দাদা ঠাকুরের কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com
|
[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা, কবিতা বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা https://www.milansagar.com/index.html এ দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্লগ্ বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ]
|
মরি হায় হায় রে
কলকাতা কেবল ভুলে ভরা
হেথা বুদ্ধিমানে চুরি করে
বোকায় পড়ে ধরা রে
কলকাতাতে সব কথাতে
দেখছি ভারি ভুল
কি বা করি, ঘুরে মরি
নাই কিনারা কূল
ভাবলাম কলুটোলায় কলু আছে
আছে তাদের ঘানি
দেখি কলুর বলদ বদ্যি সেখা
করে তেল আমদানি
আমি মুরগীহাটা চুপ করে যাই
কিনতে রামপাখী
দেখি সারি সারি স্টেশনারি
আসল জিনিস ফাঁকি
ভাবি চিনে বাজারেতে
শুধু চিনে থাকে খালি
সেথা ঘরে ঘরে দোকান করে
যত সব বাঙালী
ভাবি রাধাবাজার আছে বুঝি
শ্যামবাজারের বাঁয়ে
দেখি শ্যাম গিয়েছে বহু দুরে
রাধার মানের দায়ে
নাইকো হাতি নাইকো বাগান
হাতিবাগান বলে
বাদুড়বাগানেতে দেখি
বাদুড় নাহি ঝোলে
কাকুড় কিনব ব’লে আমি
কাকুড়গাছি গেলাম
কাকুড় তো নাই যোগোদ্যানে
ঠাকুর দেখে এলাম
একটা সাঁকো নাইকো সেথা
জোড়াসাঁকো নাম
সেথা দিনে রাতে রবির উদয়
দেখে আসিলাম
বাঘবাজারে গেলে প’রে
বাঘে খাবে ধ’রে
দেখি থাকেন সেথা মদনমোহন
গোকুল মিত্রের ঘরে
উল্টোডাঙ্গা দেখতে গিয়ে
বাড়ালাম জঞ্জাল
দেখি সোজা ডিঙা ভর্তি আছে
উলটো ডিঙির খাল
ধাধায় পড়ে ঘুরে ঘুরে
বেড়াই হাটে মাঠে
একদিন দেখতে যাব নিম গাছটি
নিমতলার ঘাটে
থিয়েটার রোডে গিয়ে দেখি
থিয়েটার তো নাই
থিয়েটারের সাধ মেটালো
দিলিপ কুমার ভাই
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
ভোট রঙ্গের গান
আমি ভোটের লাগিয়া ভিখারী সাজিনু
ফিরিনু গো দ্বারে দ্বারে
আমি ভিখারী না শিকারী গো
আমায় আসল কেউ না বলিল না
ক্যানভাস করিলাম যারে
সব হাঁ ক’রে যে রইল দাদা
আমি কার হাঁ বল বোজাই কিসে
তাদের মুখের ভাষায় ভুলিনু আশায়
জানি না বুকের ভাষা
তাদের মনের কথা মন ই জানে
ভোট দিবে কি নাহি দিবে
বুঝি গাছে তুলে মোরে মই কেড়ে নেবে
আশায় খাটিনু চাষা
বুঝি খেটে খেটে খাটো হনু
ভাগ্যে আমার এই ছিল
যত ক্যানভাসের ভাষা
তাতে পাইনু আশা
বলে সেন্ট পারসেন্ট ভোট তব
আমি তাতে রিলাই করি
দুহাতে বিলাই করি অভিনয়
আমি নেতা কি অভিনেতা
ঐ মালুম করিবে কে তা
আমি এই রূপে গত বারে
ফিরেছিনু দ্বারে দ্বারে
পেয়েছিনু এই রূপ হোপ গো
মোরে ভুলাইয়ে প্রলোভনে
ভোট দিল অন্য জনে
মোর ডিপজিট মানি হল জব্দ
আমার মান গেল মানিও গেল
আমি আসমান হতে পরলাম দাদা
আমার আশা মান দুই চূর্ণ হল
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
(বিখ্যাত কীর্ত্তন এর প্যারডি)
প্রভাত হইল ভূবন গাহিল
টাকা টাকা টাকা বলে
ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে থাকে থাকে থাকে
চলেছে কেরাণী কুলি
এ জগতে ভাই টাকাই শ্রেষ্ঠ
টাকাই পেতে সবে সচেষ্ট
ধনিরা খুলেছে আয়রণ চেষ্ট
ভিখারী খুলেছে ঝুলি
রৌপ্যচক্রাকার তুমি ভগবান
গোলকে ভূলোকে তব জয়গান
টাকায় টাকা বাড়ে সুদ চক্রহারে
আনে দু আনি সিকি আধুলী
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
(শীর্ণকায় যুবককে চশমা পরিহিত দেখে এই গানটি রচনা করেছিলেন দাদাঠাকুর)
মরি মরি প্রাণ কুমার আমার
এ দশা তোর কে করিল
বিশ বছরের কাঁচা চোখে
কোন আচকুড়ির ব্যাটা চশমা দিল
নাদুস নুদুস দেহ খানি
কারে দিলি যাদুমণি
কোন দুশমনের দশমনিতে
হাড়া ক’খানা সার হল
পুস্তকে মস্তক দিয়ে
পড়েছ বাপ্ অধীর হয়ে
বুকে নিয়ে জুড়াই হিয়ে
চাঁদবদনে মা মা বল
দেখে রে তোর শির্ণ দেহ
চাকরি তো দেবে না কেহ
আবার মনে হচ্ছে এ সন্দেহ
বুঝি মা-বলা বোল ফুরাইল
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
(প্রসিদ্ধ কংগ্রেস নেতা নির্মলচন্দ চন্দ্র দাদাঠাকুরকে দিল্লী নিয়ে গিয়েছিলেন | সেখানে
পণ্ডিত মোতিলাল নেহেরু প্রভৃতির সামনে তিনি এই গানটি করেন)
নাম না কেন মা
তোর চাপনে মল বাবা
তোর কার্ত্তিক গণেশ অনাথ হবে
মা তুই হবি বিধবা
হাতের শাখা খুলতে হবে
একাদশী করতে হবে, তারা গো
আর নিরামিষ খেতে হবে
পাঁঠা খেতে পাবে না
নাম না কেন মা
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
(দাদাঠাকুর কোনো দিন নেশাগ্রস্থদের সহ্য করতে পারতেন না | সকলেরই প্রায়
সংসার নষ্ট হয়ে যায় | ছেলে মেয়েরা দুঃখে পড়েন | তাঁদের উপদেশ দিয়ে
এই গানটি রচনা করেছিলেন |)
বোতলে বোতলে যা আছে আরাম এমন কিছতে নাই
আর এ বোতল সেবা করে নাই যেবা, কি করিল দুনিয়ায়
এই ধরাধামে বোতলের নামে প্রাণটা যাহার নাচে
জুড়ি ঘোড়াগাড়ী বাড়ী জমিদারী তুচ্ছ তাহার কাছে
মদীরা সাধন বোতল আরাধন ক’জন করিতে পারে
পারে সেই জন সে-ই মহাজন ধন্য এ সংসারে
সাধন প্রণালী শোন সবে বলি প্রথম গোপনে খাবে
সাধনের বাধা বাবা কূল দাদা ক্রমে সব মারা যাবে
সহধর্মিণী সাধনে বাধিলে বাধা দিয়ে কত কবে
রুক্ষ বাক্যে তারে অথবা প্রহারে দুরুস্ত করিতে হবে
বন্ধুবান্ধবে মানা করি সবে সাধন করিবে রোধ
বলিও সবারে খেয়ে দেখ ভাই হইবে আরাম বোধ
দু একটি ডোজ খেতে দিও রোজ তাহারা হইবে চ্যালা
সে সব পাজিরা বাড়িতে হাজিরা দেবে রোজ দুই বেলা
মাংস চপ্ আদি কাটলেট রাঁধি করিও তাহারে চাট
পাঁচ দোস্ত মিলে বসিয়া খাইবে প্রাণটা গড়ের মাঠ
পুত্র কন্যাগণ রবে অনশন কেয়ার কোরো না তাতে
আর স্ত্রীর আঁখিজলে মন যদি টলে বিঘ্ন হবে মৌতাতে
চারি দিকে দেখো সুনাম তোমার লোকমুখে যাবে রটি
আর মরিবার কালে রাখিয়া যাইবে খালি সে বোতল ক’টি
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
(অভিনব আগমণি গান)
সাবধান হয়ে আসিস মা তারা
এই লক্ষ্মীছাড়া দেশে এবার আসতে হবে লক্ষ্মী ছাড়া
কয়েক বছর হয়নি দেশে ধান
অন্নাভাবে থাকে না আর প্রাণ
মা লক্ষ্মীরে হাতে পেলে করবে সবাই বোঝাপড়া
সাবধান হয়ে আসিস মা তারা
বাণী রে মা আনিস না কো মোটে
পাশ করার দল দেখতে পেলে কাটবে একজোটে
তাঁর বিদ্যেতে আর চাকরি হয় না জানিস শুট্ করবে, মা তারা
সাবধান হয়ে আসিস মা তারা
সিদ্ধিদাতা শ্রীগণপতি
দেশের লোক অখুশি তাঁর প্রতি
কোনো কাজে দেয় না সিদ্ধি দেখবে কি তাঁর শুঁড়-নাড়া
সাবধান হয়ে আসিস মা তারা
কার্ত্তিক যদি সঙ্গে তোর থাকে
সেজে যেন আসেন তিনি খদ্দর পোশাকে
নইলে নন্ কো দলের টিকটিরিতে হতে হবে দেশছাড়া
সাবধান হয়ে আসিস মা তারা
নিজেও এসো হয়ে হুঁশিয়ার
বিনা-পাশে এনো মা অত হাতিয়ার
জানিস তো মা মোদের দেশে আর্মস অ্যাক্ট ভারি কড়া
পাশ না নিয়ে এলে মাগো পড়বে হাতে হাতকড়া
সাবধান হয়ে আসিস মা তারা
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
আ মরি বাংলা ভাষা
তোমার বাঁচার নাইকো আশা
নয়কো মোদের এ জ্ঞান যে সে
গঙ্গা ডুবিল গ্যাঞ্জেস এ
ইণ্ডাস এল সিন্ধু দেশে
বিয়াস হল বিপাসা
আ মরি বাংলা ভাষা
আমরা নূতন মালা দিয়ে গলে
বাংলা এনেছি বেঙ্গল-এ
কলকাতা তে কাল কাটিয়ে
ক্যালকাটায় বেঁধেছি বাসা
আ মরি বাংলা ভাষা
বাজিয়ে বীণা নূতন তানে
বর্দ্ধমান আজ বার্ডোয়ান-এ
চুঁচুড়ার অদৃষ্টে হল
চিনসুরার সুদাতের ভাষা
আ মরি বাংলা ভাষা
ভেবেছিল কেউ কি কবে
মেদিনীপুর মিদনাপুর হবে
কাঁথির মাথায় লাথি মেরে
কন্টাই করবে কোণঠাসা
আ মরি বাংলা ভাষা
তিপারা আজ ত্রিপুরাতে
ঔধ এল অযোধ্যাতে
রামচন্দ্র থাকলে বেঁচে
ব়্যাম বনে দেখতো তামাসা
আ মরি বাংলা ভাষা
এই ভাষাতে প্রথম মজি
লিখনু কত সাইকোলজী
এখন দন্তবিহীন অন্তকালে
বেদান্তে মিটাই পিপাসা
আ মরি বাংলা ভাষা
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
মজা করে খাও রে গাঁজা
সদা মন আনন্দে রবে
সদানন্দের দেখা পাবে
জানে ত্রিলোকবাসী লোক
গাঁজা গুলি শোক নাশক
যখন হবে আবশ্যক
আবগারীতে গেলেই পাবে
আমায় বলেছিলেন গুরু
ভজ কলকে নল মেরু
তবে দৃশ্টি হবে সরু
নিত্যবস্তু দেখতে পাবে
বলে ভোলা বম্ বম্
গাঁজার কলকে লাগাও দম
ভয় পেয়ে পালাবে যম
দম দিয়ে কাজ সেরে নেবে
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
দে মা আমায় রাজা করি
আর কাঙাল হয়ে থাকতে নারি
দন্ত অন্ত হল গো মা
কেমন চিবোই কলাই মুড়ি
এখন হালুয়া ভিন্ন দিন চলে না
বরং রাবড়ি হলে খেতে পারি
দে মা আমায় রাজা করি
পেটের জ্বালায় ভিক্ষা মেঁগে
ফিরি লোকের বাড়ী বাড়ী
চরণ যে মা আর চলে না
বিনা একখান মোটর গাড়ী
দে মা আমায় রাজা করি
রাজাই যদি করিস মাগো
দিস না যেন জমিদারী
খাজনা আদায় ভিষম ল্যাঠা
কেমন দেব কালেকটারী
দে মা আমায় রাজা করি
পাওনাদার পাওনাদারে
আছে এ দুনিয়া ভরি
আমায় রাজা করার আগে
পাঠাস তাদের যমের বাড়ী
দে মা আমায় রাজা করি
খালি পেটে বাতাস ঢুকে
কেবল ফুলে যাচ্ছে নাড়ী
টাকা দিতে আকার ভুলে
টাক দিলে মা কপাল জুড়ি
দে মা আমায় রাজা করি
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
(তাঁর নিজের শহরের একজন ভিখিরী কে একটি গান শিখিয়েছিলেন যাতে
তা শুনিয়ে কলকাতায় রোজগার করা সম্ভব হয় | গানের ইংরেজী অনুবাদও
শিখিয়ে দিয়েছিলেন)
যাবে যদি যাও আমি বাধা দেব না
যাই যাই যাই আমি ও কথা আর বোল না
তুমি যাবে পরবাসে কেমনে রহিব বাসে
আমি রব আসার আশে নবযৌবন তো রবে না
আমি বাধা দেব না
যাবে যদি যাও আমি বাধা দেব না
Go if you go go I won't you detain
Go go go go, don’t repeat it again
You are going to Rome
How shall I live in home
I may wait for you
But youth will not remain
বাধা দেব না
যাবে যদি যাও আমি বাধা দেব না
যাই যাই যাই আমি ও কথা আর বোল না
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
(ছেলের মৃত্যুতে এই গানটি রচনা করছিলেন দাদাঠাকুর)
দুখ দিয়ে বুক ভাঙবে তুমি তাই ঙেবেছ ভগবান
মার খাব তাও কাঁদবো নাকে পরাণ খুলে গাইব গান
তোমার দেয়া তোমার নেয়া আমার এতে কি লোকসান
দত্তাপহারী হলে নিজে দেয়া জিনিষ ক’রে দান
ভাগ্যে আমার যা হবে হোক হলাম তোমার দুঃখের গ্রাহক
তোমার ভাণ্ডারে দুঃখ খালি ক’রে করবো দুখের অবসান
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
দাদাঠাকুরের এই কবিতাগুলি আমরা রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের গানের সিডি থেকে শুনে
তুলে দিয়েছি | দুঃখের বিষয় এই যে দাদাঠাকুরের কবিতা বা গানের কোন বই অনেক
খোঁজাখুঁজির পরেও আমরা সংগ্রহ করতে পারি নি |
(কৈশোরে, ইস্কুলের আপাত দূরহ বিষয় আয়ত্ব করার জন্য তিনি সেগুলিকে সম্পূর্ণ
কবিতায় রূপান্তরিত করে সহজ কণ্ঠস্থ করেছিলেন এবং বন্ধুদেরও কণ্ঠস্থ করতে
সাহায্য করেছিলেন)
কোটি লক্ষ হাজার শত
লিখে রাখ মনের মত
ফি ঘরেতে জোড়া জোড়া
শতের ঘরে এক |
ডাইনে দুটো শূণ্য গিয়ে
মজা করে লেখ ||
. **************
. উপরে
মিলনসাগর
( পণপ্রথা ইত্যাদি সকল বিষয় সম্ধন্ধে তাঁর ক্ষুরধার লেখনী সর্বদাই সচল থেকেছে | তাঁর
কবিতায় পণ নিয় ছেলের বিয়ে দিয়ে শাশুড়ী পুত্রবধুর কাছ থেকে জবাব পান.... )
আঁতুড় হইতে কলেজ খরচা
হিসাব করিয়া চার হাজার
বাবার নিকটে নিয়েছ গুনিয়া
পুত্রের দাবী কেন আবার |
************************************
সাবধান বুড়ি! আমার সঙ্গে
ঝগড়া এরূপ কোরো না আর
তোমার পুত্রে আইনতঃ আমি
খরিদ সূত্রে দখলদার |
. **************
. উপরে
মিলনসাগর