দেবব্রত ঘোষের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com
১।  কলকাতায় ভ্যান গঘ                   
২।  
বিষাদ ব্যাধ                  
৩।  
অর্বাচীন          
৪।   
ক্যানসার ওয়ার্ডে ইস্তেহার            
৫।   
স্পন্দন                       
৬।   
কাল্যাইডোস্কোপ              
৭।   
শামসুর রহমান          

*
কলকাতায় ভ্যান গঘ  

লোকটাকে দেখেছি খুব
খ্যাতি তার মুদ্রায় |

দড়িতে গিট পড়ে যাবে বলে
সে কখনই পা'জামার কোমর দড়ি বাঁধত না
বাঁ-হাতে পেটের সামনে জড়ো করে ধরত |

খালি ডান হাতে সে সব কিছু করত
এমনকি পিচের রাস্তায় বা বাঁধানো ফুটপাথে
সে দুগ্গা, কালী ও শিবের চক ছবি আঁকত |

আঁকার মাঝে মাঝে সে খানিকটা দূর থেকে
ঘাড় কাত করে মাথা নাড়তে নাড়তে
নিজের আঁকা ছবি দেখত |

আজ সকালে বাজার ফেরৎ দেখলাম
লোকটা ম'রে গেছে নিজের আঁকা ছবির পাশে
বসে-বসে বোধহয় গত রাতে |

আজ দু'হাত খালি কোমর দড়ি আটকানো
ভগবান মঙ্গলময়
লোকটা উলঙ্গ মরে নি |

.                    ******************                                        
উপরে
বিষাদ ব্যাধ

জীবন দেখো নি তুমি জীবনে
যন্ত্রণা গভীর
মৃতপ্রায় গলনাঙ্কেও স্থবির
বৃন্ত থেকে খসে পড়া
অকাল শিশুর
খটখটে স্তনে মুখ রেখে বাঁচিবার
দুরন্ত প্রয়াস
রক্তাক্ত জ্যোত্স্না মাখা ঘাসে
পুরুষ হরিণের পড়ে আছে লাশ
ঘাই হরিণীর কাতর আহ্বান
বাঘেদের মনে রোমহর্ষ আসে

এই সব দেখি আমি প্রায়ই
অথবা দেখিব যে সে আলো কই
অন্ধকারে বসে থেকে এক বুক শঙ্কা নিয়ে
এই সব ভাবি তাই

আমি যে দেখিতে চাই
প্রেমিকের প্রণয় সুখ
শিশুদের তরে আছে আর্দ্র নিটোল স্তন
নারীরে ঘেরিয়া আছে আকাশের নীল
জ্যোত্স্না সমুজ্জ্বল জীবন

.             ******************                                        
উপরে
*
অর্বাচীন

হরিদ্বার পূর্ণিমার ঘাটে খুব স্বপ্নালু স্বরে
লোকটা বলেছিল
দেবদারু আর কাশবন যদি মিশ খায়
আকাশ খুব মজা পায়
আর গঙ্গা

আত্মস্থ হয়ে ভাবে আকাশ পাতাল

স্ত্রী ফিসফিস কে বললে
মাথা খারাপ
চলে এসো

চলে এসেছিলাম |

পর দিন আবার দেখা
সন্ধ্যায়
একগাল হাসলো   তারপর
এদিক ওদিক সন্দিগ্ধ দেখে গলা নামিয়ে
গঙ্গা কেমন প্রকাশ্যে চাঁদ কে কোলে নিয়ে
নাচাচ্ছে

বিজয়ীর হাসি নিয়ে অপত্যস্নেহে

বন্ধুরা হেসে বললে
পাগল
চল

চলে এসেছিলাম |

তৃতীয় সন্ধ্যায় শুধু সন্তানের হাত ধরে
চাঁদ তখন কম গঙ্গাও
খুশী হলো

বিড়ি দিলো
আগুনও
সন্তানকে কোলে নিয়ে বললে গঙ্গার গল্প

বন্ধনের আর ধারার   খুশী আর দুঃখের

কন্যার অনিচ্ছুক ফেরার পথে
একান্ত ঘোষণা
জেঠুটা কি ভালো

.       ******************                                            
উপরে
*
ক্যানসার ওয়ার্ডে ইস্তেহার

র ক'টা দিন থাকতে দেবেন
কথা ছিল অনেক করার
আজও দেখুন আবাল্য দেখা
মরখুটে সেই হদ্দ ছবি |

পাখির দল সেই যে গেছে
আক ফেরেনি
কথা ছিল ফিরিয়ে আনার
অথচ এই নীড়বদ্ধ পাখির দল
কাঁদতে আছে   এও দেখেছি |

শীতদৈত্যের রাজত্বে শিশুর দল
পালিয়ে মরে
কথা ছিল সেই শিশুদের লালন করার
আমরা এখন
মৃত শিশুর মমি দেখি |

কথা ছিল
লাথি মেরে গলা টিপে
এমন জাতকে পাল্টে দেবার
আমরা এখন প্রবাহগত গড্ডালিকার |

সন্ধে শেষে রাত্রি এলে
ঘুমের আগে মনে পড়ে
কথা ছিল পরের পর অনেক করার
জলাজমি চোরাবালি   তবু দাঁড়িয়ে আছি
কেমন করে তাও জানি না |

তবে আমায় এখন যেতে হবে
কষ্ট বড়

মাটি বড় মধুর জিনিস
নীল আকাশের শামিয়ানায়
মাটি মধুর গন্ধ ছড়ায়
আর প্রিয় গন্ধ ছড়ায়
নতুন নতুন
মানুষ দল
নারীর দল
শিশুর দল

মানুষ বড় মধুর জিনিষ

আর একটু আমায় দেখতে দেবেন
এ' সব কিছুর গন্ধ দেবেন
ছুঁইতে দেবেন
মতুন আকাশ
নতুন মানুষ
নতুন মাটি

ব্রতচিযুত
তবু আর ক'টা দিন থাকতে দেবেন


.       ******************                                               
উপরে
*
[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা, কবিতা
বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা
https://www.milansagar.com/index.html
দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্ লগ্  বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ]
স্পন্দন
এ এক আজব কুদরতি

তার পাতাল তল দীঘি
ওর অতল জল দীঘি

ছোটকা বড়কা গাছ
ঘিরে ঘিরে
রুই কাতল মাছ
ঘুরে ঘুরে

ফাৎ না ছেড়ে খোকন
ধীরে ধীরে
পায়রা টায়রা নোটন
ধরে ধরে

শ্যাওলা ছায়া নুড়ি
তিরে তিরে
দুইটা বুড়াবুড়ি
তীরে তীরে

বল কাহানী বল
চিরে চিরে
দীঘির শীতল জল
নীরে নীরে

.       ******************                                               
উপরে
*
কাল্যাইডোস্কোপ

চোঙটায় চোখ দিয়ে
একটু নাড়তাম
কত যে বিচিত্র রঙ বেরঙের
আলপনা হতো
অন্যদিকে

দাদুর মুখে প্রথম শুনি
কেমন যাদুময় নাম তার
কাল্যাইডোস্কোপ

দাদু যখন মারা গেলেন
আমি তখন চিলে কোঠায়
ঠাকুর ঘরে
দাদু মারা যাবেন যখন তখন
এই আশঙ্কায় বাচ্চাদের একটু আধটু খাইয়ে দেওয়া
হয়েছিল
আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
জানালা দিয়ে মুখে গড়িয়ে পড়েছিল
বর্ণালী আলো মধুমোহ

তখনই হাউ হাউ কান্নার আওয়াজ

দালানের এক ঠেয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম
সেজে গুজে দাদু গেলেন
বড়রাও
পিছন পিছন পায়ে পায়ে আমিও

শ্মশানে আর হরিবোলে বোল

ফিরে এসে ঘুরে ফিরে
কতবার বৃথাই খুঁজেছি
সেই কাল্যাইডোস্কোপ

তারপর নিরন্তর হরিধ্বনি শ্মশানযাত্রা জীবন
শূয়োরের ঔদরিক সন্ধান আদাড়ে বাদাড়ে নর্দমায়
আর এক যে ছিল  এক যে ছিল সুর
মনে মনে দুলে দুলে
দুলে দুলে হেঁইয়ো হো
আদ্যান্ত চার মিটার কাপড়ে মোড়া
চলেছি আমিও

কোথায় রইলো পড়ে
সেই যাদুময় কাল্যাইডোস্কোপ
এই পৃথিবীর ঘাসে
শাপলা ডোবায়
নাকি
চিলে কোঠার ঠাকুর ঘরে তেঁতুল হাঁড়ির পিছে

আহা পাওয়া যেতো যদি একবার

.       ******************                                               
উপরে
*
শামসুর রহমান

শামসুর ভাই
যে কথাটা আমি বলতে চাই
সেটা প্রায়ই
দেখি আপনি বলেছেন
বা বলতে চেয়েছেন
মানে আগেই দখল নিয়েছেন

তাই
আপনাকে আমি ঈর্ষা করি
ঘেন্না করি
চেষ্টা করি
প্রমাণ করতে এটাই
যে আপনার শরারতি সবটাই

তবু মারে ঘাই
কৌতুহল প্রশ্ন ইচ্ছা ইত্যাদি
লুকিয়ে রাতে জ্বেলে একক বাতি
পড়ি
পড়তে পড়তে মাতি
এ সব আমার কবিতা
নিয়ে
আমার বাসনার রক্তে
কলম ডুবিয়ে
শয়তানটা দিয়েছে
ছাপিয়ে

শামসুর রহমান
আপনি যান
নতুবা সমকামীতার কলঙ্ক
লেপে দেবো গায়ে
বলে দেবো
অন্ধকার ঘরে
তোকে নিয়ে কত রাত
উম্ নিতে
কাটিয়েছি শুয়ে

.       ******************                                               
উপরে
*