কবি কৃষ্ণা বসু কবিতা
www.milansagar.com
*
কে কে তোর মাথার মালিক--- ?
অন্নচিন্তা ?  রতিসুখ ?  নাকি খ্যাতির অদ্ভুত পাখি
শুধু উড়ে উড়ে যায়, কখনো বসে না দাঁড়ে স্থির
সেও নয় মাথার মালিক ?
কে তবে ছড়িয়ে দিয়ে দুই ঠ্যাং পাঁচিলের পরে
কিশোরীর আচাক খাওয়ার মতো চাকুম চুকুম
তোর মাথাকে খেয়েছে ?
কেউ না, কেউ না, না শিল্প না সংসার
না শিশু, না শুশ্রূষামায়া না অন্নচিন্তা, রতিসুখ,
খ্যাতির দূরন্ত মদ, কেউ না, কেউ না, তারা সব
অতিথি সজ্জন হয়ে ক’মুহূর্ত বাস করে ফিরে চলে গেছে,
ক্ষণিক আবাসী এরা, ঘরের মালিক নয় কেউ |
ঘরের মালিক তবে অমাবস্যা রাত্রিটির শ্মশান-শূন্যতা ?
তোর মাথার মালিক হল হুহু মৃত্যু হিম হাওয়া ?
কে তোমার মাথার মালিক ? এই প্রশ্নে বারে বারে
দুলে ওঠে মধ্যরাত, দুলে ওঠে অস্তিত্ব আমূল,
হাওয়া ঝাপটা দেয় হা হা ;
অন্ধকার ঢুকে যায় আরো ঘোর অন্তিম আঁধারে |

.              ************************     
.                                                                                           
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
ছুটির দিনটি মাখে আলস্যে আরামে |

শুধু পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বাড়ি বাড়ি
বাসন মাজার কাজে ছুটি নেই ওর,
ওর কোনো ধর্মঘট নেই, সভা নেই,
বোনাস ও ইনক্রিমেন্টের জন্য কর্মবিরতি নেই |

দুইবেলা তিনশত পয়ষট্টি দিন
বাড়ি বাড়ি এঁটো কাটা বাসনের স্তুপ
কলঘরে নর্দমার পাশে অদ্ভুত জীবন
ওর শুধু বয়ে যায়---

.         ************************     
.                                                                                           
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
যখন কিছুতে তোমাকে সম্পূর্ণ দমানো যাচ্ছে না
ঠিক সে সময় ইতর নিষ্ঠুর প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সুসভ্যতা,
যে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দায় কোনো মতে নেই তো তোমার,
‘কী তোর পিতার নাম ? কী নাম বাপের তোর, বল ?’
পক্ষপাত দুষ্ট দ্রোণ আচার্য প্রধান, ব্রহ্মাস্ত্র দেয়নি তোকে ;
মহেন্দ্র পর্বতে গিয়ে ব্রাহ্মণ বালক সেজে তাই
পরশুরামের কাছে সেই বিদ্যা ভিক্ষা করেছিলে ?
‘সব শিক্ষা ব্যর্থ হবে’ --- এই শাপ বার হয় শিক্ষকের মুখে ?
বজ্রকীট দংশনের তীব্র জ্বালা সহ্য করে চুপ করে হতভাগ্য যুবা ;
আপন পুত্রের জন্য ইন্দ্র ভিক্ষাছলে
চুরি করে নিয়ে যায়
তোর সহজাত কবচকুন্ডল, প্রাণের নিশ্চয় ;
পিতামহ ব্রহ্মচারী ভীষ্ম তোকে ‘অর্ধরথী’ বলে ব্যঙ্গ করে ;
ভীষ্ম মরে গেলে দ্রোণের অধীনে তুমি যুদ্ধ করো,
চতুর্দিকে কেঁপে ওঠে তোমার প্রবল পরাক্রমে,
ত্রয়োদশদিনে করো অভিমন্যু-বধ, সে খুব লজ্জার কথা,
ষোড়শ বর্ষের যোদ্ধা তাকে মেরে ফেলো সাত রথী,
তুমি তার অন্যতম ছিলে, কিন্তু সমস্ত জীবন ধরে, বলো,
সহস্র রথীর মার কে খেয়েছে ? তুমি ছাড়া, শুধু তুমি ছাড়া ?
মহাকাব্যের নায়ক এসে বলে যায় যুদ্ধের সমীপ লগ্নে
তোর জন্মকথা ; ইন্দ্র এসে চুরি করে নিয়ে যায় কবচকুন্ডল !
--- এসবের মার সমস্ত জীবন ধরে সযে যাও |
ষোড়শ দিবসে সেনাপতি হও মহাসমরের, সপ্তদশ দিনে
তোমার রথের চাকা মেদিনী কামড়ে ধরে, এগোতে দেয় না |
পিতাদের তৈরি করা ভুল পৃথিবীতে, এই সামন্ত সমাজে
যোগ্যতার চেয়ে বড় জন্মপরিচয় !
তোমার আপন ভাই, সহোদর, অঞ্জলিক বাণে
এ-ফোড় ও-ফোড় করে রক্তাক্ত তোমাকে,
মার খাও, মরে যাও, সমস্ত জীবন ধরে শুধু মার খাও,
পৃথার প্রথম পুত্র মার খাও জীবনের হাতে,
অযুত নিযুত কোটি ভুলে ভরা সমাজের হাতে ;
এক লক্ষ দশ হাজার শ্লোক গড়িয়ে গড়িয়ে নামে শোক |
তোমার চোখের জল আর তোমার রক্তের স্রোতে
ভরে যায়, ভেসে যায় ব্যাসের কলম !

.         ************************     
.                                                                                           
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
কে তোমার মাথার মালিক?
কৃষ্ণা বসু
    
ধর্মঘট
কৃষ্ণা বসু
 
কর্ণ
কৃষ্ণা বসু