গোবিন্দচন্দ্র রায়ের কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
যমুনালহরী ( "গীতিকবিতা (১৮৮২)" থেকে নেওয়া) নির্মল সলিলে, বহিছ সদা | তটশালিনী সুন্দরী যমুনে, ও ( ধ্রু ) ( ১ ) কত কত সুন্দর, নগরী তীরে, রাজিছে তটযুগ ভূষি ও | পড়ি জল নীলে, ধবল-সৌধ-ছবি, অনুকারিছে নভঅঞ্জন ও | ( ২ ) যুগ-যুগ-বাহী, প্রবাহ তোমারি, দেখিল কতশত ঘটনা ও | তব জল-বুদ্বুদ, সহ কত রাজা, পরকাশিল, লয় পাইল ও | ( ৩ ) কল কল ভাষে, বহিয়ে, কাহিনী, কহিছ সবে কি পুরাতন ও | স্মরণে আসি, মরম পরশে কথা, ভূত সে ভারত-গাথা ও | ( ৪ ) তব জল-কল্লোল, সহ কত সেনা, গরজিল কোন দিন সমরে ও | আজী শব নীরব, রে যমুনে সব, গত যত বৈভব কালে ও | ( ৫ ) শ্যাম সলিল তব, লোহিত ছিল কভু, পাণ্ডব-কুরুকুল-শোণিতে ও | কাঁপিল দেশ, তুরগ-গজভারে, ভারত স্বাধীন যেদিন ও | ( ৬ ) তব জল-তীরে, পৌরব যাদব, পাতিল রাজসিংহাসন ও | শাসিল দেশ, অরিকুল নাশি, ভারত স্বাধীন যেদিন ও | ( ৭ ) দেখিলে কি তুমি, বৌদ্ধ পতাকা, উড়িতে দেশ-বিদেশ ও | তিব্বত-চীনে, ব্রহ্ম-তাতারে, ভারত স্বাধীন যেদিন ও | ( ৮ ) এ জল-ধারে, ধারে বহিল কভু, প্রেম-বিরহ-আঁখি-নীর ও | নাচিল গাইল, কত সুখ-সম্পদ, এ তব সৈকত-পুলিনে ও | ( ৯ ) এ তনু-মুকুরে, আসি পূর্ণশশী, নিরখিত মুখ যবে শরদে ও | ভাসিত দশ দিশি, উত্সব-রঙ্গে, প্লাবিত চিত সুখ-উত্সে ও | ( ১০ ) সে তুমি সে শশী, ধীর অনিল সম, তবু সব মগন বিষাদে ও | নাহিক সে সব, প্রমোদ উত্সব, গ্রাসিল সকলে কালে ও | ( ১১ ) যে মুরলী-রবে, নিবিড় নিশীথে, উন্মাদিত ব্রজবালা ও | আকুল প্রাণে, তব তট-পানে, ধাইত রব-সন্ধানে ও | ( ১২ ) বধিত বিরহে, শ্বাস-পবন কত, বিরচিতো বলি তব হৃদয়ে ও | সুহৃদ-সমাগমে, পুন এই দর্পণে, প্রতিবিম্বিত সিত হাসি ও | ( ১৩ ) সে সব কৌতুক, কাল-কবল আজি, লেশ না রাখিল শেষ ও | কই সেই গৌরব, নিকুঞ্জ-সৌরভ, হলো শত পরিণত শত কাহিনী ও | ( ১৪ ) কভু শত ধারে, এ উভপারে, পঠান্ অফগান্ মোগল ও | ঢালিল সেনা, ত্রাসি নিবাসী, ঘোর সে ভারত-বন্ধনে ও | ( ১৫ ) অহ! কি কুদীবসে, গ্রাসিল রাহু, মোচন হইল না আর ও | ভাঙ্গিল চূর্ণিল, উলটি পালটি, লুঠি নিল যা ছিল সার ও | ( ১৬ ) সে দিন হইতে, অন্ধ মনোগৃহ, পরবল---অর্গল-পাতে ও | সে দিন হইতে, শ্মশান ভারত, পর---অসি---ঘাত-নিপাতে ও | ( ১৭ ) সে দিন হইতে, তব জল তরলে, পরশে না কুলবালা ও | সে দিন হইতে, ভারত-নারী, অবরোধে অবরোধিত ও | ( ১৮ ) সে দিন হইতে, তব তটগগনে, নূপুর-নাদ বিনীরব ও | সে দিন হইতে, সব প্রতিকূলে, যেদিন ভারত-বন্ধন ও | ( ১৯ ) এ পয়-পারে, কত কত জাতীয়, ভাঙ্গিল কত শত রাজা ও | আসিল স্থাপিল, শাসিল রাজ্য, রচি ঘর কত পরিপাটি ও | ( ২০ ) কত শত দুর্জয়, দুর্গম দুর্গে, বেড়িল তব তট-দেশে ও! নগর-প্রাচীরে, ঘেরিল শেষে, চিরযুগ সম্ভোগে আশে ও | ( ২১ ) উপহাসি সর্বে, মানব গর্বে, কাল প্রবল চিরকালে ও | গৃহ-গড়-পুঞ্জে, কতিপয় তুঞ্জে, রাখিল করি বিকলাকৃতি ও | ( ২২ ) ঐ পুরোভাগে, ভগ্ন বিভাগে, গৃহবর শেষ শরীরে ও | দেখিছ যে সব, উজ্জ্বল লেখা, সে গত যৌবন-রেখা ও | ( ২৩ ) এর অলিন্দে, সুন্দরীবৃন্দে, মোগল নরপতি-কেশরী ও | বসি ও মর্মরে, উল্লাস অন্তরে, তৌলিত মোহন রূপে ও | ( ২৪ ) কভু এ গবাক্ষে, কৌতুক-চক্ষে, নিরখিত পরিজন লইয়ে ও | নিম্ন-প্রদেশে, সে গজ-যুদ্ধে, ভাষণ প্রাণ-বিনাশক ও | ( ২৫ ) এ ঘর মাঝে, নারী-সমাজে, বসি কভু খেলিত চৌসর ও | রাখিত পাশে, সে তরবারি, কাফর-কণ্ঠ-বিদারী ও | ( ২৬ ) কৈ? সব আজি, সময় সমুদ্রে, মজ্জিত সহ, শত আশা ও, দেখিল শত শত, হলো কি নিবারিত, নিস্ত্রপ মনুজ-পিপাসা ও | ( ২৭ ) যে গৃহ-পাশে, কাঁপিত ত্রাসে, ভূপতি-পদ-বিক্ষেপে ও | সে সব ভবনে, কত শত অধমে, পূরিছে মূত্র পূরীষে ও | ( ২৮ ) যে ঘর মধ্যে, সুরভি সমৃদ্ধে, সমোহিত চিত কালে ও | সে সব সদনে, উদ্ভবে বমনে, পূতি-গন্ধ-বিকীরণ ও | ( ২৯ ) যে গৃহ-অঙ্গে, বহুবিধ রঙ্গে, বিখচিত ছিল মণিরাজি ও | সে সব কালে, হরি এক কালে, ঢাকিল লূতা-জালে ও | ( ৩০ ) ঐ তব তীরে, শুভ্র শরীরে, দণ্ডায়িত গৃহ-রাজ ও | যার সুরূপে, দিক দিক হইতে, কর্ষে মনুজ-সমাজে ও | ( ৩১ ) কত নর-পঞ্জরে, নির্মিল ইহারে, শোষি শোণিত-কোষে ও | দর্শাইতে সব, দর্শক লোকে, প্রমদা-গৌরব শেষে ও | ( ৩২ ) অহ! কত কাল, রবে এ জীবিত, তটিনি! তট তব শোভি ও | ভূষণ হইয়ে, তব জল নীলে, ব্যঞ্জিতে মন-অভিলাষে ও | ( ৩৩ ) হবে কোন কালে, হত ঘোর কালে, পরিমিত সুর-পরমায়ু ও | রহিবে শেষে, এ গৃহ-দেশে, আকাশে মৃদু বায়ু ও | ( ৩৪ ) যদি এই শেষ, রবে সব শেষ, জীবন-স্বপন-প্রভাতে ও | তনু মন ক্ষরিয়ে, দুখ শত সইয়ে, চরিছে লোক কি আশে ও | . **************** উপরে মিলনসাগর |