ভয় আছে আকাশের নীচে যন্ত্রণা, হাসি মুখ---বিষাক্ত গ্যাস কারখানা
মাটিতে অসংখ্য কীট, অসুখের বীজ----প্রবল শক্তি নিয়ে ঝড় বিদ্যুৎ মেঘ
ঘর আছে দরজা নেই , অসহ্য দহনে রক্তে মিশেছে তাপ---সেই তাপে সংঘাত
পৃথিবী ঘুরে চলেছে কান্না, কুঠারে কাটা হল গাছের গুঁড়ি---কোথায় নেই সর্বনাশ ?

আঁধার হতে আলোতে আসে শিশু ? তাহলে শোক উথলে কেন জন্মের সময় ?
জানে বাঁচার লড়াই, পথে ছড়ানো কাঁটা, তৃষ্ণা ক্ষুধার ব্যথা শক্ত মাটি
যন্ত্রণার দেহ খোঁজে আর এক যন্ত্রণার গল্প , তাতে সুখ হয় জল শুকায় চোখের
সেই মতো আশা নিরাশা হাসে, যেন মহাসুখ---আবার সব হারানোর ভয় |

বৃদ্ধ যাত্রীও গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়, বলে কোন পথে আছে সাবলীল পথ |
আর একজনও নিবিষ্ট হয়ে আছে, এই বুঝি এসে গেল শহরতলি তার
রিক্সা টানছে ঝরছে ঘাম, অবুঝের মতো পেছনে চাকা ঘোরায় ভিন্ন কেউ
যত যায় আলো ফুটে ওঠে, পৌঁছতে ঢের বাকি, ক্রমশ তো ভাঙে ঢেউ!

আহ্বানও হয় , বিসর্জনও প্রতিনিয়ত
তারই ভিতর শিল্পী আঁকেন প্রাণ, বিপুল খেলনা পিস্তল |


.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
যেতে সিঁড়ি

যেতে সিঁড়ি লাগে না |
আসার প্রস্তুতি নিতে হয়, হাওয়া ওড়া দিন উদয়াস্ত সময় পাল্টায়
অনুমতি স্বর চিনে নিতে হয় |
যাব যখন নৌকার কাছে বসি, আমি যে রুদ্ধ হব শ্বাস জানে না |
সকালের সাথে খেলা করি | মগ্ন থাকি শীতল বাতাসে
কথা ছিল, রোদ থেকে যাবে উঠানে | খালি হাত, ছুটি হলে সব ভুল হয় |
রাত অদ্ভুত তাকায় গলির  মুখে |
সব দিন দ্রুত বাঁচতে চায়
আবার রাত মরে পড়ে থাকে , সময় খায়
কেউ কারো ভেতর কখনো নির্বাপিত থাকে না
তোমাকে দেখলাম এখন , উলটো দিক হতে যে আসে
তাকে মেলাতে পারি না |


পাখিরা কোথায় উরে যাবে, একদম খবর নেই
গানের ভেতর কোন সুর নদীতে মেশে , জল কখনো জানেনি |
মন সজাগ প্রহরী যখন, চোখের কোণে বৃষ্টি নেই !


ফিরে যেতে সিঁড়ি লাগে না, আমার আসার খবর  দিল
কোথায় পথের শেষ, অজানা ছিল !


.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
ভাত কাপড় ছাড়া      

ভাত কাপড় ছাড়া কি চাই ?  থাকার জন্য আছে এক ছাদ পেল্লায় বাড়ি
ঘরের ভিতর ঘর কেন, জল ভাগের বোতল চাই---বসন্তের কস্তুরী চন্দন ?
সুখের জানালায় আলাদা পর্দা, পাখনা আছে পা আছে , সাজের বাহার তবু
গোটা প্রজাপতিই যখন রং , তখন চেয়েছ আপন সীমানা---রবিবারের ছুটি !

তপোবন দেখেনি একসাথে থাকা যায়, এক ঘাটে বাঁধা বনবাসী সব
এক মায়ের কোল অন্ধকারে বোঝা যায়, প্রকৃতি এসেছে যেন দুয়ারে
তাকালে তুমি তোমার জমিতে ধানের শিষে, মাঠের পর মাঠ ঋণ শোধের পণ
শ্রাবণমেঘ বনাঞ্চলে যেমন, তেমনই বেহিসাবী অহংকারী তোমারও দুপুর !

টুকরো টুকরো কান্না কেন, শোক হলে ঘুম ভেঙে যাক---দাঁড়াব শোকসভায়
সুখ চেয়ে নিই, বিপুল বনতুলসীর হাতে দিই---সময় একটা সোনার ঘড়িতে
পৃথিবীর কাছে আছে সবাই, নৌকার নীচে জল---বুকভর্তি তৃষ্ণা মেটাও মন্ত্রে
সকল মানুষ প্রাণীর সূর্যজ্ঞান আছে, ক্ষতিপূরণ চাইলে চাও ফুলের তোড়ায় !    

খাওয়ার জন্য আছে এক সমুদ্র জল, গড়ে নেওয়ার জন্য মাটি---চাঁদের দীপাবলী
ভাই বোন চাও আঙিনায় আছে চারা গাছের পাতা, বেল জুঁই টগর জীবিত সব
এক অগ্নিবলয়ে  স্নিগ্ধ হচ্ছে রান্না, ক্ষুধা সর্বগ্রাসী , খাবার কিনবে কোথায়
পায়ের কাছে বসে আঁধার চাইছে আলো , ঐ দেখ ভোরে হয়ে এল হাসিখুশি !

থাকার জন্য আছে এক ছাদ, পেল্লায় বাড়ি
মৃত্যুদিনের জন্য উইপোকা বালিয়াড়ি !   


.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
এত বৈভব                      

এত বৈভব নিয়ে বেঁচে আছে মানুষ, তবুও অস্ত্রসম্ভার বিবেচনায় ছলাকলা
যে রক্ত ভেসে যায় মিশে যায়, সে তো আমরই শরীরের খোঁড়াখুঁড়ি করলেই গলে
ডানা ঝাপটে কাকে চাই ?   সে আনি একাত্ম আছি, বহুকাল ধরে আসা যাওয়া আমাদের
প্রকৃতি দিয়েছে সবুজ পাতার গাছ জলোচ্ছ্বাস, মৌমাছির ওড়াওড়ি--- ফুল ফলের দোলা

কিছুতেই আমি দীর্ঘ হই না কখনো , গাছের মতো উপরে নেই মুখ চোখ সব
আকাশের দিকে ইচ্ছা হলে ঘাড় ব্যথা, এ যেন অশীতিপর বৃদ্ধ যুবা নেই
ঘুমিয়ে পড়ার আগেই ঘুমাতে গেছি, হঠাৎ বুঝতে পারি রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার
সবাই একলা একলা খায়, ইট পাথরের মতো হাসে, মানুষই গুপ্তহত্যার কক্ষপথ !

পূর্বের দরজা খোলা, সেই পথে যাওয়া যায় পশ্চিমে---পৌঁছতে হবে
সেই ভাবে আবার ধূলা ওড়াও, বিশল্যকরণী আনতে পাহাড় বইতে হয়
দৌড়ঝাঁপ হাতে পায়ে , পৃথিবী অপেক্ষা করে আছে এক বিশ্বস্ত চিকিৎসকের খোঁজে
পথ ভুলে যাবে ? রক্তের লোভে আমারই রক্ত সব গড়িয়ে গেল, প্রতিযোগী হলে ?

দীর্ঘ মানুষ দেখলে হাঁ করে তাকাই, আরো বড় হও, বড়দের মতো স্বপ্নের মতো
সূর্যমুখার মুখ সূর্যের দিকে, পোড়ে না কখনো, কালো কি পূর্বপুরুষ তার  ?
মাখতে না চাইলেও রোদ ধরে তোমায়, ভালোবাসা মাখিয়ে দেয় আঁধার আলো
তাজ একটা কি ? নীল চোখ দুটি নয়, গর্ত খুঁড়ে কি দেখ মানুষ পাথর ?

মন ভালো নেই আমার
জন্মভুমি দেখিনি রক্তকণায়  |


.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর
*
কেউ ফেরে না

কেউ  ফেরে না কোনদিন, অটুট সাহস অভিশাপ ভয়, অভিপ্রায় অনুযোগ মড়ক মহামারী
মনে হয় সে আছে ফুটেছে, এই গন্ধ পেলাম, এই সেই বাদামি রংঅথবা লাল সাদা
তুলে রাখি তার শঙ্খ, বই খাতা পোশাক আশা উত্তর দক্ষিণে যাই পূর্ব পশ্চিমে তাকাই
মৃত্যুকে জিজ্ঞাসা করি তুমি কেড়েছ কি ? ঘোর অন্ধকার হতে উত্তর আসে, জীবন হল নদী !

দুঃখ ছড়িয়ো না বাতাসে , সুখের সাথেই পথ খুঁজে নিয়েছে , তাই নিস্পৃহ কথোপকথন
বারবার ভাঙতে চাও নিজেকে , নিয়ে যাও পর্বত চূড়ায়, দেখনি সব ঠান্ডা উত্তাপহীন ?
যে অক্ষর গোপনে বুনেছি , গাছ না হোক সন্ন্যাস তো নিয়েছে অথবা সে বেদুইন
সারাদিন ভালো থেকো, কেউ ছিল না তোমার সঙ্গে, নিয়ে কি এসেছিলে রং রূপ কোন ?

যাবার জন্যই দরজা খোলা থাকে পর্দা ছিঁড়ে , অন্ধকার ভাসে , সবাই তাই নামগোত্রহীন
মিছিমিছি তাকে দাবিপত্র দাও, বোতাম খুলে দেখাও বুক--- সে কি চেয়েছে কিছু, বলেছে !
যতটা শস্য থাকার ততটাই থাকে, বাকি ঝরে যায মাঠে, অমনস্ক চোখ মুখ স্পর্শত্বক
একা হয়ে আছ, কবে ছিলে কার দাক্ষিণ্যে ! সমতলে এসে পাহাড় চাও লাটাই ঘুড়ি ?

সব আলো এক সাথে আছে, ছুঁয়ে গেলেও ঠিকানা নেই---দিঘির জলও অচেনা তাই
দেখতে পাই কি মেঘ হতে জল ঝরে, সেই জল তার চোখেই ছিল অথবা ক্ষেতে ?
ভেবেছে সবাই মুঠোতে আছে স্বপ্ন ও আশা, খুলে দিলে কিছু নেই কোনদিন হস্তরেখায়
হলুদ গায়ে যৌবন হাত বাড়ায় বাঁকে, আগুনে , তার কি ভালো লাগে কিশোর জুড়ি ?

খুব ভালোবাসা হলে কথারা ফিরে যায়
কথারা চলে এলে বৃষ্টি তোমার হয় |


.                   ****************                                                              
উপরে  


মিলনসাগর