দড়ি-দড়া-ঝুড়ি টিন-বাঁশ-তাঁবু-পেটরায়, ডুগ্ ডুগি-খঞ্জনি-ঢোলকের ঢেঁটরায়, বন-মানুষের হাড়, মরা শকুনের আঁত, সাদা বাদুড়ের ডানা, শাখামুঠি-বিশদাঁত, শ্মশানের পোড়ামাটি, শিকড়ের ঝুলি আর,--- পথে পথে চলে ওরা, নিয়ে বেদে-সংসার ; দল বেঁধে থাকে সব, যেথা যায় প্রাণ চায়, মেয়েগুলো ঘোরে ফেরে রঙদার ঘাঘরায়।
কুকুর ছাগল হাঁস মুরগীও সাথী তাই, বাঁকে ঝোলে হাঁড়িকুঁড়ি, তাঁবু গাড়ে সব ঠাঁই ; ঝাড়ফুঁক তুক্ তাক্ জানে ভানুমতী-খেল, আছে কুমীরের দাঁত, ধনাই পাখির তেল, হাত দেখে বলে দেয়---কোথা যশ, অপযশ,--- মনের মানুষ টানে শিকড়েতে করি বশ ; ঘরভাঙা, ঘরবাঁধা মারণ ও উচাটন, সবকিছু জানে ওরা যখন যা প্রয়োজন ; ট্যারা-চোখো বুড়ো বেদে, ঝানু বুড়ী বউ তার, মিটিমিটি হাসে শুধু খুক্ খুক্ কাশে আর!
মেঘ-কালো আকাশের নীচে বসে গালে-হাত, ঘুমহারা চোখে বুড়ী কি যে ভাবে সারারাত, কত গ্রাম দেখেছে সে, কত গিরি, নদীপথ, কত বন, কত মরু, সাগরের সৈকত ; জানে না সে পথচলা কবে তার হবে শেষ, মরণের শেষ-ঘুমে ডেকে নেবে কোন্ দেশ! যে মাটিতে কিছুদিন ওরা এসে বাঁধে ঘর, সে মাটির মায়া যেন ভরে থাকে অন্তর। তবু ছেড়ে যেতে হবে,---যাযাবর ওরা, তাই--- চল-পথে দেখে নেবে পৃথিবীর শেষটাই!