কবি সাতু রায়-র গান
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
(এই গানটি কোনো কোনো বইয়ে হরিমোহন রায়ের রচিত বলে দেখা যায় |)


কও কথা বদন তুলে, হও সদয়, এই ভিক্ষা চাই ||
.           রাধার অধৈর্যে, এলেম অপার্যে,
.   তোমার কংস রাজ্যের অংশ লতে আসি নাই
||
সঙ্গিনী প্রধানা,          
          রঙ্গিনী যে জনা,
.            ভঙ্গি ক্রমে কৃষ্ণে কয় ;
.     ছিলে নব্য রাখাল, হলে ভব্য ভূপাল,
.          এবে সভ্য এই কংসালয় |
.       আমার এই দশা (দেখো হে !)
.         আমি ব্রজের সেই বৃন্দে
.       বিক্রিত শ্রীমতার পদারবিন্দে |
.পারো কি চিনতে,         
          কেন সচিন্তে,
.    তোমার চিন্তা কী চিন্তামণি, চিন্তা নাই
||
.    অধোবদনে রবে যদি, বাঁকা মদনমোহন,
.          তোমার কুবুজার দোহাই |
.       তোমার সহাস্য বদনে নাহি রহস্য,
.             কীসে এত ঔদাস্য |
.     তোমার চন্দ্রাস্য নহে আজি প্রকাশ্য ||
.     যেন সর্বস্ব নিতে এলেম ভাবছ তাই
অন্য মনে কেন রইলে,    
           কথা কইলে,
.            ক্ষতি কী তোমার |
.    (শ্যাম হে) যেতে হবে না পুন বৃন্দাবন,
.         লতে হবে না রাধার ভার |
তোমার দাসত্ব গিয়েছে,  
          রাজত্ব বেড়েছে,
.          তত্ত্ব করতে হয় একবার ;
.আমরা অর্থলোভে,        
          আসি নাই হে
.        কেবল স্বার্থ ভেবে শ্রীরাধার  ||
.    সে তো রাজার নন্দিনী, আর রাজ্যেশ্বর---
.        তুমি তো নূতন রাজা বংশীধর |
তোমার কী ধর্ম,            
       তোমার কী কর্ম,
.    মর্ম জানতে পাঠালেন ব্রজের রাজা রাই ||


.                   ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
বলো উদ্ধব! তোমার মনে আবার কী আছে ?
একবার এসে অক্রুর মুনি, করলে কৃষ্ণকাঙালিনি,
ব্রজের ধন নীলকান্ত মণি, হরে লয়ে গিয়েছে |
উদ্ধেবের আগমন দেখে বৃন্দাবনেতে ;
বৃন্দে ধায়, গিয়ে খেদ জানায়, পথমধ্যেতে |
কও হে উদ্ধব, কও কিমর্থে আগমন---
আসা সুলক্ষণ, কী হে বৈলক্ষণ,
কোন ছলে গোকুলে আসি করলে পদার্পণ !
.   দেখে মথুরানিবাসী ভয় হয়,
.   একজন এসে ছদ্মবেশে,
.   প্রেম ভেঙে, বাদ সেধেছে |
.   সাধু হও যদ্যপি, তথাপি সন্ধ হতেছে |
যেমন সেই অক্রুর দেখতে সুধার্মিক----
তোমায় ততোধিক, দেখছি শতধিক,
সুধারা বৈষ্ণবের ধারা, সজ্ঞানী সাত্ত্বিক |
কিন্তু কুগ্রামনিবাসী যারা হয় ;
ধর্মরহিত, তাদের চরিত, ধর্মশাস্ত্র লিখেছে ||


.                   ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
.         ফেরো উদ্ধব ! শূন্য ব্রজে প্রবেশ কোরো না |
.
  কৃষ্ণ বিনে গোষ্ঠ শূন্য, কানন শূন্য, নগর শূন্য,
.   কমলিনীর কুঞ্জ শূন্য, সকল শূন্য দেখো না ||
.  
 কৃষ্ণের কথায়, আজ হেথায় আগমন তোমার ;
.   গোপিকার বিরহ-বিকার, করতে প্রতিকার |
.      
    কৃষ্ণ প্রেমানল, মনানলময়---
.     সে কী নির্বাণ হয়! দেখ গোকুলময়,
.     হতেছে খান্ডবের মতন অগ্নিবৃষ্টিময়,
.     দিলে প্রবোধবারি, কী হইবে তায় !
দাবানলে যে বন জ্বলে, জল দিলে তা নিবে না |
.  
  করি কৃতাঞ্জলি বলি হে, কথা ঠেলো না |
.    দেখলে তো উদ্ধব, ব্রজের দুঃখ সব---
.
   আমরা গোপী সব, জীবন থাকতে শব ;
.
   সবার দশা সমান দশা, করেছেন কেশব |
.  
  ঘুচবে সকল জ্বালা, এলে সেই কালা ;
নইলে বেঁচে কী সুখ আছে মলেই ঘোচে যন্ত্রণা ||



.                   ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
নবীন বিরহিনী বিদেশিনী ! কোথায় যাস গো বল,
কুঞ্জবনে ফিরে ফিরে, কী জন্য চাস ফিরে ফিরে,
.  নয়নের  নীরে নীরে, ভাসে নয়ন শতদল ||
.   চঞ্চলা চপলার মতো, নিতান্ত চঞ্চল |
.  হরি ভয়ে করী যেমন, পলাইয়ে যায় ;
.    সখি ! তোর দেখি তেম্ নি ধারা,
.        ধরিতে না পারে ধরা,
.   এমন ধারা মেয়ের ধারা, কভু ভালো নয় |
.       এলি এম্ নি ছলে বৃন্দাবনে,
. ভ্রমন করিস বনে বনে, কী আছে তোর মনে মনে,
.        মনের কথা আমায় বলো ||
.        দুর্জয় মানাতে হয়ে অপমান,
.     কালাচাঁদ, সেই মানের করতে শেষ|
.        ব্রজরাজ, ত্যজে রাখাল সাজ,
.     যুবরাজ, ধরলেন আজ যুবতির বেশ|
.     কপালে সিন্দুর বিন্দু, সহাস্য বদন---
.  তাতে সজল নয়নোপরে, কজ্জল উজ্জ্বল করে,
.    জলধরে শোভা ধরে, বিজুলি যেমন |
.       হেরে মনমোহিনী মনের সন্ধে,
.         কৌশলে জিজ্ঞাসে বৃন্দে,
.   বিধুমুখি, বৃন্দাবন কি করতে এলি রসাতল ||
.         কীবা গজেন্দ্রগতি যুবতি গো !
.           গলায় গজমতি দুলছে ;
.         কবরী আ মরি কী শোভা পায় !
.           কনকচাঁপা তায় ঝুলছে |
.          অঙ্গে সোনা, কানে সোনা,
.          সেই সোনা গোকুলের ধন ;
.         প্যারি তায়, দুর্জয় মানের দায়,
.           মানকুন্ডে দেছে বিসর্জন |
.    সেই হতে নিকুঞ্জেতে, কেহ সুখী নাই---
.        ভাসে শুকশারি নয়নজলে,
.        কোকিল কাঁদে তমালডালে,
.           ভ্রমর কাঁদে শতদলে,
.            কুঞ্জে কাঁদেন রাই |
.        কাঁদে স্থানে স্থানে ব্রজাঙ্গনা,
.         কেউ কারো কথা শুনে না,
.          বিরহেতে প্রাণ বাঁচে না,
.          দুঃখে বহে নয়ন-জল ||
.        দেখে তোর ভঙ্গি রঙ্গিণি গো !
.          চেন চেন চেন জ্ঞান করি ;
.        সদাই সন্ধ মনে, তাইতে ব্যানে,
.          কিছু বলি বলি বলিতে নারি ||
.            তরুণ অরুণ, যেন দুনয়ন,
.            কিরণেতে জগত আলোময় ;
.  শশধর জিনি কলেবর, অধর তুলনা নাহি হয় |
.       ক্ষীরোদ মন্থনে যেমন, নীরদ বরন,
.  সুরাসুরে করে ছলা, মনমোহিনী চিকন কালা,
.  ষোলো কলা দেখে ভোলার ভুলে গেল মন |
.         অঙ্গে অম্বর সম্বর নাই,
.         এলোথেলো দেখতে পাই,
.  চলে যেতে রাজপথে, ধুলাতে লুটায় অঞ্চল ||



.                   ****************                                                       
উপরে


মিলনসাগর
*
.         এখন শ্যাম রাখি কি কুল রাখি গো সই ||
যদি ত্যজি গো কুল,           
        তবে হাসে গোকুল,
.     
   যদি রাখি গো কুল, কৃষ্ণে বঞ্চিত হই ||
.      
     হাঁ গো বৃন্দে ! শ্রীগোবিন্দের পায়,
.         
          করে প্রাণ সমর্পণ;
হল এ গোকুল,          
                 আমায় প্রতিকূল,
.      
          অনুকূল কেবল শ্যামধন |
.    
         সে ধন সাধনে, হই বুঝি নিধন ;
.
   সই, চারিদিকে গঞ্জনা, পাপ লোকে তা বুঝে না,
.       
             কৃষ্ণধন কী ধন ||
.  আমার মিথ্যাবাদ অপবাদ, দেয় কালার পরিবাদ,
.     
     আমি কী রূপে গৃহমাঝে তিষ্ঠে রই ||


.                
        ****************                                                উপরে


মিলনসাগর
*
.            অপরূপ একী রূপ, কৃষ্ণের রূপ,
.                           লিখেছ গো রাই |
.   যে চরণ দেবের পূজ্যধন, গতি নাই সে চরণ বই,
.           সে চরণ কই গো কই, রাই রাই গো |
.          ওগো ভক্তের ধন চরণ কেন লেখো নাই |
.         কী ভাবো সুধাংশুমুখি তাই শুধাই |
.         বলো কী ভাবে এ ভাবের হল উদয়
.    কিশোরি শ্যামেশ্বরি লিখে লিখলে না কেন পদদ্বয়,
.       আমরা যে চরণের শরণ, লয়েছি সর্বজন,
.                         রাই রাই গো,
.         আজ কি সেই চরণ লিখতে তোমার
.                            স্মরণ নাই |
.         কৃষ্ণবিচ্ছেদে খেদে কিশোরী,
.           কৃষ্ণরূপ করিয়ে মনন |
.          অতি নির্জনে, শ্যামধনে,
.          দেখো বার হল আকিঞ্চন |
.      ভূমে ত্রিভঙ্গের শ্রীঅঙ্গ করে লিখন,
.      কী ভেবে, কী ভাবে,কী ভয়ে লিখে,
.                   লিখলেন না যুগল চরণ |
.    সেরূপ করিয়ে নিরীক্ষণ, জিজ্ঞাসে সখীগণ,
.        রাই রাই গো, ওগো রঙ্গময়ি,
.           একী রঙ্গ দেখতে পাই |
.       এই বিনয় করি, লেখোগো কিশোরী,
.               শ্রীহরির চরণ |
.  অঙ্গহীন মাধুরী শ্রীহরির করিতে নাই দরশন|
.         শ্যাম কি সামান্য তোমার কিশোরী,
.                 তুমি কি সামান্য নারী
.  এ বিচ্ছেদ, মনোভেদ, শ্যাম নিতান্ত তোমারই |
.   তবে করবে কী, আছে সেই শ্রীদামের শাপ,
.          তাইতে রাই, উপায় নাই,
.        মানুষী লীলায় পাচ্ছ মনস্তাপ |
.   বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা-পারাবার, যা হতে হবে পার,
.   বিশেষ জেনেও কি কপালক্রমে ভুললে তাই |
.        যে চরণ লাগি, প্রহ্লাদ বৈরাগী,
.  বিরাগী ধ্রুব হয়, সকলই তো তুমি জান রাই|
.           যে চরণ সাধনকারণ,
.     সদাশিব যোগধর্ম করেছেন আশ্রয় |
.  ত্রিভঙ্গের সর্বাঙ্গের সারাত্সার সেই পদদ্বয় |
.    যদি সেই চরণ লিখতে হলি বিস্মরণ,
.  দুঃসহ বিরহ কিশোরী কীসে করবি নিবারণ|
.  যদি এড়াতে যন্ত্রণায়, লিখেছ কৃষ্ণের কায়,
.             রাই রাই গো |
.       যাতে বিপদ যায়, সেই পদ
.         কইগো দেখতে পাই ||


.                        ****************                                                
উপরে


মিলনসাগর
*
.        নিরদয় পদদ্বয়, লিখি নাই সেই আশঙ্কায় |
.  সই, সময় যখন মন্দ হয়, চিত্র ময়ূরে গেলে হার,
.            বিচিত্র কী গো তার,
.       যদি চিত্র শ্যাম মধুপুরে চলে যায় |
.           গোবিন্দের পদারবিন্দে,
.         বৃন্দে গো, হৃদয়ে করেছি ধারণ |
.       অন্য সব অবয়ব ভূমেতে করেছি লিখন ||
.       লিখে লিখি নাই ত্রিভঙ্গের সেই শ্রীচরণ |
.            কী কারণ বিবরণ, শোন্ গো,
.             তার চরণের কী আচরণ |
.            শ্যামকে লয়ে গেল মথুরায়,
.         আনলে না আর পুনরায়, সই সই গো,
.         রইল সচল গিয়ে, অচল হয়ে মথুরায় ||



.                        ****************                                                
উপরে


মিলনসাগর