গোবিন্দচন্দ্র রায়ের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।     ভারত বিলাপ       
২।     
মুনালহরী      
৩।     
তাজমহল        
     
*
ভারত বিলাপ
( "গীতিকবিতা (১৮৮২)"  থেকে নেওয়া)


কতকাল পরে, বল ভারত রে!
দুখ-সাগর সাঁতারি পার হবে |
অবসাদ-হিমে, ডুবিয়ে ডুবিয়ে
ওকি শেষ নিবেশ রসাতল রে |
নিজ বাসভূমে, পরবাসী হলে
পর-দাস-খতে সমুদায় দিলে |
পর-হাতে দিয়ে, ধনরত্ন সুখে
বহ লৌহবিনির্মিত হার বুকে |
পর ভাষণ, আসন, আনন রে
পর দীপশিখা নগরে নগরে
তুমি যে তিমিরে তুমি সে তিমিরে |
ঘুচি কাঞ্চনভাজন, সৌধ-শিরে
হল ইন্ধন কাচ প্রচার ঘরে |
খনি খাত খুঁড়ে, খুঁজিয়ে খুঁজিয়ে
পুঁজি-পাত নিলে যুটিয়ে লুটিয়ে |
নিজ অন্ন পরে, কর পণ্যে দিলে
পরিবর্ত ধনে দুর-ভিক্ষ নিলে |
মথি অঙ্গ হরে, পর স্বর্গ-সুখে
তুমি আজও দুখে তুমি কালও দুখে |
নিজ ভাল বুঝে, পর মন্দ নিলে
ছিল আপন যা ভাল তাও দিলে |
বিধি বাদ হলে, পরমাদ রটে
পরমাদ হরে হিত-বোধ ঘটে |
কি ছিলে কি হলে, কি হতে চলিলে
অবিবেক-বশে কিছু না বুঝিলে |
নয়নে কি সহে, এ কলঙ্ক-দুখ
পর-রঞ্জন অঞ্জনে কাল মুখ |
নিজ শোণিত শোষি, পরে পুষিলে
তুষিতে কুল শীল স্বধর্ম দিলে |
পর বেশ নিলে, পর দেশ গেলে
তবু ঠাঁই মিলে নাহি দাস বলে |
লভিয়ে বল বুদ্ধি, পরের বশে
হত জীবন যা অহিফেন চষে |
শিখিলে যত জ্ঞান, নিশিথে জেগে
উপযুক্ত হলো পর-সেবা লেগে |
হলো চাকরি সার, যথায় তথায়
অপমান সদায় কথায় কথায় |
শুনিবে বল কে, তব আপন কে
পরদাস-দশায় বধির সবে |
অহ! কে কহিবে এ সুদীর্ঘ কথা
সম সিন্ধু অপার অঘাধ ব্যথা |
কহিতে বুক চায় দুভাগ হতে
নয়নে উথলে জল স্রোত-শতে |
কত নিগ্রহ নিত্য অশেষমতে
সহিতেছ নিরন্তর ঘাট-পথে |
নিজ ছায়া পড়ে, পর-কায়ে সদা
রহ ভীত পদে পথ-পাশে সদা |
পড়িলে পর তুঙ্গ-তুরঙ্গ-মুখে
হয় চাবুক চূর্ণ কপাল বুকে |
কি করে গুণগ্রাম, সহস্র ঘটে
শির না লুঠিলে রুটি নাহি ঘটে |
পরে ব্রহ্ম বধে, তৃণ নাহি নড়ে
তব ভ্রান্তি হলে ভূমিকম্প ধরে |
উলটে পৃথিবী, পরগা-পরশে
সুখশান্তি লভে তব কায়-রসে |
আজি যে টুকু মান, লভে কুকুরে
ঘটে সে টুকু না তব বাসী নরে |
করি যেমন কাটিছ, রাত্রি দিবা
জীবনে মরণে বল ভেদ কিবা |
মন চায় কষায়, কৌপিন পরি
তব দুঃখ গেয়ে সব দেশ ঘুরি |


.          ****************                                             
উপরে


মিলনসাগর
*
যমুনালহরী
( "গীতিকবিতা (১৮৮২)"  থেকে নেওয়া)


নির্মল সলিলে,                               বহিছ সদা |
তটশালিনী সুন্দরী যমুনে, ও ( ধ্রু )

( ১ )
কত কত সুন্দর,                            নগরী তীরে,
রাজিছে তটযুগ ভূষি ও |
পড়ি জল নীলে,                          ধবল-সৌধ-ছবি,
অনুকারিছে নভঅঞ্জন ও |

( ২ )
যুগ-যুগ-বাহী,                             প্রবাহ তোমারি,
দেখিল কতশত ঘটনা ও |
তব জল-বুদ্বুদ,                            সহ কত রাজা,
পরকাশিল, লয় পাইল ও |

( ৩ )
কল কল ভাষে,                           বহিয়ে, কাহিনী,
কহিছ সবে কি পুরাতন ও |
স্মরণে আসি,                         মরম পরশে কথা,
ভূত সে ভারত-গাথা ও |

( ৪ )
তব জল-কল্লোল,                          সহ কত সেনা,
গরজিল কোন দিন সমরে ও |
আজী শব নীরব,                          রে যমুনে সব,
গত যত বৈভব কালে ও |

( ৫ )
শ্যাম সলিল তব,                      লোহিত ছিল কভু,
পাণ্ডব-কুরুকুল-শোণিতে ও |
কাঁপিল দেশ,                             তুরগ-গজভারে,
ভারত স্বাধীন যেদিন ও |

( ৬ )
তব জল-তীরে,                             পৌরব যাদব,
পাতিল রাজসিংহাসন ও |
শাসিল দেশ,                              অরিকুল নাশি,
ভারত স্বাধীন যেদিন ও |

( ৭ )
দেখিলে কি তুমি,                          বৌদ্ধ পতাকা,
উড়িতে দেশ-বিদেশ ও |
তিব্বত-চীনে,                               ব্রহ্ম-তাতারে,
ভারত স্বাধীন যেদিন ও |

( ৮ )
এ জল-ধারে,                             ধারে বহিল কভু,
প্রেম-বিরহ-আঁখি-নীর ও |
নাচিল গাইল,                             কত সুখ-সম্পদ,
এ তব সৈকত-পুলিনে ও |

( ৯ )
এ তনু-মুকুরে,                              আসি পূর্ণশশী,
নিরখিত মুখ যবে শরদে ও |
ভাসিত দশ দিশি,                            উত্সব-রঙ্গে,
প্লাবিত চিত সুখ-উত্সে ও |

( ১০ )
সে তুমি সে শশী,                         ধীর অনিল সম,
তবু সব মগন বিষাদে ও |
নাহিক সে সব,                             প্রমোদ উত্সব,
গ্রাসিল সকলে কালে ও |

( ১১ )
যে মুরলী-রবে,                              নিবিড় নিশীথে,
উন্মাদিত ব্রজবালা ও |
আকুল প্রাণে,                               তব তট-পানে,
ধাইত রব-সন্ধানে ও |

( ১২ )
বধিত বিরহে,                             শ্বাস-পবন কত,
বিরচিতো বলি তব হৃদয়ে ও |
সুহৃদ-সমাগমে,                             পুন এই দর্পণে,
প্রতিবিম্বিত সিত হাসি ও |

( ১৩ )
সে সব কৌতুক,                        কাল-কবল আজি,
লেশ না রাখিল শেষ ও |
কই সেই গৌরব,                            নিকুঞ্জ-সৌরভ,
হলো শত পরিণত শত কাহিনী ও |

( ১৪ )
কভু শত ধারে,                                এ উভপারে,
পঠান্ অফগান্ মোগল ও |
ঢালিল সেনা,                                  ত্রাসি নিবাসী,
ঘোর সে ভারত-বন্ধনে ও |

( ১৫ )
অহ! কি কুদীবসে,                              গ্রাসিল রাহু,
মোচন হইল না আর ও |
ভাঙ্গিল চূর্ণিল,                                 উলটি পালটি,
লুঠি নিল যা ছিল সার ও |

( ১৬ )
সে দিন হইতে,                                অন্ধ মনোগৃহ,
পরবল---অর্গল-পাতে ও |
সে দিন হইতে,                               শ্মশান ভারত,
পর---অসি---ঘাত-নিপাতে ও |

( ১৭ )
সে দিন হইতে,                             তব জল তরলে,
পরশে না কুলবালা ও |
সে দিন হইতে,                                 ভারত-নারী,
অবরোধে অবরোধিত ও |

( ১৮ )
সে দিন হইতে,                               তব তটগগনে,
নূপুর-নাদ বিনীরব ও |
সে দিন হইতে,                              সব প্রতিকূলে,
যেদিন ভারত-বন্ধন ও |

( ১৯ )
এ পয়-পারে,                            কত কত জাতীয়,
ভাঙ্গিল কত শত রাজা ও |
আসিল স্থাপিল,                             শাসিল রাজ্য,
রচি ঘর কত পরিপাটি ও |

( ২০ )
কত শত দুর্জয়,                                দুর্গম দুর্গে,
বেড়িল তব তট-দেশে ও!
নগর-প্রাচীরে,                                ঘেরিল শেষে,
চিরযুগ সম্ভোগে আশে ও |

( ২১ )
উপহাসি সর্বে,                                  মানব গর্বে,
কাল প্রবল চিরকালে ও |
গৃহ-গড়-পুঞ্জে,                                কতিপয় তুঞ্জে,
রাখিল করি বিকলাকৃতি ও |

( ২২ )
ঐ পুরোভাগে,                                  ভগ্ন বিভাগে,
গৃহবর শেষ শরীরে ও |
দেখিছ যে সব,                                উজ্জ্বল লেখা,
সে গত যৌবন-রেখা ও |

( ২৩ )
এর অলিন্দে,                                   সুন্দরীবৃন্দে,
মোগল নরপতি-কেশরী ও |
বসি ও মর্মরে,                               উল্লাস অন্তরে,
তৌলিত মোহন রূপে ও |

( ২৪ )
কভু এ গবাক্ষে,                               কৌতুক-চক্ষে,
নিরখিত পরিজন লইয়ে ও |
নিম্ন-প্রদেশে,                                   সে গজ-যুদ্ধে,
ভাষণ প্রাণ-বিনাশক ও |

( ২৫ )
এ ঘর মাঝে,                                    নারী-সমাজে,
বসি কভু খেলিত চৌসর ও |
রাখিত পাশে,                                  সে তরবারি,
কাফর-কণ্ঠ-বিদারী ও |

( ২৬ )
কৈ? সব আজি,                               সময় সমুদ্রে,
মজ্জিত সহ, শত আশা ও,
দেখিল শত শত,                       হলো কি নিবারিত,
নিস্ত্রপ মনুজ-পিপাসা ও |

( ২৭ )
যে গৃহ-পাশে,                                 কাঁপিত ত্রাসে,
ভূপতি-পদ-বিক্ষেপে ও |
সে সব ভবনে,                             কত শত অধমে,
পূরিছে মূত্র পূরীষে ও |

( ২৮ )
যে ঘর মধ্যে,                                  সুরভি সমৃদ্ধে,
সমোহিত চিত কালে ও |
সে সব সদনে,                                 উদ্ভবে বমনে,
পূতি-গন্ধ-বিকীরণ ও |

( ২৯ )
যে গৃহ-অঙ্গে,                                  বহুবিধ রঙ্গে,
বিখচিত ছিল মণিরাজি ও |
সে সব কালে,                              হরি এক কালে,
ঢাকিল লূতা-জালে ও |

( ৩০ )
ঐ তব তীরে,                                   শুভ্র শরীরে,
দণ্ডায়িত গৃহ-রাজ ও |
যার সুরূপে,                              দিক দিক হইতে,
কর্ষে মনুজ-সমাজে ও |

( ৩১ )
কত নর-পঞ্জরে,                              নির্মিল ইহারে,
শোষি শোণিত-কোষে ও |
দর্শাইতে সব,                                  দর্শক লোকে,
প্রমদা-গৌরব শেষে ও |

( ৩২ )
অহ! কত কাল,                             রবে এ জীবিত,
তটিনি! তট তব শোভি ও |
ভূষণ হইয়ে,                                 তব জল নীলে,
ব্যঞ্জিতে মন-অভিলাষে ও |

( ৩৩ )
হবে কোন কালে,                           হত ঘোর কালে,
পরিমিত সুর-পরমায়ু ও |
রহিবে শেষে,                                   এ গৃহ-দেশে,
আকাশে মৃদু বায়ু ও |

( ৩৪ )
যদি এই শেষ,                                রবে সব শেষ,
জীবন-স্বপন-প্রভাতে ও |
তনু মন ক্ষরিয়ে,                            দুখ শত সইয়ে,
চরিছে লোক কি আশে ও |


.                                                   ****************                                           
উপরে


মিলনসাগর
*
তাজমহল
( "গীতিকবিতা (১৮৮২)"  থেকে নেওয়া)


                    ১
একি সেই চিরশ্রুত ভারত-কৌস্তভ
তাজগৃহ, সাজিহান যবন গৌরব |
দম্পতি প্রণয় পুষ্প, নয়ন দুর্লভ,
পৃথিবী ব্যাপিয়া যার প্রশংসা সৌরভ ||


                    ২
সেকি এই! মনোহর সুশুভ্র গঠন
তুষার ফলকনিভ মর্মর রচিত |
জড়িত উপলে গাত্র বিবিধ বরণ,
মোগল সুন্দরী যেন রতনে খচিত ||


                    ৩
অহ! কি অমল শান্ত মধুর দর্শন,
কার্পাস কোমল কান্তি কঠোর মর্মরে |
তুলিতে আঁকিয়া যেন তুলেছে গড়ন
ধন্য রে কল্পনা, যে এ ধরিল উদরে ||


                    ৪
যতনে মাপিয়া স্বর্ণ, গড়ে স্বর্ণকার
তবু হয় অলঙ্কারে ভাগ অসমান |
কি তুলে স্থপতি তৌলি শরীর ইহার
গড়িল নির্ভুল হয়ে অঙ্গভাগমান ||


                    ৫
মরি কতকাল বসি মানস উদ্যানে
সৌন্দর্য কুসুমসারে শিল্পকারগণ |
গাঁথিল ইহার দেহ ; দেহপ্রাণ-পণে
রূপভরে ভুলাইতে ভবজনমন ||


                    ৬
কঙ্কাল কপাল স্থান ভীষণ শ্মাশানে
এ গৃহ কুসুম তনু দেখায় কি ভাল?
ফুটিত যদি এ কোন বিলাস উদ্যানে
শচিপতি কেলি গৃহ লাজে হতো কাল ||


                    ৭
অনতি উন্নত মঞ্চ সুন্দর বিস্তৃত
চতুষ্কোণ, গাঁথা শ্বেত রক্তিম শিলায় |
স্থাপিত তাহাতে তাজ সুচারু-নির্মিত
অবনীর গৃহশিরে শিরতাজ প্রায় ||


                     ৮
চারি কোণে চারি স্তম্ভ, সুদীর্ঘ সুসম
শরীর রঞ্জক বার পুরুষের মত |
দণ্ডায়িত কাল সঙ্গে করি পরাক্রম
তনু শুক্লে নভ নীল করিয়া লাঞ্ছিত ||


                     ৯
সুনীল যমুনা নীল মেখলা হইয়া
বহিছে রজতনিভ গৃহ কটিতটে |
উপরে গুম্বজ যেন দেখায় ভাসিয়া
নির-নিধি-বিম্ব নীল নভ-তল-পটে ||


                     ১০
সম্মুখে উদ্যান যেন মরকত বন
তরু শ্রেণী দুই পাশে সখীশ্রেণী প্রায় |
শোভে মাঝে জলযন্ত্রে শীত প্রস্রবণ
মোগল-মহিষী-যোগ্য ভোগ্য সমুদায় ||


                     ১১
দেখায় বিরাগ, মরি | বিভূতি বিভবে
কোরাণ অক্ষরমালা পরি গলদেশে |
মাঝে স্পন্দহীন গৃহ বসিয়া নীরবে
যেন কোন বিলাসিনী তপস্বিনী বেশে ||


                     ১২
নির্মেঘ শরদে কিম্বা মধু সুধাকরে
যেকালে এ তনুকান্তি ঝলসে বিজনে |
কি ছাড়! মনুজ মন, দেব মন হরে
নিরখিলে সেকালে এ রূপের কাননে ||


                     ১৩
একে শুক্ল তনু রাজ্যে শুক্ল শশীকর |
তায় ঋতুফুলে শুক্ল উদ্যানের হাস |
নাচায়ে ফিরিঙ্গীবালা দেহ শুক্লতর
চারিদিকে রচে শুধু শুক্লেরি আবাস ||


                     ১৪
ইতিহাসে পড়ি যুবা কৌতূহলানলে
জ্বলিয়া যে কালে ধায় দূরদেশ হতে |
আসিয়া দেখিয়া ভাসে তৃপ্তি সুখ জলে
সার্থক গণনা করে পথ ব্যয় শতে ||


                     ১৫
শিল্প দেখি কেহ প্রশংসয়ে শিল্পিগণে
লুপ্ত যারা দূরগত কালের কবলে |
কেহবা অর্থের ব্যয় গণি মনে মনে
বিস্ময় বিস্তার করে নয়ন যুগলে ||


                     ১৬
আসি কত ইয়ুরোপী বিজ্ঞান-কুশল
আঁকি তোলে যন্ত্রবলে গৃহ বরতনু |
নানাভাবে স্থিতিভেদে আঁকে অবিকল
আকাশে সহায় করি চিত্রকর ভানু ||


                     ১৭
তুলি ছবি অবশেষে লয় নিজ দেশে
পরায় প্রাসাদ-কণ্ঠে আভরণ করি |
বসি বন্ধু পরিজনে দেখে অনিমেষে
প্রশংসে ভারতভূত শিল্পকারিকরি ||


                     ১৮
গড়ি ক্ষুদ্র অনুরূপ অনুকারগণ
বেচে বিদেশীর কাছে স্বর্ণমুদ্রা পণে |
নিয়ে কত জন সেই রূপানুকরণ
রাখে গৃহে শোভা হেতু পরম যতনে ||


                     ১৯
আসি কত রাজা দেশান্তর হতে
জ্বালিয়া বিবিধ রঙ্গে আলোকের মালা |
নিরখে রূপের ছটা ঘটার সহিতে
দেখাইয়া লোকে লাল চঞ্চলার খেলা ||


                     ২০
সংসার সন্তপ্ত কত নগর নিবাসী
আসে নিত্য জুড়াইতে এ শান্তিভবনে |
দেখিয়া ইহার ছবি শোকতাপরাশি
পাসরে অমনি যেন মায়া মন্ত্রগুণে ||


                     ২১
ইহার মধুরাকৃতি শান্তিরসাশ্রয়ে
সিঞ্চয়ে অপূর্ব, চিত্তে স্বান্তনা সলিল |
আকাঙ্ক্ষার উত্তেজনা ভোগসুখাশয়ে
দেখি এর দশা হয় অমনি শিথিল ||


                      ২২
কোন দিন এইস্থানে এক জনকেরে
প্রণমিত লোকরাজ্য লুটিয়া ভূতলে |
কিবা না সম্ভবে দেখ এমন জনেরে
সুখে তার মুখ আজি লোটে ধরাতল ||


                      ২৩
কাহার প্রাঙ্গনে বসি কে করে বিহার
কাহার কুসুমবন কে করে চয়ন |
কাহার প্রস্তুত অন্ন কাহার আহার
নির্মম কালের হা! কি অন্ধ বিতরণ ||


                      ২৪
এই রো গৌরব, আশা, এ গৃহ উদ্যানে
এজন্য সংসারে চির অস্ত্রের বিপ্লব |
সোদর শোণিত বর্ষে এ তৃষ্ণা নির্বাণে
এ ফল আশায় হয় নৃমুণ্ডে আহব ||


                      ২৫
গৃহকর! যদি এত আকাঙ্ক্ষা বিপ্লবে
রহিয়াছ অতিক্রমি আজিও জীবিত |
কোনদিন কোন লোক এমন আসিবে
পাইবে না খুঁজি তুমি কোথা ছিলে স্থিত ||


                      ২৬
হয়ত এমন হবে, এ দেহ-পঞ্জরে
রচিবে আবার কেহ আকাঙ্ক্ষা বিমান |
প্রবৃত্তির এই খেলা সংসার-চত্বরে
শ্মশানে উদ্যান গড়ে, উদ্যানে শ্মশান ||


.             ****************                                             
উপরে


মিলনসাগর