কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com |
গ্রন্থ উত্পত্তির কারণ (কবিকঙ্কণের আত্মপরিচয়) শুন ভাই সভাজন কবিত্বের বিবরণ এই গীত হইল যেন মতে | উরিয়া মায়ের দেশে কবির শিয়র-দেশে চণ্ডিকা বসিলা আচম্বিতে || সহর সিলিমাবাজ তাতে সজ্জন-রাজ নিবয়ে নিয়োগী গোপীনাথ | তাঁহার তালুকে বসি দামিন্যায় চাষ চষি নিবাস পুরুষ ছয় সাত || ধন্য রাজা মানসিংহ বিষ্ণুপদাম্বুজ-ভৃঙ্গ গৌড়-বঙ্গ-উত্কল-অধিপ | সে মানসিংহের কালে প্রজার পাপের ফলে ডিহিদার মামুদ সরিপ || উজির হল রায়জাদা বেপারিরে দেয় খেদা ব্রাহ্মণ বৈষ্ণব হল্য অরি | মাপে কোণে দিয়া দড়া পনর কাঠায় কুড়া নাহি শুনে প্রজার গোহারি || সরকার হৈলা কাল খিল ভূমি লেখে লাল বিনা উপকারে খায় ধুতি | পোদ্দার হইল যম টাকা আড়াই আনা কম পাই লভ্য লয় দিন প্রতি || ডিহিদার অবোধ খোজ কড়ি দিলে নাহি রোজ ধান্য গরু কেহ নাহি কেনে | প্রভু গোপীনাথ নন্দী বিপাকে হইলা বন্দী হেতু কিছু নাহি পরিত্রাণে || পেয়াদা সবার কাছে প্রজারা পালায় পাছে দুয়ার চাপিয়া দেয় থানা | প্রজা হইল ব্যাকুলি বেচে ঘরের কুড়ালি টাকার দ্রব্য বেচে দশ আনা || সহায় শ্রীমন্ত খাঁ চণ্ডীবাটি যার গাঁ যুক্তি কৈলা মুনির খাঁর সনে | দামুন্যা ছাড়িয়া যাই সঙ্গে রমানাথ ভাই পথে চণ্ডী দিলা দরশনে || ভেঠনায় উপনিত রূপরায় নিল বিত্ত যদু কুণ্ডু তিলি কৈল রক্ষা | দিয়া আপনার ঘর নিবারণ কৈল ডর দিবস তিনের দিল ভিক্ষা || বহিয়া গোড়াই নদী সদাই স্মরিয়ে বিধি তেউট্যায় হইলুঁ উপনীত | দারুকেশ্বর তরি পাইল বাতন-গিরি গঙ্গাদাস বড় কৈলা হিত || নারায়ণ পরাশর এড়াইল দামোদর উপনীত কুচট্যা নগরে | তৈল বিনা কৈল স্নান করিলু উদক পান শিশু কাঁদে ওদনের তরে || আশ্রম পুখরি আড়া নৈবেদ্য শালুক পোড়া পূজা কৈনু কুমুদ-প্রসূনে | ক্ষুধা-ভয়-পরিশ্রমে নিদ্রা যাই সেই ধামে চণ্ডী দেখা দিলেন স্বপনে || হাতে লইয়া পত্র মসী আপনি কলমে বসি নানা ছন্দে লিখেন কবিত্ব | যেই মন্ত্র দিল দিক্ষা সেই মন্ত্র করি শিক্ষা মহামন্ত্র জপি নিত্য নিত্য || দেবী চণ্ডী মহামায়া দিলেন চরণ ছায়া আজ্ঞা দিলেন রচিতে সঙ্গীত | চণ্ডীর আদেশ পাই শিলাই বাহিয়া যাই আড়রায় হইলুঁ উপনীত || ড়রা ব্রাহ্মণ ভূমি ব্রাহ্মণ যাহার স্বামী নরপতি ব্যাসের সমান | পড়িয়া কবিত্ব বাণী সম্ভাষিনু নৃপমণি পাঁচ আড়া মাপি দিলা ধান || সুধন্য বাঁকুড়া-রায় ভাঙ্গিল সকল দায় শিশুপাছে কৈল নিয়োজিত | তার সুত রঘুনাথ রাজগুণে অবদাত গুরু করি করিল পূজিত || সঙ্গে দামোদর নন্দী যে জানে স্বরূপ সন্ধি অনুদিন করিত যতন | নিত্য দেন অনুমতি রঘুনাথ নরপতি গায়নেরে দিলেন ভূষণ || বীরমাধবের সুত রূপে গুণে অদভুত বীর বাঁকুড়া ভাগ্যবান | তার সুত রঘুনাথ রাজগুণে অবদাত শ্রীকবিকঙ্কণে রস গান || . **************** উপরে |
[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন তথ্য, লেখা, কবিতা বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা https://www.milansagar.com/index.html এ দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্ লগ্ বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ] |
সতীস্কন্ধে শিবের ভ্রমণ বৈরাগে চলিলা ত্রিলোচন | ব্রহ্মা আদি পুরন্দরে রহাবারে যত্ন করে নাঞি শুনে কাহার বচন || সতীকে লইয়া শূলে তুলিয়া স্কন্ধের মূলে ত্রিভূবন করেন ভ্রমণে | কাটিতে সতীর শব জগতের নাথ দেব অনুমতি দিল সুদর্শনে || চক্রকীট কূপ ধরি শরীরে প্রবেশ করি গ্রন্থে গ্রন্থে কাটিতে লাগিল | বামা চরণ নিলা পড়িল যে ঘাটশিলা তার নাম রুক্মিণী হইল || দক্ষিণ চরণবরে পড়িল যে যাজপুরে তার নাম হইল বিরজা | দেবতা সকল মেলি সিদ্ধপাঠ তারে বলি সুরপতি তার করে পূজা || চক্রে সব্য হাত কাটে পড়ে রাজবোলহাটে বিশাল-লোচনী মাহেশ্বরী | সতীর দক্ষিণ হাথ বালিডাঙ্গায় হইল পাত রাজেশ্বরী বলি নাম ধরি || তবে সদাশিব রায় মহা পরিশ্রম পায় ক্ষীরগ্রামে করিলা বিশ্রাম | তাহে পৃষ্ঠদেশ পড়ে দেবের আনন্দ বাড়ে যোগাদ্যা হইল তার নাম || তবে প্রভু ধূর্জ্জটে গেলেন নগর কোটে দিবসেক রহিলা পিনাকী | মস্তক কাটে চক্রকীট সেই মহা সিদ্ধপীঠ তার নাম হইল জ্বালামুখী || তবে ত দেবের রাজ উত্তরিলা হিংলাজ নাভিস্থল পড়িল তথায় | দেব করে তন্ত্রমান সেই মহা সিদ্ধস্থান জপিলে পাতক নাশ পায় || ঈশানে ঈশান যায় উত্তরিলা কামাখ্যায় তথা হৈল দেবী প্রিয় স্থান | মধ্য অঙ্গে কাটে কীট সেই মহা সিদ্ধপীঠ কামরূপ-কামাখ্যা তার নাম || তবে ত কৈলাশবাসী উত্তরিলা বারাণসী বক্ষঃস্থল পড়িল তাহাতে | বিশালাক্ষী রূপ হৈল সর্ব্বদেবে পূজা কৈল উঠে শিব শূল করি হাতে || প্রভু শূল শূণ্য দেখি স্নেহেতে সজল আঁখি অস্থিখণ্ড পাইল শূল-আগে | কারুণ্য-পদান্য (?) বলি সেই অস্থি কণ্ঠে ধরি ধ্যান করি বসিলেন যোগে || সিদ্ধপীঠ যত স্থান শঙ্কর সাধয়ে জ্ঞান কার্যসিদ্ধ হয় জপগুণে | শুন রে সাধক ভায়া এই স্থানে জপ গিয়া শ্রীকবিকঙ্কণ রস ভণে || . ************ উপরে |
কালকেতুর নিকটে ভাঁড়ুদত্তের আগমন ভেট লয়্যা কাঁচকলা পশ্চাতে ভাঁড়ুর শালা আগে ভাঁড়ুদত্তের পয়ান | ভালে ফোঁটা মহাদম্ভ ছেঁড়া ধুতি কোঁচা লম্ব শ্রবণে কলম খরশাণ || প্রণাম করিয়া বীরে ভাঁড়ু নিবেদন করে সম্বন্ধ পাতায়্যা বলে খুড়া | ছেঁড়া কম্বলেতে বসি মুখে মন্দ মন্দ হাসি ঘন ঘন দেয় বাহু নাড়া || আমি বড় প্রতিআশে এসেছি তোমার দেশে আগুয়ান ডাকিবে ভাঁড়ুরে | যতেক কায়স্থ দেখ ভাঁড়ুর পশ্চাতে লেখ কুলে-শীলে মহত্ব বিচারে || কহি যে আপন তত্ব আমলহাঁড়ার দত্ত তিন কুলে আমার মিলন | দুই নারী মোর ধন্যা ঘোষ বসুর কন্যা মিত্রে কৈল কন্যা-সমর্পণ || গঙ্গার দুকূল কাছে যতেক কুলীন আছে মোর ঘরে করয়ে ভোজন | ঝারী থালা অলঙ্কার দিয়া করি ব্যবহার কেহ নাহি করয়ে রন্ধন || বহু পরিবার মেলা দুই নারী চারি শালা চারি পুত্র বহিনী শাশুড়ী | ছয় জামাই ছয় ঝি বিশেষ বলিব কি ধান্য দিবে নাহি দিব বাড়ি || হাল বলদ দিবে খুড়া দিবে হে বিছন পুড়া ভান্যা খাত্যে ঢেকী কুলা দিবে | আমি পাত্র রাজা তুমি আগে পূজা পাব আমি পরিণামে ভাঁড়ুরে জানিবে || ভাঁড়ুর বচন শুনি মহাবীর মনে গুণি করিল তাহার বহু মান | দামুন্যা-নগরবাসী সঙ্গীতের অভিলাষী শ্রীকবিকঙ্কণ রস গান || . ************ উপরে |
কালকেতুর প্রতি ভাঁড়ুদত্ত সঘনে নাড়িয়া শিরে গাঙ্গুটি প্রবন্ধে ধীরে ভাঁড়ুদত্ত কহে কাণ-কথা | যে হৈলে প্রজা বৈসে কহি আমি সবিশেষে একে একে সকল বারতা || দেহ মোরে সর্ব্ব ভার তাড়বালা আদি হার তুমি থাক নিশ্চিন্তে নিশয় | বহু প্রজা বসাইব এক ছাইয়াপত্র লব বন্দে বন্দে যেন প্রজা রয় || যখন পাকিবে খন্দ পাতিবে বিষম দ্বন্দ্ব দরিদ্রের ধান্যে দিব নাগা | খাইয়া তোমার ধন না পালায় প্রজাগণ শেষে যেন নাহি পাও দাগা || দেওয়া ভেটের বেটা বহিত আমার চিঠা যারে বল বুলান মণ্ডল | থাকিতে সকল প্রজা আগুয়ান মোর পূজা কহিলাম প্রকার সকল || পরি দু-পণের কাচা ভানিত আমার ভাচা সেই বেটা হবে দেশমুখ | নফরের হাতে খাণ্ডা বহুড়ীর হাতে ভাণ্ডা পরিণামে দেই অতি দুখ || শুনিয়া ভাঁড়ুর বাণী মহাবীর মনে গুণি মনে ভাবি না দিল উত্তর | করিয়া চণ্ডিকা ধ্যান শ্রীকবিকঙ্কণ গান নায়কেরে দেহ চণ্ডী বর || . ************ উপরে |
মুসলমানগণের আগমন কলিঙ্গ-নগর ছাড়ি প্রজা লয় ঘর বাড়ী নানা জাতী বীরের নগরে | পাইয়া বীরের পান বৈসে যত মুসলমান দিলেম পশ্চিমদিক তারে || আইল চড়িয়া তাজি সৈয়দ মৌলানা কাজি খয়রাতে বীর দেয় বাড়ি | পুরের পশ্চিম পটি বোলয়ে হাসন হাটী বৈসে কলিঙ্গ দেশ ছাড়ি || ফজর সময়ে উঠি বিছায়ে লোহিত পাটী পাঁচ বেরি করয়ে নমাজ | ছোলেমানী মালা করে জপে পীর পেগম্বরে পীরের মোকামে দেয় সাঁজ || দশ বিশ বেরাদরে বসিয়া বিচর করে অনুদিন কেতাব কোরান | কেহ বা বসিয়া হাটে পীরের শীরিনি বাঁটে সাঁঝে বাজে দগড় নিশান || বড়ই দানিসবন্দ না জানে কপট ছন্দ প্রাণ গেলে রোজা নাহি ছাড়ি | যার দেখে খালি মাথা তার সনে নাহি কথা সারিয়া চেলার মারে বাড়ি || ধরয়ে কম্বোজ বেশ মাথাতে না রাখে কেশ বুক আচ্ছাদিয়া রাখে দাড়ি | না ছাড়ে আপন পথে দশ রেখা টুপি মাথে ইজার পড়য়ে দৃঢ় দড়ি || আপন টোপর নিয়া বসিলা গাঁয়ের মিয়া ভুঞ্জিয়া কাপড়ে মোছে হাত | শেরানি নোহালি পানি কুড়ানি বিটুনি হুনি পাঠান বসিল নানা জাত || বসিল অনেক মিঞা আপন তরফ নিঞা কেহ নিকা কেহ করে বিয়া | মোলনা পড়ায়্যা নিকা দান পায় সিকা সিকা দোয়া করে কলমা পড়িয়া || করে ধরি খর ছুরি কুকুড়া জবাই করি দশ গণ্ডা দান পায় কড়ি | বকরি জবাই যথা মোল্লারে দেই মাথা দান পায় কড়ি ছয় বুড়ি || যত শিশু মুছলমান তুলিল দলিজখান মখদম পড়ান পড়না | রচিয়া ত্রিপদী ছন্দ পাঁচালী করিয়া বন্ধ গুজরাট-নগর-বর্ণনা || . ************ উপরে |