নাম কবি কৃষ্ণকুসুম পাল ‘কৃষ্ণকুসুমের রস কষ’ ছড়ার বই থেকে নেওয়া
দারোগা রোগা নয়, ডাক্তার তার নয়, ইস্কুল কুল নয়, ভীমরূল ভীম নয়, নামের দাম নেই, নামে হয় ভূল, তবু মানুষ নামে, ধামেই মশগুল, যদিও মানুষের মান ও হুঁশ দুইই হয় |
উপেন, তোকে ভীষণ মনে পড়ে, তখন আকাশে রামধনু এঁকে তোকে ডাকি, উপেন, তুই এই সাঁকো দিয়ে চলে আয়, বুঝিনা, পারাপারের কোন সাঁকো নেই কেন | তারপর বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকি—বৃষ্টি হলে, তুই বৃষ্টির সাথে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলে, কেঁদে কেঁদে বিরহ জুড়াবো |
প্রতিদিন খুনের খবর কাগজে বেরোয়, প্রতিদিন ধর্ষণের খবর কাগজে বেরোয়, প্রতিদিন প্রেমে আত্মঘাতীর খবর আগজে বেরোয়, আর আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামে, আকাশে যদি তোদের সকলের নাম লেখা হতো, জায়গা হতো না, -আকাশে যদি তোদের সকলের নাম -- আকাশ এতো ছোটো কেন ?
তোদের নামগুলি বাতাসে ভেসে বেড়ায়.—কানে বাজে, পাখীগুলো তোদের নাম মনে রাখে, মুখে উচ্চারণ করে, হকার খবরের কাগজগুলো সংরক্ষণ করে, অসভ্যতার বিশ্বায়নে আমরা তৈরী করেছি উথ্বাল নরক, তোদের নিয়ে এসে মিছিল করবো, আন্দোলন করবো ভাবি , বুঝি না, পারাপারের জন্য কোনো সাঁকো নেই কেন |
আর কত প্রেমে জড়ালে প্রেম খুঁজে পাবো, আর ক’টা মেয়ে ফাঁকি দিলে, প্রেমের ফাঁদে কাঁদবো, যেখানে গোলেমালে প্রেম চলে আমি সে গলিতে থাকি, সকলের প্রেম দেখে দেখে ছানাবড়া চোখ,
সকলে প্রেমে হাবুডুবু খায়, তবু বলে প্রেম কবিদের রোগ, কবিরা প্রেমের কবিতা লেখে আর সকলে চেটেপুটে খায়, প্রেমের বাজার ভালো, বাঁচতে হলে প্রেম করো ভুবন পাড়ায় | গলিপথে সুপতার সাথে দেখা হল একদিন, জানিনা কে, দত্ত, দাস, পাল, সাহা কি সরকার, তাকে বলি, তোমার সাথে আমার ভীষণ দরকার, তুমি কি জানো, মানুষ মন ছাড়া আর কি চায় ত্রিভুবনে ? এ-গলিতে সকলে স্বপ্নে ভেসে যায় সঙ্গোপনে |
আমার কথা বুঝবো আমি আর যেন কেউ না বোঝে, আকাশ থেকে সব চাঁদ, সূর্য, তারা, পড়ছে খসে, ভীষণ বিপদ সকলে লুকিয়ে আছে যে যার ঘরে, সাগর পাড়ে শেয়াল, শকুন, উল্লাসে নৃত্য করে, আকাশ, বাতাস হাসছে সুমধুর কুটিল হাসি, প্রেমের নেশায় আমারা দু’জন দেহ, মনে ভালবাসি, কাঁপছে আকাশ, ছুটছে বাতাস, দুলছে পাহাড়, উঁচু টিলা, ভাবছে সবে, মরবো তবে, গল্প, গাঁথায় গোপন লীলা, যে যার যেমন বাঁচবে বাঁচুক, তুমি, আমি দু’টি শামুক, গোপন প্রেমে হাবুডুবু, খাবি খাচ্ছি দু’টি কামুক |
ভিক্ষে করিস্ না মেয়ে- ভিক্ষে করে বাঁচা যায় না | কারো কাছে পাওয়ার আশা করিস্ না, পেলে দিতে হয়, সেও এক বেচা কেনা, কেউ অযাচিত দিতে চাইলেও নিস্ না মেয়ে সে এক অলিখিত বিনাসুদে ঋণ, হাতে, পায়ে, গায়ে খেটে বাঁচতে হয়, যাকে যা দেয়ার নিঃশর্ত দিতে হয়, বাকী কিছু নেই যেন, ফাঁকি কিছু নেই, কথা কিছু নেই যেন, কোথাও কোন ব্যথা নেই, প্রেম এক মরণ, জীবনের গোপন বিনিময়, বেঁচে থাকলে- প্রেম থাকে না প্রেম, প্রেম পরাজয়, প্রেম নিঃশর্ত আত্মবলিদান --তিলে তিলে ক্ষয়, প্রেম করিস্ না মেয়ে, নিজের জন্য থাকে না সময় |
চিনি সুমিষ্ট হলেও সব রান্নায় চিনি দিতে নেই, কোমড়ে মিষ্টি চলে কিন্তু মাংসে ঝাল চায় কেউ, সৃষ্টি করো ক্ষতি নেই, রসনা তৃপ্ত যেন হয়, রেসিপি রীতিমতো হতে হয় – আদা কাঁচকলায় নয়, বৃদ্ধদের হজমশক্তি কম, হিসেবে প্রসাদ গ্রহণ করে, যুবকদেরও গ্যাস, অম্বল হয়, হজম বিশারদ কে ? তুমি, আমি যা তা খেয়ে নিই, হয়তো উল্লাসে, তবু সব খাবার পরে টক্ বা চাটনী চাই, দই হলে ভালো, শেষপাতে সামান্য আইসক্রীম অথবা মিষ্টি, কোল্ডড্রিঙ্কস হতে পারে অথবা সামান্য মদ্য, তবে গান হলেও উদ্দাম নৃত্য কখনো নয়, চাই সামান্য বিশ্রাম, সৃষ্টিতো সুখের জন্য, শান্তির জন্য আগমনীতান, অসময়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত কোনটাই ভালো নয়, ভালো নয় সৃষ্টি, জনক, জননীর অকাল মৃত্যু হলে সৃষ্টি অনাথ হয় |