কবি পারমিতা চক্রবর্তীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
বার্তা-১    

বৃষ্টি তুমি অঝোরে ঝরনি
মৌসুমির হয়ে ছুটে গেছ
দমকা হাওয়ার সাথে-----
কোনও সাহারায় ঝড় হয়ে পড়বে
কোনও রাতে |
জানি তোমায় পাব না কখনও
লাল টুকটুকে আকাশ আমি
না চেয়েই তো পাই ;
আমার হলদেটে পল্লব
আমার রিক্ত শুষ্ক শাখার বাহু
তুমি এড়িয়েই যাও স্বভাববশে |
তুমি বসন্তেরও নও প্রত্যাশী
তুমি আমার খরতপ্ত দাহনদুপুরেরর
সাথী হবে না, তবু
প্রহর থেকে প্রহরে লতানো প্রতীক্ষা
আষ্টেপৃষ্ঠে তোমাকে বাঁধতে চায়
গুনে গুনে আমি ক্লান্ত হই
এলিয়ে পড়া বিনুনির মতো
আবার বাঁধি নিজেকে-------

হলদেটে পাতায় সালোকসংশ্লেষ হয়
আমি ক্ষুধার্ত থাকি |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
বার্তা-২    

সিঁদকাটা চোর কাল রাতে
আমার ঘরে ঢুকেছিল |
নিয়ে কিছুই যায়নি
শুধু-------
বাইরে ঝুপঝাপ জলধার
ঘরে চুপচাপ আমি-------
বাইরে ঝোড়ো হাওয়া
ঘরে হাতছানি-----
বাইরে তুমুল মেঘের হাহাকার
ঘরে আমার মেঘমল্লার
বাইরে মাটি থৈ থৈ
ঘরে আমি অথৈ----
নিয়ে কিছুই যায়নি সে
কাল রাতে এসেছিল |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
হ্যাপি হোলি

শোনো আমার বৈরাগী প্রেম
এবার ফাগুন রাসের পালা
চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে তুমি যেয়ো কিন্তু
রাধার যেন মুখ না হয় বেজার!

তমালতরু নাই বা পেলে
ভিক্টোরিয়ার ময়দানটাও বেশ ভালো,
দূরভাষ, কবিতা আর তাদের বাহুলতা,
বাঁশির মতোই আঙুল তোমার খারাপ বাজে কি ?

আমি ? তোমায় ভালোই বাসি,
তাতেই বা কী যায় আসে-----
পুরোনো তারে তোমার দোতারা কখনো বাজে না |
তোমার ঐ রামধনুর মিছিলের পাশে
একটি বর্ণহীন দহনের রাত
আর একটি সাদা খাতার পাতা
তোমায় পাঠাচ্ছি----আমার বসন্ত উপহার |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
কবিগুরুকে      

কবিগুরু তোমাকে অনেক ভালোবেসেও
তাকে ভুলতে পারলাম না----

তোমার সুরে যখন ঘর মন সব ভরেছে,
তার না ছোঁওয়া আঙুল তখনও শিহরণ দিল

তার   “ না বলা বাণী” “ ঘন যামিনী”---

কবি আমি তাকে এড়িয়ে গেলাম
তোমার কাছে যাবার দম্ভে
তাকে ছাড়তে পারলাম কই ?

মা বলতেন, তোমার জন্মদিনে মিথ্যে বলা পাপ |
আমি মিথ্যেবাদী হয়েছি কবিগুরু
তবু, তাকে মিথ্যে করতেই পারলাম না |

আমি তোমার চোখেই তো চেয়েছিলাম কবিগুরু
তবু সে দুটি চোখ আমায় দহন করে |
তুমি অনেক দিয়েছ কবিগুরু----
ঘর, সংসার, জীবিকা, দেবতুল্য স্বামী !  সন্তান !
তবু------
“দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী দীর্ঘ বরষ মাস” |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
প্রহরান্তর             


ধরা দেয় না তোমার ‘কিছু না’
আমি শুধু জানি
তীর ভাঙে  আজও ভাঙে
জনসমুদ্রে চোখ-ডুবি হয় |


আজও শাপলাকুঁড়ি আমার
নীলজলে ভাসে
চেতনা তাকে ভালোবেসে
গ্রন্থিহীন হয়েছে |


প্রহেলিকারা খুনসুটি করে যায়
এ জীবন বাতুলতা মাত্র |
নির্বিঘ্ন অপব্যয়ে
রাত নামে বালাপোশে
তবু আসে
ঘামে ভেজা নোনা ভোরেরা | |


সাগরের নাম জান কি ?
সমস্ত আকুলতায় ভেসে গিয়ে
যখন মোহনায় দাঁড়াই,
আমর সে সাগর উপহার দেয়
চোরাবালি--ঝড় !

বালির ঢিবিতেই তার অহংকার যেন |


প্রতিটি নতুন মুখে আমি
খুঁজি পূর্বজনমের পরিচিতকে
প্রতিটি নতুন মুখ আমায়
ফিরে পাওয়া প্রত্যয়ের সঙ্গে
দিয়ে যায় আগামী জন্মের
পরিচিতি |


শিশুচোখ আবদারে বেছে নিয়েছে
ভালোলাগার আলোটুকু
পূজাকে লুব্ধতা জেনে হয়তো
শিশু-সিংহ বিক্রমে মুহুর্মুহু
অনুভবে সর্বগ্রাসী জীবন ?

রয়ে গেছে শ্বাসের ইঁদুর-দৌড়
আর অক্লান্ত বেঁচে থাকা |


তুমি চলে যাবার পর
একবারমাত্র মৃত্যু এসেছিল
দরজায় কড়া নেড়েছিল,
আনতমুখে তার বড় অভিমান,
কেন এতদিন ডাকেনি আমায় ?
তার মতো করে নিভৃত আকাঙ্খায় |


কোনো একটি আত্মহত্যার রাত
তোমার আকন্ঠ আকুতি
কোনো একটি শয্যাভাঙা ভোর
আমার বাঁধভাঙা অশ্রু
কোনো একটি অবিশ্বাসের মুহূর্ত
তোমার অলঙ্ঘ্য নিয়তি
কোনো একটি সর্বস্ব পণ
আমার আবহমানের অসুখ

তুমি ভালো আছ তো ?


চলে যাবার পর
একটি মুহূর্ত থাকে
অক্লান্ত নীরবতা
আর নীলকন্ঠী অবজ্ঞা
সহ |

১০
ক্ষমা কোরো আমায় |
আমি মৃত্যুকে জানতে পারলাম না
কোনোদিন, ছুঁতে পারলাম না
তোমার ঈশ্বরকে,
আমি আজও ক্লান্ত
কতরাতে !

১১
মৃত্যুকে জানোনি
বোঝনি জীবনকে
কোনো এক অসহনীয় দ্বৈততায়
করুণাকে বিলিয়েছ তুমি,
হে ঈশ্বর
তোমর মুক্তি হোক |

১২
বালিকে কেন চোরা দোষ দাও ?
সে তো ধ্বসে পড়বেই
শুধু অন্ধকার চাই |

১৩
তুমি নও সে যে, বলে
সাগর মোহনা পাল্টায়,
চোরা স্রোতে তবু আজও
নোঙর-ডুবি হয় |

১৪
কোনো পথে আবার দেখা হবে
যে পথ কোথাও মেলে না
যে পথ ভীরুতা ভুলবে
যে পথ ক্ষমাশীল হবে

তোমার দ্বিগামিতায়ও
হবে উদাসীন |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
‘কোন বিধি সিরজিল’

বহুকাল যমুনার ওপারে যাই না

গতবছরের জ্বরে কুটিলা মরেছে
বিন্দেদূতীও আর এদিকে আসে না
শুনেছি পাশের গাঁয়ে, হয়তো গোকুলে,
তার স্বামীটির নামডাক
হাটবারে ময়রামশাই-ই বসেন এখনো
বড়াইটি ঝুরঝুরে হয়ে এল
পাপ জুড়োল না

তুমি কি এখনো রাত জাগ ? রাত জাগ ?
রাজঅন্তপুরে বুঝি প্রদীপ জ্বলে ?

গেল হাটবারে কর্তা ছিলেন মথুরায়, শুনে
এসেছেন সকলের মুখে জয়ধ্বনি
জয় বাসুদেব জয় রানি রুক্মিণী
সত্যভামারও মেয়ে হয়েছে শুনেছি

দয়ার সাগর রাজা দয়ার সাগর
মথুরার পথে পথে তমালতরু
পান্হশালা নারীসেবাসদন ও শিশুউদ্যান
ভরা সংসার নিয়ে বন্ধু বনমালী

ভালো থেকো | আমি ভালো আছি
বৃন্দাবনে ছোটো ছোটো
গলি, আর গলির সামান্য বাঁকে বাঁকে
কয়েকটি কদমগাছ----সকলেই ভালো আছে , যেন
ভালোই রয়েছে |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
আহ্বান

ভালো থেকো আরশিনগর
মন-কাঁদনের পাড়া |
ভালো থাকিস সজনী আমার
খ্যাপি কৃষ্ণচূড়া | |
ভালো থেকো মেট্রো রেল
আর তিস্-হাজারির  বাঁক
আমায় ছাড়া কামরাঙা-সই
কোমর-তিলের ঝাঁক |
আমিও বেশ ভালোই আছি
না ঘুরে তোর গলিঘুঁজি
মাঝে মাঝে ভাবি শুধু
বুকে ধরে রাখ, জীবন
এইটুকুতো থাক, জীবন
এইটুকুতো থাক |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
কৃষ্ণচূড়া   


অর্ধেক বট, আর অর্ধেক কৃষ্ণচূড়া,
তাদের আমি গল্প বলি শোনো----
শিকড়ে বড়ো ব্যথা বৃক্ষের
তবু, আলো-ছায়ার অবধ্য নিয়তি !
কৃষ্ণচূড়ার মন খারাপের অসুখ
বসন্ত তোমায় সে আজও ঘৃণা করে |


কৃষ্ণচূড়ার গাগরী ছিল না
কোমরে অনেক রক্তিম বাঁক তার,
বটের ঝুরি এলোমেলো
তার বড়ো চিরুনি-চিরুনি ভালোবাসা,
কৃষ্ণচূড়ার সুখে অনেক বৃষ্টি হয়েছে |

--- বট তোমার অনেক চাওয়া,
আঁধার ---- আলো |


বট তুই জান্ তি যদি
রোজ ঝরে য়ায় শিউলি,
বোকা ছেলে বুঝ্ তি যদি
নয়ন-নয়ন বিউলি |

এতই আকর্ষের অহঙ্কার !


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
নেপোলিয়ানকে

“হে প্রেম, ন্যৈঃশব্দ দাও” |
যতটুকু নীরবতা আত্মস্থ হলে,
জীবনের ঊর্ণাতন্তুকে অর্ধমৃত, আমার
নেপোলিয়ানের কান্না বুকে জারিত হয় |


হে প্রেম, দুঃখ দাও | যতটুকু
দুঃখ পেলে দুঃখবিলাসেও ভয় হয় |
হে প্রেম, দিয়ো না শুধু মন্থনবেলা,
যে ভেসে যাওয়ায় প্রিয়সঙ্গমের
ব্যর্থ আকুতি আমায় বোধের
অনস্তিত্ব শেখায় |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
মিডিয়াম   

বইঘরের লাগোয়া ঘাসে দুদিন অভুক্তের
মুখে ডিমভাজা আর স্নেহের হাতে
দূতসম্প্রদায়ও জ্বলে পুড়ে খাক্ !
হে বন্ধু, মিডিয়ারা বড়াই থেকেও চু----
তুই আমি শুধু দাম্পত্যহীনতার অভিশাপ
পেলাম ?----- একই খামে
বিশ্বাসের নামে অজান্তে যারা
বন্ধুকে প্রেমপত্র পাঠায়, মা হন
মেয়ের পাহারাদার, ঈষদুষ্ণ ফাঁদে
শরীর দাবি নির্জন গৃহকোণে,
এস এম এস - কাঙালি, কন্ডোম |


তুই সত্যি বলেছিস বুদ্ধুরাম,
এই রমণ-রমণী মিডিয়াম
থেকে, অপবাদ ভালো | বেঁচে
থাক আমার কলঙ্ক নাম
আর তোর হা-ভাতে কাঁদন |


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
সার্ভেন্টস্ কোয়ার্টার

নম্বর ওয়ান

দেখেছি তোমার আঁকড়ে ধরা দুটি হাত
দেখেছি তোমার দুটি শিথিল শিশুমুঠো
কষ্টে ভরা খরা বুক তার দুঃখগান
আর শুনেছি আর্তনাদ আশ্রয়হীন প্রাণ |
আমাকে একটু আশ্রয় দাও, পারতপক্ষে
একটু কথা, পাশে বসা, ছোট্টরাত, সার্ভেন্টস্ কোয়ার্টার

তুমি কি জেনেছ আমি নিরাশ্রয়,
আজ তোমায় আশ্রয় দিতে গিয়ে |
আমাকে একটু আশ্রয় দাও, একটু ঘৃণা,
অবহেলা, মিষ্টি নৈর্ব্যক্তিকতা, পারতপক্ষে
একটিবার মরণ |

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
সার্ভেন্টস্ কোয়ার্টার

নম্বর টু

অন্ধকার যবে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়
অমাবস্যার আগমনীতে আধো-চাঁদ,
মৃত জ্যোত্স্না
ভালোবাসার শেষ চিঠি লেখে
তোমারি নামে |

তুমি স্খলিত প্রেম, সর্বহারা
জোয়ারে উচ্ছ্বাস খোঁজ,
আমি দূর থেকে কাশবনে মথিত হই
বানভাসি স্মৃতি মাদকতায়,
ভালো থেকো জীবন-পূর্ণিমায় |

দূরে থেকো জোয়ারের আশায়
যদি ভাঁটা সব জানে,
একদিন সেও জানবে, জ্যোত্স্নাও নদী হতে জানে
জীবনের ওপার-----আকাশে |
একদিন সেও জানবে, জ্যোত্স্নাও নদী হতে জানে
জীবনের ওপার------আকাশে


.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
ধুমপান

তার সাথে অনেক পথ হেঁটেছি
ঘোর কাটেনি, ঘুমচোখ ঢুলুঢুলু |
মাঠ, ঘাট, নদী, পাহাড়, পর্বত,
চাঁদ তবু আলোহীন ছিল |
জলাভূমি বদ্বীপ হতে পারেনি |
শুধু,
বালুকার নির্ভার স্তূপ,
দেশলাই গোল্ডফ্লেক ধোঁয়া আমাকে
মর্যাদা দিয়েছে শ্মশানের |

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর
*
চাকা

দুধেল দাঁতের আলতো ক্ষত
বেবিফুড মা |
রক্তরঙ আর এলোচুলে
ভোগ্যা উত্তমা |
স্নেহময়ীর ভিন গাঙ আর
ভাইয়ের রাখির ব্যান্ড |
বন্ধু তোমার জনপথের
নো-ম্যানস্ ল্যান্ড |

দুধেল দাঁতের আলতো ক্ষত
বেবিফুড মা |
রক্তরঙ আর এলোচুলে
ভোগ্যা উত্তমা |
স্নেহময়ীর ভিন গাঙ আর
ভাইয়ের রাখির ব্যান্ড |
বন্ধু তোমার জনপথের
নো-ম্যানস্ ল্যান্ড |

.                ****************                                                             
উপরে   


মিলনসাগর