শীলা চক্রবর্তীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
১।   নদী হলদি                   
২।  
বাষ্প জমাই                  
৩।  
পেরিয়ে হাজার আলোকবর্ষ          
৪।  
কেননা মানুষ                           
৫।  
ফাঁসি              
৬।  
আমার মৃত্যু হবে না                     
       
*
ও নদী হলদী     

জানিগো হলদি এখন তোমার ভীষণ অসুখ
কাঁপে থরথর দুটি হাত দুইকুল
তোমার পলিতে নিরীহ হাড়ের মর্মর
হায় হায় নদী, তুমিও চোনো নি 'সর্বভূক'?

কেন কোল দিলে দম্ভকে দিলে প্রশ্রয়
তোমার সবুজ মাটিতে মেশাতে দাহ্য
স্নিগ্ধ আঁধার ভরে দিল মাত্সর্য
কুল্ কুল্ বুকে ছিল কি তোমারও ভয়?

সোনাভরা বুক কেন আনমনা বইলি
তাম্রলিপির সব লিপি মুছে
বনিক সাজাবে আপন হর্ম্য
বর্গির চোখ বন্দরে, কেন ভুললি?

আজ দু'পাশে দুখানা শুকনো মুখ
তোমার আর্দ্র ভালবাসা মেখে
এতদিন ছিল গলাগলি, কেন
মত্তহাতিকে দলে দিতে দিলে ওদের সুখ?

তবু মেঠোফুল রক্ত মিশিয়ে তোমার জলে
কান্না আকাশে মেঘ করে দিয়ে
বুকে ঘৃণা ক্রোধ বিদ্যুৎ নিয়ে
ওরা অনায়াস, ও নদী, তোমারই বহতা পেলে |

.              *************** ২২/০৩/২০০৭   
          
*
[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা, কবিতা
বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা
https://www.milansagar.com/index.html
দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্ লগ্  বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ]
*
খানে আমরা কবির কয়েকটি সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতাও তুলে দিয়েছি |
বাষ্প জমাই    

গেলগেল রব সব হারাবার ভয়ে
উন্মাদ রাজা সান্ত্রী ছোটায়
রাতের অন্ধকারে
সঙ্গীন নিয়ে ওরা সারসার
ভাঙাবেড়া বাঁধ ধারে!

চাই বেড়াবেড়ি রাজাপুর চাই
চাই তালপাটি হরিপুর চাই
রাজা বুভুক্ষু হায়না
হয় জমি দাও নইলে রক্ত
যত্সামান্য বায়না !

শিরায় শিরায় রক্ত নেশায়
হায়না হয়েছে উন্মাদ
হুংকার তুলে মেদিনী কাঁপায়
হালুম হুলুম পাটোয়ার চাই
কিষাণ-মজুর বরবাদ!

ছিঁড়ে কেড়ে নিতে
মাটি জল ফুল
প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি
ঘৃণা প্রতিরোধ আগুনে আগুনে
হিংস্র পশুকে চিনি !

বসুন্ধরায় অযূত মানুষ
আমরা রয়েছি থাকবে আকাশ
পর্বত-গিরি খনি গহ্বর
মাটি জমি আর ঘাস!

সূর্যের সাথে সৌর মিতালী
আমাদের হাতে সোনালী শিষের দোলা
দুটি পাতা আর একটি কুঁড়িতে
স্পর্শ পাগল কালো হিরে নিয়ে
চিমনির ধোঁয়া তোলা |

গোলক শাবির শাবিনা মায়ার
                 লাশ ছুঁয়ে আজ
নন্দীগ্রাম তোলপাড় কান্নায়
জমাই বাষ্প, আবাদ করবো
ধূপগুড়ি থেকে পাথর প্রতিমা
অশ্রু আকূল ভাইবোন ছুটে আয়!

.          ***************     ১৫/০৩/২০০৭
পেরিয়ে হাজার আলোকবর্ষ      

আমার দুঃখ তোমার সাথে
শেষ কথাটা বলতে পারিনি
জানি তুমি বুঝবে আমায়
তোমার অনুরোধেই আমি ধৈর্য্য ধরেছি!

তোমার জন্য অনন্ত পথ
হাঁটতে রাজি আছি
পেরিয়ে হাজার আলোকবর্ষ
আমি জেন প্রতিক্ষাতেই বাঁচি!

ক্ষমতা দাম্ভিক প্রিয়
ক্ষমতা নির্মম
এই ধরণীর ধূলোয় তবু
স্বর্গ গড়ার স্বপ্ন কিসে কম!

ক্ষমতা হোক অন্ধ বেহুঁশ
স্বপ্ন দেখার স্পর্ধাতো নেই তার
আমরা যুগল প্রেমিক নিলাম
নীলপদ্মর ভার!

যখন মাটি গুমড়ে ওঠে
কৃষ্ণচূড়ায় ঝড়
সাতরঙা রামধনু ছুঁতে
আর কি থাকে ডর!

তোমার আমার ভালবাসা
আগলভাঙ্গার গান
নন্দনে ফুল মুখরিত
উদ্বেলিত পারিজাতের প্রাণ!

দূরত্ব নেই প্রিয় আমার
স্বর্গ-মর্ত্ত এইতো কাছাকাছি
আমরা দুজন বাঁচতে জানি
ভালবাসায় মরতে রাজি আছি!

ওগো, স্বর্গের প্রহরীগো
থেকো বিনিদ্র সারারাত
তোরণ পেরবো একসাথে
ধরো, এইতো আমার হাত!

.              *************** ১৫/১০/২০০৭  
*
কেননা মানুষ      

জঠর বুঝেছে খুদকুঁড়ো ছাড়া
আর আমার কিছু নয়
অন্ধকারেই হেঁচকি তুলছি
কপাট খুলিনা ভয় |

সমাজ তো ঢের সভ্য হয়েছে
আদিম ল্যাংটো আমি
উলঙ্গ এ মা! ওরা কি বলবে
কি করে আলোয় নামি!

আকাশচুম্বী প্রাসাদ নড়েনা
নগরের বুক জুড়ে
এই ভাঙনেই হয়তো তলাবে
আমার প্রান্ত কুঁড়ে |

ওরা কেউ কেউ পড়ছে সাহসে
ইংরেজী বিজ্ঞান
লজঝরে বাকি তুচ্ছ জীবনে
থাকে অপবিজ্ঞান |

আই সি ইউতে কেউবা ঘুমায়
বুকে করনারী ব্যথা
আমাদের থাকে শিকড় বাকড়
মরণইতো শেষ কথা!

অবসাদময় দিগন্ত কালো
দূরে দূরে সরে যায়
আধা মানুষের জোয়াল টানতে
ফিরিনা ডাইনে-বাঁয় |

জলদমন্দ্রে তুমি ডাক দিলে
কপাট খোলোনা ভাই
আমরা মানুষ ফর্দ বানাই
আমাদের কি কি চাই |

খুদকুঁড়ো নয়, আনন্দঘন
চাই দুধ ভাত খেতে
বিশুদ্ধ জল, চাই বুকভরা
বাতাসের ঘ্রাণ নিতে |

এতো সম্ভার আয়োজন, তবু
লজ্জাটুকুই ঢাকা
আবরণ দিক নরম স্পর্শ
উজ্জলতায় মাখা |

ইঁটের পাঁজরে ওরা থাকে থাক
দূরে দূরে থাক পর
কেননা মানুষ, আমাদের চাই
দখিন দুয়ারী ঘর |

জীবন মধুর, আছে স্বাস্থের,
বাঁচবার অধিকার
প্রাণ নিয়ে কোন জুয়া খেলা
হোক চোপাট ছারখার |

আকাশে ফুটুক রামধনু রঙ
গাছে গাছে উচ্ছাস
কেননা মানুষ লিখে যাবে, জয়-
যাত্রার ইতিহাস |

.              *************** ২৯/০৯/২০০৫
*
ফাঁসি      

তোমার বিজ্ঞ ফরমান শুনে
আমি মনে মনে হাসি
চোদ্দ বছর বনবাস জ্বালা
আইন আদালতী নানা ছলাকলা
তবু রিরংশা মূল্য মেটাতে
আজ কার হবে ফাঁসি?

তোমাকে বলতে হবে
কেন্দা গেরামে
ডাইনি ঠাউরে
মনি মূর্মুকে
হত্যা করেছে যারা
তাদের ফাঁসিটা কবে?

না - না ছাড় নেই
পণের পীড়নে-দেবযানী আর
সুরূপা গুহর করুণ মরণে
আমরা অনেকে
হাজার হাজার গুহ-বনিকের
ফাঁসিটা চাই |

হোকনা পুরনো বাসি
সেই যে তরুণ সতেজ প্রবীর
সে জেন কি কথা বলতে চেয়েছে
একটি বুলেটে কার্জন-ঘাসে
যারা প্রবীরের রক্ত মেশালো
হবে তো তাদের ফাঁসি?

পারিনা, তবুও ভুলতে হবে
কিশোর প্রেমের অলকের কথা
বিক্ষোভ করে একদিন শুনি
সে গেছে জেলে ....
বন্দী শিবিরে যারা অলকের কলজে নিল
সেই খুনিদের ফাঁসিটা কবে?

শপথ করেছো দেবে না ফাঁকি
ভিক্টোরিয়ার চটকলে ছিল
লক্ষ্মীর বেটা জোয়ান ভিখারী
মনে আছে, নাকি ভুলে গেছো
ঘর থেকে ডেকে লোপাট করেছে যারা
সেই খুনিদের ফাঁসি আছে বাকি |

খেলার নেশায় যারা মাতোয়ারা
ফরাক্কা ভাঙ্গো গঙ্গা ভাঙন
গফুর-বাসনা ওদের ভাসিয়ে
রিলিফ রিলিফ হল্লা মাচিয়ে
ফি-বছর মাতে প্রবঞ্চকেরা
খুনীর শাস্তি পাবেতো তারা?

আজ সোচ্চারে বলতে হবে
চাঁইবাসা থেকে কোরাপুটে ঘুরে
পোড়া ছাই মাখা ভূপালের হাসি
অবহেলা অবলীলায় ছন্দে
খুন ক'রে - খুনি পয়দা করে
সে জল্লাদেরা ঝুলবে কবে?

শাক দিয়ে বুঝি মাছ ঢাকা যায়
অশোক কাননে গুটিকয় ডাকু
তাদের ঘরের প্রতি ইঁটে আর কড়ি বরগায়
হাতে-পায়ে-জিভে খুনের রক্ত
প্রতিক্ষায় প্রতিদিন আমি
ফাঁসি দিতে চাই তাদেরও গলায় |

.              *************** ০৬/০৮/২০০৪
*
আমার মৃত্যু হবে না      

শুধু চোখে চোখ রেখে নয়
মুখ মন অনুপুঙ্খ
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
দেখো চেয়ে চেনো কিনা
যমের অরুচি আমি অহল্যা পাষানী
আমাকে চিনবে ঠিক জানি!

নেহাৎ খেলার ছলে
একবার নয় বার বার
দেবতার অনুচর রাজা
বেইজ্জত করেছে আমাকে
বিবস্ত্র বিক্ষত আমি পাঞ্চালী বটে
ভয় ডর চিত্তে নেই মোটে |

ভুলে গেছো বোলোনা আমায়
বাতাসীর বন্ধু আমি পোয়াতি অহল্যা
হকের তেভাগা চাই
পেট চিরে ওরা নেয় ছেলে
রাজার জল্লাদ জমি রক্তে ভাসায়
আবার এসেছি ফিরে রক্ত ভেজা পায় |

বলছো বটে আমাকে চেনো না
রাজপথে মিছিলে দেখেছো
প্রীতিলতা প্রতিভা অমিয়া আমি
দেখো খুঁজে বুকের তলায়
নপুংসক দস্যুর বুলেটের ক্ষত
আমার স্পর্ধার কাছে শত্রু জানুনত |

মহা মহানগরীর নগ্ন শকুনেরা
প্রকাশ্য গোপন অঙ্গে
আগুনের ছ্যাঁকায় ছ্যাঁকায়
আমাকে পঙ্গু করেছিল
আমি তবু ঋজু অর্চনাই
আমায় চেনা নাচেনা তোমার বালাই |

হে রাম হে রাম কীট
আমার জরায়ূ ছিঁড়ে
ত্রিশূলে উপাঙ্গ গেঁথে
মুণ্ডু নিয়ে গেণ্ডুয়া খেলেছে
কওসর গীতাবেন তাও মরেনি
ভূত ভেবে ভয় পেলে কি?

দাউ দাউ আগুন জ্বলুক
দিগন্তে শঙ্কা ছুঁড়ে
বজ্র টেনে গাণ্ডীব বানাই
বাতাসে টাইফুন তুলে ফিরে ফিরে আসি
আমি মরি, স্পর্ধা মরে না
দস্যু না নির্বিষ হলে আমার মৃত্যু হবে না |

.              *************** ৩১/০৮/২০০২
                                                                        উপরে
                       সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়
                            সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায়
                                                                      উপরে
                     সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়
                          সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায়
                                                                    উপরে
                   সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়
                        সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায়
                                                                  উপরে
                 সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়
                      সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায়
                                                                উপরে
               সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়
                    সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায়
                                                              উপরে
             সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায়
                  সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায়