কবি
সাতু রায়
-
এ
র গান
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।
কও কথা বদন তুলে, হও সদয়, এই ভিক্ষা চাই
২।
বলো উদ্ধব! তোমার মনে আবার কী আছে
৩।
ফেরো উদ্ধব ! শূন্য ব্রজে প্রবেশ কোরো না
৪।
নবীন বিরহিনী বিদেশিনী ! কোথায় যাস গো বল
৫।
এখন শ্যাম রাখি কি কুল রাখি গো সই
৬।
অপরূপ একী রূপ, কৃষ্ণের রূপ
৭।
নিরদয় পদদ্বয়, লিখি নাই সেই আশঙ্কায়
*
(
এই গানটি
কোনো কোনো বইয়ে
হরিমোহন রায়ের রচিত ব
লে
দেখা যায়
|)
কও কথা বদন তুলে, হও সদয়, এই ভিক্ষা চাই ||
. রাধার অধৈর্যে, এলেম অপার্যে,
. তোমার কংস রাজ্যের অংশ লতে আসি নাই
||
সঙ্গিনী প্রধানা,
রঙ্গিনী যে জনা,
. ভঙ্গি ক্রমে কৃষ্ণে কয় ;
. ছিলে নব্য রাখাল, হলে ভব্য ভূপাল,
. এবে সভ্য এই কংসালয় |
. আমার এই দশা (দেখো হে !)
. আমি ব্রজের সেই বৃন্দে
. বিক্রিত শ্রীমতার পদারবিন্দে |
.পারো কি চিনতে,
কেন সচিন্তে,
. তোমার চিন্তা কী চিন্তামণি, চিন্তা নাই
||
. অধোবদনে রবে যদি, বাঁকা মদনমোহন,
. তোমার কুবুজার দোহাই |
. তোমার সহাস্য বদনে নাহি রহস্য,
. কীসে এত ঔদাস্য |
. তোমার চন্দ্রাস্য নহে আজি প্রকাশ্য ||
. যেন সর্বস্ব নিতে এলেম ভাবছ তাই
অন্য মনে কেন রইলে,
কথা কইলে,
. ক্ষতি কী তোমার |
. (শ্যাম হে) যেতে হবে না পুন বৃন্দাবন,
. লতে হবে না রাধার ভার |
তোমার দাসত্ব গিয়েছে,
রাজত্ব বেড়েছে,
. তত্ত্ব করতে হয় একবার ;
.আমরা অর্থলোভে,
আসি নাই হে
. কেবল স্বার্থ ভেবে শ্রীরাধার ||
. সে তো রাজার নন্দিনী, আর রাজ্যেশ্বর---
. তুমি তো নূতন রাজা বংশীধর |
তোমার কী ধর্ম,
তোমার কী কর্ম,
. মর্ম জানতে পাঠালেন ব্রজের রাজা রাই ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
বলো উদ্ধব! তোমার মনে আবার কী আছে ?
একবার এসে অক্রুর মুনি, করলে কৃষ্ণকাঙালিনি,
ব্রজের ধন নীলকান্ত মণি, হরে লয়ে গিয়েছে |
উদ্ধেবের আগমন দেখে বৃন্দাবনেতে ;
বৃন্দে ধায়, গিয়ে খেদ জানায়, পথমধ্যেতে |
কও হে উদ্ধব, কও কিমর্থে আগমন---
আসা সুলক্ষণ, কী হে বৈলক্ষণ,
কোন ছলে গোকুলে আসি করলে পদার্পণ !
. দেখে মথুরানিবাসী ভয় হয়,
. একজন এসে ছদ্মবেশে,
. প্রেম ভেঙে, বাদ সেধেছে |
. সাধু হও যদ্যপি, তথাপি সন্ধ হতেছে |
যেমন সেই অক্রুর দেখতে সুধার্মিক----
তোমায় ততোধিক, দেখছি শতধিক,
সুধারা বৈষ্ণবের ধারা, সজ্ঞানী সাত্ত্বিক |
কিন্তু কুগ্রামনিবাসী যারা হয় ;
ধর্মরহিত, তাদের চরিত, ধর্মশাস্ত্র লিখেছে ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
.
ফেরো উদ্ধব ! শূন্য ব্রজে প্রবেশ কোরো না |
.
কৃষ্ণ বিনে গোষ্ঠ শূন্য, কানন শূন্য, নগর শূন্য,
. কমলিনীর কুঞ্জ শূন্য, সকল শূন্য দেখো না ||
.
কৃষ্ণের কথায়, আজ হেথায় আগমন তোমার ;
. গোপিকার বিরহ-বিকার, করতে প্রতিকার |
.
কৃষ্ণ প্রেমানল, মনানলময়---
. সে কী নির্বাণ হয়! দেখ গোকুলময়,
. হতেছে খান্ডবের মতন অগ্নিবৃষ্টিময়,
. দিলে প্রবোধবারি, কী হইবে তায় !
দাবানলে যে বন জ্বলে, জল দিলে তা নিবে না |
.
করি কৃতাঞ্জলি বলি হে, কথা ঠেলো না |
. দেখলে তো উদ্ধব, ব্রজের দুঃখ সব---
.
আমরা গোপী সব, জীবন থাকতে শব ;
.
সবার দশা সমান দশা, করেছেন কেশব |
.
ঘুচবে সকল জ্বালা, এলে সেই কালা ;
নইলে বেঁচে কী সুখ আছে মলেই ঘোচে যন্ত্রণা ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
নবীন বিরহিনী বিদেশিনী ! কোথায় যাস গো বল,
কুঞ্জবনে ফিরে ফিরে, কী জন্য চাস ফিরে ফিরে,
. নয়নের নীরে নীরে, ভাসে নয়ন শতদল ||
. চঞ্চলা চপলার মতো, নিতান্ত চঞ্চল |
. হরি ভয়ে করী যেমন, পলাইয়ে যায় ;
. সখি ! তোর দেখি তেম্ নি ধারা,
. ধরিতে না পারে ধরা,
. এমন ধারা মেয়ের ধারা, কভু ভালো নয় |
. এলি এম্ নি ছলে বৃন্দাবনে,
. ভ্রমন করিস বনে বনে, কী আছে তোর মনে মনে,
. মনের কথা আমায় বলো ||
. দুর্জয় মানাতে হয়ে অপমান,
. কালাচাঁদ, সেই মানের করতে শেষ|
. ব্রজরাজ, ত্যজে রাখাল সাজ,
. যুবরাজ, ধরলেন আজ যুবতির বেশ|
. কপালে সিন্দুর বিন্দু, সহাস্য বদন---
. তাতে সজল নয়নোপরে, কজ্জল উজ্জ্বল করে,
. জলধরে শোভা ধরে, বিজুলি যেমন |
. হেরে মনমোহিনী মনের সন্ধে,
. কৌশলে জিজ্ঞাসে বৃন্দে,
. বিধুমুখি, বৃন্দাবন কি করতে এলি রসাতল ||
. কীবা গজেন্দ্রগতি যুবতি গো !
. গলায় গজমতি দুলছে ;
. কবরী আ মরি কী শোভা পায় !
. কনকচাঁপা তায় ঝুলছে |
. অঙ্গে সোনা, কানে সোনা,
. সেই সোনা গোকুলের ধন ;
. প্যারি তায়, দুর্জয় মানের দায়,
. মানকুন্ডে দেছে বিসর্জন |
. সেই হতে নিকুঞ্জেতে, কেহ সুখী নাই---
. ভাসে শুকশারি নয়নজলে,
. কোকিল কাঁদে তমালডালে,
. ভ্রমর কাঁদে শতদলে,
. কুঞ্জে কাঁদেন রাই |
. কাঁদে স্থানে স্থানে ব্রজাঙ্গনা,
. কেউ কারো কথা শুনে না,
. বিরহেতে প্রাণ বাঁচে না,
. দুঃখে বহে নয়ন-জল ||
. দেখে তোর ভঙ্গি রঙ্গিণি গো !
. চেন চেন চেন জ্ঞান করি ;
. সদাই সন্ধ মনে, তাইতে ব্যানে,
. কিছু বলি বলি বলিতে নারি ||
. তরুণ অরুণ, যেন দুনয়ন,
. কিরণেতে জগত আলোময় ;
. শশধর জিনি কলেবর, অধর তুলনা নাহি হয় |
. ক্ষীরোদ মন্থনে যেমন, নীরদ বরন,
. সুরাসুরে করে ছলা, মনমোহিনী চিকন কালা,
. ষোলো কলা দেখে ভোলার ভুলে গেল মন |
. অঙ্গে অম্বর সম্বর নাই,
. এলোথেলো দেখতে পাই,
. চলে যেতে রাজপথে, ধুলাতে লুটায় অঞ্চল ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
. এখন শ্যাম রাখি কি কুল রাখি গো সই ||
যদি ত্যজি গো কুল,
তবে হাসে গোকুল,
.
যদি রাখি গো কুল, কৃষ্ণে বঞ্চিত হই ||
.
হাঁ গো বৃন্দে ! শ্রীগোবিন্দের পায়,
.
করে প্রাণ সমর্পণ;
হল এ গোকুল,
আমায় প্রতিকূল,
.
অনুকূল কেবল শ্যামধন |
.
সে ধন সাধনে, হই বুঝি নিধন ;
.
সই, চারিদিকে গঞ্জনা, পাপ লোকে তা বুঝে না,
.
কৃষ্ণধন কী ধন ||
. আমার মিথ্যাবাদ অপবাদ, দেয় কালার পরিবাদ,
.
আমি কী রূপে গৃহমাঝে তিষ্ঠে রই ||
.
****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
. অপরূপ একী রূপ, কৃষ্ণের রূপ,
. লিখেছ গো রাই |
. যে চরণ দেবের পূজ্যধন, গতি নাই সে চরণ বই,
. সে চরণ কই গো কই, রাই রাই গো |
. ওগো ভক্তের ধন চরণ কেন লেখো নাই |
. কী ভাবো সুধাংশুমুখি তাই শুধাই |
. বলো কী ভাবে এ ভাবের হল উদয়
. কিশোরি শ্যামেশ্বরি লিখে লিখলে না কেন পদদ্বয়,
. আমরা যে চরণের শরণ, লয়েছি সর্বজন,
. রাই রাই গো,
. আজ কি সেই চরণ লিখতে তোমার
. স্মরণ নাই |
. কৃষ্ণবিচ্ছেদে খেদে কিশোরী,
. কৃষ্ণরূপ করিয়ে মনন |
. অতি নির্জনে, শ্যামধনে,
. দেখো বার হল আকিঞ্চন |
. ভূমে ত্রিভঙ্গের শ্রীঅঙ্গ করে লিখন,
. কী ভেবে, কী ভাবে,কী ভয়ে লিখে,
. লিখলেন না যুগল চরণ |
. সেরূপ করিয়ে নিরীক্ষণ, জিজ্ঞাসে সখীগণ,
. রাই রাই গো, ওগো রঙ্গময়ি,
. একী রঙ্গ দেখতে পাই |
. এই বিনয় করি, লেখোগো কিশোরী,
. শ্রীহরির চরণ |
. অঙ্গহীন মাধুরী শ্রীহরির করিতে নাই দরশন|
. শ্যাম কি সামান্য তোমার কিশোরী,
. তুমি কি সামান্য নারী
. এ বিচ্ছেদ, মনোভেদ, শ্যাম নিতান্ত তোমারই |
. তবে করবে কী, আছে সেই শ্রীদামের শাপ,
. তাইতে রাই, উপায় নাই,
. মানুষী লীলায় পাচ্ছ মনস্তাপ |
. বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা-পারাবার, যা হতে হবে পার,
. বিশেষ জেনেও কি কপালক্রমে ভুললে তাই |
. যে চরণ লাগি, প্রহ্লাদ বৈরাগী,
. বিরাগী ধ্রুব হয়, সকলই তো তুমি জান রাই|
. যে চরণ সাধনকারণ,
. সদাশিব যোগধর্ম করেছেন আশ্রয় |
. ত্রিভঙ্গের সর্বাঙ্গের সারাত্সার সেই পদদ্বয় |
. যদি সেই চরণ লিখতে হলি বিস্মরণ,
. দুঃসহ বিরহ কিশোরী কীসে করবি নিবারণ|
. যদি এড়াতে যন্ত্রণায়, লিখেছ কৃষ্ণের কায়,
. রাই রাই গো |
. যাতে বিপদ যায়, সেই পদ
. কইগো দেখতে পাই ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা
*
. নিরদয় পদদ্বয়, লিখি নাই সেই আশঙ্কায়
|
. সই, সময় যখন মন্দ হয়, চিত্র ময়ূরে গেলে হার,
. বিচিত্র কী গো তার,
. যদি চিত্র শ্যাম মধুপুরে চলে যায় |
. গোবিন্দের পদারবিন্দে,
. বৃন্দে গো, হৃদয়ে করেছি ধারণ |
. অন্য সব অবয়ব ভূমেতে করেছি লিখন ||
. লিখে লিখি নাই ত্রিভঙ্গের সেই শ্রীচরণ |
. কী কারণ বিবরণ, শোন্ গো,
. তার চরণের কী আচরণ |
. শ্যামকে লয়ে গেল মথুরায়,
. আনলে না আর পুনরায়, সই সই গো,
. রইল সচল গিয়ে, অচল হয়ে মথুরায় ||
. ****************
উপরে
মিলনসাগর
কবির পরিচিতির পাতা