কবি প্রসূন ভৌমিক-এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
কবির স্বনির্বাচিত কবিতাগুলিতে * চিহ্ন দেওয়া রয়েছে

.        সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম লালগড় আন্দলনের কবিতা
১।     মারো তবে লালমোহন টুডুকে   *


.        কাব্যগ্রন্থ "মাটির মানুষ" থেকে
১।      সনির্বন্ধ আবেদন *      
২।      
মাটির মানুষ *  
৩।      
ড্যামেজ কন্ট্রোল *    
৪।      
অনেক অপেক্ষার পর *    
৫।       
শপথ   
৬।      
ঠিক পথে আয়     
৭।      
উলোটপুরাণের দিনে   
৮।      
খবরে থাকুন       
৯।      
মিডিয়া লিখছে   

.        
কাব্যগ্রন্থ "ভদ্দরলোক" থেকে
১০।     সোজাসাপটা *  
১১।     
শিল্প *   
১২।     
Deal (ডীল) *  
১৩।     
Mall (মল) *   
১৪।     
ম্যাজিক *    
১৫।     
ক্ষতিপূরণ *        
১৬।     
মালিক *     
১৭।     
টা--টা *       
১৮।     
চুক্তিচাষ*       
১৯।     
একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ থেকে *   
২০।     
ফলিডল *     
২১।     
ইতিহাস *       
২২।     
লাল *     
২৩।     
প্লানচেট *    
২৪।     
স্নান *    
২৫।     
তাচ্ছিল্য *   
২৬।     
উড়িয়ে দিলাম *   

২৭।     
শাসক      
২৮।     
সমস্যা   
২৯।     
হরিদাসের বুলবুলভাজা         
৩০।     
কতদিন?       

.        
কাব্যগ্রন্থ বুয়া ও বাবুই থেকে            
৩১।     
যদিদং হৃদয়ং-----       
৩২।     
যন্ত্রণা      
৩৩।     
অবাক শ্রীরাধিকা    
৩৪।     
সাজানো স্ক্রিপ্ট     
৩৫।     
প্যারাডাইস লস্ট      
৩৬।     
অদৃশ্য বাসিন্দা     
৩৭।     
যে যায় লঙ্কায়         
৩৮।     
অতএব নারীবাদ       
৩৯।     
সকাল   
৪০।      
বাবুইপাখির বাসা   
৪১।      
‘ইন্টারভিউ’--এর একটি অংশ   
৪২।      
সেয়ানা    
৪৩।      
নীলকন্ঠ      
৪৪।      
পিকনিক   
৪৫।      
পাগলা সানাই        
৪৬।      
কাবুলিঅলা    
৪৭।      
দলিল   
*
সনির্বন্ধ আবেদন
প্রসূন ভৌমিক

হে ভূস্বামী, বিগত দিনের রাজা, রায়সাহেব, রায়বাহাদুর
আপনাদিগের প্রতি জানানো যাইতেছে যে
স্বাধীনতার পরবর্তীকালে জমিনদারী প্রথা
বিলোপ করিয়া আমর যত পাপ করিয়াছিলাম
কৃষকদিগকে ভ্রান্ত অধিকার বুঝাইয়া আমরা যত পাপ করিয়াছিলাম
জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়া আজ
মেহনতী মানুষের বিলম্বিত মিছিলের মধ্য দিয়া আজ
কতিপয় বুদ্ধিজীবীর আজানুলম্বিত নৈঃশব্দ্য অথবা আশ্বাসের মধ্য দিয়া আজ
সেই পাপস্খালনের কর্মসূচী আমরা লইয়াছি |

জমিনদারীরাজ পুনর্বহাল হইতেছে--------

জমিনদারী কথাটি পুরানো, আজি হতে ‘সেজ’ নামে তাহাকে ডাকিব|

আপনাদিগের শতসহস্র দেশী বা বিদেশী ঊত্তরসূরীদের প্রতি
সনির্বন্ধ আবেদন,  আপনারা আসুন পুনরায়
‘উন্নয়ন’ শব্দটিকে বারে বারে উচ্চারণ করিতে করিতে
শিল্পায়নে পুণ্যস্নান করিয়া প্রত্যেকে ভিত্তি-প্রস্তরের খন্ড সংগ্রহ করুন |
সুরাপাত্র হস্তে লইয়া উল্লাস হউক !
কৃষিকাজ এ প্রথায় আবশ্যিক নহে , আপনার লাভের জন্য
.                              যেনতেন পন্থা মার্জনীয়
নামমাত্র মূল্যে আমরা, নামমাত্র রাজস্বের প্রতিশ্রুতি পেলে
ভরাগ্রাম ভরাশস্যক্ষেত আজ প্রাণী ও মনুষ্যহীন
.                              হাতে হাতে প্রদান করিব

.                   ****************                                                               
উপরে


মিলনসাগর
*
মাটির মানুষ
প্রসূন ভৌমিক

মাটির মানুষ তারা
মাটিতেই মিশে গেছে প্রাণ
মাটির মানুষ তারা
মাটি থেকে উঠেছে স্লোগান

আমাদের অন্নদাতা
গুলিবিদ্ধ কীর্তন আজান
বাংলার দিকে দিকে
ছড়াতেছে বারুদের ঘ্রাণ


.         ****************                                                                        
উপরে


মিলনসাগর
*
ড্যামেজ কন্ট্রোল
প্রসূন ভৌমিক

ওঁরা কেউ পঞ্চাশ দশকের পার্টিমেম্বার
কেউ ষাট দশকের, কেউ কেউ সত্তরের
ট্রাম পোড়ানোর সময়, খাদ্য আন্দোলনে,
          উত্তাল শ্রেণীসংগ্রামে ওঁরা ছিলেন |
এতদিন ধরে ওঁরা পার্টিকে দিয়েছেন বেশি, নেননি তেমন
নন্দীগ্রাম গণহত্যার দিন ওঁদের সকলের একযোগে
.                                বাঁদিকটা পড়ে গেছে----
.                                পক্ষাঘাত
তবু তারই মধ্যে তাঁরা, অসহায়, নির্বিকল্প
.                                খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
ড্যামেজ কন্ট্রোল কল্পে মিছিলে হাঁটছেন
মিছিলে হাঁটছেন আর আত্মহননের কথা ভাবছেন
                           একা একা একা-------


.                   ****************                                                             
উপরে


মিলনসাগর
*
অনেক অপেক্ষার পর
প্রসূন ভৌমিক

যেন কার বোধোদয় হবে তাই অপেক্ষা করছি আমরা
যেন কার শুভবুদ্ধি ফিরবেই ফিরবে
যেন বা ডিটারজেন্ট ফিরিয়ে দেবেই রক্তমাখা দিগন্তের নীল

আমরা অপেক্ষা করছি আর সিনেমা দেখছি মাল্টিপ্লেক্সে
গানের মজলিশে যাচ্ছি, শপিং মলেও----
টিভি আঁকড়ে খেলা চলছে, ফোনে ফোনে পীরিতি অশেষ----

যেন কার বোধোদয় হবে তাই অপেক্ষা করতে করতে
নিজেদের অজান্তেই দাঁড়িয়েছি  এক অতলান্ত খাদের কিনারে
‘উন্নয়ন চলছে’ লেখা খাদের কিনারে ঝুঁকে বসতেই

যেন কারা ধাক্কা দিল | খবরে প্রকাশ ----
‘পা পিছলে’ কেউ, ‘বাসে ধাক্কা’ কেউ, কেউ ‘আত্মহত্যায়’
কেউ বা ‘ পকেটমার, ডাকাতের হাতে’
মারা গেছি !


.         ****************                                                                        
উপরে


মিলনসাগর
*
শপথ
প্রসূন ভৌমিক

আমার সল্টলেকে ফ্ল্যাট |
আমার রাজারহাটে | আমার টালিগঞ্জে |
আমার গল্ফগ্রিনের পশ এলাকায়----
লটারিতে পেয়েছি |
‘লটারি’ কেমন সে- তো জেনেছি তখনই
আপনার কাছে, পার্টির কাছে অপার কৃতজ্ঞতা
যতদিন প্রাণ আছে আমি  আছি আপনার পাশে |

আমার ছেলে জয়েন্ট পেয়েছে
আমার মেয়ের ডিভোর্স কমপ্লিট
আমার মেজোছেলের প্রমোটারি
ছোট ভাই--এর নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান---
উদ্ধোধনে আপনি এসেছিলেন
আপনার কাছে, পার্টির কাছে অপার কৃতজ্ঞতা
যতদিন প্রাণ আছে আমি আছি আপনার পাশে |

আমি টিচার্স কাউন্সিলে নবাগতা
বাবার ঠিকঠাক পেনশনের ব্যবস্থা করেছি
স্কুল-কলেজের-ইউনিভার্সিটিতে আমার প্লেসমেন্ট চাই
কর্মক্ষেত্রে আমি দেরিতে পৌঁছেই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি
আমার প্রোমোশনের গ্রাফ ঈর্ষণীয়
আপনার কাছে, পার্টির কাছে অপার কৃতজ্ঞতা
যতদিন প্রাণ আছে আমি আছি আপনার পাশে |

আমি বুদ্ধিজীবী, সিনেমার হিরো, ভিলেন, নাট্যকার
বড় বড় কাগজে আমি লিখি, গান গাই
আমি সাঁতারু, ফুটবলার, ম্যাজিক দ্যাখাই
আমি পুরস্কৃত, আরো পাবো-----
.                 বছরভর প্রোগ্রাম কলেজে কলেজে
বহু দেশ ভ্রমন করেছি, আরো অনেক রয়েছে সামনে
আপনার কাছে, পার্টির কাছে নানাভাবে অপার কৃতজ্ঞতা
যতদিন প্রাণ আছে আমি আছি আপনার পাশে |

শুধু একটা আর্জি রয়েছে-----
আপনার মিডিয়াকে বলুন আমাদের ইমেজ
ঠিকঠাক তুলে ধরতে
পাড়া-প্রতিবেশী কিছুতেই বুঝতে চাইছে না এখনও !


.                      ****************                                                        
উপরে


মিলনসাগর
*
ঠিক পথে আয়
প্রসূন ভৌমিক

আমরা বললে সূর্য ওঠে, আমরা বললে অস্তে গড়ায়
এই জনাদেশ না মেনে কে অবজ্ঞা আর সাহস দ্যাখায় ?
লেখায় আঁকায়, পথেও নামে----
মিটিং মিছিল চলছে চলুক, ইনফর্মার খবর দেবে
কিন্তু ব্যারিকেডের বাইরে এক-পা দিলেই টের পাওয়াবেন
.                              শ্রীমান মুখ্য অরণ্যদেব
দেখবি তখন কেমন মজা, শঙ্খভেরি যতই বাজা
অরণ্যদেব ফুত্কারে সাফ্করবে তোদের প্যাঁচ-পয়জার
তাঁর উন্নততর শির

তোরা ছিলি আমজনতা, নির্বিবাদী, পিওর ভোটার
তোরাই কিনা ভয় ভেঙে আজ হরেক গণ-সংগঠনে---
                  কে পিছনে ?  জানতে পারলে

নেতায় নেতায় কাজ হয়ে যায়, গণতন্ত্রে স্পেস রয়েছে
সে সমঝোতায়, কিন্তু তোরা সবাই রাজা ----এটাই বিপদ
বারংবার আর ক’জনকে বল

নিষিদ্ধতায় ‘সেফ হাউস’- রাখবো, বরং ট্রিগার টিপলে
এক ঝলকে বংশবদ ভয়াল সূর্য ঠিকরে পড়বে
.                                ভুলে গেছিস ? দেখবি াবার----

চোখ ধাঁধানো সে সূর্যোদয়, কাঁধে-মাথায় সূর্য-আলোয়
খোঁজ পাবিন না তোর বা তোদের কয়েকজনের, দ্যাখ এখনও
সময় আছে, ঠিক পথে আয়-----

ভালোয় ভালোয় ঠিক পথে আয়, আমরা তোদের বাঁচতে দেবো
এই শিবিরে মহানন্দে থাকবি নয়তো থাকবি না সে
.                                গণতান্ত্রিক তোদের বিচার
কিন্তু কেবল কুত্সা এবং বিরুদ্ধতাই তোদের স্বভাব
এসব ছএড়ে মেনস্ট্রিমে আয়, শিল্প ভবিষ্যৎ আঙ্গিনায়

দরজা বন্ধ করার আগে
ঠিক পথে আয়, ঠিক পথে আয়, ঠিক পথে আয় |


.                      ****************                                                        
উপরে


মিলনসাগর
*
উলোটপুরাণের দিনে
প্রসূন ভৌমিক

খাতায় কলমে বামদল
আসলে চলছে ডানদিকে
মেহনতি তথাকথিতের
লালরঙ যায় গৈরিকে


কৃষকের শ্রমিকের পিঠে
কাস্তে হাতুড়ি চিহ্নরা
পতাকার থেকে নেমে আসে
নেতা বলে, দুর্জন ওরা


শুধু চাষি শ্রমিকরানয়
যারা যারা বিদ্রোহী কুজন
প্রত্যেকের জন্য রাখা আছে
ভিন্ন ভিন্ন সর্প-দংশন


ভোটবিশারদ বামদল
আসলে চলেছে ডানদিকে
পুঁজিদাস ক্যাপিটাল হাতে
বজ্রমুষ্টি তোলে দিকে দিকে


এই নব্য মহাভারতের
শেষে তবে কোন পরিণতি ?
কবে যাব কন্যার কাছে
পিঠে উঠবে আমার সারথি!


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
খবরে থাকুন
প্রসূন ভৌমিক

মিডিয়া লিখছে থিতিয়ে আসছে
মিডিয়া লিখছে শান্তিচুক্তি
আত্মসমর্পণের ব্যাপার বিরোধীর দায়
মিডিয়া লিখছে

মিডিয়া লিখছে স্ববিরোধিতায়
বিরোধী শিবির কেঁচে গন্ডুষ
বিকল্পহীন মুখ্যমন্ত্রী দলের ঊর্দ্ধে
মিডিয়া লিখছে

যা যা হয়ে  গেছে আর হবে না তা
মিডিয়া লিখছে আপোষের কথা
এখন পাট্টাপ্রদান উত্সব


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
মিডিয়া লিখছে
প্রসূন ভৌমিক

মিডিয়া লিখছে অনেক হয়েছে
গণজাগরণ শত পথসভা মিছিলের শেষে
ঘেমে জল হয়ে ঘরমুখী পথ
মিডিয়া লিখছে

মিডিয়া লিখছে বুদ্ধিজীবীরা
মুখিয়ে রয়েছে ফেরার জন্য |  মূলস্রোতে তারা
খেজুরির পথে অপেক্ষমান
মিডিয়া লিখছে

মিডিয়া লিখছে চরৈবেতি
খেলার মাঠে বা বিছানার গানে
চুমুতে চুমুতে বিশ্বায়নের জীবন অশেষ
মিডিয়া লিখছে

গণতান্ত্রিক মিডিয়া লিখছে
গুলি খাওয়া ধর্ষিতার জীবন
ক্রমে ইতিহাস, এ নিরপেক্ষ খবরে থাকুন
মিডিয়া লিখছে-----
খবরে থাকুন !

.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
সোজাসাপটা
প্রসূন ভৌমিক

অবস্থান পরিস্কার করো |  আমি করছি----
আমি এই অস্ফুট গোলাপ বাগানের |
তুমিও তোমার পক্ষ স্পষ্ট বলে দাও
দু’নৌকায় না দাঁড়িয়ে সদর্পে জানাও
তুমি নষ্টজল নাকি ভুবনডাঙার-----

অবস্থান পরিস্কার করো | সোজাসাপটা
বলে দাও তোমার অভীপ্সা যা যা আছে |
আমি বলছি গাছে গাছে আমার কুর্নিশ
তুমিও বুঝিয়ে বলো, তোমার থালায়
মাংসের টুকরো যত----সে কার আমিষ ?


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
শিল্প
প্রসূন ভৌমিক

শিল্প কাকে বলে বন্ধু, শিল্প কারে কয় ?
বিদেশী প্রযুক্তি আর স্বদেশী মজুর----
সামান্য নগদে জমি---- এত সুবিধায়
যন্ত্রাংশ জোড়ার কারখানা---
যাচ্ছি-যাই বলে শিল্পপতিটি না যায়

ইস্ট ইন্ডিয়ায় পূর্বে এমন কোম্পানি
অনেক এসেছে, জমি পরাধীনতায়
দাসখৎ লিখে দিতে হয়েছে অনেক
উন্নয়ন করেছে তারাও--- হাইওয়ে, ব্রিজ, রেল
শহর বন্দর জুড়ে এই দেশ থেকে
বাণিজ্যের অর্থ সব নিয়েছে বিদেশে

আজ ফের দেখতে পাই বঙ্গভূমি জুড়ে
শিল্পের দোহাই দিয়ে ব্যক্তিমুনাফায়
অধিগ্রহণের ফাঁদে কৃষিশিল্প যায়-----


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
Deal
প্রসূন ভৌমিক

বসুন্ধরা বেচে দিচ্ছ, সুজলা সুফলা
বসুন্ধরা বেচে মা’কে নিলামে তুলছো
কত যেন জনস্বার্থ, কত ছলাকলা
ধনধান্যপুষ্পভরা ধরিত্রীকে নিয়ে
মলয়জ শীতলাং ডিল করছো রাতে

ক’জন ধনীকে আরো ধনিক বানাতে


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
Mall
প্রসূন ভৌমিক

গাঁয়ের কিশোরী কন্যা, বাঁ পায়ে পোলিও
আমাদের দেশনেতাগণ তার পায়ে
মল বেঁধে তাকে দিয়ে ব়্যাম্পে হাঁটাবেই

খেজুর গাছে ওল্ড মঙ্ক হাঁড়িটি ঝুলিও !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
ম্যাজিক
প্রসূন ভৌমিক

রমণী আশ্চর্য হয় এমন ম্যাজিকে
পুরুষেরা  বাক্যহারা হয়
শিশুটির বিস্ফারিত দু’চোখে বিস্ময়

কী হয়েছে ? কী হয়েছে ?  কী হল, মশ’য় ?

টেলিভিশনের স্ক্রিনে শাসকদলের নেতাগণ
আশ্বাসের বাণী দিয়ে যাচ্ছেন বোধহয়


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
ক্ষতিপূরণ
প্রসূন ভৌমিক

ক্ষতি করে দিয়ে আজ পূরণের রাজনীতি করো
চাকরি এক প্রজন্মের, জমি তো সন্তানসন্ততির !
তোমার এই উন্নয়নে ভিক্ষাপাত্র হাতে নেব কেন ?

অন্তর্যামী জানে কত কত জন্ম জমতে জমতে জমি
কত রক্ত, কত ঘাম পূর্বপুরুষের কত শ্রমে
আমাদের জমি থেকে অন্ন পেয়ে এসেছো তোমরা
এ জমিতে কত গোর দিয়েছে আব্বার আব্বা তার
আব্বাকে
আমি হিন্দু এখানেই সমাধি দিয়েছি সন্তান
যতই মানাতে চাও, জো হুজুর বলতে পারছি না
একদিন বাম ছিলে---------
.                        পাট্টাফাট্টা বুঝাইলে
আজ তুমি জমি ছিনতাইবাজ ডান !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
মালিক
প্রসূন ভৌমিক

মালিক, আমাকে তুমি অব্যহতি দাও
আমি যা, আমি তা, আমি এর থেকে অন্যথা হব না
দীনতা আমার ক্ষমো, হে তুমি উন্নত------
সে তুমি উন্নততর আরও হও আশীর্বাদ করি

আমাকে টেনো না শুধু এই উন্নয়নে, পায়ে ধরি !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
টা--টা
প্রসূন ভৌমিক


কলিযুগে ভগীরথ গঙ্গা আনতে গিয়ে
এ কোন নর্মদা এনে দিয়েছে বাংলায়
কর্মহীন এই দেশে এ নদীর পলি
জমিতে ফলায় বল্টু, মেশিন--কদলী

ভগীরথ কলিযুগে কাটমানি পায় |

রতনে রতন চেনে, যেন মণিকাঞ্চনের যোগ!
বচনে অমিয় ঢালি ‘লোকহিতে’করিল সম্ভোগ
একজনে টাকা চায় অন্যজনে সঙ্গে চায় ভোট
রঙ্গমঞ্চে হর্ষধ্বনি, ফাটাফাটি ! কী জোট ! কী জোট !


আহা  কী বচন শুনি, বিজ্ঞাপন দিচ্ছ মিডিয়ায়
আহা মরি শিল্পপতি অনবদ্য সামাজিক দায়
লাঠি--গুলি--ধর্ষণে যে জমির অধিকার, আজ
জমি ফেরতের ভয়ে মনোহর কাঁহানিয়া ফাঁদো
এসেছে রাস্ট্রের নেতা, পরিত্রাতা এসেছে বাঙলায় !



তরুণ প্রজন্ম শুধু শহরে থাকে না
মফস্বল গ্রামেগঞ্জে অর্ধাহারে অনাহারে যত
দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত লক্ষকোটি তরুণ তরুণী
কাঁচাভাঙা পথে পথে সাইকেল চালাতে চালাতে
একদিন কিছু প্রশ্ন বুঝে নিতে আসবে শহরে

তোমার কাছেও যাবে, মেটাবে ধারদেনা |



ডায়ালগ দিচ্ছ এত, পারবে শেষাবধি ?
ঘন্টা বেজে গেছে তুমি প্রস্ত্ততই হওনি
এখনও ফিকির করছো হায় ফের ফেরত আসার
বরং সৌজন্য করো, কোলাকুলি করি বিজয়ায়
বদলার সময় বদলা, দেখি কবে দিন বদলায় !



রুদালী আবার কাঁদো, যত কাঁদবে তত রোজগার
হায় হায় বাংলা থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছে সরকার |
দ্যাখো যাতে টিকে যায়, অভিযোগ-------শত হাহাকার
সামলে সুমলে যদি এই মালিক আবার
মসনদে বসতে পারে, তবে তুমি পাবে
আরও আরও কমিশন, বিজ্ঞাপন ভাসাবে দুয়ার !



শিল্পপতি এ বছর কাকে দেবে শ্রেষ্ঠের শিরোপা
বহু প্রতিযোগী মধ্যে ঐ দ্যাখো কে পেয়েছে ডাক !
দ্যাখো দ্যাখো এবার পুজোয় কোন ঢাকী ভাগ্যবান
শিল্পায়নের নামে কার শ্রেষ্ঠ ঢাক !



শিল্প রসিকতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই
তোমাদের কোম্পানিতে আটা--নুন--তেল
এ সমস্ত তৈরি হয় জানা ছিল তা-ই
নৌটঙ্কি কোম্পানি তোমরা খুললে কবে থেকে ?
কী সুন্দর বাংলা লেখো, অপেরা-- আপেল !



জমিটি ফিরিয়ে দিও, যদি তুমি না-ই থাকো আর
তোমার ভস্মের নিচে যে মাটি রয়েছে
পুনশ্ত উদ্ধার তাকে করে নেবো ঠিক
ওসব জটিল ভাবনা তোমার ভাবনা না---
তুমি চলে গেলে মহীলতারা মাটির ধর্মে মাটি ফিরে নিক!


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
চুক্তিচাষ
প্রসূন ভৌমিক

গোলাভরা ধান্য ছিল, গোলাভরা ধান্য
কেউ বা একান্নবর্তী কেউ পৃথকান্ন
পৌষে পার্বণে পুলি--পিঠের আঘ্রাণ
গোলাভরা ধান, বাবু গোলাভরা ধান
জমি যাবে জমি যাবে ওদের নিয়মে
যাবে প্রাণ !

গোলাভরা ধান্য যাবে, গোলাভরা ধান্য
এসেছে পেটেন্টি ধান চুক্তিচাষ হবে
ওদের সার ওদের কীট--নাশক নবান্ন !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ থেকে
প্রসূন ভৌমিক

দূর থেকে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি |
কী গহন গহনাশিল্পে তুমি সুসজ্জিতা আজ
কত প্রসাধন !
হায় ! সাধনা আমার ছিলে একদিন তুমি, প্রাণ ছিলে
আমার রক্ত, আমার ঘাম---- সবকিছুর চূড়ান্ত ঠিকানা-----

দূর থেকে তাকিয়ে থাকি |
‘তোমার’ জমিতে আজ পা দিলে আমাকে
অনুপ্রবেশকারী বলে পুলিশে ধরিয়ে দেবে ওরা !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
ফলিডল
প্রসূন ভৌমিক

নিমন্ত্রণ করে পাতে ফলিডল তুলে দিচ্ছ ভাই !
বলিহারি যাই, আমি বলিহারি যাই
তুমি যত ছল করো, যত কল মৃত কারখানা
গলগল করে ওঠা ধোঁয়ার কুন্ডল
গঙ্গার দু’ধারে ছিল---- ফ্ল্যাটবাড়ি শপিংমল রূপে
আজও যারা অপেক্ষায়, তাদের শ্রমিক বিধবারা
যত অনাহারে ধোঁকা, আত্মঘাতী পিতার সন্তান---
বোনেরা যাদের কবে লাল পথে হারিয়েছে পথ
দাদারা দুবাই, বম্বে---আর চিঠি লেখে না এখন-----

বলের প্রয়োগ করে বলিহারি তুমি আজ লাল
দলের ভোটের জন্য সেই কলকারখানা থেকে
হাভাতে যুবকদের হাতে দাও শিল্পের পতাকা
বাসে--ট্রাকে তুলে এনে মিছিলে হাঁটাও
গোপনে দলের লাল ফলিডল তুলে দাও পাতে


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
ইতিহাস
প্রসূন ভৌমিক

যত তুমি শিল্প করতে নিষ্ঠুরতা করো
আমাদের শিল্পমধ্যে ঢুকে পড়ছো  তত
শূন্যেরও মাঝারে শিল্প আমাদের, তাতে
জমিহারাদের কান্না, খুন, মৃত্যুশোক
অমিত্রাক্ষর হয়ে ইতিহাসে লিখিত হচ্ছেন

বস্ত্ত থেকে ভর তুলে একদিন আলোর গতিতে
তোমাদেরও দিকে সব ফেরৎ যাবেন !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
লাল
প্রসূন ভৌমিক

গুরুত্ব হারানো লাল শাসক পতাকা
গোঁজা থাকে পথে ঘাটে অটোস্ট্যান্ড প্রস্রাবখানায়
একদিন যে রঙ ছিল মহনতী মানুষের প্রাণ
ভ্রমরা উড়ছে কত, কত গান গুনগুন করা
অন্যায়ের প্রতিবাদে সমুন্নতশির সেই রঙ
অর্থকামনায় অর্থহীন হয়ে আজ
উন্নততরের বান্দা ফুলে ফেঁপে লাল হয়ে যায়


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
প্লানচেট
প্রসূন ভৌমিক


মৃত মানুষের রক্তে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত করি
জেগে ওঠো  ইতিহাস, তেভাগা তেলেঙ্গানা থেকে
স্বদেশী বিপ্লব থেকে উঠে এসো বিনয় বাদল
মা’কে  ধর্ষণ করে দ্যাখো বিক্রি করে
টাকা কামানোর কত কুশীলব আজও

জেগে ওঠো জেগে ওঠো জেগে ওঠো সিধু--কান্ হু--চাঁদ
মাদলের গুমগুমি পুনর্বার বাজো !


সিঙ্গুর তোমাকে শক্তি দিয়েছে, এবার
নন্দীগ্রাম, রক্ষা করো সিঙ্গুরের জমি
শেখ সেলিমেরা এসো, সুপ্রিয়া জানা
গুলি খাওয়া দেহ নিয়ে মাটির মরমী !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
স্নান
প্রসূন ভৌমিক

তোমার বৃষ্টির নিচে যদি ভিজে যাই
আমার গা--মাথা মুছে দেবে তো, শ্রাবণ !
সরোদিয়া শারদীয় সরোদ বাজাচ্ছে
আমি তার কাশফুলে পেলব আশ্রয়ে------
এই অসময়ে তুমি ভেজাবে আমাকে ?

তা ভেজাও, ভিজে যাব, আমি জানি তুমি
শ্রাবণের ছদ্মবেশে শহিদ তাপসী
মালিক তোমাকে মেরে আনন্দে দিনেও
অবিনশ্বর অশ্রু করেছে তোমাকে

রক্তে ভেজা কান্নাস্নান দাও এ বাংলাকে!


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
তাচ্ছিল্য
প্রসূন ভৌমিক

তাচ্ছিল্য তাদের প্রতি, একমুঠো সাদা কালো তাচ্ছিল্য দানা
বিবিধ কৌশলে যারা ব্যক্তিস্বার্থে শিল্পের বাহানা
তাচ্ছিল্য তাদের প্রতি রাজসভার  জ্ঞানীগুনী শিল্পীজন যারা
চাষের বিরুদ্ধে গিয়ে লক্ষ্মীপূজো করে লক্ষ্মীছাড়া
তাচ্ছিল্য তাদের যারা মুহূর্মুহ কত মিথ্যা কর্মসংস্থান
সম্প্রচার করতে করতে কৃষিকর্মে করে অসন্মান
তাচ্ছিল্য তাদের প্রতি, যারা ভদ্রলোক, কিছু দেখেও দেখে না
চেনা ছিল একদিন,  আজ তারা আশ্চর্য্য অচেনা
তাচ্ছিল্য তাদের  যারা পথেঘাটে নিত্যরোজ বারফাট্টাই
তাচ্ছিল্য করতে করতে সব্বাইকে চ্যালেঞ্জ জানাই------
যদি পারো, মারো, যদি সত্যি সত্যি পারো, তবে মারো
আমি একা |
একা, আমি, আমরা কোটি লোক---------


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
উড়িয়ে দিলাম
প্রসূন ভৌমিক

উড়িয়ে দিলাম সব প্রতিবাদী কাব্যগুচ্ছ, ওরা
আকাশে বাতাসে,  মাঠে,   পতিত জমিতে
ঘাপটি মেরে পড়ে থেকে আলো জল পেয়ে
তোমাদের ইঁটের গাঁথনিতে অশথের
প্রতিবাদী চারাগাছ হয়ে জন্মাবে

যতবার মালি দিয়ে কাটাবে সে গাছ
ততবার জেগে উঠবে, শুধোবে তোমাকে------
বনের সবুজ কেটে আত্মহত্যা করতে চাও কেন ?


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
শাসক
প্রসূন ভৌমিক

চুক্তি করো, ভেঙে দাও, তুমি মাইরি সর্ব্বশক্তিমান !
তোমাকে আইডল করে আমি ভাবছি  মন্ডপে মন্ডপে
তোমার যত কীর্তিকান্ড চন্দননগর লাইটিঙে
তুলেধরবো, শিশুরাও শুনে নিক সব গুণগান----


তুমি তো ভদ্দরলোক ‘গরিষ্ঠের মতে’ সুমহান !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
সমস্যা
প্রসূন ভৌমিক

মিথ্যা প্রতিশ্রুতিদানে রেকর্ড তোমার সুবিদিত |
পরশু যা বলেছিলে কাল তাকে মায়া করে দিতে
তুমি বিশ্বে অদ্বিতীয়, তোমারে প্রণমি প্রভুপাদ

সমস্যা দরিদ্রজনে, দীনহীন আমার মতোন
প্রতিবার যারা ঠকে, প্রতিবার সুবিশ্বাস করে
আশাহত হয়ে যারা গালি দিতে দিতে
ফের পায়ে পড়ে যায় আবার কখন !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
হরিদাসের বুলবুলভাজা
প্রসূন ভৌমিক


সমাপতনের গল্পে আমি হরিদাস !
জল্পনা কল্পনা অন্তে সমূহ নির্যাস
যা বেরলো তাকে প্রভু নিজ পাদপদ্মে
চরণঅমৃত করে গ্রামে গ্রামে প্যাকেজ পাঠাবে

বিশ্বাসঘাতকের গল্পে আমি হরিদাস !
প্রভুর গোমস্তা আমি, কেরাণীকুলিন
আমার মাইনে নাকি কৃষিজমি না বেচে হবে না
বিরোধিতা করলে প্রভু পাঠাবে গারদে

জমিফেরতের গল্পে আমি হরিদাস !
‘এ বিষয়ে হতে হবে দ্বন্দ্বমূলক------
অসূর্যস্পশ্যা চুক্তি দেখানো যাবে না,
কৃষিজমি যদি কভু দিয়েছ ফেরৎ
তাহলে ভোটের জমি হারাবে নিশ্চয়’

প্রভুদের ঔদ্ধত্যের নিচে থাকে ভয় !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর
*
কতদিন?
প্রসূন ভৌমিক

শহরের বাবু তোমরা শিল্প করবে আমার জমিতে?
যুগে যুগে যে আবাদে তোমরা পুষ্ট হলে
কার্ফ্যু করে তোমাদের অন্নদাতাদের মেরে
আজ এনেছো শস্যখেতে নাট বল্টু ইট ও কংক্রিট
টাকা দেবে বিনিময়ে, প্যাকেজ ট্যাকেজ ক’দিনের-----
.                                                    এরপর ?
অনাহারে মারা পড়ব, তোমাদের তাতে কিছু যাবে আসবে না
কিন্তু বাবু, বাবু তোমরা শহরের বাবু, কত পড়াশুনো জানা
তোমরা কী খাবে বলো, কী বা খাবে তোমাদের নাতিপুতিরাও ?


কতদিন টাকা খেয়ে বেঁচে থাকা যায় !


.        ****************                                                                     
উপরে


মিলনসাগর