কবি লীলা মজুমদারের কবিতা
*
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া
লঙ্কাদহন পালা নাটক থেকে নেওয়া

[ ঘোষক বাঁদরের প্রবেশ ও ঢোলক বাজিয়ে অঙ্গভঙ্গি সহকারে প্রস্তাবনা ]

মহেন্দ্র পর্বতে চড়ি         বীর হনুমান
লঙ্কাদ্বীপ অভিমুখে          করে লম্ফ দান॥
পায়ের দাপটে শিলা         হয় চুরমার,
ফোকর ফাটল দিয়া         বহে জলধার॥
জীবজন্তু ভয়ে পেয়ে        করে হু-হুংকার,
যত দক্ষ মজা দেখে         ছাড়ি পানাহার॥
গাছপালা উপাড়িয়া         আকাশেতে ওড়ে,
বাসা ছাড়ি কাহ চিল        মহাশূন্যে ঘোরে॥
নীলাভ মেঘের মতো        হনু শূন্যে ধায়,
সাগর লঙ্ঘন করি            যদি সীতা পায়॥
মৈনাক পাহাড় কহে         তিষ্ঠ ক্ষণকাল,
না থামি তাহারে ছুঁয়ে       হনু দেয় ফাল॥
সুরসা সাপিনী এবো         চাহে গিলিবারে,
তিল সম তনু ধরি          ফাঁকি দেয় তারে॥
সিংহিকা রাক্ষসী সে        জলতলে রয়,
ছায়া ধরি হনুমানে          মুখে টানি লয়॥
চাতরি করিয়া হনু         বাঁচাইলা পরান,
সুরাসুর সবে তার         করে গুণগান॥
এমতে উতরি শেষে        লম্ব শৈল পরে,
বাঁদুরে প্রথাতে হনু        নাচ গান করে॥

.             *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া
লঙ্কাদহন পালা নাটক থেকে নেওয়া

[ হনুর নৃত্য ও গান ]

উঃফ্! বড্ড বাঁচা বেঁচেছিস রে প্রাণ
ছায়া ধরে ক্যায়সা জোরে লাগিয়েছিল টান!
চন্দ্রবিন্দু পড়ে যেত নামে আগায়,
ঘুচে যেত কলা খাওয়া, মরি হায় হায়!
বাঁদুরে বুদ্ধুর খুড়ে শত শত গড়,
চাচা আপনা বাঁচা বলে পেঁপেগাছে চড়!

.          *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া
লঙ্কাদহন পালা নাটক থেকে নেওয়া

[ রাবণের সভাগৃহ, জুড়ির গান ]

রামায়ণে বাহাদুর রামচন্দ্র নয়
কহ বাহু তুলে বদন খুলে
হল্লুমানের জয়॥
সাগরপারের নামটি শুনে
শুষেন পাহে ভয়॥
শতবলীর অষ্ট রম্ভা,
গয়-গবাক্ষের লয়॥
অঙ্গদ হলেন শিবনেত্র
ভাবেই তন্ময়॥
আর মূর্তিমান জাম্বুবান
চক্ষু বুজে রয়॥
হাত-পা পেটে সেঁধোয় পাছে
লঙ্কা যেতে হয়॥
ঢের ঢের বীর জানা আছে,
কেউ না লাগে হনুর কাছে,
কোথা সুগ্রীব বিভীষণ,
চটি ফেলে পলায়ন॥
লঙ্কা গিয়ে একলা হনু
সীতার খবর লয়॥

.     ******************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া
বক-বধ পালা নাটক থেকে নেওয়া

[ জুড়ির সুর করে আবৃত্তি, মৃদু মৃদু তবলা ইত্যাদির সহযোগে ]

পোড়া যতুগৃহ থেকে বাহিরিয়া যবে,
পাণ্ডব বুঝিলা মনে এ বিশাল ভবে
গৃহ বন্ধু কিছু নেই, নিলা বনবাস ;
দুঃখে কষ্টে বৃক্ষতলে কাটে দিন মাস।
কত যে বিপদ ঘটে কেবা তাহা কবে,
বাহুবলে ভীমসেন রক্ষা করে সবে।
ঘোর অরণ্যে মারি হিড়িম্ব দুরাচারে,
বাঁচাইলা ভীম চারি ভাই আর মা-রে।
তার বোন হিড়িম্বারে বিয়া করি তবে,
কিছুদিন থাকে ভীম ছাড়ি আর সবে ;
হিড়িম্বারে ছাড়ি পরে অতি সুখী মনে,
পাণ্ডবের সনে ভীম ঘোরে বনে বনে।
দীর্ঘকাল গেল কাটি, ঘোরে দেশে দেশে,
পশু মারে, ভিখ মাগে, ঘোরে দীনবেশে।
হেনকালে পিতামহ ব্যাসদেব আসি,
দেখা দিল সুমধুর বচনে সম্ভাষি।
পাঠাই দিলা সবে একচক্রা গ্রামে
আশ্রয় লইল সেথা ব্রাহ্মণের ধামে।
তারপরে ঘটে যাহা শুন শান্ত মনে,
বক-বধ কথা এবে কহি সর্বজনে।

.         ******************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া
বক-বধ পালা নাটক থেকে নেওয়া

[ নারদের গান ]

তোরা ঝগড়াঝাঁটি কর                আহার নিদ্রা মাটি কর।
ওরে নারদ নারদ বল।
সুখশান্তি লণ্ডভণ্ড                         বন্দোবস্ত হচ্ছে পণ্ড
ওরে নারদ নারদ বল।
আমরা খেটে মরি ঘুরে,            তোমরা খাসা পেটটি পুরে,
ঘুম লাগাও হে দিন-দুপুরে।
ওরে নারদ নারদ বল।
বের কচ্ছি মজা মারা,                   দিবানিদ্রা কচ্ছি সারা,
কুঁড়ের বাদশার দল।
ওরে নারদ নারদ বল।

.    ******************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া
বক-বধ পালা নাটক থেকে নেওয়া

[ভীমের নিদ্রা। নাক ডাকার গান]

ভর দুপুরে ঘঁফিস---ঘঁফিস।
ইক্কি কাণ্ড! হোয়াট ইজ দিস!
ভোঁ---ঘড় ঘড়! ভোঁ---ঘড় ঘড়!
বৃক্ষ মড় মড়, ঘরদোর পড় পড়।
এই ভয় লাগানো, চোর ভাগানো,
লোক জাগানো লক্ষ্মীছাড়া।
এই কাগ তাড়ানো, ভূত ঝাড়ানো,
নাক ডাকানো কেমন ধারা

.    ******************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া
আপদ গল্প থেকে নেওয়া

ও পারে যেও না ভাই, ফটিংটিঙের ভয়,
তিন মিনসের মাথা কাটা, পায়ে কথা কয়।
তাদের সঙ্গেতে মোর চেনা শোনা আছে রে।
সুড়সুড়ি না দিস যদি বিপদ ঘটতে পারে রে।


কেরোসিনের সুতাবাসে
মহাপ্রাণী খইসে আসে
খাও খাও ভইরে টিন
কেরোসিন কেরোসিন


অনুতাপে দগ্ধ হবি
ড্যাঁও দুদু চেটে খাবি।

.    ******************  

.                                                                                
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সুখ
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া

মেঘ কেটে যায়, রোদ্দুর ওঠে ;
আঁধার রাতে জ্যোত্স্না ফোটে।
সুখ রহে না পথে পড়ে,
সুখ নিতে হয় হাতে গড়ে।
বিলিয়ে দিবি যাকে তাকে,
ভরলে মুঠোয় নাহি থাকে।
তাইরে নারে নাইরে না,
ধূলোর মতো উড়্য়ে দে না।
ভরে যাবে বুক,
তাকেই বলে সুখ।

.    ******************  

.                                                                                
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
খুদে পাখি
কবি লীলা মজুমদারের ছড়া

খুদে পাখি মাথায় তুলি,
উড়িয়ে দিলাম আকাশ পথে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি,e
যাচ্ছে চড়ে সোনার রথে,
মাঝগগনের সূর্য পানে,
ভরিয়ে ধরা গন্ধে গানে।

.    ******************  

.                                                                                
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর