কবি গদাধর মুখোপাধ্যায়ের গান
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
.                পুরবাসী বলে উমার মা,
.                তোর হারা তারা এল ওই !
.        শুনে পাগলিনি প্রায়, অম্ নি রানি ধায়,
.                বলে--কই মা উমা কই ?
.         কেঁদে রানি বলে, আমার উমা এলে!
.         একবার আয় মা, একবার আয় মা,
.          একবার আয় মা ! করি কোলে |
.        অম্ নি দুবাহু পসারি, মায়ের গলা ধরি,
.      অভিমানে কেঁদে রানিরে বলে |
.    কই মেয়ে বলে, আনতে গিয়েছিলে!
.  তোমার পাষাণ প্রাণ, আমার পিতাও পাষাণ,
.  জেনে, এলাম আপনা হতে, গেলে নাকো নিতে,
.        রব না গো, যাব দুদিন গেলে ||
.  পরের ঘরে মেয়ে দিয়ে মা, মায়া কি পাসরি |
.       কৈলাসেতে বলে আমায় সবাই---
.   “তোর কি মা নাই ? তোর কি মা নাই?”
.             অম্ নি সরমে মরে যাই ||
.   তাদের বলি, আমার পিতে এসেছিলেন নিতে,
.        শিবের দোষ দিয়ে কাঁদি বিরলে ||
.       আমার মনের ব্যথা, আছে মনে গাঁথা,
.       মা, কী বলিবে অন্যে, পিতৃদত্তা কন্যে ;
.    চক্ষে দেখে দিলে পাগল স্বামী, সকলই জান তুমি,
.               এ কি কবার কথা !
.    ঘরেতে সতিনের জ্বালা গো, তাও তো শুনেছ সব |
.      শিব-সোহাগিনির প্রায়, রেখেছেন মাথায়,
.                         সদাই কলকল রব |
.           তরঙ্গিণীর অভিমানের কথা,
.                  আমার সয় না, আমার সয় না,
.                        আমার হয় না সহিষ্ণতা|
.     আমি ভাবি কোথা যাব, কোথায় গে জুড়াব,
.           কাঁদি বসে বিল্ববৃক্ষমূলে ||
.          হিমালয় আর কৈলাসশিখর,
.            নহে দূর যাতায়াতে---
.          মনে হলে মা! দিনে শতবার,
.          তত্ত্ব নিলে তো পার মা নিতে|
.        বাত্সল্য ভাবেতে তাচ্ছল্য, কী সে,
.              শুনি, কহো মা|
.    আমি হতেম তোমার মা, জানাইতাম মা,
.           মায়ের কত স্নেহ মা !
.      তোমার কঠিন হৃদয়, পিতাও নিদয়;
.           হোক মা, ও হোক মা !
.        একবার তত্ত্ব তো নিতে হয় !
.    আমি এ সুখ-শরদে, মরি মনের খেদে,
.    কথায় কথায় কোন বা বলে পাঠালে ||


.                   ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
.            এসে মাধবের মধুধাম,
.      কৃষ্ণপদে প্রণাম করিয়ে দুতী কয়,
.         বংশীধর, বহুদিনের পর,
.        ও চাঁদবদন দেখলাম দয়াময় |
.     ফিরে চাও, চাও, চাওহে কালোশশী,
.  সংগোপনে দুটো মরমের কথা তোমায় জিজ্ঞাসি |
.   তুমি ব্রজের ধন, কৃষ্ণধন, গোপীর সর্বস্বধন,
.   হরি---শুনি বিক্রীত হয়েছ এই মথুরায় ||
.   কী ধন দিয়ে শ্যাম, কুব্জা কিনেছে তোমায়!
.         আমরা ভক্তিধন, প্রেমধন,
.   দিয়ে সব গোপীগণ, শ্যাম, লয়েছি শরণ ;
.   তবু রাধানাথ, স্থান দিলে না রাঙা পায় |
.   এমন ধন, কও হে পেলে সে কোথায় ||
আমরা ধন মন প্রাণ, তোমায় দিয়ে জন্মের মতন,
.      তোমার রাঙা চরণে আছি বিকায় |
.  তুমি হলে না সানুকূল, মজালে গোপীকুল,
.  এখন অকূল পাথারে গোকুল ডুবে যায় ||
.    আমরা আহিরিণী, মনে জানি সার,
.   শ্যামধনের তুল্য মূল্য, ত্রিজগতে নাই |
.   হে তোমার তুল্য, তুমি অমূল্য নিধি,
.        মূল্য দিতে সাধ্য কার |
.   তবে কী জানি কী অর্থ, কী গূঢ় পদার্থ,
.  আছে হে কুব্জার ঠাঁই! সেই ধন, দুর্লভ রতন,
.      পেয়ে কৃষ্ণ মোহিত হলেন তাই |
.     এমন ধন আর কিহে কারো আছে!
.  দ্রব্যগুণে, তোমার শ্রীঅঙ্গ, কুব্জার অঙ্গে মিশেছে
.  তুমি ভুলাও জগতের মন, ভুলালে তোমর মন,
.  সেই ধন এখন, কাঁদালে ব্রজের ব্রজগোপিকায় ||



.                   ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
তুমি ব্রজেতে প্রেমের দায়, বিক্রীত রাধার পায়,
. কৃষ্ণধন, রাধার কেনা ধন, হয়েছে একবার |
.    সে ধনে অন্যের নাহি অধিকার ||
.    শুনি, কও কও কও হে চিন্তামণি,
মরি খেদে, কেন কৃষ্ণধন থাকতে রাই কাঙালিনি |
. করে রাইপক্ষে পক্ষপাত,হলে হে কুব্জার নাথ,
. হরি, মল দুঃখে রাই, একবার চক্ষে দেখলে না
. হোক হোক পূর্ণ হোক কুব্জার মনের বাসনা ||
. কুব্জা করেছে চন্দন দান,বাড়ালে দাসীর মান,
.         তাই বামে দিলে স্থান |
. কিন্তু, রাধার বই কুব্জার শ্যাম, কেউ বলবে না |
.     বোঝা ভার, শ্যাম হে তোমার, করুণা |
.     যথা রও, তার হও হে, দেখো বুঝে ;
.       অগ্রে রাধা, রাধা নামের পর,
.        তোমার কৃষ্ণের নাম সাজে |
.  আছে শ্রীরাধাকৃষ্ণনাম, বিখ্যাত যুগল নাম,
. হরি, মধুর যুগল ভাব লুকাতে তো পারবে না |
. ষোড়শ গোপিনী শ্রীবৃন্দারণ্যে, তার মধ্যে রাধা,
.     গোপীপ্রধানা, ধন্য মান্য রাজকন্যে |
.   সবে দাস্যক্রিয়া করে, পেলাম না তোমারে,
কুব্জার ফল্ ল ফল---স্বপনে তাও তো জানিনে,
.       ওহে চন্দনদানের এত ফল ||
.  আমরা তো ফুল তুলসী দিতাম সখা,---
ওহে হরি, ভালো, তাতেও তো ছিলহে চন্দন মাখা,
. বুঝি কৃষ্ণসাধনের ফল, ভাগ্যগুণেতে ফলে ফল,
.  সে ফল অভাগি গোপীর ভাগ্যে ফল্ ল না |
.      নিভৃত নিকুঞ্জে দেখেছি সবাই,
.     বিহারিতে রঙ্গে বিনোদবিহারী,
.        সাথে বিনোদিনী রাই |
.  লিখে দাসখত স্বহস্তে, শ্রীমতীর শ্রীহস্তে,
. দিলেহে কুঞ্জেতে, দয়াময়, তা তো মনে হয়,
.    সে খতে সাক্ষ্য আছেন ললিতে ||
.   তোমার সেই দাসখত লও হে হরি,
.     খাতক গেল, মিছে খত রেখে,
.      কী করিবেন রাই কিশোরী |
.     নিজ কর্মের ফল পেলেন রাই,
.    তোমার দোষ কিছুই নাই--হরি,
.   কিন্তু মর্মচ্ছেদ করলে ধর্মে সবে না ||


.               ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
দুই রাজ্যে দুজন রাজা, বলো প্রজা হব কার |
.    তুমি রাজা, ব্রজে রাই রাজা,
কৃষ্ণ আমরা দোহাই দিব কোন রাজার |
ললতে বিশাখা, বৃন্দে চিত্ররেখা, আসি মধুধাম,
রাজসভায়, রাজসম্বোধনে কয়,
রাজা কৃষ্ণে করিয়ে প্রণাম |
শুনো শুনো ওহে বনমালী, বলি বলি,
সব মনের দুঃখের কথাতোমায় বলি |
আমরা কোথায় যাই, ব্রজে রইলেন রাই,
তুনি রইলে, পেয়ে কংসের রাজ্যভার |
জানতে এলাম তাই শ্যাম হে যমুনার পার |
থাকি ব্রজে, একবার মনে করি ;
তা কি পারি শ্যাম, তোমায় না দেখে প্রাণে মরি,
এলে মথুরায়, মন ব্রজে ধায়,
প্রাণ কাঁদে হে, বিচ্ছেদে সেই শ্রীরাধার |
যখন কুঞ্জে ছিলে হৃষীকেশ---
প্রেমরাজ্যের কথা হয়েছে শ্রীরাধার হে;
ব্রজের রাজ্য ছিল রামরাজ্যের প্রায়,
নাহি ছিল দুঃখের লেশ |
পরমসুখেতে গোপিকাগণ হে করিত সুখে বাস,
.     উঠত নিত্য রসের লহরী,
.     রাধাকৃষ্ণে করিতে বিলাস!
এখন কৃষ্ণ, হওয়াতে অন্যথা, দাঁড়াই কোথা,
কোন রাজ্যে থাকলে ঘুচিবে মনের ব্যথা |
একবার মধুবন, আবার বৃন্দাবন,
যাতায়াত পরিশ্রম, সহে না আর ||


.               ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
.  রাই-শত্রু রেখো না হে শ্যাম রায়,
.  বধ করে ব্রজের রাধারে,
.  সুখে রাজ্য করো লয়ে কুব্জায় ||
.  বৃন্দে গে কৃষ্ণে কয়, শুনেছি দয়াময়,
.  কল্লে তো সকল শত্রুনাশ |
.  করে ধ্বংস, প্রধান শত্রু কংস,
.  যদুবংসের বাড়ালে উল্লাস ||
.  তোমার আর এক শত্রু ব্রজে আছে,
.  সে মলে সব কন্টক ঘোচে,
.  মলে, সেও হে প্রাণেতে বাঁচে ;
.  রাজার নন্দিনী, হল বিরহিণী,
.  বলো হে, কত দুঃখ সবে আর ||
ঋণের শেষ, শত্রুর শেষ, রাখলে প্রমাদ ঘটায় ||
.  তুনি হয়ে রাধার প্রেমের ঋণী,
.  তায় করলে কাঙালিনি,
.  তোমার ও গুণ জানি জানি,
এখন বধিলে রাধার প্রাণ, বাড়িবে অধিক মান,
.  মুক্ত হবে রাধার প্রেমের দায় ||


.               ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
.             তোদের মধুপুরে আছে---
.          শ্রীরাধার প্রাণের ঐরী কোন নারী |
.      কেমন রমণী সে, তারে দেখা গো,
.           একবার দেখি গো,
.        শুনেছি গো, তারই প্রেমে,
.       বিক্রীত হয়েছেন সেই শ্রীহরি |
.     যত মথুরা নগরী, মধুর রাজ্য হেরি,
.          বৃন্দে কয় বিনয় বচন |
.        দাঁড়া গো, একবার দাঁড়া গো,
.        তোরা দুখিনীর দুটো কথা শোন্ |
.  বড়ো বিপদে পড়ে তোদের রাজ্যে আমার আসা |
.          আমরা গোকুলের গোপিনী,
.          শ্যামতাপের তাপিনী,
.       গোবিন্দ করেছেন এই দশা| |
.    এই মথুরা নগরে, কৃষ্ণের নাম কে ধরে,
.   এখন যারে, কৃষ্ণ করেছেন নূতন সুন্দরী |
.        বিশেষ কথা জিজ্ঞাসা করি |
তারে দেখি নাই গো, লোকের মুখে এ নাম শুনি
.সে যে ব্রজের ধন, কৃষ্ণধন, রধার সর্বস্ব ধন,
.     সেই ধনের গ্রাহক সেই রমণী |
. বড়ো রসিকা সেই ধনী, রসিকমনোমোহিনী,
. প্রেমের ফাঁদে পড়েছেন রসিকচাঁদ বংশীধারী |
.      তোমরা মধুপুরের কুলাঙ্গনা,
.       আমরা ব্রজের ব্রজাঙ্গনা,
.    দেখা হওয়া ভার, কথা কই গো সার,
.        ওগো, ভাগ্যক্রমে আজ এখন,
.      পেলাম যদি দরশন, শুধাই সমাচার ;
.        তোরা যাসনে গো, যাসনে গো,
.             বোস্ গে একবার |
. দেখে গোপিকা সামান্যে, করিসনে অমান্যে,
.      যে জন্যে এলাম তাই শোন্ ;
.      পরধন নাহি প্রয়োজন,
.      সদা নিজধন করি অন্বেষণ ||
.      একজন তোদের দেশে ছিল,
.      আগে কংসের দাসী ;
.      এখন কংসের আর রাজ্য নাই
.      দাসীর দাসীত্ব নাই,
.        সেই দাসী হল রাজ-মহিষী |
. তোমরা জানো কি গো তারে, যে এই মধুপুরে,
.  রাধার গলার নীলকান্তমণি করেছে চুরি ||
.   ওগো কুব্জা গো, আমায় বলে দে গো,
.      মনোচোরের বাসা কার  ঘরে |
.       ব্রজগোপীর মন চুরি করে,
. এসেছেন মধুপুরে, সেই চোর---এই চোর,
.  ব্রজের মাখনচোর, এমন চোরের
.      মন চুরি কল্লে কোন চোরে |
.         এই ব্রজের ব্রজনাথ,
.   বলিয়ে ধরে হাত, বৃন্দের আনন্দহৃদয় |
.    ঈষৎ  ভঙ্গি ছলে, কথার কৌশলে,
.     গিয়ে দূতী, কুব্জার প্রতি কয় |
.     ওকী কর গো রাজমহিষী, বেরো গো,
. আমরা সব আহিরিণী, কৃষ্ণপ্রমকাঙালিনি,
. ব্রজের আমার বৃন্দে নাম কমলিনীর দাসী |
. তুমি রাজপাটের ঈশ্বরী, আমরা ব্রজনারী,
.   এসেছি তোমার কাছে চোর ধরে |
.     হরে মন, আছে কে এমন,
.   বলো গো, বলো গো আমারে |
.     তাই ভাবি গো, ভাবি মনে,
.   কুব্জা গো, যার রূপে জগৎ  ভোলে,
.      কার রূপে সে জন ভোলে -----বলো গো,
.      সে কি মনচুরীর মন্ত্র  কিছু জানে |
.      তারে দেখব গো একবার, কী আকার,
কী প্রকার,কী গুণে বেঁধেছে শ্যামে, প্রেমডোরে ||
. ব্রজনারী বুঝতে নারি, মনচোরের মন করে হরণ,
.       এমন মোহিনী-বিদ্যাসিদ্ধ কোন নারী !
.            শুনেছি পুরাণে, সমুদ্রমন্থনে,
.    সুধা করিলেন বিতরণ; গিয়ে মনোমোহিনীর
.    বেশে নারায়ণ, ভুলাইলেন মহাদেবের মন |
ও কার আছে গো এমন সাধ্য, যে নহে জগদ্ধাধ্য,
.           জগতের দুরারাধ্য ধন গো,
.      এমন কে আছে তারে করে বাধ্য!
. সে যে কী মন্ত্র পেয়েছে, কোথায় কী জেনেছে,
.            কী গুণে  বেঁধেছে নটবরে ||



.               ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
.               বুঝি নিবল রাধে,
.        তোমার অন্তরের কৃষ্ণবিরহ অনল |
. হেরে অন্তরে কালাচাঁদ, অন্তরের পুরাও সাধ,
.    অন্তর কোরো না আর নীলকমল||
.    চিন্তা নাই, চিন্তামণির বিরহ ঘুচিল,
.           এত দিনের পর!
.      অন্তর জুড়াও গো কিশোরী !
.     হেরে অন্তরে বাঁকা বংশীধর ||
.  যে শ্যাম বিরহেতে ছিলে কাতরা নিরন্তর,
.  সেই চিকন কালো,        হৃদে উদয় হল,
.     এখন সুশীতল করো গো অন্তর |
.  যদি অন্তরে অকস্মাৎ, উদয় হল রাধানাথ,
.    আছে এর চেয়ে বলো কী আর সুমঙ্গল ||
এ সময়ে পরশিতে বোলো না, হয় পাছে অমঙ্গল
.    বিধি এই করুন,
.    ঘুচুক শ্যামবিচ্ছেদ রাই তোমার |
.      ওগো চন্দ্রমুখি, কৃষ্ণসুখে  সুখী
.   তোমায় সদা দেখি, সাধ সবাকার |
.   রাধে, তোমার দুখ আর নাহি সহে,
.     গোপিকার করিলেন মাধব আজি,
.         বিরহানল বুঝি সুশীতল ||


.               ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
কাল স্বপনে মাধব আমার কুঞ্জে এসেছিল |
রজনিতে, ছিলাম শ্যাম সহিতে, ললিতে গো!
প্রভাতে সেই শ্যাম কোথায় গেল ||
দিবসে শ্রীকৃষ্ণ-রূপ মনে ভাবিয়ে,
নিশিতে নিকুঞ্জে ছিলাম নিদ্রিত হয়ে |
আমি দেখিলাম ওগো সখি,
মৃদু সহাস্য বদন, রমণীরঞ্জন,
কালোবরন বাঁকা আঁখি |
যুগল করে কর ধরি, বলে ---“প্যারি,
কেমন আছ বলো বলো ||”
কী ছলে শ্যাম ছলিতে এল!
বলে---“উঠ গো রাই চন্দ্রমুখি!
তোমার হেমাঙ্গে প্রিয়ে,                   শ্যামাঙ্গ দিয়ে,
একাঙ্গ হয়ে থাকি |”
করে আমার নিদ্রাভঙ্গ,                      দিয়ে ভঙ্গ,
ত্রিভঙ্গ, অদেখা হল ||
কুসুম শয্যা করে,                           শ্রীমন্দিরে,
আমি করেছি শয়ন;
ইতিমধ্যে শ্যামসুন্দর, যেন দিল দরশন |
মস্তকে মোহনচূড়া রয়েছে হেলে ;
বনমালা, গুঞ্জমালা, দুলিছে গলে |  
বঁধুর অধরে মধুর হাসি---
করে মুরলী লয়ে,                          ত্রিভঙ্গ হয়ে,
দাঁড়াল সন্মুখে আসি |
মনে হল হেন,                               কুঞ্জে যেন,
কোটি চন্দ্র প্রকাশিলে ||
সখি! ব্রজপুরী,                                পরিহরি,
গেছে যেই সে মাধব ;
শুনি নাই আর,                         সেই হতে বঁধুর
শ্রীমুখের রব |
আজ একী দেখি সখি, অঘট ঘটন!
স্বপনে শ্যাম কহে----“প্যারি, আছ হে কেমন?”
আমার ধরে সই যুগল পদে---
বলে---“হয়েছি দোষী, বিনয়ে তুষি,
অপরাধ ক্ষমো শ্রীরাধে!”
ক্ষণে ভাসে নয়ন-জলে,                     ক্ষণে বলে,
“শ্রীমতি তো আছ ভালো ||”
এ যে স্বপ্ন কথা,                         প্রাণের ব্যথা,
ভয়ে করিনে প্রকাশ---
কী জানি কী হয় ভাগ্যে,সদা ওই মনে ত্রাস |
বলিতে ললিতে, আমার শিহরে হৃদয়;
কৃষ্ণের কথা কৃষ্ণ জানেন, আমার বলা নয় |
আমি গো সই, রাজনন্দিনী ;
কৃষ্ণপ্রেমে মজিয়ে,                       কৃষ্ণ ভজিয়ে,
ছিলেম কৃষ্ণ-আদরিণী |
সে সুখে বঞ্চিল বিধি, কৃষ্ণ-নিধি,
পেয়ে পুন হারাইল ||


.                                               ****************                                           
উপরে


মিলনসাগর
*
প্যারির রাজত্ব-সুখেতে আর কাজ নাই,
বাঁচিলে প্রাণেতে বাঁচি |
বিচ্ছেদ-জ্বালা রাই জুড়াত, যমুনায় ঝাঁপ দিত,
কেবল আমরা তায় প্রবোধ দিয়ে রেখেছি ||
বৃন্দাবনেশ্বরী কিশোরী, যা বলো সকলই সম্ভব ;
হে মাধব, রাধার সে গৌরব,
গিয়েছে তোমা হতে সব|
ছিলেন ব্রজেশ্বরী রাই কিশোরী---
হরে রাজত্ব তুমি তার,
করেছ রাজপথের ভিকারি |
আমরা কথায় তো ভুলব না, শ্রীরাধার যন্ত্রণা,
এই মাত্র চক্ষে দেখে এসেছি ||
কব কী যে সুখে গোকুলে আছি |
রাধার দাসী যত সই ব্রজাঙ্গনা---
রাধার চরণ বই জানে না,
রাইমন্ত্র করে উপাসনা |
কৃষ্ণ, তোমারে হারায়ে, রাধার পানে চেয়ে,
আমরা সব প্রাণে বেঁচে রয়েছি ||



.                                               ****************                                           
উপরে


মিলনসাগর