কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কবিতা
নিন্দুক
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

পর দোষ তোমার নিকটে যেই কয়,
বলে সে তোমার দোষ অপরে নিশ্চয়।

.           ***********************                                            
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
দুঃখ বিনা সুখ হয় না
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

কি কারণ, দীন! তব মলিন বদন ?
যতন করহ লাভ হইবে রতন।
কেন পান্থ! ক্ষান্ত হও হেরে দীর্ঘ পথ ?
উদ্যম বিহনে কার পূরে মনোরথ ?
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে ?
মনে ভেবে বিষম-ইন্দ্রিয়-রিপু-ভয়,
হাফেজ! বিমুখ কেন করিতে প্রণয় ?

.           ***********************                                            
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
যেমন কর্ম তেমন ফল
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

দেখি এই চরাচরে,                যে যেমন কর্ম করে,
তেমন সে ফল তার পায়।
যে চাষা আলস্যভরে,                বীজ না বপন করে,
পক্ক শস্য পাবে সে কোথায় ?
যদ্যপি শকতি থাকে,                পড়িতে দেখহ যাকে
হাত ধরে তুল তুল তারে ;
নতুবা তুমি যে কালে,                পতিত হবে সে হালে
কে তখন তুলিবে তোমারে ?
যদি তুমি অহে ধীর,                দুঃখিতের অশ্রু-নীর,
নিজ করে না কর মোচন ;
তব অশ্রু নিরখিয়া,                দুঃখী হবে কার হিয়া,
কে তাহা করিবে নিবারণ ?

.                                            ***********************                            
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
অধীনতা
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

কোটকল্প নরকের বাস ইচ্ছা হয়,
পলকের অধীনতা তবু প্রিয় নয়।
অধীনতা-পাশে বাঁধা যাদের চরণ,
কে আর অসুখী বল তাদের মতন ?
থাকে থাক গৃহ পূর্ণ বিবিধ রতনে,
অধীন যে জন তার সুখ কোথা মনে ?
খায় খাক নানাবিধ খাদ্য পরিকর,
সে কেমনে সুখ পাবে অধীন যে নর ?
স্বাধীনের ক্ষুদ্রতর কুটীর ভিতরে,
যেইরূপ নিরমল আনন্দ বিহরে,
অধীনের মনোহর সুচারু আলয়,
তেমন আনন্দময় নয় নয় নয়।
স্বাধীন শাকান্নে পায় তৃপ্তি-সুখ যত,
অধীন পলান্নে সুখ কোথা পাবে তত ?
স্বাধীনের যত সুখ মাটির শয্যায়,
অধীনের স্বর্ণ খাটে সে সুখ কোথায় ?
বল্কলে আনন্দ যত স্বাধীনের মনে,
অধীনের কোথা তত বিচিত্র বসনে ?
অই যে করিছে চাষা ভূমি করষণ,
সহিতেছে খরতর-তপন কিরণ,
তনু বেয়ে ঝর ঝর বহিতেছে জল,
শুকায়েছে পরিশ্রমে বদনমণ্ডল ;
যত সুখাকর এর স্বাধীন অন্তর,
অধীনের সে সুখ স্বপ্নের অগোচর।
কর্ম কাজ শেষ করি সারাদিন পরে,
ধীরে ধীরে যখন গমন করে ঘরে,
স্নেহময় পরিজন করি দরশন,
মরি কি বিমল সুখে পশে এর মন ;
নিরখিয়া তনয়ের মুখ-শশধরে,
উথলে কি সুখসিন্ধু হৃদয় ভিতরে ;
পতিপ্রাণা প্রেয়সীর প্রিয় সম্ভাষণ,
অহো! এর মন করে প্রফুল্ল কেমন ;
দুখকর অধীনতা-পাশে বাঁধা যারা,
এমন বিশুদ্ধ শুখ কোথা পাবে তারা ?
হায় রে! যে প্রকৃতির মূরতি মোহন,
শোকাতুর জনের প্রফুল্ল করে মন,
সে প্রকৃতি অধীনের চিন্তিত হৃদয়,
পুলকিত করিতে সক্ষম কভু নয়।
বাস করি চিরদিন সুখের মহীতে,
অধীন সুখের স্বাদ না পারে বুঝিতে।
সুধা-সিন্ধু-বাসী মান বঞ্চিত সুধায়,
সামান্য আক্ষেপ একি হায় হায় হায়!
পরমেশ প্রয়োজন সাধনের তরে,
দিয়াছেন বিবিধ ইন্দ্রিয় সব নরে ;
কিন্তু হায়! এ জগতে অধীন যে জন,
তাহার ইন্দ্রিয় নয় তাহার কখন।
সাধিতেছে সদা তায় প্রভু প্রয়োজন ;
হায় রে অধীন! তোর কপাল কেমন।
কত কাল সবে আর এ যাতনা ?
অই দেখ পিঞ্জর-নিবাসী পাখীগণ,
কাননে উড়িয়া যেতে চঞ্চল কেমন ;
ঘুরে ঘুরে করিছে পথের অন্বেষণ,
চঞ্চুপুটে কাটিতেছে খাঁচার বন্ধন।
তুমি কেন আপন শৃঙ্খল, কও কও,
মোচন করিতে কিছু সমুত্সুক নও ?
বনের পাখীর কাছে যাহা সুখময়,
তোমার কি প্রিয় সেই স্বাধীনতা নয় ?
কত দুখ অধীনতা দিতেছে তোমারে,
তবু কেন এত তুমি ভালবাস তারে ?
আছে কত স্বাধীন ব্যবসা সুখময়,
কর না কর না কেন সে সব আশ্রয় ?
অথবা বিজন বনে করহ গমন,
ফল মূলে কর পোড়া উদর পূরণ,
পিপাসা বারণ কর উনুইর জলে,
যামিনী যাপন কর বসি তরুতলে ;
তথাপি রেখনা পায় অধীনতা পাশ,
তার চেয়ে শত গুণে ভাল বনবাস।

.           ***********************                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
বাগাড়ম্বর
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

যেরূপ করিবে কাজ কর্য্যেতে দেখাও,
বৃথা গর্ব্বে কেন তাহা কহিয়া বেড়াও ?
না পার করিতে যদি কর যাহা গান,
কোথায় পাইবে লজ্জা রাখিবার স্থান ?

.           ***********************                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
রোগ প্রতিকার
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

যখন যে রোগে, মন দেহ অধিকার
করে, কর যতন তখনি নাশে তার।
নতুবা সে রোগ শেষে নিশ্চয় জানিবে,
নিবারণ করা অতি কঠিন হইবে।
অঙ্কুরে উন্মূলন সহজ যেমন,
নয় নয় বদ্ধমূল বৃক্ষের তেমন।

.        ***********************                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
বাগ্মিতা ও রসনা-শাসন
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

বলার সময়,                কিছু নাহি কয়,
অথচ অকালে নিনাদে যে,
মূর্খ সে নিশ্চয়,                সুধী যেই হয়,
যথাকালে বলে, নীরবে সে।

.                                             ***********************                             
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
অপব্যয়ের ফল
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

যে জন দিবসে,                মনের হরষে
জ্বালায় মোমের বাতি ;
আশু গৃহে তার                দেখিবে না আর,
নিশিথে প্রদীপ ভাতি।

.                                             ***********************                             
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
চিন্তা করিয়া কথা বলা উচিত
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

যে কথা বলিবে,                ভাবিয়া দেখিবে,
আগে ভাগে দোষগুণাদি তার ;
কহিনু কি সব,                না ভেবে“কি কব ?”
এ ভাবনা ভাব সহস্রবার।

.                                             ***********************                             
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
সাধু ও নীচ
(সদ্ভাব শতক কাব্যগ্রন্থ থেকে)
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

ঘটে যদি সাধুর দীনতা অতিশয়,
আদর গৌরব তাঁর কমিবার নয়।
নীচে যদি ধনী হয় কুবের সমান,
বাড়ে না কখন তার গৌরব সম্মান।
পড়েছে যে মহামণি পঙ্কের ভিতরে,
বল তারে, কোন্ জন অনাদর করে ?
বায়ুত্থিত আকাশের ভস্ম সমুদয়,
বল বল কার কাছে মাননীয় হয় ?

.                                             ***********************                             
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর