শ্রীমান পাষন্ড দাস ও শ্রীমতী ধোয়া তুলসীপাতা বিবাহের আগে খুব প্রাণখোলা বন্ধুই ছিলেন দুজনের জীবনের নানা গল্প, ডায়েরির পাতা আদানপ্রদান হত, হতে হতে একদিন কিম্ আশ্চর্য তাঁরা নিজেরাই হয়েছেন ভাগ্যদেবীকার শরাহত |
চুপ করে দেখুন ঐ বেড--রুমে সেই ভীর জারা স্বামী--স্ত্রীর ভূমিকায় কেমন রণং দেহি রূপ |
ধীরে ধীরে স্বর্গভূমি ধ্বংস হল, তার প্রাসাদ, উদ্যান থেকে লেলিহান আগুনের জিভ দেখতে পেল কয়েকজন মর্ত্যবাসী, তারা ভেবেছিল এ বুঝি বিদ্যুৎশিখা, এ নিছকই বজ্রপাত ছাড়া কিছু নয়
শুধুমাত্র একজন বুঝেছে সত্যতা, তার সামনে আজ আছড়ে পড়ে দাউ দাউ জ্বলতে থাকা ইন্দ্রের মুকুট
যে ঘরে থাকতাম আমি এখনও সে ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমার পুরনো আসবাব ছড়িয়ে রয়েছে তোকে চুমু খাওয়া, ঘুম পাড়ানো গান
যে ঘরে থাকতাম আমি এখনও সে ঘরের বিছানায় আমার ঘুমন্ত দেহ, অসাবধানে আমার ঘুমন্ত হাতে তোর হাত ধরা ------ পড়ে আছে ; শ্রাবণ প্রভাতে বাজ পড়ার শব্দে তোর ভয় পেয়ে কোলে উঠে আসা আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে আছে স্থির
সোনামেয়ে, আজও আমি আছি ঐ ঘরের সর্বত্র তুই শুধু চোখ বুজে ভাবিস আমাকে, খুঁজে নিস
এক একটা যুগ আসে, এই যেমন পুরুষ শাসিত . এতকাল ক্ষমতা নারীর হলে রাবণের নাম পাল্টে . মন্দোদরী হয়ে যায় একই লঙ্কা একই রাজ্যপাট থাকে, শাসন প্রণালী . থাকে সেই পুরাতন আমরা শুধু ভুল ভাবি, ভাবি বুঝি সুপ্রভাত শেষ হবে উদ্দামতা এইবার পুরুষের আধিপত্য ভেঙেচুরে দিয়ে . বুঝি প্রতিষ্ঠিত হবে নারীর সমতা !
আরও একটা সকাল হল তোর পাশে আমি নেই আরও একটা সকাল ঘুম ভাঙার পরেও আহ্লাদে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে আরেকবার আরেকটা ঘুমের গর্ভে চলে যাওয়া যাবে না এখন এখন তুই উঠে বোস, ‘বুয়া নেই, বুয়া নেই কেন’----- এই বলে সারাঘর খোঁজাখুঁজি কান্নাকাটি না করে এখন ছবি আঁকতে যা, রেডিওয় আশাবরী হচ্ছে, শোন, যদি বেঁচে থাকি আশা করি একদিন তোর আঁকা বাড়িটায় একসঙ্গে ঘুম ভাঙবে তোর আর আমার
------তোমার বাবার নাম ? ------পোথুন বৌমিক ------কোন নামে ডাকো তাকে, বাবা নাকি ড্যাড ? ------না না ও তো বুয়া হয়, ও আমার বুয়া ------ওহো, আচ্ছা ঠিক আছে, বুয়া কা করেন ? ------বুয়া---উম্--- ভালবাসে, আমাকে আদর করে খুব |
এ জীবনে বহু ধাক্কা খেয়ে তবে সেয়ানা হয়েছি আমি আজ তাজমহলের মধ্যে এখন আর মমতাজ দেখি না কোথাও জীবন এখন যেন বীচি--কলা খেতে খেতে সতর্ক সতত থুথু করে বীচি সব ডাস্টবিনে ফেলি দক্ষতায়
আজ যত পদাবলী, ষোলোকলা সাঙ্গ হল, সে সব ভস্মের দিকে চেয়ে মাঝে মাঝে তবু কেন মনে হয়, বোকা হয়ে কী ভালো ছিলাম !
আঘাতের সমুচিত প্রত্যাঘাত বোকারা শানায় কেননা তারপর ফের পাল্টা প্রত্যাঘাত আবার শানাতে হবে বোকা বুশ ব্লেয়ারের মতো | ভারতবর্ষের মতো সভ্যতায় বাস করে মনে রাখা ভাল ক্ষমাই পরম ধর্ম, সহ্য না হলে চলে যাবে----
এদেশের নবনারী দেবতার লিঙ্গপূজা করে তবু তারা ভুলে যায় মহাদেব নীলকন্ঠ হলেন কীভাবে
অপূর্ব বাগানবাড়ি, পিকনিকে এসেছে বন্ধুরা কত বন্ধু, বন্ধুপত্নী, ফুলে ফুলে তাদের সন্তান নাচে গানে মিলনতীর্থে উদ্ধোধন হচ্ছে প্রত্যেকের
শুধুমাত্র একজন খোঁচা দাড়ি এসেছে একাকী গান গাইছে, মদ খাচ্ছে, নেচেকুদে মাতাচ্ছে আসর
একা, তবু এত নাচ পছন্দ হচ্ছে না যাদের তারা কেউ দ্যাখেনি ওই একা একা আসা বন্ধুটির অশ্রু--গঙ্গা বয়ে যায় বাগানবাড়ির পাশ দিয়ে আর সেই গঙ্গাবক্ষে পরির মতোন এক মেয়ে নৌকোর মাথায় বসে বলছে মাঝিকে . মাঝিচাচা, ও আমার বুয়া হয়, ওই যে নাচছে----- . ও আমার বাবা
কাউকে যা বলিনি আমি তোর কাছে লিখে রেখে যাই এতদিন যা পেরেছি কিছুটা সঞ্চয় তোর নামে রয়ে গেল কালো বাক্সটায় পাবি একটা ছোট সোনালি পালক মানিব্যাগে পাবি একটা সূর্যমুখী ফুলের বোতাম, জামার পকেটে আছে আমার আঁকা মন্ত্রপূত ছবি, তোর ছবি
বাদামি রঙের কৌটো পেয়ে যাবি ড্রয়ারে, বাঁ--পাশে | ওতে আছে তোর গন্ধ ছোটবেলাকার তোর আমার ছবিও কিছু পাবে এলবামে এ ছাড়া এল আই সি দু’টো---- এখনও অনেক দেরি . মাধ্যমিক নাগাদ
আর আমার কিচ্ছু নেই, শুধু ওই একাউন্টে আছে রাশিরাশি দূর্বা আর রাশিরাশি ধান
মারো তবে লালমোহন টুডুকে প্রসূন ভৌমিক (এই কবিতাটি "পরিবর্তন" পত্রিকার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল )
ব্যক্তিহত্যা অমার্জনীয় কিন্তু অস্ত্র যোগাচ্ছে কারা ? খাদ্য না দিয়ে জল কেড়ে নিয়ে যুগ যুগ ধরে অস্ত্রের মুখে অগুনতি আদিবাসিন্দাদের ঘাতক-বাহিনী সাজাচ্ছে কারা?
রেড ইণ্ডিয়ান হটিয়ে যেমন আমেরিকা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত সে দেশ আবার দখল চাইছে মানচিত্রের তৃতীয় বিশ্ব দখল করতে চাইছে আকাশ দখল করতে চাইছে মাটিকে
দখল করতে চাইছে মাটির মর্মে সাজানো খনি-সম্পদ, স্বদেশকে আজ পণ্য করেছে তাদেরই মধ্যসত্ত্বভোগীরা--- স্বদেশী অথবা সর্বহারার দলের নেতা বা মন্ত্রীর বেশে
কিন্তু কী ভাবে এ গণতন্ত্রে লক্ষ-নিযুত অধিবাসীদের কৃষিজীবী থেকে মজুর বানাবে? কোন অজুহাতে টাটা-সালেমের বিরোধী জনতা থমকে দাঁড়াবে? কোন অজুহাতে বিরোধীরা চুপ?
শান্তিপূর্ণ গণবিক্ষোভ অথবা ভোটের রাজনীতিতেও সীমিত অস্ত্র প্রয়োগ তো আজ গ্রাহ্য হয়েছে জনতার কাছে... এই পথে নয়, এ পথে হবে না পূর্ণ জঙ্গী চাই রাষ্ট্রের!
এ বড় দীর্ঘ জটিল কর্ম দু'টো কি দশটা আমলাশোলের পরেও যদি বন্দুক না তোলে পেটে সন্ত্রাস নিয়েও যদি না হাল্লা বোলের পথ না মাড়ায় তাহলে নতুন পথ প্রয়োজন...
এত সত্ত্বেও অভ্যুত্থানে পথ কাটা | আর পথের কাঁটারা এত সত্ত্বেও নিরামিষ পথে শুধু পুলিসকে বয়কট করে! ক্ষমা চাইলেই শান্তি চুক্তি!
এ সবে হবে না | কীসের শান্তি? শাসকদলের পোষা ডাকাতকে মারতে অথবা মরতে পাঠাও যা-ই হবে---লাভ | রাষ্ট্রের হাতে আনতেই হবে মেদিনীর ভার ওই মণিহার সাজে না ওদের
কেন না মাটির তলায় খনিজ কেন না মাটির উপর বনজ কেন না মাটির মানুষ মজুর এখন কেবল ভাগ বাটোয়ারা কেন না বিশেষ অর্থনীতির অঞ্চল আজ চাইছে প্রভুরা
অবশেষে ওরা অস্ত্র তুলল অসংসদীয় অস্ত্র তুলল পিঠে দেওয়ালরা অস্ত্র তুলল বহু প্যাঁচ পয়জারের শেষে নিরন্ন আদিবাসীদের হাতে অস্ত্র তুলিয়ে ছাড়ল রাষ্ট্র!
এখন যুদ্ধ দেশের স্বার্থে দশ-বারো-বিশ বণিক স্বার্থে যৌথবাহিনী, পিছে হার্মাদ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধে নেমেছে মার্কিন সেনা--- যুদ্ধে তোমার মতামত নেই!
মতামত যদি থাকেই, তাহলে "দেশ-দ্রোহী" দের বিরুদ্ধে যাও | প্রমাণিত আজ : আদিবাসী মানে এদেশে জঙ্গি, আদিবাসী মানে "সভ্যতা"-পরিপন্থী জংলি--- কখনও ওদের পাশে থাকা নয়
আমলারা ভয় দেখাবেন, জুজু--- নিজেকে শান্তিযোগ্য কোরো না ওরা তো যুদ্ধে অস্ত্র তুলেছে, রাষ্ট্র এখন ওদের হঠাতে উন্নয়নের "বেদান্ত" হাতে নরহত্যার বৈধতা চায়
মানবাধিকার যতই চ্যাঁচাক ইতিহাসে যত গান্ধী থাকুন, আলোচনা নয়, আলোচনা নয় কেবল মাত্র ভোটের স্বার্থে আলোচনা ছাড়া অন্য বিষয়ে আলোচনা চাওয়া দেশদ্রোহিতা!
হঠাৎ এসব যুদ্ধের মাঝে আবার এসেছে শান্তির ডাক খোঁয়ারে বসেই যত শেয়ালেরা ফন্দি করেছে যাতে রাষ্ট্রের পরিকল্পনা চটকিয়ে যায়, ভন্ডুল হয় ছকের ঘুঁটিরা
একশন-প্ল্যান এতদিন ধরে এত প্যাঁচ কষে তইয়ার হল--- বনগোষ্ঠিকে ব্যান করে সেই দলের দোসর জনসাধারণ--- তারা যদি ফের শান্তির পথে মারো তবে লালমোহন টুডুকে!
কে লালমোহন? জনসাধারণ কমিটির নেতা? ও তো নিষিদ্ধ! শান্তির ডাক দিয়ে শেষরাতে কাঁটাপাহাড়ির পুলিস ক্যাম্পে ও নাকি জঙ্গি হামলা করতে এসেছিল সাথী-সঙ্গী জুটিয়ে
রাষ্ট্র শেখায় মিডিয়াকে | আর মিডিয়া শেখায় আমাদের, তাই শিক্ষিত হই : অবগত হই--- বয়োবৃদ্ধ আদিবাসী এক জঙ্গি হামলা করতে গিয়ে সে মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত |
শান্তির ডাক দিতে গেছিল যে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হল সে তো জঙ্গল, সে তো সাঁওতাল জনসাধারণ, অতি সাধারণ সিধু-কানহু-চাঁদ তিলকা মাঝির একবিংশতি উত্তরসূরি