হে ভূস্বামী, বিগত দিনের রাজা, রায়সাহেব, রায়বাহাদুর আপনাদিগের প্রতি জানানো যাইতেছে যে স্বাধীনতার পরবর্তীকালে জমিনদারী প্রথা বিলোপ করিয়া আমর যত পাপ করিয়াছিলাম কৃষকদিগকে ভ্রান্ত অধিকার বুঝাইয়া আমরা যত পাপ করিয়াছিলাম জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়া আজ মেহনতী মানুষের বিলম্বিত মিছিলের মধ্য দিয়া আজ কতিপয় বুদ্ধিজীবীর আজানুলম্বিত নৈঃশব্দ্য অথবা আশ্বাসের মধ্য দিয়া আজ সেই পাপস্খালনের কর্মসূচী আমরা লইয়াছি |
জমিনদারীরাজ পুনর্বহাল হইতেছে--------
জমিনদারী কথাটি পুরানো, আজি হতে ‘সেজ’ নামে তাহাকে ডাকিব|
আপনাদিগের শতসহস্র দেশী বা বিদেশী ঊত্তরসূরীদের প্রতি সনির্বন্ধ আবেদন, আপনারা আসুন পুনরায় ‘উন্নয়ন’ শব্দটিকে বারে বারে উচ্চারণ করিতে করিতে শিল্পায়নে পুণ্যস্নান করিয়া প্রত্যেকে ভিত্তি-প্রস্তরের খন্ড সংগ্রহ করুন | সুরাপাত্র হস্তে লইয়া উল্লাস হউক ! কৃষিকাজ এ প্রথায় আবশ্যিক নহে , আপনার লাভের জন্য . যেনতেন পন্থা মার্জনীয় নামমাত্র মূল্যে আমরা, নামমাত্র রাজস্বের প্রতিশ্রুতি পেলে ভরাগ্রাম ভরাশস্যক্ষেত আজ প্রাণী ও মনুষ্যহীন . হাতে হাতে প্রদান করিব
আমার সল্টলেকে ফ্ল্যাট | আমার রাজারহাটে | আমার টালিগঞ্জে | আমার গল্ফগ্রিনের পশ এলাকায়---- লটারিতে পেয়েছি | ‘লটারি’ কেমন সে- তো জেনেছি তখনই আপনার কাছে, পার্টির কাছে অপার কৃতজ্ঞতা যতদিন প্রাণ আছে আমি আছি আপনার পাশে |
আমার ছেলে জয়েন্ট পেয়েছে আমার মেয়ের ডিভোর্স কমপ্লিট আমার মেজোছেলের প্রমোটারি ছোট ভাই--এর নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান--- উদ্ধোধনে আপনি এসেছিলেন আপনার কাছে, পার্টির কাছে অপার কৃতজ্ঞতা যতদিন প্রাণ আছে আমি আছি আপনার পাশে |
আমি টিচার্স কাউন্সিলে নবাগতা বাবার ঠিকঠাক পেনশনের ব্যবস্থা করেছি স্কুল-কলেজের-ইউনিভার্সিটিতে আমার প্লেসমেন্ট চাই কর্মক্ষেত্রে আমি দেরিতে পৌঁছেই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি আমার প্রোমোশনের গ্রাফ ঈর্ষণীয় আপনার কাছে, পার্টির কাছে অপার কৃতজ্ঞতা যতদিন প্রাণ আছে আমি আছি আপনার পাশে |
আমি বুদ্ধিজীবী, সিনেমার হিরো, ভিলেন, নাট্যকার বড় বড় কাগজে আমি লিখি, গান গাই আমি সাঁতারু, ফুটবলার, ম্যাজিক দ্যাখাই আমি পুরস্কৃত, আরো পাবো----- . বছরভর প্রোগ্রাম কলেজে কলেজে বহু দেশ ভ্রমন করেছি, আরো অনেক রয়েছে সামনে আপনার কাছে, পার্টির কাছে নানাভাবে অপার কৃতজ্ঞতা যতদিন প্রাণ আছে আমি আছি আপনার পাশে |
শুধু একটা আর্জি রয়েছে----- আপনার মিডিয়াকে বলুন আমাদের ইমেজ ঠিকঠাক তুলে ধরতে পাড়া-প্রতিবেশী কিছুতেই বুঝতে চাইছে না এখনও !
নেতায় নেতায় কাজ হয়ে যায়, গণতন্ত্রে স্পেস রয়েছে সে সমঝোতায়, কিন্তু তোরা সবাই রাজা ----এটাই বিপদ বারংবার আর ক’জনকে বল
নিষিদ্ধতায় ‘সেফ হাউস’- রাখবো, বরং ট্রিগার টিপলে এক ঝলকে বংশবদ ভয়াল সূর্য ঠিকরে পড়বে . ভুলে গেছিস ? দেখবি াবার----
চোখ ধাঁধানো সে সূর্যোদয়, কাঁধে-মাথায় সূর্য-আলোয় খোঁজ পাবিন না তোর বা তোদের কয়েকজনের, দ্যাখ এখনও সময় আছে, ঠিক পথে আয়-----
ভালোয় ভালোয় ঠিক পথে আয়, আমরা তোদের বাঁচতে দেবো এই শিবিরে মহানন্দে থাকবি নয়তো থাকবি না সে . গণতান্ত্রিক তোদের বিচার কিন্তু কেবল কুত্সা এবং বিরুদ্ধতাই তোদের স্বভাব এসব ছএড়ে মেনস্ট্রিমে আয়, শিল্প ভবিষ্যৎ আঙ্গিনায়
দরজা বন্ধ করার আগে ঠিক পথে আয়, ঠিক পথে আয়, ঠিক পথে আয় |
অবস্থান পরিস্কার করো | আমি করছি---- আমি এই অস্ফুট গোলাপ বাগানের | তুমিও তোমার পক্ষ স্পষ্ট বলে দাও দু’নৌকায় না দাঁড়িয়ে সদর্পে জানাও তুমি নষ্টজল নাকি ভুবনডাঙার-----
অবস্থান পরিস্কার করো | সোজাসাপটা বলে দাও তোমার অভীপ্সা যা যা আছে | আমি বলছি গাছে গাছে আমার কুর্নিশ তুমিও বুঝিয়ে বলো, তোমার থালায় মাংসের টুকরো যত----সে কার আমিষ ?
শিল্প কাকে বলে বন্ধু, শিল্প কারে কয় ? বিদেশী প্রযুক্তি আর স্বদেশী মজুর---- সামান্য নগদে জমি---- এত সুবিধায় যন্ত্রাংশ জোড়ার কারখানা--- যাচ্ছি-যাই বলে শিল্পপতিটি না যায়
ইস্ট ইন্ডিয়ায় পূর্বে এমন কোম্পানি অনেক এসেছে, জমি পরাধীনতায় দাসখৎ লিখে দিতে হয়েছে অনেক উন্নয়ন করেছে তারাও--- হাইওয়ে, ব্রিজ, রেল শহর বন্দর জুড়ে এই দেশ থেকে বাণিজ্যের অর্থ সব নিয়েছে বিদেশে
আজ ফের দেখতে পাই বঙ্গভূমি জুড়ে শিল্পের দোহাই দিয়ে ব্যক্তিমুনাফায় অধিগ্রহণের ফাঁদে কৃষিশিল্প যায়-----
৪ তরুণ প্রজন্ম শুধু শহরে থাকে না মফস্বল গ্রামেগঞ্জে অর্ধাহারে অনাহারে যত দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত লক্ষকোটি তরুণ তরুণী কাঁচাভাঙা পথে পথে সাইকেল চালাতে চালাতে একদিন কিছু প্রশ্ন বুঝে নিতে আসবে শহরে
তোমার কাছেও যাবে, মেটাবে ধারদেনা |
৫ ডায়ালগ দিচ্ছ এত, পারবে শেষাবধি ? ঘন্টা বেজে গেছে তুমি প্রস্ত্ততই হওনি এখনও ফিকির করছো হায় ফের ফেরত আসার বরং সৌজন্য করো, কোলাকুলি করি বিজয়ায় বদলার সময় বদলা, দেখি কবে দিন বদলায় !
৬ রুদালী আবার কাঁদো, যত কাঁদবে তত রোজগার হায় হায় বাংলা থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছে সরকার | দ্যাখো যাতে টিকে যায়, অভিযোগ-------শত হাহাকার সামলে সুমলে যদি এই মালিক আবার মসনদে বসতে পারে, তবে তুমি পাবে আরও আরও কমিশন, বিজ্ঞাপন ভাসাবে দুয়ার !
৭ শিল্পপতি এ বছর কাকে দেবে শ্রেষ্ঠের শিরোপা বহু প্রতিযোগী মধ্যে ঐ দ্যাখো কে পেয়েছে ডাক ! দ্যাখো দ্যাখো এবার পুজোয় কোন ঢাকী ভাগ্যবান শিল্পায়নের নামে কার শ্রেষ্ঠ ঢাক !
৮ শিল্প রসিকতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই তোমাদের কোম্পানিতে আটা--নুন--তেল এ সমস্ত তৈরি হয় জানা ছিল তা-ই নৌটঙ্কি কোম্পানি তোমরা খুললে কবে থেকে ? কী সুন্দর বাংলা লেখো, অপেরা-- আপেল !
৯ জমিটি ফিরিয়ে দিও, যদি তুমি না-ই থাকো আর তোমার ভস্মের নিচে যে মাটি রয়েছে পুনশ্ত উদ্ধার তাকে করে নেবো ঠিক ওসব জটিল ভাবনা তোমার ভাবনা না--- তুমি চলে গেলে মহীলতারা মাটির ধর্মে মাটি ফিরে নিক!
নিমন্ত্রণ করে পাতে ফলিডল তুলে দিচ্ছ ভাই ! বলিহারি যাই, আমি বলিহারি যাই তুমি যত ছল করো, যত কল মৃত কারখানা গলগল করে ওঠা ধোঁয়ার কুন্ডল গঙ্গার দু’ধারে ছিল---- ফ্ল্যাটবাড়ি শপিংমল রূপে আজও যারা অপেক্ষায়, তাদের শ্রমিক বিধবারা যত অনাহারে ধোঁকা, আত্মঘাতী পিতার সন্তান--- বোনেরা যাদের কবে লাল পথে হারিয়েছে পথ দাদারা দুবাই, বম্বে---আর চিঠি লেখে না এখন-----
বলের প্রয়োগ করে বলিহারি তুমি আজ লাল দলের ভোটের জন্য সেই কলকারখানা থেকে হাভাতে যুবকদের হাতে দাও শিল্পের পতাকা বাসে--ট্রাকে তুলে এনে মিছিলে হাঁটাও গোপনে দলের লাল ফলিডল তুলে দাও পাতে
যত তুমি শিল্প করতে নিষ্ঠুরতা করো আমাদের শিল্পমধ্যে ঢুকে পড়ছো তত শূন্যেরও মাঝারে শিল্প আমাদের, তাতে জমিহারাদের কান্না, খুন, মৃত্যুশোক অমিত্রাক্ষর হয়ে ইতিহাসে লিখিত হচ্ছেন
বস্ত্ত থেকে ভর তুলে একদিন আলোর গতিতে তোমাদেরও দিকে সব ফেরৎ যাবেন !
গুরুত্ব হারানো লাল শাসক পতাকা গোঁজা থাকে পথে ঘাটে অটোস্ট্যান্ড প্রস্রাবখানায় একদিন যে রঙ ছিল মহনতী মানুষের প্রাণ ভ্রমরা উড়ছে কত, কত গান গুনগুন করা অন্যায়ের প্রতিবাদে সমুন্নতশির সেই রঙ অর্থকামনায় অর্থহীন হয়ে আজ উন্নততরের বান্দা ফুলে ফেঁপে লাল হয়ে যায়
তোমার বৃষ্টির নিচে যদি ভিজে যাই আমার গা--মাথা মুছে দেবে তো, শ্রাবণ ! সরোদিয়া শারদীয় সরোদ বাজাচ্ছে আমি তার কাশফুলে পেলব আশ্রয়ে------ এই অসময়ে তুমি ভেজাবে আমাকে ?
তা ভেজাও, ভিজে যাব, আমি জানি তুমি শ্রাবণের ছদ্মবেশে শহিদ তাপসী মালিক তোমাকে মেরে আনন্দে দিনেও অবিনশ্বর অশ্রু করেছে তোমাকে
তাচ্ছিল্য তাদের প্রতি, একমুঠো সাদা কালো তাচ্ছিল্য দানা বিবিধ কৌশলে যারা ব্যক্তিস্বার্থে শিল্পের বাহানা তাচ্ছিল্য তাদের প্রতি রাজসভার জ্ঞানীগুনী শিল্পীজন যারা চাষের বিরুদ্ধে গিয়ে লক্ষ্মীপূজো করে লক্ষ্মীছাড়া তাচ্ছিল্য তাদের যারা মুহূর্মুহ কত মিথ্যা কর্মসংস্থান সম্প্রচার করতে করতে কৃষিকর্মে করে অসন্মান তাচ্ছিল্য তাদের প্রতি, যারা ভদ্রলোক, কিছু দেখেও দেখে না চেনা ছিল একদিন, আজ তারা আশ্চর্য্য অচেনা তাচ্ছিল্য তাদের যারা পথেঘাটে নিত্যরোজ বারফাট্টাই তাচ্ছিল্য করতে করতে সব্বাইকে চ্যালেঞ্জ জানাই------ যদি পারো, মারো, যদি সত্যি সত্যি পারো, তবে মারো আমি একা | একা, আমি, আমরা কোটি লোক---------
১ সমাপতনের গল্পে আমি হরিদাস ! জল্পনা কল্পনা অন্তে সমূহ নির্যাস যা বেরলো তাকে প্রভু নিজ পাদপদ্মে চরণঅমৃত করে গ্রামে গ্রামে প্যাকেজ পাঠাবে ২ বিশ্বাসঘাতকের গল্পে আমি হরিদাস ! প্রভুর গোমস্তা আমি, কেরাণীকুলিন আমার মাইনে নাকি কৃষিজমি না বেচে হবে না বিরোধিতা করলে প্রভু পাঠাবে গারদে ৩ জমিফেরতের গল্পে আমি হরিদাস ! ‘এ বিষয়ে হতে হবে দ্বন্দ্বমূলক------ অসূর্যস্পশ্যা চুক্তি দেখানো যাবে না, কৃষিজমি যদি কভু দিয়েছ ফেরৎ তাহলে ভোটের জমি হারাবে নিশ্চয়’
শহরের বাবু তোমরা শিল্প করবে আমার জমিতে? যুগে যুগে যে আবাদে তোমরা পুষ্ট হলে কার্ফ্যু করে তোমাদের অন্নদাতাদের মেরে আজ এনেছো শস্যখেতে নাট বল্টু ইট ও কংক্রিট টাকা দেবে বিনিময়ে, প্যাকেজ ট্যাকেজ ক’দিনের----- . এরপর ? অনাহারে মারা পড়ব, তোমাদের তাতে কিছু যাবে আসবে না কিন্তু বাবু, বাবু তোমরা শহরের বাবু, কত পড়াশুনো জানা তোমরা কী খাবে বলো, কী বা খাবে তোমাদের নাতিপুতিরাও ?