মিহির চৌধুরীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
১।   হন্যতে                   
২।  
মির লড়াই ২০০৭                  
৩।  
টালমাটালে কানোরিয়া          
৪।   
মস্তি                      
৫।   
উড়ালপুল          
          
      
*
ন হন্যতে     

লোকের রুচি কোথায় গেছে---
ছবিটা দেখেছ? কি আছে, আঁ |
কি চেহারা! একে আবার রেপ করেছে |
ভাঁজ করা কাগজ গরম চা
কিছু চশমা চশমা বিহীন কেউ বা
লেখাপ্ড়া জানা ভদ্দরলোকের আলোচনায়
আলোচনায় শহর শহরতলীর আড্ডায়
ভেসে বেড়ায় তাপসী মালিক | "কিন্তু
চোখটা দেখেছ, কি তীব্র চাউনি!"
কি দেখে? কা'কে দেখে?
সতেরো আঠারো --- কুমারী মন
রজস্বলা মাটির মেয়ে --- দেখেছিল
স্বপ্নের আকাশ বাতাস

গাছপালা আশপাশ
সবুজ ধানের ক্ষেত স্বজন সুজনের
পরিচিত মুখ | চেয়েছিল সাধারণ সুখ |
বুকের সবুজে পাঁচিল ওঠায়
স্বপ্নগুলো ডানা ঝাপটায়,
চোখের কোটরে জ্বলে হাজারো উনান |
দশের উত্তাপ গায়ে মেখে
রজঃস্বলা ভূমিকন্যা পায়ে পায়ে---
পথ চলে মিছিলে মিছিলে,
উদ্ধত হাতের মুঠি প্রতিবাদে দোলে |
ভূমিকন্যা তাপসীর পথের পাঁচালীর
পাতাগুলির আয়ু হানাদার ঠিক করে দেয়,
সূর্যসাক্ষী রেখে রজঃস্বলা ভূমিকন্যাকে
পাশবিক ধর্ষণ শেষে
দেহবৃন্তের পাতা সব খুবলে উপড়ে
সর্বভুক আগুনে পুড়িয়ে
শিল্পায়নে আহুতি হয় শেষ |
মাংসপিণ্ড ধোঁয়া পুড়ে গেছে মাটি
পেট্রল ডিজেল
ভূমিকন্যা মিশে গেছে মাটির গভীরে
পরিব্যাপ্ত আত্মায় জেগে থাকে
তাপসী মালিক |
ভূমি রাক্ষস নিধনের
ডাক জাগে মাটির গভীরে,
তাপসী ভেসেই চলে, বলে যায়---
ভারতকথা
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে |

.                    ******************                                
.                                                                           
উপরে
.                            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়  
.                                
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায়


এই কবিতাটি আশ্বিন ১৪১৪ এর 'আকিঞ্চন' বর্ষ ২৭ সংখ্যাঃ ৬৮ এ  
প্রকাশিত হয়েছিল                 
*
[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা, কবিতা
বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা
https://www.milansagar.com/index.html
দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্ লগ্  বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ]
*
জমির লড়াই ২০০৭     

ভয় আর লোভের চাদরে মোড়া
ত্রিশ বছরে পতিত মানব জমিন্
তাই তোমাদের চোখে
ফসল পতিত
পতিত চাষি
পতিত মজদুর
১৪৪ ধারা....খুঁটি....কাঁটাতার
পুঁজি পালাবে না আর
কি আশ্চর্য
সেখানে পুঁতেছ তুমি আধপোড়া লাশ
ধর্ষিতা মেয়ের
শীতের হিমেল রাতে
জমির পাহারাদার
লাশ হয়ে গেছে --- | তবুও
উজ্জ্বল বণিকসভায়
মিডিয়ায়
ভেসে থাকে হাসিভরা হানাদার মুখ |
কিন্তু আজ মানব জমিনে
ফাটল ধরেছে
ভয় আর লোভের চাদর
ছিঁড়ে যাচ্ছে
এক পা দু'পা করে চলছে মানুষ
চিরন্তন ফসলের ডাকে
রোদ্দুর বিছানো পথে
প্রতিবাদ হাঁকে |

.  ******************                                
.                                                                           
উপরে
.                            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়  
.                                
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায়
টালমাটালে কানোরিয়া     

হেঁইও হো, হেঁইও হো,
কানোরিয়া বাজছে ভোঁ |
কানামাছি নেতারা সব
একসুরেতে ধরছে পোঁ |
মজুর তো নয়--- 'ব্যাটারা' সব
দেখি ব্যাটায় করেটা কি!
পেটের পরে নাচবে আইন
পেটেতে কিল --- মরবি না কি?
এতকালের পুরুত মশাই
আমরা হেঁ হেঁ ভাবিসটা কি?
সঙের বিধান বগলদাবা
ব্যাখ্যা? তোরা বুঝিসটা কি?
চাঁদির টাটে বসে মোরা
করছি পুজো মালিকজনের
রাজ্যপাটে ধাক্কা দিবি?
দেখি সাহস --- অভয়জনের |
ছায়ার সাথে কুস্তি লড়ে
ব্যাঙ্কে ব্যালান্স উঠছে ভরে
আজ কিন্তু, দিশে হারাই
শ্রমিক যদি কড়া নাড়ে?
নাড়লে কড়া---সারেণ্ডারের
ভিজে মুড়ি খাইয়ে দেব
সর্বহারার শৃংখলটা
এবার পায়ে পড়িয়ে দেব |

কিন্তু রে হায়! কত মিছিল
যাচ্ছে সবাই কানোরিয়ায়
ট্রেডের নেতা ছাড়াই এবার
করবে তারা দাবি আদায়
প্রথা প্রথা কেবল প্রথা
জগদ্দল সে পাথর ভারি
তারই উপর বসে মোদের
কারবার সে রকমারি
টান মেরেছে সে কারবারে
কানোরিয়ায় ভুখা মানুষ---
কথায় চিঁড়ে ভিজবে না আর
ভো-কাট্টা কথার ফানুস
কানোরিয়ার বাঁচার লড়াই
লাখো লোকের বাঁচার লড়াই
মড়ার দেশে কিছুই তো নেই
নিছক শুধু বেঁচ্ থাকা
বাঁচতে জোরে ধাক্কা দিলে ;
তোমার আসন তাই তো পাকা |
অন্ধকারে লুকিয়ে আছো?
যাত্রা কিন্তু শুভংকর
ভাবছি বসে---আসছে যে দিন
দিনটা হ'বে ভয়ংকর |

. ******************                                
.                                                                           
উপরে
.                            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়  
.                                
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায়
*
মস্তি     

বুলাদি কে চেনেন তো? সেই
বুলাদির কথামত
শহরতলীর কোন এক নব বৃন্দাবনে
সতর্ক মজায় ক্লান্ত
ওরা ঘুমিয়ে পড়েছে
সরেশ শরীর চষে ফেলেছে ছেলেটি
সরসতায় মগ্ন মেয়ে স্বপ্ন দেখে
উদোম ক্ষেতে
কারা যেন ঢ্যারা পেটোচ্ছে
বলেছে ....
বীজশূণ্য জমি বেওয়ারিশ
ও জমিতে দাবিদার নেই
ওখানে
আবাসন হবে গো আবাসন
বাইপাস হবে গো বাইপাস
আরো কত মস্তির বাজার ....
নষ্টচক্র ছেলেটির স্নায়ুতন্ত্রে তখন
রেলকম ঝমাঝম
ঘেরাটোপ নব বৃন্দাবন |
সহজেই সবটুকু জানা হয়ে গেছে, তাই
অচিনপুরের পাখি ডাকে না তো আর
ছিন্নছড়া বুকে নিয়ে
ক্ষণিকের মস্তির বাজার |

. ******************                                
.                                                                           
উপরে
.                            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়  
.                                
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায়
*
উড়ালপুল     

কংক্রিটের চওড়া থামকে ঘিরে
ভিখু আর রাংতার সাজানো সংসার
ইঁট-পোড়া কাঠ ধোঁয়ায় কালচে হাঁড়ি
ভিখু তার বৌকে ডাকে রাংতা
ড্রেনের জলে হাত পা ঘষে
ঝকঝকে করে ও
তাই রাংতা
সুন্দরবনের গেড়ি ঘুগলির জীবন ফেলে
রাংতার কলকাতায়
কখন যে মাথাটা গেল
ও জানে না | রাংতা পেলেই কুড়োয়
রাংতায় অপলক ওকে দেখে
ভারী মায়া হয়েছিল ভিখুর
কাগজ কুড়োতে কুড়োতে
পোয়াতি পাগলীর হাত ধরেছিল ভিখু |
এখন পোয়াতি পেটে হাত বুলোয় ভিখু
অনেক কষ্টে কুড়িয়ে পাওয়া
হরগৌরীর ছবি কংক্রিট দেয়ালে
ন্যাকড়া কানি দড়ির আলনাও আছে
বর্ষার মাথার ওপরে ছাদ
দারুণ গরমে ঘনছায়া
মধ্যরাতে ওরা সিঁড়ি ভেঙে ওপরে আসে
ঝকঝকে রাংতার মত রাস্তা
নিয়ন আলো পোয়াতির পেটে
ভিখু গাড়িটা চেনে--- পেট্রোল ভ্যান
তাড়া খাবার ভয়ে ওরা
তাড়াতাড়ি নেমে আসে
দুর্গন্ধ চাদরে শুয়ে
রাংতা হাঁফায়
ভিখু কংক্রিটের থামে হাত বুলোয়
কংক্রিটে আঙুল ছড়ে যায়
রক্ত বন্ধ করতে নিজের আঙুল নিজেই চোষে ভিখু
অন্ধকারের জরায়ুতে তখন
রাংতার বাচ্চা নড়াচড়া করে |

. ******************                                
.                                                                           
উপরে
.                            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়  
.                                
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সূচির পাতায়