কবি ভাগ্যশ্রী ঘোষ-এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
*
বানভাসি             

সূর্যদেব ছুটি নিয়েছেন অনেক দিন |
তড়াগে কুমুদ-পদ্ম-কহ্লারের মিলন মেলা
জানিয়ে দিচ্ছে ঋতুরঙ্গশালার দ্বিতীয় কুশীলব
বর্ষারাণীর আগমনবার্তা |
কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশের শরীর |
গ্রীষ্মের দগ্ধদহনে ঝলসানো মান ুষেরা
চেয়ে আছে আকাশের পানে ---
উড়ন্ত আঁচল উড়িয়ে ধেয়ে আসে বর্ষা
আলপথ চোখে পড়ে না কোথাও,
জল শুধু জল থৈ থৈ |
জল বাড়ছে তিস্তায়, তোর্ষায়, রায়ডাক
কালজানি নদীতে ---
উন্মাদিনী পাহাড়ি ঝর্ণা ভাসিয়ে নিচ্ছে
ফসলের ক্ষেত, ভেঙ্গে পড়েছে চা-বাগান
ডুবছে ঘরবাড়ি, গ্রাম, চুয়াপাড়া,
হাসিমারা, বক্সাদুয়ার |
ক্রুদ্ধ বিদ্রোহী জল ফুঁসে ফুঁসে উঠছে ---
কালোজল দুঃখীজল আর চোখের জল
সব আজ মিলে মিশে একাকার |

.      *************************                                        
উপরে

এই কবিতাটি জলপাইগুড়ি থেকে "জলপাইগুড়ি বইমেলা ২০০৮"-
এ প্রকাশিত "কিরাত ভূমির" কবিদের কবিতা সংকলন "কাব্য বৈদুর্য"-এ
প্রথম প্রকাশিত হয় |


মিলনসাগর
১।   বানভাসি              
২।   
আমার ভালবাসা         
৩।   
কুশে ফেব্রুয়ারী       
৪।   
শ্রাবণ     
৫।   
শাশ্বত         
৬।   
অকস্মাৎ          
৭।   
অনুভব       
*
আমার ভালবাসা             

আমার ভালবাসা হৃদয় গভীরে লুকানো আছে
প্রাণ ভোমরার মত |
ঘোমটা টানা মুখ ঘরের কোণে
সেও আমার ভালবাসা |
সারাটা সংসার একটি মাত্র মুখ
সে-ও আমার ভালবাসা |
ভাসবাসার আতর লাগিয়ে
প্রেমাস্পদকে বলে যেতে চাই ---
যদি মরে যাই,
ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই
যে ফুলের গন্ধই সম্বল
সে গন্ধের আয়ু থাকবে চিরদিন,
হবে না রাত্রিতে বিলীন |
চাঁদনীরাতে আমার সমস্ত সত্তাকে করে ছাই
ফুল হয়ে যেন ঝরে ঝরে যাই |
কতদিনের কত রাতে ঝাপ্ সা  তুলির
রঙে-রেখায় আঁকা আমার একটু সময় ---
কবিতার প্রলেপ দিয়ে তোমায় ঘুম পাড়িয়ে
ফুল হয়ে ঝরে যেতে চাই
ফুলের সৌরভ নিয়ে ঝরে যেতে চাই ||

.        *************************                                        
উপরে


এই কবিতাটি জলপাইগুড়ি থেকে "জলপাইগুড়ি বইমেলা ২০০৮"-এ
প্রকাশিত "কিরাত ভূমি"-র কবিদের কবিতা সংকলন "কাব্য বৈদুর্য"-
এ প্রথম প্রকাশিত হয় |


মিলনসাগর
*
একুশে ফেব্রুয়ারী             

একুশের ভোর,
সূর্যদেব রক্তিম মহিমায়
আজও সসম্মানে উদ্ভাসিত |
আকাশ আজ বসন্ত,
বাতাস বলছে আজ বসন্ত,
ডালে ডালে পলাশের রঙ,
কোকিলের কুহু রব জানিয়ে দিচ্ছে
আজ বসন্ত |
কিন্তু পদ্মার নীলাভ জল আজ বড় স্থির,
সূর্যদেব লজ্জায় মুখ ঢাকলেন হয়ত ---
গর্জে উঠল ঘাতকের বন্দুকের নল
রাইফেলের ট্রিগার
বাংলা ভাষা, মায়ের ভাষার অঙ্গিকারে
রফিক, সালাম, বরকত আর জব্বরের
মৃতদেহের রক্তের বন্যায় ভেসে থেমে গেল
ফুলার রোডের মোড়ে, এই একুশের ভোরে ---
রমনার প্রান্তর হার মেনে গেল রক্ত লাল
কিংশুকে পলাশের কাছে ---
এই একুশের ভোরে,
এই একুশের ভোরে ||

.        *********************                                            
উপরে


এই কবিতাটি জলপাইগুড়ি থেকে প্রকাশিত পশ্চিম বঙ্গ বাংলা
আকাদেমির পুরস্কার প্রাপ্ত ছোট পত্রিকা "কিরাত ভূমি"-র ২৩বর্ষ শীত(২য়)
সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয় |


মিলনসাগর
*
শ্রাবণ             

আষাঢ়ান্তের ভোর, শ্রাবণের ঘোর
.                   বর্ষাঘন রাতি,
প্লাবন নেশায় সুপ্তিসাগর
.                   সহসা উঠেছে মাতি,
অনিদ্ চোখের ধ্রুবতারা ওগো
.                   নিবাও তোমার ভাতি |
মধুর মাধুরীরাতে, বসনেও বর্ষাহত
.                   ওগো জাগরণ সঙ্গিনী
.                বাজে তব কিঙ্কিনি |
সুপ্তি সাগর মিশেছে হেথায়
.                   মুক্তির নীলাকাশে ---
জানি, তুমি সদা সর্বদা
.                   আছ মোর বাহুপাশে
শ্রাবণরজনী হল যে নিঝুম
.                   আজি এ শ্রাবণ রাতে
.                তন্দ্রার কশাঘাতে |
একটি কোরক ডানা মেলে দিল
.                    নীল জলশয্যাতে
আজি এ শ্রাবণরাতে ||

.        *********************                                            
উপরে



মিলনসাগর
*
      শাশ্বত             

.       কালো মেয়ের চুলের মতন
আজ রাতে পৃথিবীও কেঁপে কেঁপে উঠছে,
.               আমি কালো ---
শুভ্র সকালকে আমি ক্রমাগত অভিশাপ দিই ---
কালো বন্ধুত্বের মধ্যে দেখতে পাই জীবন |
গভীর কালো রাত্রিকে আমি ঈশ্বরের
.               মতন সৃজন করি |
.      ঈশ্বর যেন বলছেন,
.      ওহে কালো মেয়ে ---
তোমার ঠোঁট দুটি কালোজামের মত রসস্নিগ্ধা,
আঙুরের থোকার মতই মিষ্টি, আর ডালিমের
.               মত টুসটুসে ---
তোমার হেঁটে যাওয়ার ছন্দে আমি সন্মোহিত হই,
আমার বুকের নিংড়ানো সুরধ্বনি দিয়েই
.           তোমায় সৃষ্টি করেছি |
.      তুমি চিরশাশ্বত বলেই না
.           সাদার এত অহংকার ||


.               *********************                                            
উপরে



মিলনসাগর
*
অকস্মাৎ             

ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো
.        হঠাৎ তোমাকে মনে পড়ে |
তুমি যেখানেই যাও
যেখানেই থাক, কোনো
চকিত মুহুর্তের নিঃশব্দতায়
.        আকাশের দীর্ঘশ্বাস লাগে ---
পউষের ঝরাপাতা গান শুনি একা একা,
.        তবু স্বপ্ন বুনি |
কৃষ্ণচূড়ার উদ্ধত আভাস
.        বড় ক্লান্তি আনে |
কেতকীর সুবাস আজ কুমারীর কমনীয় দেহে |
কত অতৃপ্ত দিনরাত্রি, ক্ষুধার ক্লান্তি
.        কত দীর্ঘশ্বাস
দিগন্তে দুরন্ত মেয়ের মতো |
পাহাড়ের ধুসর স্তব্ধতায় শান্ত আমি
নির্জন দ্বীপের মত সুজর, নিঃসঙ্গ ||


.         *********************                                            
উপরে



মিলনসাগর
*
        অনুভব             

.   সুবর্ণশিলার পাতে খোদিত তোমার নাম ---
সে নামের মহিমা পৃথিবীর সিমানা ছাড়িয়ে
.             ভেসে ভেসে চলে . . . . . |
রক্তিম গোলাপের সুগন্ধের মোড়কে
.    ঢেকে রেখেছি বহু যত্নে
বহুকাল ধরে . . . . . |
কৈশোর-যৌবনের স্পন্দন বুকে নিয়ে চলেছি
.    প্রৌরত্বের দরজায়, আগল তুলিনি কখনও,
জানাই নি কাউকে --- তোমাকেও না |
.    আকাশের সাথে মাটির প্রেম
.              মনের সাথে মনের,
গোপনে গোপনে কত গোপন কথা
.    অ-কথিত, অ-পঠিত রয়ে গেল অগোচরে |
হতশ্রী যৌবন ধুঁকতে থাকে ব্যর্থ জীবন নিয়ে
পৃথিবীর শর্তহীন ঐশ্বর্যের মাধুর্যের মাঝে |
.     হৃদয় কন্দরে সুবর্ণ শিলার পাতে
.               খোদিত তোমার নাম
.                 প্রদীপ্তপ্রোজ্জ্বল ||



.        
         *********************                                     উপরে



মিলনসাগর