কবি গদাধর মুখোপাধ্যায়ের গান যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
কাল স্বপনে মাধব আমার কুঞ্জে এসেছিল | রজনিতে, ছিলাম শ্যাম সহিতে, ললিতে গো! প্রভাতে সেই শ্যাম কোথায় গেল || দিবসে শ্রীকৃষ্ণ-রূপ মনে ভাবিয়ে, নিশিতে নিকুঞ্জে ছিলাম নিদ্রিত হয়ে | আমি দেখিলাম ওগো সখি, মৃদু সহাস্য বদন, রমণীরঞ্জন, কালোবরন বাঁকা আঁখি | যুগল করে কর ধরি, বলে ---“প্যারি, কেমন আছ বলো বলো ||” কী ছলে শ্যাম ছলিতে এল! বলে---“উঠ গো রাই চন্দ্রমুখি! তোমার হেমাঙ্গে প্রিয়ে, শ্যামাঙ্গ দিয়ে, একাঙ্গ হয়ে থাকি |” করে আমার নিদ্রাভঙ্গ, দিয়ে ভঙ্গ, ত্রিভঙ্গ, অদেখা হল || কুসুম শয্যা করে, শ্রীমন্দিরে, আমি করেছি শয়ন; ইতিমধ্যে শ্যামসুন্দর, যেন দিল দরশন | মস্তকে মোহনচূড়া রয়েছে হেলে ; বনমালা, গুঞ্জমালা, দুলিছে গলে | বঁধুর অধরে মধুর হাসি--- করে মুরলী লয়ে, ত্রিভঙ্গ হয়ে, দাঁড়াল সন্মুখে আসি | মনে হল হেন, কুঞ্জে যেন, কোটি চন্দ্র প্রকাশিলে || সখি! ব্রজপুরী, পরিহরি, গেছে যেই সে মাধব ; শুনি নাই আর, সেই হতে বঁধুর শ্রীমুখের রব | আজ একী দেখি সখি, অঘট ঘটন! স্বপনে শ্যাম কহে----“প্যারি, আছ হে কেমন?” আমার ধরে সই যুগল পদে--- বলে---“হয়েছি দোষী, বিনয়ে তুষি, অপরাধ ক্ষমো শ্রীরাধে!” ক্ষণে ভাসে নয়ন-জলে, ক্ষণে বলে, “শ্রীমতি তো আছ ভালো ||” এ যে স্বপ্ন কথা, প্রাণের ব্যথা, ভয়ে করিনে প্রকাশ--- কী জানি কী হয় ভাগ্যে,সদা ওই মনে ত্রাস | বলিতে ললিতে, আমার শিহরে হৃদয়; কৃষ্ণের কথা কৃষ্ণ জানেন, আমার বলা নয় | আমি গো সই, রাজনন্দিনী ; কৃষ্ণপ্রেমে মজিয়ে, কৃষ্ণ ভজিয়ে, ছিলেম কৃষ্ণ-আদরিণী | সে সুখে বঞ্চিল বিধি, কৃষ্ণ-নিধি, পেয়ে পুন হারাইল || . **************** উপরে মিলনসাগর |
প্যারির রাজত্ব-সুখেতে আর কাজ নাই, বাঁচিলে প্রাণেতে বাঁচি | বিচ্ছেদ-জ্বালা রাই জুড়াত, যমুনায় ঝাঁপ দিত, কেবল আমরা তায় প্রবোধ দিয়ে রেখেছি || বৃন্দাবনেশ্বরী কিশোরী, যা বলো সকলই সম্ভব ; হে মাধব, রাধার সে গৌরব, গিয়েছে তোমা হতে সব| ছিলেন ব্রজেশ্বরী রাই কিশোরী--- হরে রাজত্ব তুমি তার, করেছ রাজপথের ভিকারি | আমরা কথায় তো ভুলব না, শ্রীরাধার যন্ত্রণা, এই মাত্র চক্ষে দেখে এসেছি || কব কী যে সুখে গোকুলে আছি | রাধার দাসী যত সই ব্রজাঙ্গনা--- রাধার চরণ বই জানে না, রাইমন্ত্র করে উপাসনা | কৃষ্ণ, তোমারে হারায়ে, রাধার পানে চেয়ে, আমরা সব প্রাণে বেঁচে রয়েছি || . **************** উপরে মিলনসাগর |