কবি কেতকী কুশারী ডাইসন-এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
১।    সালত্সবুর্গের বৃক্ষশাখা
২।    প্রজনন          
৩।    
নীরবতা                              
৪।    
হেরি অকালের ফুল      
৫।     
নেট্ ল্  টী             
৬।    
সুমনের গান   ( বীর সুমন  ও তাঁর গান কে নিয়ে লেখা কবিতা )  
৭।    
চিলকন্যা        ( মৌসুমী ভৌমিক  এর গান শুনে লেখা কবিতা )   


             
*
সালত্সবুর্গের বৃক্ষশাখা    

ঠিক এমনই নয়
যে প্রত্যেক সম্পর্কেই
পথ চলতে চলতে
কেবলই কর্তব্যবোধটা ঝোলার মতো

কাঁধে থাকে, অনুভবটা ঝ'রে যায়
ফুটোওয়ালা বালতি থেকে জলের মতো |
যাদের অভিজ্ঞতা ঐরকম,
করুণার্হ তারা নিশ্চয় সংখ্যাল্প |

কর্তব্যবোধ আর উচ্চতর হৃদয়াবেগ
দুটোই যে অন্তঃস্থ- ক'রে-নেওয়া সংলাপ,
মাথার ভিতরকার সার্কিট,
পরস্পরে জড়িয়ে আছে---

আলাদাই বা করবে কী ক'রে |
বিশ বছর, পঁচিশ বছর, ত্রিশ বছর
রাস্তা দিয়ে একসঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে
ঝড়ের বেগটা ক'মে যায়, কিনতু থাকতেই পারে

সেই মৃদু মিষ্টি জল, বৃষ্টি,
ধারাবাহিক অনবচ্ছেদ, প্রবাহ---
তীব্রতার পর কলসী-উচ্ছলিত কোমলতা,
দ্বিতীয়টা প্রথমটার জাতক |

যেমন বছরের পর বছর
কাঠের পিপেয় মদিরা পায় পরিণতি,
খনিতে তৈরি হয়ে ওঠে হীরা,

বৃক্ষশাখা হয়
রূপান্তরিত, কেলাসিত, দীপ্ত,
যাকে আর চেনা যায় না, তবু যার সৌন্দর্য সত্য---
যেমন বলেছেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো |

.                    ******************                                        
উপরে
প্রজনন       

মানে না সে জন্ম নিয়ন্ত্রণ |
তারই অপত্য সব
ঝাঁকে ঝাঁকে জন্মায় আর ওড়ে,
বাতাসে তাদেরই ভন্ ভন্ |

কেউ দীপ্ত, কেউ ম্লান,
কারও তৃষ্ণা, কারও অভিমান |
কারও ঠোঁট কেঁপে ওঠে,
রাত্রি জুড়ে কারও বা রোদন |

পড়ুক সে দেয়াললিখন |
অনুপস্থিত জনকের
দিন গেছে --- শোনেনি কি বন্দোবস্ত,
নয়া উচ্চারণ?

সামলাক এদের এবার |
আমার কি নেই
হাটে-মাঠে অন্য কাজ,
ঘাটে-বাটে-পাবে নিমন্ত্রণ?  

.                  ******************                                            
উপরে
*
*
[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা, তথ্য,
কবিতা বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা
https://www.milansagar.com/index.html
দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্লগ বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ]
নীরবতা       

যন্ত্রের তার নিংড়ে শিল্পী বার করেন ঝংকার,
আমাদের মনে হয় আমাদেরই ব্যথা ওখানে বাজছে |

অবাক আমরা ভাবি,
আমাদের না জেনেও তিনি কেমন ক'রে জেনে গেলেন
আমাদের নিভৃত অনুভবকে |

ধ্বনি রূপ দেয় ব্যথাকে,
সেই ব্যথা নিবিড়,
কিন্তু তার চেয়োও নিবিড়
নীরব তারের ব্যথা---

যাকে শিল্পীর আঙুল একদিন বাজাতো
কিন্তু এখন আর বাজায় না |

ধুলো জমে | কেবল সেই ধুলোই
তার ব্যথার সাক্ষী |  

.                  ******************                                            
উপরে
*
হেরি অকালের ফুল       

দোলনচাঁপায় ফুল ধরেছে আমার ঘরে
বিলেতের এই ডিসেম্বরে,
দেশের আচার কালের আচার বিচার-প্রচার
ক্যালেণ্ডারের কায়দাকানুন তুচ্ছ ক'রে |

অন্য নিয়ম তুচ্ছ ক'রে,
তিথির হিসেব বাক্স ভ'রে,
আপন গোপন বন্য রীতি মান্য ক'রে |

দিনের শেষে কয়েক ফোঁটা
রস জমে তার সবুজ ত্বকে, কুঁড়ির ভাঁজে |
অলৌকিকের স্তনের বোঁটা
চোয়ায় অমল আনন্দস্বেদ প্রাঁণের খাঁজে |
বাইরে প্রবল ব্রিটিশ বাদল--- সে দেয় খোঁটা |
চাল জুড়ে তার তিরস্কারের মাদল বাজে |

প্রলাপ বকে ডিসেম্বরী |
চালায় মুখর মাতব্বরী |
সবুজ মেয়ের যায় আসে না,
তার বানচাল ফ্যাশন মানা |
পর্দাটানা আলোকনিবিড় উষ্ণ নীড়ে
টবের মাটি ধেয়ানমগন ধাত্রীক্রোড়ে
এই চারা আজ কাদম্বরী
চন্দ্রাপীড়ের প্রতীক্ষাতে,
অনেক দিনের সম্বরণের প্রত্যাঘাতে |
শিকড় জুড়ে সিম্ফনি তার শীতের রাতে |

ঘোর অকালে সুদিন ফোটে আমার ঘরে
ঋতুর নিয়ম, কুলের কেতা ভঙ্গ ক'রে |
জাগ্রত যে-সুপ্ত নীতি, সংকেতময় স্ত্রীপ্রকৃতি,
সহোদরার সেই আকুতি আমার সকল বেদন ভরে |

ঘর জুড়ে আজ ক্যালেণ্ডারের পাতা ঝরে
নিয়তির এই নিয়ম-ভাঙা সয়ংবরে |  

.                  ******************                                            
উপরে
*
নেট্ ল্    টি       

বেশ তো, যদি চাও, খালি হাতেই নেট্ লের পাতা তুলে
নেট্ ল্  টি বানিয়ে দেবো তোমার জন্যে,
হাত জ্বললেও মালিশ করবো না ডক্ পাতার রস |

কিন্তু এক শর্তে---
তোমাকে কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে,
আমি যে দস্তানা ব্যবহার করছি না তার সাক্ষী হিসেবে |

পারবে
ভিডিও তুলে নিতে
ডকুম্নেটেশন স্বরূপ?

প্রথমেই ব'লে দিচ্ছি---
কাজটা বিকেলের আগে হবে না,
কেননা তার আগে সেরে নিতে হবে রাতের রান্না |

ওভাবে নেট্ ল্  তোলার পর
সেদিন আর কোনো কাজ করতে পারবো না---
হাত জা জ্বলবে |

বিকল্পে তোমার দোকান থেকে
কিনে আনতে পারো ফিশ্ এন্ড চিপ্ স্---
যা তোমাদের অভিরুচি |

খাবারটা সে-রাত্রে তোমরা নিজেরাই বেড়ে নিও তা হলে,
আমার জন্যে জায়গা করার দরকার নেই |
বাসনগুলো ধোয়ার সময়ে

তোমরা কিন্তু রবারের দস্তানা প'রে নিতে ভুলো না,
নয়তো ঐ টগ্ বগে গরম জলে আর কড়া ডেটার্জেন্টে
হাত জ্বলবে তোমাদেরও |

একটা ছোট্ট অনুরোধ : রেকর্ডপ্লেয়ারে
চালিয়ে দিও এলগারের প্রথম সিম্ফনিটা,
বারান্দার দিকের কাঁচের দরজাটা যেন একটু খোলা থাকে |

তোমরা যখন খেতে বসবে আমি তখন
বাইরে ব'সে
তারার দ্যুতিকে আমার নগ্ন নির্জন হাতের

স্নিগ্ধ ব্যান্ডেজ ক'রে
শুনবো কিভাবে সেই সংগীতের স্বরগুলি
একসার অভিজ্ঞ শেরপার মতন

বাহিত ভার তুচ্ছ ক'রে
সুনিয়ন্ত্রিত পদক্ষেপে
ধীরে ধীরে পাহাড়ে উঠছে |  

.                      ******************                                               
উপরে
*
সুমনের গান       
(
বীর সুমন  এর গান কে নিয়ে লেখা কবিতা )

একে কাল হৈল মোর দুর্মর পরান,
আর কাল হৈল মোরে সুমনের গান |
নবীনতার ডঙ্কানাদে বধির থাকে কান,
সুমন দিলেন বয়স্করেও সঙ্গত সম্মান |
যৌবনেরই রঙ্গ, না কি মাঝবয়সের রস,
না জানি তফাৎ, নিত্য বাড়ে অপযশ |
অলিন্দ-বাহিরে কালের দুরন্ত ঘর্ঘর,
চশমায় কুয়াশা তবু বসন্ত বর্বর |
দুঃখ করেন অবধান, দুঃখ করেন অবধান,
জাগে সকল কন্দ, ডাকে এপ্রিল-উদ্যান |
ফুটে এমারিলিস, ঢালে রক্তরসের ঝারি,
বর্তমানে পুরাতনে ভেদ বুঝিতে নারি |
ভাসে ছুটির নাও, কাঁপে ভরা খালের বারি,
কোমর দোলাইয়া নাচে পপ্ লারের সারি |
চড়াই ঠোঁট দেয শামুকে, বিড়াল ঢুঁড়ে চড়াই,
কাননে অরণ্যে একই জান বাঁচানের লড়াই |
অন্দরে সদর হেরি, সদরে অন্দর,
ভাবের বাণিজ্যে ভরি ভাষার বন্দর |
একে কাল হৈল মোরে সুমনের গান,
আর কাল হৈল যিনি গান শোনাইয়া যান |  

.                      ******************                                               
উপরে
*
চিলকন্যা       
(
মৌসুমী ভৌমিক  এর গান শুনে লেখা কবিতা )

১.
তুমি সেই সোনালী ডানার চিল
যাকে দেখেছিলেন একলা কবি
ধানসিড়ি নদীর উপরে
দুপুরের মেঘলা আকাশে |

বেতের ফল কখনও দেখেছি ব'লে
মনে পড়া না,
তবু কল্পনা ক'রে নিতে পারি
তোমার দৃষ্টির মতোই

বন্য তার ত্বকের স্নিগ্ধতা---
কোথাও সামিপ্য আছে কোনো |
তোমার গানের গায়ে
সূক্ষ্ম উত্তরীয়ের মতো উড়ছে

দুই ডানার আলিঙ্গনের মধ্যে
আকাশকে পেয়েও না-পাওয়ার কান্না |
রাঙা রাজকন্যা নও, শামলা গৃহস্থকন্যা,
কিন্তু যেখানে তুমি অনন্যা

সে তোমার সেই ক্ষমতায় নয়
যার জোরে তুমি পুরুষ কবির ভাষায়
রাঙা রাজকন্যার মতো ভর করতে পারো---
না-হয় সে-কাজ তুমি পারোই---

তোমার ভিন্নতা তোমার সৃষ্টার উড়ানে,
যেখানে তোমার খেলা
দৃরকে ছুঁয়েও দূরতরের বিরহে উত্কণ্ঠিত |
ভয় পেও না, বিহঙ্গী,

এই তো মাত্র ক'টা দিনের ঘুরপাক---
কে জানে হঠাৎই কখন
তোমার দিকে তাক করবে
সেই ধুরন্ধর তীরন্দাজ

যার ল্ক্ষ্য অব্যর্থ | ওড়ো,
যেভাবে পারো উঠে পড়ো
নিঃসোপান নীলের মাচানে |
তোমার আকাশ হোক অবারিত |


২.
অনেক দূর থেকে দূরবীনে এসে ঠেকছে
আলোর সেই ঘুড়ি, লাটাই থেকে যাকে ছাড়া হয়েছিলো
এই সৃষ্টির ব্রাহ্মমুহূর্তে |

এই পাওয়া --- এও সৃষ্টি | মহাশূণ্যে দূরবীন উঁচিয়ে
আমরা এইমাত্র তাকে সৃষ্টি করলাম |
ঘরে আনলাম ঘরের মেয়েকে |

তারও ওপারে নাকি আছে
ভিন্ন বিশ্ব, বিজ্ঞানীদের মতে---
যোখানে আমাদের দ্রব্যনিয়ম খাটে না,

যেখানে নাও থাকতে পারে
তমোজ্যোতির উচাটন দ্বান্দ্বিকতা |
আপাততঃ, চিল-মেয়ে, সোনা-সুতো,

অসীমের বিধূনিত সীমা,
আমি কৃতজ্ঞ যে তুমি এই পারেরই দুহিতা,
এই জঙ্গলেরই প্রজাপতি |

নয়তো চেনা হতো না |  

.            ******************                                                          
উপরে