কবি কৃষ্ণকামিনী দাসীর কবিতা
*
দয়া ছাড়া ধর্ম্মবল আছে কোনখানে
কৃষ্ণকামিনী দাসী

পুরুষ :
ঘোর রজনীতে তুমি কাহার কামিনী
কিসের লাগিয়া ভ্রমিতেছ একাকিনী।
বয়সে নবীন অতি রূপ মনোহর
আছ রঙ্গে নাহি সঙ্গে সঙ্গিনী অপর।
কি নাম কাহার কন্যা বল রসবতি
অপ্সরী কিন্নরী কিম্বা হবে দেবজ্যোতি।

কামিনী :
আমি হে রমনী                আছি একাকিনী
.        কুলের কামিনী তায়।
তুমি হে এখানে,                কিসের কারণে,
.        বল ওহে যুবরায়।
একি তব রীত                হেরি বিপরীত
.        নাহি চিত্তে কিছু ভয়।
রমণীর পাশে                এলে অনায়াসে
.        কিরূপেতে মহাশয়।
আলাপ করিতে                বাসনা মনেতে
.        নাহি ভাব তাহে লাজ।
আমি নারী জেতে        তোমার সহিতে
.        পরিচয় কিবা কাজ।

পুরুষ :
দেবগণ মধ্যে হয় আমার বসতি।
ধর্ম্মনামে খ্যাত আমি শুন রসবতি॥
তাদের শরীরে করি সতত ভ্রমণ।
সমাদরে যারা করে আমার সাধন॥
মর্ত্ত্যলোকে সেই হেতু আমার বসতি।
আপন বৃত্তান্ত ধনি কহ লো সম্প্রতি॥

কামিনী :
প্রবৃত্তির কন্যা আমি দয়া নামে খ্যাত।
শ্রদ্ধা নামে ভগ্নী মম জগতে বিখ্যাত॥
মর্ত্ত্যলোকে মহাত্মাগণের অন্তরেতে।
নিবাস আমার তাই ভ্রমি হেন মতে॥
সুরগণ শ্রেষ্ঠ তুমি ধর্ম্ম মহামতি।
এরূপ ব্যাভার কেন অবলার প্রতি॥
তোমার উচিত কভু না হয় এমন।
ছাড় ছাড় পথ করি স্বস্থানে গমন॥

পুরুষ :
দয়া ছাড়া ধর্ম্মবল আছে কোনখানে।
যেখানেতে দয়া দেখ ধর্ম্ম সেইখানে॥
অতএব কেন কর এমন ভাবনা।
দয়া ছাড়া ধর্ম্ম প্রিয় কখন হবে না॥
দয়াহীনে ধর্ম্মের নাহিক হয় গতি।
দয়া ধর্ম্ম দুয়ে হয় একাধারে স্থিতি॥

কামিনী :
শপথ করিতে যদি পার মহাশয়।
তবে যে আমার ইথে হইবে প্রত্যয়॥
যেখানেতে রব আমি সেইখানে রবে।
তিলেক তিলার্দ্ধ নাহি ছাড়াছাড়ি হবে॥
তুমি ধর্ম্মরাজ হও সত্যের আশ্রয়।
ত্রিসত্য করিলে পরে ঘুচিবে সংশয়॥
দুইজনে সত্যবদ্ধ করি হেন মতে।
পারিজাত হার ছিল দোঁহার সনেতে॥
আপন আপন করে লইয়ে আপনি।
উভয়ে উভয় গলে করিল অর্পণ॥

..................................................................

হেনকালে আচম্বিতে নিদ্রা ভঙ্গ হল।
কিছু নাহি জানিলাম পরে কি ঘটিল॥

.        *************************      
.                                                                                   
সূচিতে . . .      



মিলনসাগর