| কবি ডঃ নবারুণ ঘোষালের কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
| বাংলা আমার মা নিজভূমে পরবাসী ঝাড়খন্ডের বঙ্গভাষী নববর্ষ, পূজো আসে শুধুই স্মৃতি নিয়ে ধনতেরসের কুৎসিত ধন কালো টাকার ঝন্ঝনাঝন্ হালখাতা আর কোলাকুলি দিয়েছে ভুলিয়ে। সিংভূম, দুমকার পাহাড়ে, চট্টগ্রামে আর কাছাড়ে পদ্মা থেকে দামোদরের তীর জুড়ে এক দেশ — রাজনীতি আর টাকার খেলায় ধর্ম-জাতের ধ্বংসলীলায় লালমুখো আর কালো সাহেব করল তাকে শেষ। শেষ হলো গান দোয়েল শ্যামার টুকরো করে কাটলো আমার শ্যামল বরণ বাংলা মায়ের কোমল করুণ দেহ ; ছড়িয়ে ভেদাভেদির জহর বিষিয়ে দিল শান্তির ঘর ঘুচিয়ে দিল মিলন মধুর ভাইয়ের মায়ের স্নেহ। শাঁখের আওয়াজ, উলুধ্বনি আজানের সে মধুর বাণী ছাপিয়ে উঠে আজকে শুধুই হিন্দী গানের ধুম টুসু-বাউল-ভাটিয়ালি ছৌ-ঝুমুরের মঞ্চ খালি নজরুল আর রবিঠাকুর ঘুমিয়ে নিঃঝুম। মা কেন আজ এ হীন বেশে এই দুনিয়ার কোন সে দেশে কাদের ঘরে আছে এমন সোনার চাঁদের দল ? সাহিত্য আর নৃত্য-গীতে খেলাধূলায়, রাজনীতিতে, বিজ্ঞানে কি কোন বিভাগে পিছিয়ে মোরা বল্ ? চন্ডীদাস আর গোবিন্দদাস, শ্রীচৈতন্য বা কৃত্তিবাস রামমোহন আর বিদ্যাসাগর কাদের ঘরের ছেলে? হেম-নবীনের রণ-আবাহন দীনবন্ধুর নীল দর্পণ মাইকেল আর বঙ্কিম বল্ কোন দেশেতে মেলে? মাষ্টারদা, ক্ষুদিরাম বোস, নেতাজীর বল-বীর্য-সাহস, বিনয় বাদল দীনেশ বলো কোন সে মায়ের ধন — শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেক-বাণী কোন মা দিল ধরায় আনি অরবিন্দ, মা সারদায় কে দিয়েছে স্তন? প্রফুল্ল রায়, জগদীশ বোস, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোস, অমর্ত্য সেন, মহলানবীশ কার কোল আলো করে? সুকুমার রায়, শরৎচন্দ্র, ত্রৈলোক্যনাথ কি উপেন্দ্র, বনফুল আর পরশুরাম এল কাদের ঘরে? সুকান্ত সেই কিশোর নেতা, আশাপূর্ণা, মহাশ্বেতা, শিব্রাম আর নারায়ণে বসিয়ে চাঁদের হাট বিষ্ণু-সুনীল-শক্তি-নীরেন শামসুর আর শঙ্খ-প্রেমেন কলম-কালির দাপট দিয়ে চালায় রাজ্যপাট। হাসান রাজা, আব্বাসউদ্দিন, পূর্ণ দাস আর আলাউদ্দিন, শচীন কর্তা কার সুরেতে ধরেছিলেন তান? হেমন্ত বা রবিশঙ্কর আরতি কি সন্ধ্যা-কিশোর, মান্নাকে কে শুনিয়েছিল ঘুমপাড়ানি গান? ফরাসী এক রাষ্ট্রপ্রধান সত্যজিতের বাড়িতে যান দেশের সেরা পদকটিকে নিজের হাতে বয়ে — সৌরভ দাঁত চেপে দাঁতে অপমানের বদলা নিতে শক্ত হাতে ব্যাট ধরে ফের ফিনিক্স পাখী হয়ে। আনন্দমোহন যে তিনি ঈশ্বরেরই আসন ছিনি নিজের হাতে সৃষ্টি করেন প্রথম অণুজীব বাবুল-শ্রেয়া-অনীক-শানু নচিকেতা ও শান্তনু সুরের রাজ্যে বয়ে চলেন নতুন যুগের দীপ। এমন চাঁদের হাটের মাঝে বাঙালী তুই কিসের লাজে বাংলা মায়ের মুখের থেকে মুখ ফিরিয়ে র’স? অমর্ত্য আর রবির সাথে ইউনুস জ্বলে তোর মাথাতে তিনটি নোবেল নিয়েও হ’বি হিংলিশেরই বশ? মন্ডল আর মাহাতো ভাই পশ্চিমীদের পায়ে সদাই সেলাম ঠুকে ধূয়ো তোলেন, “হিন্দী হ্যায় হাম” আন্সারি-শেখ-কাজীর দলে মায়ের মুখের ভাষা ভুলে উর্দুভাষী বলে তোলেন ভোটের খাতায় নাম। চ্যাটার্জী-বোস সাহেব মিলে পিৎজা সমেত ভদ্কা গিলে নাকীসুরে আমেরিকান ভাষায় কথা কয় সোনার কাঠির গল্প ভুলে হ্যারি পটার, জ্যাক এন্ড জিলে বাংলা ভাষায় মা-বাবা ডাক শুনতে লজ্জা হয়। এমনি করে রাখবি কি ভাই বাঁচিয়ে নিজের মর্যাদাটাই পায়ের নীচে থাকবে কি তোর এক ছটাকও জমি? সংখ্যাগুরু হয়েও কি তাই সংখ্যালঘু রইবি সদাই প্রথম হয়েও দ্বিতীয় ভাষার স্থান পেতে চাও তুমি? পষ্ট গলায় বাংলা বলে গর্বেতে শির উচ্চে তুলে জগৎসভায় চেঁচিয়ে বলো “বাংলা আমার মা” শেকল ভাঙার শপথ হাতে মায়ের চোখের জল মোছাতে লক্ষ ছেলের আত্মবলি ভুলতে পারি না। ঝাড়খন্ডে, কামতাপুরে, আর কেটোনা বাংলা মা-রে রক্ত যে তার ঝরে ঝরে শুকিয়ে গেছে হায় — বুকের দুধ আর কে দেবে বল্ মাতৃঘাতী ওরে পাগল চোখের উপর স্বদেশ তোমার লুঠ তো হয়ে যায়। বাইশ কোটি বাঙালী ভাই একসাথে ফের জুটলে সবাই কাটবে এ ঘোর রাতের আঁধার, দুঃখ হবে শেষ – ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরায় ঝলমলিয়ে উঠবে আবার বাংলা নামে দেশ। . *************** উপরে মিলনসাগর |