কবি তাপস দত্ তো-র কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
প্রাইভেট টিউটর

হয়তো সেদিন পাঁচটি বর্ষার অতীত কোন বিষ্যুদবার
একখন্ড মেঘের ভিতর বসে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়ছেন মাসিমা----
.                                        দোল পূর্ণিমা নিশি নির্মল আকাশ-----


ওদিকে ছোট মেয়েটি ভূগোলে বিজ্ঞানে উতরে চলেছে মাধ্যমিক
চৌকাঠে বুড়ো বাবা কাশতে কাশতে যেন কিসব বকে চলেছেন
ঠিক বোঝা যায় না ------ পাশেই একটানা লেদ মেশিনের গর্জন
আর ঝুঁকে পড়া টিনের চালে মাধবীলতা’র ঘ্রাণ-----
.                                                টুপটুপ বৃষ্টির ফোঁটা


এইসব রোমান্টিকতাসহ কিছু কঠিন গণিতে ঘেরা ছিল সেই বাড়ি
তুমি যার প্রাইভেট-টিউটর,
সপ্তাহে দু’দিন করে দু’খানা সন্ধেবেলা সেই ঝাঁকড়া জবার গোড়ায়
কি অদ্ভুত থমকে দাঁড়াতে বলো !

আজও থমকে আছে প্রাচীন গুল্মের মত মাম্পাদের স্থিতিশীল বেড়ার বাড়ি

দীর্ঘদিন পর বেড়াতে এসে তুমি নিজেই ফেল করে গেলে
ভূত দেখে চমকে উঠলে ভবিষ্যতের ভিতর
হে, আমার প্রাইভেট টিউটর !




.                ****************                                                                    
উপরে     


মিলনসাগর
*
কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়

এসো শীত------ টমেটোর গালের রঙে এসো |

দ্যাখো,   পৌষের সার্কাস লাগে যাবতীয় টেরিটি বাজারে :

ঝাঁক ঝাঁক রাঙা মুলো আর উজ্জল শোলের খেলা
মাঝে মধ্যে অমায়িক ফুলকপি হেসে বলে---------
.                                   বাবু দেখলে হবে ! খরচা আছে

না------থাক্ | আজ তো কিনেছি ঝাঁকা কৈ
.                                  আর স্তনের বোঁটার মত বড়ি
.                                   এতেই জমবে ভারী

হে পৌষের বাজার         হে হেমন্তের বাজার
তুমি তেমন স্বপ্ন নও,  উদ্যম নও
.                           নও কোনো সবুজ বিপ্লব-----

তবু উষ্ণ অনুমেয় তুমি এই বারমুডা-পরা কলোনী বাজারে |


.                ****************                                                                    
উপরে    



মিলনসাগর
*
পন্ডিত--স্যার

সেদিন একা একাই অখাদ্য কুখাদ্যে মেতেছি | হঠাৎ দেখি
.    পন্ডিত-স্যার | শেষ মেষ আপনিও সংস্কৃত ছেড়ে
.          বাংলার দলে | কবে এলেন , কীভাবে এলেন ?
.               কোথায় গেল ধাতু-রূপ, শব্দ-রূপ ?
.                    কে দিয়েছে যাতনা | আপনার তো
.                        কোনদিন বাড়তি আকাশ
.                              ছিল না মাথার ‘পরে
.                                              তবে
এসেই যখন পড়েছেন, আরেক বার বলুন--- ‘নর’ ---শব্দের
.    প্রথম পুরুষের বহুবচন রূপ | নইলে কাঠপেন্সিল
.        পুরে দেবো আঙুল দু’আঙুলের ফাঁকে
.             আর আপনি যন্ত্রণায় চিত্কার
.                 করতে করতে বলে উঠবেন----
.                   ‘ আরেক গ্লাস----আরেক গ্লাস’
জাম গাছের পিছনে তখন একফালি কৃপণ আকাশ হাসছে কেবলি হাসছে----


.                ****************                                                                    
উপরে    



মিলনসাগর
*
দৃশ্  

জীবনের একটি জন্নত--রূপে
তোমাকে ঠোঁটের তিলের ওপর রাখলাম
.                      এই দুরন্ত--দুপুরের ক্লাসরুমে


দেখে  দৌড়ে  এল  দমকল
.                        হাতে মই, কাঁধে দড়ি-----
চতুর্দিকে তখন স্কুল-ছুটির ঘন্টা বাজছে
.                        যেন মাধবীলতা ফুটছে বিকেলের



রুমাল  উড়িয়ে  ছুটে আসছে
.                        রোমহর্ষ কিশোরের দল
তাদের পায়ের নিচের ঘাসে জ্বলে উঠ্ ছে আগুন
চিরন্তন জঙ্গলে মন্দ্রিত হচ্ছে ঢাকের পর ঢাক
.                         চলমান  অশরীরী’ র ভাষা-----



আর এ সমস্ত  ধাতু ও ক্রিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে
শিখা--কম্পিত সেই সংস্কৃত  স্যারের
অমোঘ শ্লোক-------কালে  বর্ষতুঃপর্জন্য পৃথিবী শস্যশালিনী |

.                ****************                                                                    
উপরে    



মিলনসাগর
*
ফসল বিলাসী হাওয়া

ছেলেটি এখনও অফিস-ফেরত ক্রন্দনরত দেবদারুটির
.                                                        কথা ভাবে
আহিরিটোলার গঙ্গার বুকে ঝুঁকে পড়ে
.                                  মন্দির বিদীর্ণ করা বটের ছায়া
সামনেই ভিড়-ভারাক্রান্ত জেটি
.                             পিছনে পাটকল ----চটকল লাঞ্ছিত চাঁদ
একটু এগোতেই বাসস্ট্যান্ড
.          অকপট অথচ অস্থির সব দোকানপাট---
.                   নিকানো কাচের উঠোনে
.                      থরে, বিথরে, সাজানো জ্যামিতির বার্বিডল
শরীর ও মনের ব্যঞ্জনা ছড়িয়ে সে বলছে----
.                         ‘আমি ছিলাম, আছি এবং থাকব |’

সহসা দিগন্ত কাঁপিয়ে এম.ভি.হর্ষবর্ধনের হুইসেল বাজে
সুভান আল্লাহ্ |    ছেলেটির এখনও মিহি-ফাইল নাড়তে নাড়তে
ক্রন্দনশীলা দেবতরুটির কথা ভাবে
আর সমস্ত টেবিল অন্ধকার করে তখন
.                        একটি সন্ধ্যা নামে, একটি খুদের ভিতর
টলে ওঠে মহী


.                ****************                                                                    
উপরে    



মিলনসাগর
*
স্টাফ রিপোর্ট

ঝরা পাতার দিন | ভারী মর্মর ধ্বনি-----

ভাবছি-----জঙ্গলে কোথাও বেড়াতে যাব

সৌন্দর্য-নিন্দিত কাঁকরাঝোরের কথা মনে পড়ে

মনে পড়ে----বাবু ঘাসের রস-নিষ্কাশনের রসায়নের মধ্যেও
একদিন শাবকের নিরাপত্তা ছিল শালের কোটরে ;
ঝোরার বালির গভীর ক্ষত থেকে খুঁড়ে তোলা
.                                             জলের ছায়ায়
.                                             টলটল করে উঠত
.                                   কুমারী-সম্ভবা কন্যার মুখ----
আর আমরা বান্ধবীর গলায়---প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে
মোরে আরও আরও আলো, আরও দাও প্রাণ ----শুনতে শুনতে
পেরিয়ে যেতাম  ভ্রমণের রেখা

সন্ধ্যায় মহুয়া আসত | মাদলের গন্ধে গন্ধে
পূর্ণিমার দেবতারাও নেমে পড়তেন
.                                আমলাশোলের পথে---বিপথে---

এখন গুলির শব্দে সন্ধ্যা নামে ঘরে ঘরে
এখন মৃত্যুর হরফ নিয়ে সূর্য ওঠে জঙ্গলের মাথায় |


.                ****************                                                                    
উপরে    



মিলনসাগর