কবি কৃষ্ণকুসুম পাল-এর কবিতা
*
নাম
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল
‘কৃষ্ণকুসুমের রস কষ’ ছড়ার বই থেকে নেওয়া

দারোগা রোগা নয়, ডাক্তার তার নয়,
ইস্কুল কুল নয়, ভীমরূল  ভীম নয়,
নামের দাম নেই, নামে হয় ভূল,
তবু মানুষ নামে, ধামেই মশগুল,
যদিও মানুষের মান ও হুঁশ দুইই হয় |

.          ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সিঁড়ি
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

অক্ষরে অক্ষরে বোঝে মেয়ে,  তার আপেল জীবন,
আকাশ চুমো পাহাড় বরফ আর গ্লেসিয়ার ঢাকা,
কুম্ভীরাশ্রু পড়ে ভারাক্রান্ত নিস্তরঙ্গ ফল্গু শিরে,
দয়ামায়া নিশ্চিহ্ন সবার মুখে, দেবতারাও বাইপাশে ছোটে,
প্রেমের চেয়ে প্রেমিক বড়, বিছানায় মার্জিত অশ্লীল ভাষা,
বাচক্লব শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধ তর্কবিতর্কে, আপোষ না হলে জবর দখল,
ডোরবেল বাজলেই সেবন্তী দরজা খুলবে অকুতো খুঁৎ খুঁৎ,
তারপর সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে যুত্সই চুমো,
আর ঘরে কাপড় খুলতে খুলতে উলঙ্গ সমাধি |

.               ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিছানা
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

একই বিছানায় ঘুমায় দু’জন,
তবু দু’জনে দুরকম স্বপ্ন দেখে,
একই সংসার,  দু’জনের সুখের সংগঠন,
তবু দু’জনে সাড়া দেয় লুকোচুরি ডাকে,
সুখ ভোরের পাখীর মতো ডানা ঝাপটায়,
তবু দীর্ণ দুপুরে দেখা দেয় ভীষণ অসুখ,
বিকেলে প্রত্যয় ছেড়ে পিছপা দু’জন, প্রেম বিনিময়,
আবার নিস্তব্ধ রাতে দুঃখ ভাগ করে একই বিছানায়,
প্রেমে আসে না তৃপ্তি, প্রেম এক দুর্জয় মায়া,
দু’জনেই খোঁজে কোথায় শান্তি, কোথায় বিছানা ?

.               ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সাঁকো
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

উপেন, তোকে ভীষণ মনে পড়ে,
তখন আকাশে রামধনু এঁকে তোকে ডাকি,
উপেন, তুই এই সাঁকো দিয়ে চলে আয়,
বুঝিনা, পারাপারের কোন সাঁকো নেই কেন |
তারপর বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকি—বৃষ্টি হলে,
তুই বৃষ্টির সাথে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলে,
কেঁদে কেঁদে বিরহ জুড়াবো  |

প্রতিদিন খুনের খবর কাগজে বেরোয়,
প্রতিদিন ধর্ষণের খবর কাগজে বেরোয়,
প্রতিদিন প্রেমে আত্মঘাতীর খবর আগজে বেরোয়,
আর আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামে,
আকাশে যদি তোদের সকলের নাম লেখা হতো,  জায়গা হতো না,
-আকাশে যদি তোদের সকলের নাম
-- আকাশ এতো ছোটো কেন ?

তোদের নামগুলি বাতাসে ভেসে বেড়ায়.—কানে বাজে,
পাখীগুলো তোদের নাম মনে রাখে,  মুখে উচ্চারণ করে,
হকার খবরের কাগজগুলো সংরক্ষণ করে,
অসভ্যতার বিশ্বায়নে আমরা তৈরী করেছি উথ্বাল নরক,
তোদের নিয়ে এসে মিছিল করবো, আন্দোলন করবো ভাবি ,
বুঝি না,  পারাপারের জন্য কোনো সাঁকো নেই কেন |

.               ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
প্রেমের গলি
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

আর কত প্রেমে জড়ালে প্রেম খুঁজে পাবো,
আর ক’টা মেয়ে ফাঁকি দিলে,  প্রেমের ফাঁদে কাঁদবো,
যেখানে গোলেমালে প্রেম চলে আমি সে গলিতে থাকি,
সকলের প্রেম দেখে দেখে ছানাবড়া চোখ,

সকলে প্রেমে হাবুডুবু খায়, তবু বলে প্রেম কবিদের রোগ,
কবিরা প্রেমের কবিতা লেখে আর সকলে চেটেপুটে খায়,
প্রেমের বাজার ভালো, বাঁচতে হলে প্রেম করো ভুবন পাড়ায় |
গলিপথে সুপতার সাথে দেখা হল একদিন,
জানিনা কে, দত্ত, দাস, পাল, সাহা কি সরকার,
তাকে বলি, তোমার সাথে আমার ভীষণ দরকার,
তুমি কি জানো, মানুষ মন ছাড়া আর কি চায় ত্রিভুবনে ?
এ-গলিতে সকলে স্বপ্নে ভেসে যায় সঙ্গোপনে |

.               ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
শামুক
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

আমার কথা বুঝবো আমি আর যেন কেউ না বোঝে,
আকাশ থেকে সব চাঁদ, সূর্য, তারা, পড়ছে খসে,
ভীষণ বিপদ সকলে লুকিয়ে আছে যে যার ঘরে,
সাগর পাড়ে শেয়াল, শকুন, উল্লাসে নৃত্য করে,
আকাশ, বাতাস হাসছে সুমধুর কুটিল হাসি,
প্রেমের নেশায় আমারা দু’জন দেহ, মনে ভালবাসি,
কাঁপছে আকাশ, ছুটছে বাতাস, দুলছে পাহাড়, উঁচু টিলা,
ভাবছে সবে, মরবো তবে, গল্প, গাঁথায় গোপন লীলা,
যে যার যেমন বাঁচবে বাঁচুক, তুমি, আমি দু’টি শামুক,
গোপন প্রেমে হাবুডুবু, খাবি খাচ্ছি দু’টি কামুক |

.               ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
মেয়েকে
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

ভিক্ষে করিস্ না মেয়ে-
ভিক্ষে করে বাঁচা যায় না |
কারো কাছে পাওয়ার আশা করিস্ না,
পেলে দিতে হয়, সেও এক বেচা কেনা,
কেউ অযাচিত দিতে চাইলেও নিস্ না মেয়ে
সে এক অলিখিত বিনাসুদে ঋণ,
হাতে, পায়ে, গায়ে খেটে বাঁচতে হয়,
যাকে যা দেয়ার নিঃশর্ত দিতে হয়,
বাকী কিছু নেই যেন, ফাঁকি কিছু নেই,
কথা কিছু নেই যেন, কোথাও কোন ব্যথা নেই,
প্রেম এক মরণ, জীবনের গোপন বিনিময়,
বেঁচে থাকলে- প্রেম থাকে না প্রেম, প্রেম পরাজয়,
প্রেম নিঃশর্ত আত্মবলিদান --তিলে তিলে ক্ষয়,
প্রেম করিস্ না মেয়ে, নিজের জন্য থাকে না সময় |

.               ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
অবকলন
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

লাল, হলুদ, সবুজ চোখ পেড়িয়ে শ্মশানে লাইন পড়ল আশি,
রণদীপ ভি. আই. পি কোঠায় প্রথম পাঁচেই স্বর্গে চলে গেল,
আমি ডেডবডি ফেসে কোথাও যেতে পারছিনা, পাহাড়ায় আছি |

শৈলেন বাবু অভিজ্ঞ পর্যটক, জুতো একজোড়া পায়ে, একজোড়া ব্যাগে থাকে,
মন্দিরে ঢুকতে একপাটি উত্তর মেরু,  অপরপাটি দক্ষিণ মেরুতে রাখেন,
ছেঁড়া জুতো জোড়াও রেখে দেন, প্রয়োজনে কুকুরকে মারা যায় |

সৈফুদ্দিন জঙ্গলে,  জঙ্গলে ঘুরে মৌচাক ভেঙ্গে মধু নিয়ে আসে,
সকলে ওর কাছ অধিকমূল্যে মধু কিনতে হয়, মধু সর্বৌষধি ,
পিঁপড়ের দল মৌচাক দেখতে এসে বাকী মধু চেটে পুটে খায় |

.                      ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সৃষ্টি
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

চিনি সুমিষ্ট হলেও সব রান্নায় চিনি দিতে নেই,
কোমড়ে মিষ্টি চলে কিন্তু মাংসে ঝাল চায় কেউ,
সৃষ্টি করো ক্ষতি নেই,  রসনা তৃপ্ত  যেন হয়,
রেসিপি রীতিমতো হতে হয় – আদা কাঁচকলায় নয়,
বৃদ্ধদের হজমশক্তি কম, হিসেবে প্রসাদ গ্রহণ করে,
যুবকদেরও গ্যাস,  অম্বল হয়,  হজম বিশারদ কে ?
তুমি, আমি যা তা খেয়ে নিই,  হয়তো উল্লাসে,
তবু সব খাবার পরে টক্ বা চাটনী চাই,
দই হলে ভালো, শেষপাতে সামান্য আইসক্রীম অথবা মিষ্টি,
কোল্ডড্রিঙ্কস হতে পারে অথবা সামান্য মদ্য,
তবে গান হলেও উদ্দাম নৃত্য কখনো নয়, চাই সামান্য বিশ্রাম,
সৃষ্টিতো সুখের জন্য, শান্তির জন্য আগমনীতান,
অসময়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত কোনটাই ভালো নয়, ভালো নয় সৃষ্টি,
জনক, জননীর অকাল মৃত্যু হলে সৃষ্টি অনাথ হয় |

.                      ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিসর্পন
কবি কৃষ্ণকুসুম পাল

স্বরূপ এতো স্পীডে বাইক চালায়, পথচারীর বুকে আতঙ্ক হয়,
হাওয়ায়, উড়ে যেতে না পারলে বাইক চালিয়ে মজা নেই,
সামনে বাচ্চা, বৃদ্ধ, গাড়ী পড়ুক বাইক থামবে না, বাইক স্বপ্নে ওড়ে |

সেঞ্চুরী খুনী কাটাহাত দশবছর জেল খেটে আজ ছাড়া পেল,
হঠাৎ ফোন, পরিচিত গলা, আজ রাত একটায় বিজন স্ট্রিটে খুন করতে হবে,
এক জাঁদরেল নেত্রীকে, একা থাকবে, খুব ঝামেলা পাকাচ্ছে, দশ লক্ষ টাকা দেবো |

সুবোধের সব বোঝার বয়স হয়েছে, তবু সে বুঝতে চায় না,
সে সুতপা যেভাবে বলে, ভাবায়, সেভাবে চলে, সেভাবে স্বপ্ন দেখে,
অতৃপ্ত জোড়া শালিক অনন্ত আকাশের শেষপ্রান্তে একদিন পৌঁছবেই পৌঁছবে |

.                      ****************    
.                                                                                  
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর