কবি প্রসূন ভৌমিক - জন্ম গ্রহণ করেন ২৩.১০.১৯৬৯ তারিখে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে | মা গীতাঞ্জলি ভৌমিক | বাবা ডাঃ প্রনব কুমার ভৌমিক অধ্যাপক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ
ছিলেন | কবি ১৯৮৬ সালে হিন্দু স্কুল থেকে পাশ করার পর বঙ্গবাসী কলেজ থেকে Anthropology (নৃতত্ত্বে)
Hon’s নিয়ে B.Sc. পাশ করেন | পরবর্তী কালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে M.Sc. |
কবিতা লেখা শুরু করেন ১৯৮৯-৯০ সালে | কবির উল্লেখযোগ্য কবিতার বই গুলি হ’ল “একটি আগ্নেয়গিরি
তথ্যচিত্র”, “পাখিদ্বীপ যাদুঅলা বন্ধু-পদাবলী” (সাম্যব্রত জোয়ারদার ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ
ভাবে লেখা), “বুয়া ও বাবুই” (২০০৬) (কবির মেয়েকে নিয়ে লেখা), “মাটির মানুষ” (২০০৮), “ভদ্দরলোক”
(২০০৯), দ্রিমি দ্রিমি হুল (সাম্প্রতিক গদ্যপদ্য)(২০১১) প্রভৃতি | শেষোক্ত কাব্যগ্রন্থ তিনটি সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম
লালগড় আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত |
১৯৯০ সালে তিনি ‘বিজল্প’ নামে একটি প্রত্রিকা এবং একই নামের একটি প্রকাশনার সংস্থা শুরু করেন |
তিনি একাধারে এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ও প্রকাশক | তাঁর মতে “বিজল্প” পত্রিকার প্রধান প্রতিপাদ্য
“বিশুদ্ধ বন্ধুত্ব, বিশুদ্ধ সাহিত্য, বিশুদ্ধ প্রতিবাদ,” | তাঁর ভাষায় “বিজল্প হলো - স্বপ্নতাড়িত পাঠকের সঙ্গে
যোগাযোগের সেতু” |
বিজল্প একেবারেই কোনো বাণিজ্যিক উদ্যোগ নয় কিন্তু বিজল্পের সমস্ত কাজ তাঁর অন্যত্র উপার্জিত অর্থে
অথবা এমন কী ঋণ করেও এই সংগঠন চালিত হয় | শাসকদল বা প্রশাসনের নানান নজরদারি, হুমকি
উপেক্ষা করেও কবিতা গান ও প্রতিবাদ নিয়ে বিজল্পের ২০ বছর পূর্ণ হলো ২০১১ তে |
বিজল্পের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনায় রয়েছে মহাশ্বেতা দেবী, শঙ্খ ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অলোকরঞ্জন
দাশগুপ্ত, জয় গোস্বামী (৪টে বই), সৈকত রক্ষিত, পিনাকী ঠাকুর, সুজাত ভদ্র, বিভাস চক্রবর্তী, কবীর সুমন,
সুকুমার মিত্র, আশিস ঘোষ, অভী দত্ত মজুমদার, সুমন কল্যাণ মৌলিক, সাম্যব্রত জোয়ারদার, পৌলোমী
সেনগুপ্ত, সব্যসাচী সরকার, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভময় সরকারের মতো সমকালিন বাংলার প্রথম সারির
কবি, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মীদের রচনা |
এঁদের মধ্যে আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করবো কবি জয় গোস্বামীর “শাসকের প্রতি” ও সাম্প্রতিকতম
"হার্মাদ শিবির" কবিতার বই দুটিকে | এই বই দুটি প্রকাশ করে প্রসূন ভৌমিক ও তাঁর প্রকাশনী বিজল্প যে
সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা আমরা তুলনা করতে পারি দিনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ” নাটক বা
আমেরিকার Harriet Beecher Stowe-র “Uncle Tom’s Cabin” এর প্রকাশনার সাথে |
কবি প্রসূন ভৌমিক শুধু কবিতাই লেখেন না বা শুধু প্রকাশনা ও সম্পাদনা করেন না | অরাজনৈতিক সংগঠক
হিসেবেও তিনি বিশেষভাবে পরিচিত | এছাড়া তিনি পেশাগতভাবে একজন মিডিয়া PR বা সংবাদ মাধ্যমের
জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ |
তিনি সমাজ সেবা মূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন প্রতি-নিয়ত | অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন
নানাসময় | বিশেষ করে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনে, কবিকে আমরা প্রথম সারিতেই পাই | যদিও তিনি
নেপথ্যের সংগঠক হিসেবেই থাকতে ভালোবাসেন |
তাঁর প্রতিষ্ঠান বিজল্প-এর মাধ্যমে বহু উল্লেখযোগ্য আন্দোলন তিনি সংগঠিত করতে সাহায্য করেছেন |
যেমন ১৯৯১-৯২ সালের ‘মুখের ভাষাকে পেটের ভাষা করার আন্দোলন’ | এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে
কলকাতা দূরদর্শন ভবনের সামনে দিনরাতব্যাপি ধর্না-অবস্থান করে, লাগাতার নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচির
মধ্য দিয়ে নতূন বাংলা চ্যানেল ডি.ডি.-7 এর আবির্ভাব হয় এবং বাংলা ভাষায় পরবর্কিত কালে অন্যান্য
টিভি চ্যানেলের সম্প্রচারের সম্ভাবনা সূচিত হয় |
এই আন্দোলনের প্রেরণাতেই তিনি পরবর্তী কালে "চিঠি" নামক একটি বাংলা গ্রিটিংস কার্ডের বাণিজ্যিক
উদ্যোগ নেন | এই "চিঠি" বাংলার সংস্কৃতি ও বাণিজ্যিক মহলে এক যুগান্তকারী প্রভাব ফেলে - যা এখনো
যেকোনো আর্চি'জ গ্রিটিংস কার্ডের দোকানীদের ধুঁকতে থাকা ব্যবসায় নতুন প্রাণ সঞ্চার করে |
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বহুকাল দাবি করে আসছিলেন যে তাঁদের জেলে কোনো রাজনৈতিক বন্দী নেই | কিন্তু
আসলে বহু নকশাল আন্দোলনের বন্দী দীর্ঘকাল জেলে বন্দী ছিলেন | কবি প্রসূন ভৌমিক ও তাঁর বিজল্প-এর
সাহায্যে সংগঠিত সফল আন্দোলনের ফলে ১৯৯৩-৯৪ সালে, প্রায় ১২০০ জন বন্দী মুক্তি পান অথবা মামলা
প্রত্যাহৃত হয় |
এ ছাড়াও তিনি সংগঠিত করেছিলেন হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন (বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর
ও গোধরা কাণ্ডের পর) | মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও প্রথম কণ্ঠস্বর বিজল্প পত্রিকার |
কবিকে আমরা পাই সহনাগরিকদের মুক্ত মঞ্চের আহ্বায়ক রূপে | একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ (FAMA -
Forum Against Monopoly aggression ), নন্দীগ্রাম মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে | A.P.D.R (Association For
Protection of Democratic Rights) , হকার সংগ্রাম কমিটি, N.A.P.M. (National Alliance of Peoples'
Movements), পশ্চিম বঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি, গান্ধী পিস ফাউন্ডেশন প্রভৃতি বহু নির্দলীয় সংগঠনের সঙ্গেও
বিশেষ ভাবে যুক্ত | কবিকে আমরা পাই সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম লালগড় আন্দোলনের পুরোভাগে | ২০০৭ সালের
১২ নভেম্বর থেকে কলকাতার ধর্মতলায় (এসপ্ল্যানেড) নন্দীগ্রাম মঞ্চ তৈরী করে আন্দোলন চলে ১মাস ১৫
দিন | এই আন্দোলন সফল করার জন্য কবির অনবদ্য প্রচেষ্টা বাঙালীর মনে রাখা কর্তব্য |
কবির সঙ্গে যোগাযোগ -
ই-মেল bhaumik.prosun@gmail.com এবং bijalpo@gmail.com
“বিজল্প”-এর ওয়েবসাইট - www.bijalpo.com
কবি প্রসূন ভৌমিকের মূল কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন
উত্স: এই পরিচিতিটি কবি প্রসূন ভৌমিকের সাথে ১৮ই জুলাই ২০১০,
. রবিবার, কলেজ স্ট্রীটের কফি হাউসে, একটি সাক্ষাত্কারের
. পর লেখা হয়েছে | মিলনসাগরের পক্ষে সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন
. মানস গুপ্ত এবং মিলন সেনগুপ্ত |