কবি
কৃষ্ণমোহন ভট্টাচার্য
-র গান
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।
আজ কৃষ্ণ! চলো হে নিকুঞ্জবন
২।
স্বজনি গো! আমায় ধর্ গো ধর্
৩।
এমন দুঃখের সময় কালাচাঁদ
৪।
তোমার কমলিনী, কালো মেঘ দেখে
৫।
মনের দুঃখে বনে ভ্রমণ করে রাই
৬।
কৃষ্ণ, দেখো হে, একবার দেখে যাও
৭।
বলো উদ্ধব হে, কী লিখন কাঙালিনি দেখালে
*
. আজ কৃষ্ণ! চলো হে নিকুঞ্জবন,
প্রাণাহুতি যজ্ঞ করবেন রাই, লহো তারই নিমন্ত্রণ |
. আছেন চন্দ্রমুখী রাই, চাহিয়ে ও চন্দ্রবদন ||
. তুমি যে ছলে শ্যামরায়, এলে মথুরায়,
. হয়ে এক যজ্ঞে নিমন্ত্রিত ;
করলে সে যজ্ঞ সমাধান, হল তা জগতে বিদিত |
আবার এক যজ্ঞ হবে ব্রজধাম---
. শীঘ্র আসি তাও পূর্ণ করো শ্যাম!
. আমরা অবলা গোপবালা,
অনেক দুঃখে করেছি সব যজ্ঞের আয়োজন |
. তুমি হে যজ্ঞেশ্বর দয়াময়,
. তোমা বিনে যজ্ঞ নাহি পূর্ণ হয়|
মানসে মানসে রাই করিবেন সে যজ্ঞ,
. তোমার ওই শ্রীচরণে সমর্পণ ||
. করে যজ্ঞের সংকল্প প্যারি
. আছেন যজ্ঞ-বেদিতে বসিয়ে ;
. সজল জলধরে করিয়ে ধ্যান,
. তৃষিত চাতকিনী হয়ে|
তোমার বিচ্ছেদ-হুতাশন, করে সংস্থাপন,
. সমিধ আপনারই অঙ্গ ;
যোগিনীর প্রায়, আছেন মৌনে,
. ত্যজিয়ে সখীর সঙ্গ ||
. করেছেন রাই আত্মমনসংযোগ---
. অপেক্ষা নাই সবই হয়েছে ত্রিযোগ |
. আপনি কর্তা হয়ে, সন্মুখে দাঁড়ায়ে,
. দুঃখিনীর যজ্ঞ করো সমাপন ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
. স্বজনি গো! আমায় ধর্ গো ধর্,
. বুঝি কী হল আমারে |
. নিবিড় মেঘের বরণ, দলিত অঞ্জন,
. কে আসি, প্রবেশিল অন্তরে||
. দারুন বসন্ত তাপে, কষ্ণ বিচ্ছেদে,
. কৃষ্ণরূপ ভাবতে ভাবতে রাই ;
. হলেন অচেতন, ধরে সখীগণ,
. রাইতে রাই যেন আর নাই |
. তখন চৈতন্য পেয়ে কমলিনী কয়---
. এ কী দায়, বিশ্বম্ভরের প্রায়,
. কে আমার হৃদয়ে উদয় |
হেন জ্ঞান হয় আমার, ব্রহ্মান্ডের যত ভার,
. পশিল আমার হৃদিপিঞ্জরে |
. সই, ভাবিতে কেন অঙ্গ শিহরে!
. একে শ্রীকৃষ্ণ বিহনে দেহ শূণ্য,
. এতে অন্য ভার কী সয় গো সই!
. এ দুঃখিনীর তাপিত অঙ্গেতে,
. কে আসি হল অবতীর্ণ |
. একে সহজে দীনে ক্ষীণে মলিনে,
. বিরহ-বিষেতে জ্বরা ;
. আমার আপনার অঙ্গ আপনি ভার,
. বহিতে দুঃখের পসরা||
. আমার অকস্মাৎ কেন গো হল এমন ;
যেন এ দেহের সঙ্গেতে , করিছে প্রাণ আকর্ষণ
. মনে ভাবি গো একবার, অন্তরে কী আমার,
. দেখি গো হৃদয় বিদীর্ণ করে ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
. এমন দুঃখের সময় কালাচাঁদ,
. কেন দু-খিনীর হৃদয়ে উদয় |
. আমার অন্তরে প্রবল, বিচ্ছেদ-দাবানল,
. পাছে তাঁর শ্যামাঙ্গ সই, দগ্ধ হয় ||
. অন্তরের ধন কৃষ্ণ, অন্তরে রাখিতে,
. কার বা অসাধ ?
. কিন্তু ললিতে ! কপাল-গুণেতে,
. ঘটিল হরিষে বিষাদ ||
কৃষ্ণবিলাসের সই, আমার এ অঙ্গ
দুঃসহ কৃষ্ণবিরহ, তাতে আসিয়া জ্বালায় অনঙ্গ |
. সে যে ত্রিভঙ্গ কালিয়ে, মানসে হেরিয়ে,
.জুড়াই সই ! তেমন কপাল আমার নয় ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
. তোমার কমলিনী, কালো মেঘ দেখে,
. কৃষ্ণ বলে ধরতে যায়
||
. আমরা তায় বলি করে ধরি,
. ও রাই, ধোরো না গো ও নয় শ্রীহরি ;
. তবু, কই কৃষ্ণ বলে, প্যারি মূর্ছা যায় ||
. রাধার নবম দশা হেরে, ব্যাকুল অন্তরে,
. সত্বরে আসি কংসধাম|
. শ্রীগোবিন্দে কহে বৃন্দে,
. পদারবিন্দে করিয়ে প্রণাম |
. ব্রজে শ্যামবিচ্ছেদে প্যারি প্রলাপ দেখে---
. (রাধানাথ হে!) তোমার রাই বলে---
. হৃদ্ পদ্মের নীলপদ্ম নিলে কে!
. কেন এমন হলেন প্যারি, নারী বুঝিতে নারি,
. শ্যাম হে, তোমায়,সমাচার দিতে এলেম মথুরায়,
. একী ভ্রান্তি হল শ্রীরাধার, কহো শ্যামরায় |
. কেউ বা বীণে লয়ে, বসন্তেরে,
. বিনয়ে বীণের প্রতি খেদ জানায়
|
. ওরে ও বীণে! ব্রজে শ্যাম বিনে,
. বীনে আজ শান্ত সুরস কে বাজায়
||
. কেবল নারদ বাজায় বীণে, সে বিনে,
. তুই সাজবিনে, বাজালে সুরস বাজবিনে ;
. বলি শোন্ বীণে রে, আমরা নবীনে রে ;
. বীণে কি নারীর করে শোভা পায় |
. তুই তো যাবিনে রে, যাবিনেশ যথা শ্যামরায় |
. হরি বিনে মরি বীণে,
. তোর রসেতে আর ডুবিনে,
. ও রস ভাবিনে রে--- ও রস ভাবিনে---
. বলি বারে বারে, যা বীণে, যমুনা পারে,
. না গেলে সেই মধুপুরে, কৃষ্ণ পাবিনে |
. তুই কাষ্ঠের বীণে, বসন্তে রে,
. কৃষ্ণবোল বলো বীণে---বলো বিপদ যায় ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
. মনের দুঃখে বনে ভ্রমণ করে রাই,
. বনফুলের মালা গেঁথে পাঠালে |
. আছ কুব্জার প্রেম সম্বোধনে,
বসে রাজ-সিংহাসনে; হ্যাদে হে চিকনবালা !
. রাই দিলে চিকন মালা,
. ও মালা কার গলায় দিব মধুমন্ডলে ||
. কুসুম-হার করে লয়ে,
. বৃন্দে নিবেদন করে কৃষ্ণের পায় ;
. বধু হে, এলে রেখে, শ্রীমুখ না দেখে,
. শোকে রাই অশোক বনে সীতার প্রায় ||
তোমার মধুর শ্রীবৃন্দাবন, কুঞ্জবন ফেলে রাধে---
. মনের বিষাদে, তোমার বিচ্ছেদে---
. বসন্তে কিশোরী, বনে ভ্রমণ করি,
. “কোথায় হে বনমালি!” বলে কাঁদে |
. রাধার চক্ষের জল চন্দনমাখা,
. মালায় আছে রেখা, লেখা কৃষ্ণনাম ;
. কৃষ্ণ তায় পথে পথে কাঁদালে ||
. করে চিত্র বিচিত্র সাজালে |
. (শ্যাম হে, তোমার গরবিনি রাই)
. বনের কুসুম তুলে, নানা জাতি, জাতি যূথী---
. দগ্ধ হয়ে শ্যামশোকে,
. মুগ্ধ মধুর বন দেখে শ্যাম হে !
. তোমার গরবিনি রাই,
. মধুর ভাবে গেঁথেছিল মধুমালতী ||
. হয়ে বিচ্ছেদব্যাকুল, বকুল ফুল,
. গেঁথে মালা প্যারি সে জ্বালায় ;
. কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি, গেঁথে কৃষ্ণকলি,
. মূর্ছা যায় কৃষ্ণ বলে পড়ে ধুলায় ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
. কৃষ্ণ, দেখো হে, একবার দেখে যাও,
. বসন্তের প্রাণান্ত হল |
. ব্রজের দুঃখানল, রাধার শোকানল,
. প্রবল হয়ে বিচ্ছেদ দাবানব,
. তোমার ঋতুরাজ সসৈন্যে পুড়ে মল ||
. বসন্তে শ্রীকান্তে সম্বোধিয়ে,
. বৃন্দে কয় ব্রজের বিবরণ ;
. কৃষ্ণ হে, কৃষ্ণতাপে দগ্ধ,
. তোমার সেই মধুর বৃন্দাবন |
. শুক শারি ডাকে না কৃষ্ণ বলে;
মধুকরের মধু মধু রব, সে রব নাই হে ;
. কোকিল নীরবে বসে আছে তমালে |
. হল সুখহীন বৃন্দাবন, শুনো মধুসূদন !
. এ মধুর কাল ফলে শুকাল ||
কেন শ্যাম, তায় গোকুলে পাঠালে বলো |
. ব্রজধামে ঋতুরাজের আগমনে,
. নব নব, তরুলতা সব,
. সুখে মুঞ্জরিয়ে ছিল কুঞ্জকাননে |
. তাহে মলয় সমীরণ, জ্বালায়ে হুতাশন,
. বৃন্দাবন সেই অনলে দহিল
||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
বলো উদ্ধব হে, কী লিখন কাঙালিনি দেখালে |
. সজল আঁখি, মলিন বদন দেখি,
. কী দুঃখের দুঃখী,
. কৃষ্ণ অকস্মাৎ মূর্ছাগত রাই বলে |
. বৃন্দাবন-বাসিনী আজি কী প্রমাদ ঘটালে ||
. শ্রীকৃষ্ণের হস্তে হস্তলিপি কার,
দিলে কোন ক্ষণে, পত্র দৃষ্টি মাত্র চিত্ত চমত্কার,
. যেন ছিন্নমূল বৃক্ষ প্রায়,
. পড়লেন এই রাজসভায় হরি,
. যেন শক্তিশেল বিঁধল হৃদকমলে ||
. শ্রীকৃষ্ণের ভাবোন্মাদ, হেরিয়ে সে সংবাদ,
. উগ্রসেন উদ্ধবেরে কয়---ওহে কৃষ্ণ সখা,
. দেখো দেখহ কৃষ্ণের কী ভাব উদয় |
. যেন কী ধন হয়েছেন হারা,
কী মনের দুঃখে, চক্ষের বারি বক্ষে বহিছে ধারা |
. হয়ে কার মায়ায় মোহিত, ধুল্যবলুন্ঠিত,
. হরি ত্যজে রত্নাসন, কালোবরন ভূতলে |
. দুখী তাপী কত দেখতে পাই,
. এই মধুরাজ্যধামে এসে যায় হে |
. এমন কাঙালিনি, শ্যামমনোমোহিনী,
. কখনো তো দেখি নাই |
. কাঙালিনি বুঝি নয় সে,
. নারীর বুঝতে নারি কী লীলে,
. সে কোন মনোমোহিনী, দিয়ে মোহিনী,
. দিলে কৃষ্ণের মন মোহিয়ে |
. মায়া করে এসে মথুরায়, কাঙালিনির বেশে,
. কৃষ্ণধন কাঙালের পাছে লয়ে যায় |
নারী মায়াবী, জানে ছল, নয়নে বহে অশ্রুজল,
. আগে আপনি কেঁদে শ্যামকে কাঁদালে ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা