শম্ভুনাথ মুখার্জীর কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
কমরেড জ্যোতি বসুর প্রয়াণে লাল দুর্গের সেনাপতি, তোমাকে জানাই লাল সেলাম, মৃত্যুর মাঝে তোমাকে আমরা নতুন করে ফিরে পেলাম। জ্যোতির্বলয় ভাঙ্গল এবার, নামল চোখে মৃত্যু আঁধার, শত্রু মিত্র চোখে সবার, উথলে ওঠে অশ্রু অপার। সবাই তোমায় জানায় সেলাম, হারিয়ে তোমায় নতুন করে ফিরে পেলাম থাকবে তুমি মৃত্যু অতীত, আম জনতার মনে, তোমার ছায়া নিরবধি পড়বে ক্ষণে ক্ষণে রইবে তুমি অমর হয়ে ইতিহাসের পাতায় বঙ্গনায়ক সেলাম, সেলাম সেলাম জানাই তোমায়। . **************** উপরে মিলনসাগর |
আহ্বান দিবস রজনী যেথা মিশে একাকার আলোক আঁধার খেলে যেথা লুকোচুরি, সীমিত ধরার কোলে দোলে পারাবার, অসীম আকাশ দেখে তাই চোখ ভরি; সেইখানে মোরা প্রাণের বেদনা মেলে এস না অমর অমরা গরিয়া তুলি, লুব্ধ কাতর হিংসার জ্বালা ভুলে না হয় এবার প্রেমের প্রদীপ জ্বালি। দীর্ঘ পথের দুধারে দেখেছি কারা জীর্ন দেহের পিঞ্জরে বেঁধে রেখে অসহায় ক্ষোভ, অমিত অশ্রু ঝরা, নীরব বিপুল ঘৃণারে রেখেছে ঢেকে। হাতে হাত রেখে নূতন শপথ মেনে এসোনা এবার হৃদয় পুর্ণ করি, নূতন ঊষার মরন-উত্তরণে সবার মিলনে জীবনের বাজী ধরি। . **************** উপরে মিলনসাগর |
সমুদ্র চিল আকাশ নীল সাগর নীল, উধাও ডানা সমুদ্র চিল, ঝঞ্জা বাতাস আসছে হেঁকে, জমছে মেঘ কোণের দিকে, ফিরতে হবে অনেক দূর সাগর-ফেনা অগাধ সুর || ঢেউ দোলায় মাণিক নাচে, গরল-সুরা ফেনিল নীচে, আঁধার নামে ক্লান্তি নেই ডানায় গতি অবাধ সেই সমুদ্র চিল চলছে উড়ে ফিরতে হবে অনেক দূরে || ফিরতে হবে মাটীর টানে দুরন্ত বেগ ব্যাকুল প্রানে, জীবন তৃষা আকাশ ভরে, আঁধার নামে সাগর পারে মাটীর প্রেম স্বপ্ন-মুখর উধাও চিল ডানায় প্রখর || প্রখর ডানায় আকাশ কাঁপে, ফিরছে চিল দারুন দাপে, মুক্তপ্রাণের সতেজ গতি, সবুজ জলে ঘনায় রাতি, উধাও চিল ফিরছে ঘরে, অগাধ অসীম সাগর পারে || . **************** উপরে মিলনসাগর |
মমি প্রাণ পায় অনেক বছর ধরে পিরামিদ-অন্তরে মমি হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছি আমি রক্তহীন পান্ডুর মুখ। পুঞ্জীভূত অন্ধকারে ঢাকা আছে নয়নের জ্যোতি, অট্টহাসি হেসে লোভাতুর কঙ্কাল-জীর্ন কাল সবিদ্রুপ, আমার বুকের নৈঃশব্দ স্তব্ধ হয়ে প্রহরে প্রহরে, রক্ত-মোক্ষণের পথে ঝাঁঝরে পাঁজরে বিদ্রোহ জানায় চেতনা ঘণায় ফের মস্তিষ্কের কোষে; প্রাণ পায় মমি। সে মমির পান্ডুর চোখে অকস্মাত বিচ্ছুরিত আলোর স্পন্দন, নিঃশ্বাসে বাহিরায় পুঞ্জীভূত তাপ; বেদনায় নীল ছিল যে আকাশ সহস্রাব্দ ধরে, মমির তপস্যা-ধন্য তপনের লাল আশীর্বাদে রক্তিম হ’ল। তাই পৃথিবীর জরায়ু-জঠরে মুক্তির ঈশারা নিয়ে অন্ধকার কাঁদে ভালবাসা জন্ম নেয় বঞ্চনার স্তুপে, ভেঙ্গে পরে সভ্যতার পিরামিড। আদিম আকাশ যেন আবেগে অস্থির, স্ফুরিত অষ্ঠাধরে তার দৃঢ় অঙ্গীকার, যুগান্তের ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে মমি। . **************** উপরে মিলনসাগর |
ইতিহাস ঐ যেখানে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ল আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ঘাসে, যেখানে সোনালী স্বপন আসে হাওয়ায় ভেসে, সেখানে রেখেছি লিখে একটি সে গান ভৈরবীর সুরে মোর ভরে নিয়ে প্রাণ। জানি আমি ব্যর্থ হ’ল, ব্যর্থ হবে জীবন-চেতনা; এ শতাব্দী ললাটে পরে কলঙ্কের গ্লানি, ব্যর্থ হল ঋষির বেদনা, ইতিহাস ব্যঙ্গ করে- ব্যর্থ হল বুদ্ধবানী। তবু আমি আরবার স্বপ্ন মেখে চোখে ক্রন্দসীর রূপ রসে ভরে নিয়ে প্রাণ এখানে রেখেছি লিখে একটি সে গান। মুছে যাবে আমার এ নাম, কোন দূর অতীতের দূর স্বপ্ন সম, সন্ধ্যার চঞ্চল হাওয়া আনিবে না গ্রহান্তর হতে কোন বার্তা অনুপম। তবুও সেদিন পৃথিবীর অনাগত মানব-সন্তান, গভীর নিঃশ্বাসে যবে ঘাসেরগন্ধ টেনে নেবে, বুক ভরে টেনে নেবে এ যুগের স্বপ্ন যত, যত ছিল গান। সেদিন হয়ত’ ফিরে নক্ষত্রের সাথে শূণ্য পরিক্রমা পথে, অকস্মাত কোন এক তারা-বিন্দু হয়ে, চেয়ে রব ফেলে আসা মোর স্বপ্ন পানে, হয়ত’ প্রত্যয়ে অশরীরি বাণীরূপে কব তার কানে কানে, ‘হয়েছে বিজয়’, ইতিহাসে লেখা হল, ‘ওরা মৃত্যুঞ্জয়’। . **************** উপরে মিলনসাগর |
Lord Tennyson-রচিত ‘Crossing the Bar’ কবিতার অনুবাদ সূর্যাস্তের আলো আকাশ রাঙালো, দূর গগনের গায় সন্ধ্যাতারার নীরব চাহনি ওপারের ডাক দেয়। অথৈ সাগর অতল-নিথর প্রসারিত সম্মুখে, দিতে হবে পাড়ি,পিছনে ডেকোনা অশ্রু না ঝরে চোখে, আমি চাই শুধু স্তব্ধ অতল স্রোত উচ্ছাসহীন, শব্দ করেনা,ফেনাও ঝরেনা উতস তে হয় লীন। গোধুলির আলো,সন্ধ্যারতির ধ্বনি, আঁধার আসিবে ছেয়ে, বিদায়ের ব্যথা হৃদয়ের রেখোনা, ভাসিব যখন নায়ে। নিয়ে যাবে স্রোত দেশ ও কালের সীমানা ছাড়ায়ে দূরে। জীবন দেবতা দাঁড়াবেন আসি মহাসাগরের পাড়ে। . **************** উপরে মিলনসাগর |
অমর প্রেম সূর্য যায় অস্তাচলে, সন্ধ্যা আসে রাত্রির দূতী হয়ে হংস বলাকার সারি চলেছে উড়ে আকাশ সমুদ্র-পাড়ে। এখনি আঁধার ঘোর ছড়িয়ে পরবে দিগ্বিদিক ছেয়ে। আত্মহারা চিত্ত মোর ডুবিছে অতীতে, ভরিছে এ প্রাণ যেন কোন্ বিপুল সঙ্গীতে। আমি বসে আছি ছোট নদীটির ধারে, মন ভেসে চলে কোন সে সুদূরে, বিস্মৃত সময়ে, যেখানে ছিলাম আমি রাখাল বালক হয়ে, গাইতাম গান রাখালিয়া সুরে। আমার বাঁশিতে ছিল অরফিউসের সুর, হৃদয়ে ছিল প্রেম, আর চোখ ছিল স্বপ্নে ভরপুর; আমার পৃথিবী ছিল মুক্ত অবাধ, বাতাস আনত বয়ে স্বর্গের সংবাদ। হয়ত বা তমসার তীরে দেখেছি ক্রৌঞ্চ-মিথুনের লীলা, দেখেছি নিষ্ঠুর ব্যাধের শরে নিমেষে ফুরায়ে যেতে প্রেমের নিভৃত খেলা, হয়ত বিদিশার নিভৃত কুটিরে নিয়েছি বক্ষে তুলে আমার প্রাণের প্রেয়সীরে। হয়ত বা উজ্জয়িনীর পথে জ্যোতস্না রাতে অভিসারিকার নূপুর নিক্কণ রক্তে দিয়েছে দোলা। হয়ত বা বিরহী যক্ষ হয়ে পাঠায়েছি মেঘদূতে অলকাপুরীতে যেথা বিরহিনী প্রিয়া মোর গুণিত প্রহর, গাঁথিত অশ্রুর মালা। বেত্রবতী নদী আজ নেই, নেই সেই তমসার তীরে তপোবন, যায় না শোনা নির্জন পথে কোন অভিসারিকার রিনিঝিনি শিঞ্জন, আজ ক্ষুধার দহন নিষ্ঠুর ব্যধের মত ছঁড়ে ফেলে প্রেমের বন্ধন। তবুও সূর্যাস্ত হয়, হৃদয় রক্তাক্ত হয়, তবু নদী বয়ে চলে , পাখি গান গায় তরুণ-তরুণী খোঁজে নিভৃত নির্জন। সেই প্রেম বুকে নিয়ে আমি আজিকার কবি আঁকি বসে ছন্দোবদ্ধ ছবি। এ প্রেম মৃত্যুহীন আকাশের সুনীলে বিলীন সমুদ্রের নীলে নীলে অসীমেতে লীন; মানুষের চিত্তপটে চিরজাগরুক, এ তৃষ্ণা অনন্তকাল চির-উতসুক, এ তৃষ্ণা দীপ্তি হয়ে নক্ষত্রের গায়ে লক্ষকোটিবতসরেও চির -অম্লান, সন্ধ্যার প্রদোষ ছায়ে রাত্রির সঘন অন্ধকারে গুঞ্জরিয়া তোলে শত বিরোহী বক্ষের গান। . **************** উপরে মিলনসাগর |
আর্ষ ঋষি বসেছেন ধ্যানে পরম সত্যের সন্ধানে। নিমীলিত আঁখি, রুদ্ধ ইন্দ্রিয় দ্বার, স্তব্ধ চারিধার, ঋষি জপছেন ইষ্ট নাম; অন্তরের প্রণাম, নিবেদিলেন পায়ে বিশ্ব-বিধাতার। আত্মজ্ঞান লাভ করলেন ঋষি, জানলেন, মানুষ অমৃতের সন্তান, বিশ্ব পরিচয় উঠিল উদ্ভাসি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি পরে। ঋষি করজোরে বললেন, পেয়েছি তাঁর সন্ধান; ‘তিনি আছেন মানুষের মাঝে নানারূপে নানা সাজে।’ বিশ্ব নিখিলে উঠল প্রতিধ্বণি, ফুলে ফুলে লতায় পাতায় আকাশে- বাতাসে ধ্বণিত হল সেই বানী, ঋষি চাইলেন চোখ মেলে , চোখে তাঁর দৃপ্ত অঙ্গীকার, ‘মানুষের পরে দানবের নাই অধিকার।’ . **************** উপরে মিলনসাগর |