কবি প্রণব কুমার ভৌমিক-এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
*
লজ্জা করে       

যখন দেখি রোজ প্রভাতে সংবাদের ঐ শিরোনামে
সৃষ্টিটাকে খাচ্ছে ছিঁড়ে হিংস্র পিশাচ মানুষ যমে,
দেখে লজ্জা করে |

যখন দেখি রংবেরঙের রক্তচোষা করছে শোষণ বিশ্বপ্রাণ
দেশটা জুড়ে উল্লাসেতে কংস রাবণ গাইছে গান |
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি শান্ত মায়ের বক্ষখানা টাটকা তাজা রক্তে ভেজা
স্থবির প্রাণে নেই প্রতিবাদ করছে সবাই অসুর পূজা
তখন লজ্জা করে |

যখন শুনি সন্ত্রাসবাদ প্রতিনিয়ত করছে তারা জীবন হরণ
মুক্তি পণের চুঙ্গি দাও তবেই মুক্তি নয়তো মরণ |
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি, শিক্ষা নিয়ে যত সমীক্ষা বুদ্ধিজীবির মানুষ গড়ার
সঠিক পথে নেই তো দিশা ভ্রান্ত নীতির হচ্ছে শিকার
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি স্বাস্থ বিভাগ আচ্ছাদিত স্বার্থন্বেষীর চক্রজালে
চিকিত্সকই হয় যে নিধন চিকিত্সকের নিপূণ চালে |
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি বিভ্রাট যত বিদ্যুৎ নিয়ে নেই আধুনিক কারিগরী
চলছে খেলা আলো আঁধারে তড়িৎ প্রবাহ হয় যে চুরি,
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি রাজপ্রাসাদের সিংহাসনে আছেন বসে অন্ধপিতা
এ বিশ্বের চতুর্দিকে জ্বলছে আগুন জ্বলছে চিতা |
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি খাদ্য নিয়ে কালোবাজারি করছে যত মজুতদার
হয়না সাজা কিছুই তাদের দাদন দিয়ে হয় যে পার
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি প্রশাসনের শীর্ষমাথা অক্টোপাশে খাচ্ছে গিলে
সত্যটাকে করছে আড়াল শকুনীমামার চতুর চালে
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি বিচারমঞ্চের বিচারকগণ উচ্চমূল্যে বিকিয়ে যায়
আসল দোষীর হয় না সাজা বিন দোষীরা সাজা পায়
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি আকাশ বাতাস ভূবন জুড়ে বইছে শুধুই নাগীনির শ্বাস
দূষণ ভরা জগত্টাকে করছে রাহু পূর্ণ গ্রাস |
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি ধর্ম নিয়ে দৃষ্টি বিভেদ চলছে শুধুই হানাহানি
শ্রেষ্ঠত্বের বাঁধলো লড়াই আল্লা-গড না দাক্ষায়ণী ---
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি দেশ ভরেছে দুর্যোধনে ধর্ষিতা হয় পাঞ্চালীসব
সভার মাঝে ভীষ্ম বিদুর পাণ্ডবেরা জীবন্ত শব |
তখন লজ্জা করে |

যখন দেখি ইষ্টনামের কণ্ঠি গলায় দিবারাত্র করছে চুরি
সাধুর বেশে শয়তান সব বলছে মুখে সদাই হরি |
তখন লজ্জা করে |

প্রতিনিয়ত ঘটছে কত যা লজ্জা পাবার মত
দেখি পক্ষাঘাতে জগত্টাই ধুকছে অবিরত |

এই দুনিয়ায় কেলেঙ্কারী বল লিখবো কত আর,
ঠগ বাছতে দেশটা উজার মোরা সবাই অংশীদার!


.              *************************                                                  
উপরে



মিলনসাগর
১।     জ্জা করে            
২।     
বিপন্ন পরিবেশ ও আমরা    
৩।     
সুন্দর মুখোশের আড়ালে    
৪।     
মায়াবতী       
৫।     
রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ        

.          ******************
      
৬।     
প্রশ্নোত্তরে অম্ল-মধুর     
৭।     
প্রবাদ বাক্য   
৮।     
ভোটের নামতা         
৯।     
চিত্র-বিচিত্র                
১০।    
ভোম্বল কথা    
১১।    
আবোল-তাবোল    
১২।   
হারাধনের-পাঁচালী     
১৩।   
অতিথি রূপে নারায়ণ             

১৪।    
আমার অবসর      
  
.          *******************
.          
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা
১৫।     সিঙ্গুর        
১৬।     
নন্দীগ্রাম         
১৭।     
১৪ই মার্চ-দু-হাজার সাত      
     
 
*
প্রবাদ-বাক্য       

জলে তেলে মিশ খায়
.             কখনো কি শুনেছো ?
বাঘে গরু জল খায়
.             এক ঘাটে দেখেছো ?
আদা আর কাঁচকলায়
.             এত কেন বৈরী ?
সাপে আর নেউলেতে
.             দেখ, যুদ্ধতে তৈরী |
শৃগালের যম কে
.             বলতে কি পার কেউ ?
কুকুর যদি দেখে তায়
.             কেন করে ঘেউ ঘেউ |
বুনো ওল আহারেতে
.             যদি কোন ক্ষতি হয়,
বাঘা তেঁতুল সাথে রেখো,
.             থাকবে না কোন ভয় ||
শাক দিয়ে মাছ ঢাকো
.             এ তো ভালো কাজ নয়
শাঁখের করাতে কেন
.             দুপাশেই ধার হয় ?
বোলতার চাকে কেন
.             হয়নাকো মধুরস ?
ভাগ্যের পরিহাসে
.             জোটে শুধু অপযশ |


.              *************************                                                  
উপরে



মিলনসাগর
*
বিপন্ন পরিবেশ ও আমরা       

বিপন্ন আজ এই পরিবেশ,
হিংসা ক্রোধের দংশনে
বিশ্ব যে আজ চলছে ছুটে,
অজানা কোন মরণ টানে |

.                     পথের ধারে ফুটপাত যে
.                     পশরা সাজিয়ে নিল দখল |
.                     মহাসড়কে হাঁটবো কোথায় ?
.                     যানজটে যে সব-ই বিকল |

নিকাশীর হাল কঙ্কালসার
তাই বাড়বাড়ন্ত গন্ধ, মশার
ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গু জ্বরের
চারিদিকে তার ঘটছে প্রসার

.                     মাত্রাছাড়া ধোঁয়ার দুষণ,
.                     আজ শুদ্ধ বায়ুর সংকট তাই |
.                     শব্দ দুষণে কানে লাগে তালা,
.                     বল প্রত্যুষা কোথায় যাই ?

লুকিয়ে হয় বৃক্ষ ছেদন,
তাই অরণ্য, আজ সেও বিপন্ন |
এ যে বন্য প্রাণীর ঘরে হামলা,
প্রকৃতি হারায় তার ভারসাম্য |

.                      বিপন্ন আজ এই পরিবেশ,
.                      ধর্ষিত হয় পাঞ্চালী কুল,
.                      কংস রাবণ খোস মেজাজে |
.                      চামুণ্ডা ছিঁড়ে জানকীর চুল |

মাথার উপর সন্ত্রাসবাদী
করছে তারা জীবন হরণ
মুক্তি পণের অর্থ দাও
তবেই মুক্তি নয়তো মরণ |

.                      প্রাণ বাঁচেনা যা পরিবেশ
.                      জ্বলছে আগুন পৃথ্বীর বুকে,
.                      বেহুঁস মোরা কিসের নেশায়
.                      ধ্বংসটাকেই আনছি ডেকে |

এই বিপন্নতার কারণ অনেক
বল লিখব কত আর,
ঠগ বাছতে বিশ্ব উজার
আমরা সবাই সমান অংশীদার |


.              *************************                                                  
উপরে



মিলনসাগর
*
সুন্দর মুখোশের আড়ালে     

সুন্দর মুখোশের আড়ালে,
চলে শুধু ধ্বংসের জাল বোনা |
ভেসে আসে বারুদের গন্ধ,
চারিদিকে বিষাক্ত লেলিহান ফণা |

কামারের হাপরের বাতাসে
আজ পৃথিবীটা শয়তানের কারখানা |
রাতের ছায়াঘন আঁধারে
অতর্কিতে বর্গীরা দেয় হানা |

বিচারের নামে চলে প্রহসন,
চেতনার কপাটে দিয়ে তালা |
ছলনায় চটকদার ভাষণে
চলে শুধু কানামাছি ভোঁভোঁ খেলা |

সাধুর বেশে বসে অসাধু
কারচুপি স্বাস্থ শিক্ষায় চলছে |
জাল হয় গোপন নথিপত্র |
তদন্ত --- যে কথা বলছে |

আজ কেন দিবাকর তেজহীন,
দুরিনীতির পারদ তাই শিখরে |
সংক্রামিত রোগে সব পঙ্গু,
মুক্তি পাবে বল কি করে ?

মজবুত করতে রাজার আসন,
দস্তানায় গুটিয়ে কালো হাত |
শতরঞ্চের পাকা ঐ খেলুড়ে
বোড়ের চালে করে বাজি মাৎ |

দুর্ভিক্ষের ঝড়ো হাওয়া বইছে,
ঐ শোনা যায় অশান্ত বার্তা |
অপুষ্টি অনাহারে মরছে,
ওদিকে ভাষণরত রাজকর্তা |

সুন্দর মুখোশের আড়ালে,
বিশ্বটা আজ কেন ধুকছে |
অস্তিত্ত্বের লড়াইয়ে রণক্লান্ত,
কাঁধে উঠে স্বস্থানে চলছে |                      


.    *************************                                                             
উপরে



মিলনসাগর
*
ভোটের নামতা     

     (১)
ভোট এলো দোর খোলো
.                জনগণ জাগরে,
কান দিয়ে শোন সব
.                মনে ধরে রাখরে,
মিটিং এর কথাগুলো
.                ছাকনিতে ছাকরে,
চালান সূঁচকে বলে
.                তোর পিছে ফুটোরে,
নিজের হাজার ফুটো
.                 কেমনে সে ঢাকে রে,
জনগণ শুনে সব
.                 হাঁ করে থাকেরে
ভোট এলো দোর খোল
.                 জনগণ জাগরে ||



.              (২)
আজ নয় কাল ভোট,
.                এইখানে ভোট দিন,
গণনা হতে বাকি
.                আরো আছে তিন দিন,
পাহারায় আছে যারা
.                খেটে মরে রাত দিন,
হেরে চুপ না থেকে
.                রিগিং এর দোষ দিন |
ভোট পর্ব মিটে গেলে
.                 কমার্শিয়াল ব্রেক দিন,
সেই ফাঁকে ঘন ঘন
.                 বুদ্ধিতে ধুঁয়ো দিন,
যাই হোক তাই হোক
.                 জনগণ ভোট দিন ||



      (৩)
তিন দিন বাদে ভোট
.                 শুরু হল গণনা,
নির্বাচন কমিশন
.                 করে পরিচালনা,
প্রহসনে প্রশাসন
.                 করে শুধু ছলনা,
হাসি খুশি ডগমগ
.                 প্রার্থীর ললনা,
বেল পাকলে কাকের কি
.                 জনগণ বোঝে না,
গণনার শেষ ফল
.                 জনরায় বলে না ||



      (৪)
গণনার ফলে ছিঁকা
.                কার ভাগে ছিঁড়ল,
রাম, শ্যাম, যদু, মধু
.                কেবা ভোটে জিতল,
প্রার্থীর কালো টাকা
.                সাদা হয়ে ফিরল,
পাবলিক বোকা সব
.                ধোঁকা সব গিলল,
বিজয়ের মিছিলেতে
.                কত রং উড়ল,
মরীচিকার পিছু পিছু
.                 জনগণ ছুটল ||




      (৫)
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল
.                 জনসভার ভাষণে,
সস্তায় চাল, গম
.                 তেল দেবে রেশনে,
ভোটে জিতে নেতা এলো
.                 মন্ত্রীর আসনে
ওষ্ঠাগত হল প্রাণ
.                 মজুতদারের শোষণে,
মাথা ঠুকে মরে ঐ
.                 জনগণ পাষাণে,
হরিবোলে কাঁধে উঠে
.                 চলে যায় শ্মশানে ||                     


.         ******************                                                             
উপরে


এই কবিতাটি জনমত শারদ সংখ্যা ও তিস্তা সংবাদ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল


মিলনসাগর
*
চিত্র-বিচিত্র     

একটি কুঁজো একটি সোজা |
কুঁজোর পিঠে শাকের বোঝা ||

একটি খোঁড়া একটি নুলা |
বুনছে বাঁশের ধামা কুলা ||

একটি বোবা একটি অন্ধ |
বুঝ নেই যার ভাল মন্দ ||

একটি টেকো একটি ভরা |
নকল চুলে কাটলো খরা ||

একটি রোগা একটি মোটা |
মাঝ কপালে তিলক কাটা ||

একটি কালো একটি ধলা |
কণ্ঠে দোলে তুলসী মালা ||

একটি বেঁটে একটি দীঘল |
বাতের ব্যথায় অঙ্গ বিকল ||

একটি কালা একটি কানা |
আছে জানা সেই ঠিকানা ||

এদের সবার পক্ক কেশ |
মিলে মিশে সব আছে বেশ ||  


.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
ভোম্বল কথা     

ডিঙা পাড়ার ভোম্বল
ঘুরে এলো চম্বল |
.             রাতভর গাড়ি চড়ে
.             নামলো সে কাকভোরে |
তখন ছিল শীতকাল,
গায়ে তার পশমিশাল |
.             রা-নেই সাত চড়ে,
.             কাঁপে সে ডেঙ্গুজ্বরে |
ঘরে ছিল কম্বল,
একমাত্র সম্বল |
.              কাজ নেই ভাজে খৈ,
.              ঘরে, পাতা আছে টক্ দৈ |
সকাল সন্ধ্যা পুথি পড়ে
রোজ বিকেলে খেলা করে |
.               লেখা পড়ায় মন্দ নয়
.               শে, থেকে প্রথম হয় |
গণিত তার মুখে মুখে,
নেই ভাবনা আছে সুখে |
.               ইংরেজীতে তথৈবচ,
.               বিজ্ঞানে নৈব-নৈবচ |
ভূগোলেতে বাঁধা গোল,
ইতিহাসে খায় ঘোল |
.               বাংলাতে যত আশা
.               ওযে তার মাতৃভাষা |
এ ভাষায় দারুণ বটে
কথায় কথায় ছড়া কাটে |
.               মানে না সে ব্যকরণ,
.               ঘুরে বেড়ায় অকারণ |
এভাবেই কাটে দিন
গায়, নাচে তা-ধিন-ধিন |


.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
আবোল-তাবোল     

হৃদয় পোলাম বুকের খাঁচায়
সেতো শুধুই নড়ে চড়ে |
মাথার ভেতর মগজ পেলাম
কেবল, ভাবনা সেথায় ঘোরে ||

পেট পেয়েছি খাচ্ছি তাই
আবোল আবোল চচ্চড়ি |
জিভ পেয়েছি চাখছি তাই
মন্ডা মিঠাই ভেলপুরি ||

দাঁত পেয়েছি চিবাই তাই
ঘৃত্য মাছের মুড়া |
কপাল পেলাম ভাগ্য করে,
মস্ত মাথা জোড়া ||

মুখ পেয়েছি ফুটল তাই
যত অবাক করা বুলি |
চোখ পেয়েছি দেখছি তাই
দিয়ে প্লাস পাওয়ারের ঠুলি ||

গলা পেয়েছি গাইছি তাই
করি আপন মনে রেওয়াজ |
কান পেয়েছি শুনছি তাই
মিষ্টি মধুর আওয়াজ ||

পিঠ পেয়েছি ঘুমাই তাই
পেতে বিলাস বহুল শয্যা |
মন পেয়েছি উড়নচণ্ডি
পারি না করতে তারে কব্জা ||

হাত পেয়েছি ধরতে চাই
ঐ রাতের সন্ধ্যাতারা |
পা পেয়েছি ছুটছি তাই
আজ, হলাম বাঁধন হারা ||


.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
হারাধনের-পাঁচালী     

শোন, শোন, শোন সবে,
.             শোন দিয়ে মন,
হারাধনের পাঁচালী
.             করিগো বর্ণন |
ভরাপেটে ফল খান
.             হারাধন বক্সি
খালি পেটে জল খান
.             গোটা দুই কলসী |
প্রাতরাশে থাকে তার
.             লুচি সাথে মন্ডা,
সুবিশাল দেহ তার
.              নাম করা পাণ্ডা |
হারাধনের মস্ত গুণ
.              অসময়ে খান না,
পান থেকে খসলে চুন,
.              আস্ত রাখেন না |
পলান্ন মেখে খান
.              ছানা দিয়ে ডালনা,
সাথে দই মিষ্টি
.              চাটনিটা খান না |
মহলেতে কাজ তার
.              কাটা শুধু চরকা,
নিজ হাতে রাঁধেন ভালো
.              বিরিয়ানি তড়কা |
বৈকালিতে চাই তার
.              রসে ডোবা মালপোয়া,
আরো আছে সাথে যোগ
.               জয়নগরের মোয়া |
লুডু ছাড়া আর কিছু
.               পাকা নয় খেলা তে,
শকুনি মামার মত
.               পটু দান চালাতে |
রাতে খান দুধভাত
.                তার সাথে রাবড়ি,
ইয়া বড় গোঁফ তার
.                মাথা ভরা বাবরি |
লজ্জা ঘৃণা লোক ভয়
.                নেই এক বিন্দু,
স্বপ্নের তরী চেপে
.                 পার হন সিন্ধু |
ডিম-মাছ খান নাকো,
.                 খান নাকো মাংস,
লোকে বলে উনি নাকি
.                 চানক্যের বংশ |
খাবারের ভাণ্ডার
.                 সদা থাকে পূর্ণ,
টক্-ঝাল-মিষ্টি
.                 আমলকী চূর্ণ |
ছানাবড়া সন্দেশ
.                 তার সাথে দরবেশ,
থাকে যদি পাত পাশে
.                  আহ্লাদে বলে ওঠে
.                  আহা বেশ, আহা বেশ |
তাতে গায় গান নাচে-মন,
.                  নাচে জনগণ |
হারাধনের পাঁচালী
.                  হ'লো সমাপন |



.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
প্রশ্নোত্তরে অম্ল-মধুর     

লিখছি শোন প্রশ্নোত্তরে
দেশের টাটকা সমাচার |
পড়বে যারা করবে যাচাই
এর যথাযত বিচার |
বলি দেশটা চালায় কারা ?
আমলা মন্ত্রী যারা |
দেশটা চলে কিসে ?
অম্ল-মধুর মিশে |
দেশে শিল্পনীতি কেমন ?
দু-মুখো সাপ যেমন |
দেশের মাথা কারা ?
মোদের শাসন করেন যারা |
দেশের শিক্ষানীতির হাল ?
এযে দুঃসময়ের কাল |
দেশের জ্ঞানীগুণী কারা ?
আজ বেঁচে নেই তাঁরা |
এ দেশটা চলছে কেমন ?
যার বাহুবল যেমন |
দেশটা এখন কোথায় ?
বাসুকিনাথের মাথায় |
দেশের অসামাজিক গুণ ?
ধর্ষণ রাহাজানি, খুন |
এ দেশের কোথায় জ্বালা ?
ক্রমেই বাড়ছে বেকারশালা |
দেশের স্বাস্থ বিভাগ কেমন ?
কর্কট রোগ যেমন |
এ দেশ রক্ষার উপায় কি ?
চাই আর একটা নেতাজী |
দেশ শাসনে যারা আছেন ?
তারা কর্তা হাসলে হাসেন |
দেশের আমরা তবে কি ?
যেন পান্তা ভাতে ঘি |
বলি দেশের ভাল কিসে ?
যদি - থাক মিলে মিশে |


.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
মায়াবতী     

বোড়ের চালে দিয়েছ কিস্তি |
আর তাতেই হয়েছে বাজিমাৎ |
দূর থেকে হয়েছিল প্রতিবাদ,
তবুও আজ পরাজিত প্রতিপক্ষ,
তোমার এক চালে সব কুপোকাত |
হয়েছে ইচ্ছা পূরণ - হওনি লক্ষভ্রষ্ট |
আজ প্রমাণিত, তুমিই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ |
মায়াবতী তোমাকে বোঝে কার সাধ্য |
তুমি তো অসীম জ্ঞানী আর বুদ্ধির প্রতীক ---
তাই তোমাকে করি কুর্ণিশ |
কে করিবে তোমাকে পরাস্থ |
তুমি অতি সুচতুর শাসক ---
চালাও একনায়কতন্ত্র | তুমি আজ এক পূর্ণ দক্ষ |
অর্থের প্রচুর্য্যে সুকৌশলে, নিজেকে করেছ প্রতিষ্ঠা |
তোমার বৃত্তে স্তুতিকারদের তুমি নয়নের মণি |
ওরা দেখে তোমার চোখে, ওরা বলে তোমার ভাষা ---
শোনে ? তোমার কানে,
তুমি তো ভাগ্য বিধাতা, মহীয়সী রাণী - মহামায়া |

পেয়েছ ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ দান --- মনুষ্য রূপ,
করেছ বিবর্জন প্রকৃত সত্যবোধকে |
দ্বিতীয় রিপুর দাবানলে অমৃত আজ অঙ্গার |
ব্যথিত মনের গহনে যে যন্ত্রণা - তোমাকে করেনা স্পর্শ |
অসুয়ার অগ্নিকণা জ্বলে ধিক্ ধিক্ অহর্নিশ ---
বিষময় ভূজঙ্গের কালো জিহ্বা --- করে দংশন, বারংবার |
বিচ্ছিন্ন করে ভাতৃত্ববোধকে --- জন্মদাত্রী হয় লাঞ্ছিত |
আপন অস্তিত্বকে করে কলঙ্কিত ---
কালভৈরবের ছত্রছায়ায়, সকলি কংস |
একি শোনিত করে বার বার ধ্বংস |
কাজল ? সেও তোমা হতে স্বচ্ছ
সত্যি, তুমি মায়াবতী হংস |


.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
রাদনীতির রঙ্গমঞ্চ     

রাজনীতির এই রঙ্গমঞ্চে, যদি তারকা হতে পার,
বিধায়ক কিংবা সাংসদ হলে তবেই পোয়া বার |
নইলে, হা পিত্তেশ কর ||

কেল্লা ফতে মন্ত্রী হলে, শুধুই শিলান্যাসের ধুম,
কাটতে ফিতে উদ্বোধনের, ছুটলো নেতার ঘুম |
আনন্দে, টাক্-ডুমা-ডুম-ডুম ||

রাজনীতি ভাই পেশা ভাল, প্রায় ইনভেস্টমেন্ট নীল,
নেতার নন্দীভৃঙ্গী ফুর্তি করেন, জনতা মেটায় বীল |
নইলে খেতেই হবে কিল ||

নেতার ঝোলা ভর্তি প্রতিশ্রুতি, ওযে এক্কেবারে ঠাসা,
বিন পুঁজিতে রাজনীতি ভাই, জমলো দারুণ খাসা |
যেন শকুনী মামার পাশা ||

রাজনীতি ভাই চতুর পেশা, না থাক কোন মূল
জিতলে ভোটে বলবে টা-টা, জনতা দেখবে সর্ষেফুল |
তাদের, আশা হবে ভুণ্ডুল ||

এমনি করেই পাঁচটি বছর, যদি কাটিয়ে দিতে পার
পাবে পেনশান ভাই সারা জীবন, সঙ্গে সুযোগ সুবিধা আরো |
তাতে, সন্দেহ নেই কারো ||

রাজনীতি ভাই পেশা ভাল, তবে নীতির কথা বারণ,
বলবে লোকে অনেক কথা তুমি খুঁজবে না তার কারণ |
তুমি, নিও হরির স্মরণ ||

জনতা, যা খুশি তাই বলছে বলুক, কানে গুঁজে নাও তুলো,
চর চাপরে ভয় কি তোমার, পিঠে বেঁধে নাও কুলো |
গায়ে, লাগবে না তো ধূলো ||

রাজনীতি নয় মন্দ পেশা যদি পাইয়ে দিতে পার
উন্নয়ণের অর্থ দিয়ে --- নিজের ভূবন গড় |
নইলে, কপাল চাপড়ে মর ||

রাখবে নাকো চোখের পর্দা, তুমি শোন মহাশয়
বুক ফুলিয়ে এগিয়ে চল, ছেড়ে লজ্জা ঘৃণা ভয় |
এযে ( প্রবাদবাক্য ) সর্ব্বলোকে কয় ||

রাজনীতি ভাই ধূর্ত পেশা, যদি শিখতে চাও,
তবে এক্ষুনি ঐ পাঠশালাতে ভর্তি হয়ে যাও |
তবেই, মারতে শিখবে দাও ||

প্রখম পাঠেই রাজনীতি আর স্বজন পোষণ শিখবে,
দ্বিতীয় পাঠে দ্বিচারিতার ভাষণ বসে লিখবে |
তবেই তুমি টিকবে ||
নইলে, ডুগডুগি যে বাজবে ||


.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
অতিথি রূপে নারায়ণ     

অতিথি রূপে নারায়ণ,
আইবো আমার বাড়ীতে |
মাসের শেষে লক্ষ্মী নাই
চাইল বাড়ন্ত হাড়িতে ||

.                           ডাইলের ভাণ্ড তথৈবচ
.                           আলু ছাড়া সবজি নাই |
.                           তেলের পাত্র শূণ্য দেখি
.                           কর্জ ছাড়া উপায় নাই ||

কার বা কাছে পাতুম হাত,
ভাইব্বা আমার দিন ফুরায় |
জল সেবনে রাত্র কাটে,
ক্ষুধায় আমার পরাণ যায় ||

.                           যাই দোকানে আমসি মুখে
.                           মনের দুঃখে গাওনা গাই |
.                           মাস ফুরাইলে পয়সা দিমু,
.                           আমার কিছু সদাই চাই ||

দোকানী কয়, অনেক হইছে,
প্যাচাল পাইরা কাম নাই |
লাগবো কি তার লিস্টি দাও,
বন্দ করমু সময় নাই ||

.                            শান্তি পাইয়া ফর্দ দিলাম
.                            আমসি মুখে ফটছে হাসি |
.                            অতিথি রূপে নারায়ণ,
.                            আইছে ঘুইরা গয়া কাশী ||

অতিথি সেবা করাইয়া,
শান্তি যে পাই আত্মমনে |
হেই কথাটা গাইয়া বেড়াই
হাট বাজারের জনে জনে ||


.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
সিঙ্গুর     

প্রথম অংক
গড়বে টাটা কারখানা
এ বঙ্গের সিঙ্গুরে
চাষির, হাতে হ্যরিকেন পেটে কিল
জমির - দখল নিল হুঙ্কারে ||

ধানের বদলে ফলবে গাড়ী
বিধান সভায় বাজে ঢোল
বঙ্গে উন্নয়নের আসবে বান
বিরোধীদের খাইয়ে ঘোল ||

ক্ষোভের আগুন উঠলো জ্বলে
হাড়ির মিছিল ধর্মতলায়
বঙ্গের রাজা ঠাণ্ডা ঘরে
লাগলো ফাঁস চাষির গলায় ||

কৃষক বলে খাবটা কি ?
চাষের জমি নিলে কেড়ে
না খেয়ে যদি মরেই যাই,
তবে চড়বো গাড়ী কেমন করে ||

শুনি রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মানে
আজ ভাঙলো দিদি অনশন
সুস্থ হলে বলবে কথা
বঙ্গরাজের ছোট্টভাষণ ||


.         ******************                                                             
উপরে




মিলনসাগর
*
নন্দীগ্রাম     

দ্বিতীয় অংক
শুরু হল দ্বিতীয় অংশ
পূর্বমেদিনিপুরের নন্দীগ্রামে
সেথা জ্বললো আগুন গেল প্রাণ
দুষ্কৃতিদের গুলি বোমে |

দিশাহীন হয়ে প্রশাসন
দিচ্ছে ভাষণ এলোমেলো
বলে গড়বো মোরা এস.ই.জেড.
ডামাডোলে সব ভেস্তে গেলো |

রোজ সকালে মুখপত্রে
ছাপা হচ্ছে গরম খবর
যাদের ভোটে এলো গদি
হচ্ছে খোড়া তাদের কবর |

প্রশাসনকে আড়াল করতে
করবে কাকে বলির পাঁঠা ?
চোদ্দহাজার একর জমির মধ্যে
জুটলো নাতো ছিটেফোঁটা |

এ কেমন দেশ, কেমন বিচার
কেমন এদের রণনীতি
খায় শিল্পপতির গালে চুম্বন -
গায় যে মুখে গরীব গীতি ||

.      ******************                                                                
উপরে




মিলনসাগর
*
১৪ই মার্চ দু-হাজার সাত     

১৪ই মার্চ দু-হাজার সাত
মরলো কত ? কেউ জানেনা,
প্রশাসনিক আদেশ নামায়
সঠিক তথ্য বলতে মানা |

শাসক শ্রেণীর উর্দ্দি পড়ে,
বন্দুকের নল করে তাক,
নন্দীগ্রামে ছুটলো গুলি
এবার তোরা ঘুমিয়ে থাক্ |

নিখোজের সংখ্যা কত ?
আর কি তারা ফিরবে ঘরে ?
বর্গী সেনার গুপ্ত থাবায়,
তারা হারিয়ে গেল চিরতরে |

বুবিবি শেখ খেলছে খেলা,
রামানুজ ভাই দোসর তায় |
এক শিবার ঐ খেয়াল শুনে
সব শিবা যে কোরাজ গায় |

বঙ্গরাজের দুধের পোষাক,
রক্তে রাঙা হলো আজ |
ভোরের সূর্য গেল অস্ত
বিনা মেঘে পড়লো বাজ |

চট্ জলদি এলো দেখি,
সি.বি.আই. এর তদন্ত দল |
ফল তো হবে অশ্ব ডিম্ব,
কেন্দ্রে বাঁধা বাংলার কল |

অশুভ সংকেত বাতাসে ঘোরে,
দেশ থেকে দেশ দেশান্তরে,
ধৃতরাষ্ট্র আজ দেশের রাজা,
অন্ধস্নেহে আড়াল করে |

হা-হুতাস আর চোখের জলে,
ঝরলো কত চাষির খুন |
কিসের সংকেত করছে বহন
আকাশে ওড়ে লাখো শকুন |

শূণ্য হলো যত মায়ের কোল,
স্ত্রী হারালো সিঁথীর সিঁদুর,
বাবা বলে আর ডাকবে কাকে,
স্বপ্ন ভেঙে হ'লো খানচুন |

মনের ব্যথা প্রাণের জ্বালা
বোঝে না তো ঐ কংসরাজ
যেদিন জ্বলবে আগ নিজের ঘরে,
বুঝবে সেদিন ঐ বঙ্গরাজ |

যে চাষির চাষে জন্ম নিল
এই গরীবের সরকার
শিল্প গড়তে ঐ চাষিই নিধন
বলি তার কি ছিল দরকার ?

উচিৎ কথায় গোসাই বেজার,
চোরের মায়ের বড় গলা,
লজ্জা নেই তো বিন্দুমাত্র,
খায় যে তারা দুধ আর কলা |

ডান-বাম আজ অভিন্ন হৃদয়
তাই মন্দ কাজের হয় না বিচার
ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা বলে
হয় না সাজা পায় পুরস্কার |

ক্লিনচিট দিল বড় মহাজন
ছোট মহাজন যে জিয়ন কাঠি
নব উদ্দমে বাঁধলো কোমর
বঙ্গে, শীল্প নাশে সব-ই মাটি |

এটাই মোদের সোনার ভারত,
তারি মাঝে এই বঙ্গদেশ |
মরুদ্যানের আজ এ কি দৃশ্য,
বাড়ছে হতাশা - দুঃখ ক্লেশ |

রাত পোহালে পক্ষ শেষ,
শহর গঞ্জে নেই তো ঘুম |
সন্ধ্যা হলেই অশুভ গ্রাসে
গা ছম্-ছম্ রাত নিঝুম |

.      ******************                                                                
উপরে




মিলনসাগর
*
আমার অবসর

আজ যে বিয়ের জন্মদিন,
কর্মজীবন থেকে, অবসরও সেই সাথে |
তাইচো সবারে করি আহ্বান
এসো, বসে হাসি-ঠাট্টা করি একসাথে ||

কিছু কথা, বলার ছিল, বলছি শোন |
অনুরোধ, এর অর্থ সন্ধানে যেও না যেন ||

সড়ক নন্দনে নীহার সিক্ত,
মৃণাল ফুটেছে একটি |
কর্মকাল আজ হল সমাপন,
আসা যাওয়া থেকে চির মুক্তি ||

চোখের তারায় স্বপন ভাসে,
আনন্দে পরিতোষ এল, মনে হিল্লোল |
প্রতি প্রভাতে তপনের উদয়,
অরুণিমার আভায় ভাসে গোলাপী কল্লোল ||

কত উজ্জ্বল আঁধারে হীরা
নৃপতি-নৃপেন - সুরৎ রাজা
নিমাই চেতনার তাপস, কর্ম তপে,
রয়েছে তাদের অনেক প্রজা ||

অসীত যুগল কৃষ্ণ শ্যামল
দক্ষীণা, মলয়, সমীর বয় |
সঞ্জীব সুধা - অমৃত সমান,
কৈলাশ মনজিতে, কেবলি তুষারময় ||

সুব্রত সততার প্রতীক জানি
দেবাশিস ত্রিনয়ন ত্রিকাল শ্রষ্টা |
জয়েতু জয়ন্ত জয়ের ধ্বনি,
ধ্রুবতারা পথিক আজ পথভ্রষ্টা ||

বারি আশ্রয়ে ঝিলে শোভিছে কমল,
কবিতা স্নিগ্ধ সরল ভরপুর ছন্দে |
বিপ্লব সম্মিলিত সংগ্রামী শক্তি,
উচ্চ নাদে ধ্বনিল প্রতাপ বিক্রমে ||

নৃত্যরতা নটরাজ ত্রিশক্তি ধারক
শম্ভু তার শান্তরূপ গৌতম মন্ত্র |
গোপাল করিয়াছে নিজ দৃষ্টি বিতান
গৌড় বিজয় রথে রূপহীন অরূপ স্বতন্ত্র ||

উত্পল লোচন আকর্ণজোড়া
দোর্জে লামাগণ বৌদ্ধগুরু |
ভিষ্ম পিতামহ - গঙ্গাসুত দেবব্রত
নব অধ্যায়ে মোর যাত্রা শুরু ||

ভুল ত্রুটি যাহা করিয়াছি হেথা
কভু রাখিও না কেহ স্মরণে,
অবোধ ভাবিয়া করিও ক্ষমা
এ দিন আসিবে সকল, চাকুরি জীবনে ||

ক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষ


৩১/১/২০১১ তারিখে কবি অবসর গ্রহণ করেন | এই কবিতাটি তিনি তাঁর বিদায়ী সভায় পাঠ করেন | এই
কবিতায় তিনি তাঁর সকল সহকর্মির নাম দিয়ে রচনা করেছেন |


.      ******************                                                                উপরে




মিলনসাগর