নবীন কিশোর, তোমায় দিলাম ভূবনডাঙার মেঘলা আকাশ তোমাকে দিলাম বোতামবিহীন ছেঁড়া শার্ট আর . ফুসফুস-ভরা হাসি দুপুর রৌদ্রে পায়ে পায়ে ঘোরা, রাত্রির মাঠে চিৎ হ'য়ে শুয়ে থাকা এসব এখন তোমারই, তোমার হাত ভ'রে নাও আমার অবেলা . আমার দুঃখবিহীন দুঃখ ক্রোধ শিহরণ নবীন কিশোর, তোমাকে দিলাম আমার যা-কিছু ছুল আভরণ জ্বলন্ত বুকে কফির চুমুক, সিগারেট চুরি, জানালার পাশে . বালিকার প্রতি বারবার ভুল পরুষ বাক্য, কবিতার কাছে হাঁটু মুড়ে বসা, ছুরির ঝলক অভিমানে মানুষ কিংবা মানুষের মত আর যা-কিছুর . বুক চিরে দেখা আত্মহনন, শহরের পিঠ তোলপাড় করা অহংকারের দ্রুত পদপাত একখানা নদী, দু'তিনটে দেশ, কয়েকটি নারী --- এ-সবই আমার পুরোনো পোষাক, বড় প্রিয় ছিল, এখন শরীরে আঁট হয়ে বসে, মানায় না আর তোমাকে দিলাম, নবীন কিশোর, ইচ্ছে হয় তো অঙ্গে জড়াও অথবা ঘৃণায় দূরে ফেলে দাও, যা খুশি তোমার তোমাকে আমার তোমার বয়সী সব কিছু দিতে বড় সাধ হয় |
এই কবিতার জন্য আর কেউ নেই, শুধু তুমি, নীরা এ কবিতার মধ্যরাত্রে তোমার নিভৃত মুখ লক্ষ্য করে
ঘুমের ভিতরে তুমি আচমকা জেগে উঠে টিপয়ের থেকে জল খেতে গিয়ে জিভ কামড়ে এক মুহুর্ত ভাববে কে তোমায় মনে করছে এত রাত্রে --- তখন আমার এই কবিতার প্রতিটি লাইন শব্দ অক্ষর কমা ড্যাশ রেফ ও রয়ের ফুটকি সমেত ছুটে যাচ্ছে তোমার দিকে, তোমার আধো ঘুমন্ত নরম মুখের চারপাশে এলোমেলো চুলে ও বিছানায় আমার নিঃশ্বাসের মতো নিঃশব্দ এই শব্দগুলো এই কবিতার প্রত্যেকটি অক্ষর গুণিনের বাণের মতো শুধু তোমার জন্য, এরা শুধু তোমাকে বিদ্ধ করতে জানে
তুমি ভয় পেয়ো না, তুমি ঘুমোও, আমি বহু দূরে আছি আমার ভযংকর হাত তোমাকে ছোঁবে না, এই মধ্যরাত্রে আমার অসম্ভব জেগে ওঠা, উষ্ণতা, তীব্র আকাঙ্খা ও চাপা আর্তরব তোমাকে ভয় দেখাবে না --- আমার সম্পূর্ণ আবেগ শুধু মোমবাতির আলোর মতো ভদ্র হিম, . শব্দ ও অক্ষরের কবিতায় তোমার শিয়রের কাছে যাবে --- এরা তোমাকে চুম্বন করলে তুমি টের পাবে না, এরা তোমার সঙ্গে সারা রাত শুয়ে থাকবে এক বিছানায় --- তুমি জেগে উঠবে না, সকালবেলা তোমার পায়ের কাছে মরা প্রজাপতির মতো লুটোবে | এদের আত্মা মিশে থাকবে তোমার শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে, চিরজীবনের মতো
বহুদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলে ঝর্নার জলের মতো হেসে উঠবে, কিছুই না জেনে | নীরা, আমি তোমার অমন সুন্দর মুখে বাঁকা টিপের দিকে চেয়ে থাকবো | আমি অন্য কথা বালার সময় তোমার প্রস্ফুটিত মুখখানি আদর করবো মনে-মনে ঘর ভর্তি লোকের মধ্যেও আমি তোমার দিকে . নিজস্ব চোখে তাকাবো | তুমি জানতে পারবে না --- তোমার সম্পূর্ণ শরীরে মিশে আছে | আমার একটি অতি ব্যক্তিগত কবিতার প্রতিটি শব্দের আত্মা |
সেপাই এসে যে দাঁড়ালো রাজা বললেন, সেলাম! সেপাই বললো, হঠাৎ যেন বিড়ির গন্ধ পেলাম ? রাজা বললেন রামো রামো বিড়ি তো নয় মুলো। সেপাই বললো, গোঁফের ডগায় জমছে কেন ধুলো ? রাজা বললেন, কমলা-আপেল আনবো কয়েক ঝুড়ি ? সেপাই বললো, কোথায় আমার পেঁয়াজ-লঙ্কা-মুড়ি ? রাজা বললেন, বসুন আগে এই যে সিংহাসন। সেপাই বললো, নোংরা ওটা মাছিতে ভনভন। রাজা বললেন, মাছি কোথায় ওগুলো সব পাখি, সেপাই বললো, কাজে কম্মে দিচ্ছখুবই ফাঁকি! রাজা বললেন, নাচার হুজুর দেখাচ্ছি পা তুলে, কত বড় ফোস্কা, আমার জুতো দিন না খুলে!
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল . শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভুক অমাবস্যা এসে চলে গেল কিন্তু সেই বোষ্টুমি . আর এলো না
. পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি | মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলি বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর . তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো . সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর . খেলা করে ! নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ . ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় . তিনপ্রহরের বিল দেখাবে ?
একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা ভিখারির মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি . ভিতরে রাস-উৎসব অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ-পরা ফর্সা রমণীরা . কত রকম আমোদে হেসেছে . আমার দিকে ফিরেও চায়নি ! বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন আমরাও---- বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উত্সব . আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না !
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল, যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে . সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে ! ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড় বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ . এখনো সে যে-কোনো নারী ! কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশবছর কাটলো, কেউ কথা রাখে না !