কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কার - জন্ম গ্রহণ করেন নদিয়া জেলার বিল্বগ্রাম নামক গ্রামে। পিতার নাম
রামধন চট্টোপাধ্যায়।
১৮২৯ সালে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তাঁর সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামে খ্যাত হন। এরপর তিনি হিন্দু কলেজে পড়াশুনা
করেন। তাঁর শিক্ষকগণ তাঁকে “কাব্যরত্নাকর” উপাধি দান করেন এবং বন্ধুমণ্ডলী তাঁকে “তর্কালঙ্কার”
উপাধিতে ভুষিত করেন।
তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও কৃষ্ণনগর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে।
১৮৪৬ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজে যোগ দেন সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে। ১৮৫৫ সালে তিনি মুর্শিদাবাদে
যান “জজ্ পণ্ডিত” হিসেবে এবং সেই বছরই তাঁর পদোন্নতি ঘটে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে।
১৮৪৭ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে মিলিত হয়ে “সংস্কৃত যন্ত্র” নামক ছাপখানা স্থাপন করেন, যেখান
থেকে সর্বপ্রথম কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের “অন্নদামঙ্গল” কাব্য বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয়।
স্ত্রী-শিক্ষার স্বপক্ষে তিনি ১৮৫০ সালে, ‘সর্ব্বশুভকরী’ পত্রিকায় দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেন। মুর্শিদাবাদ থেকে
মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে আরও বহু জনের স্বাক্ষরিত বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে পত্র সরকারি দফতরে
পাঠানো হয় ১৮৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি।
১৮৪৮ সালে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের, ট্রিনিটি কলেজের স্নাতক জন ইলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন,
জিনি বেথুন সাহেব নামেই ভারতবর্ষে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন, কলকাতায় এসেছিলেন | তিনি ছিলেন
গভর্নর জেনারেলের কাউনসিলের ল মেম্বার | এর সাথে সাথে তিনি কাউনসিল ওফ এডুকেশনের সভাপতিও
ছিলেন | পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামগোপাল ঘোষ, রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখার্জী প্রভৃতি আধুনিক মনষ্ক
মনীষীদের সাহায্যে, ৭ মে ১৮৪৯ এ বেথুন সাহেব, মেয়েদের জন্য একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন | স্কুলটির
জন্য কলকাতার মির্জাপুরে জমি দান করেছিলেন রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখার্জী | ভারতবর্ষে এটিই মেয়েদের জন্য
প্রথম স্কুল | এই স্কুলের সম্পাদক হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর | ১২ অগাস্ট ১৮৫১ তারিখে বেথুন সাহেব
পরলোকে গমন করেন। তখনকার দিনের সমাজে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোকে ভাল চোখে দেখা হোতো না।
মদনমোহন তর্কালঙ্কার সেই স্কুলে তাঁর মেয়ে ভূবনমালা ও কুন্দমালা কে পাঠালেন পড়ার জন্য। তিনি নিজে
সেখানে অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবেও যোগ দিয়েছিলেন।
তিনি মুর্শিদাবাদ এবং কান্দি তে অনাথ আশ্রম, দাতব্য চিকিত্সালয়, ইংরেজি স্কুল ও মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন।
বিদ্যাসাগরের পরম বন্ধু ছিলেন মদনমোহন। যদিও পরে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। ১৮৫৮ সালে ৯ মার্চ
কান্দিতে কলেরা রোগে ভুগে মদনমোহনের মৃত্যু হয়। মৃত্যু কালে স্ত্রী-কন্যাকে বিদ্যাসাগরের সহায়তা নিতে
বলেছিলেন তিনি। মদনমোহনের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন বিদ্যাসাগর। তিনি মদনমোহনের
স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেন সংস্কৃত প্রেসের স্বত্ব এবং মদনমোহনের কন্যা ও ভগিনীর জন্য উইলে কিছু অর্থের
অংশীদারীও করে যান।
ছাত্রাবস্থাতেই মদনমোহন রচনা করেন “রসতরঙ্গিণী” এবং “বিদ্যারত্ন” কাব্য। তাঁর রচনা সম্ভারের মধ্যে
রয়েছে বাংলা কাব্যগ্রন্থ “বাসবদত্তা”, তিন খণ্ডে “শিশু শিক্ষা” (১৮৪৯ - ১৮৫৩) প্রভৃতি। এছাড়া সংস্কৃত গ্রন্থ
সম্পাদনায় রয়েছে “সংবাদতত্ত্বকৌমুদি”, “চিন্তামণিদিধীতি”, “বেদান্তপরিভাষা”, “কাদম্বরী”, “কুমারসম্ভব”,
“মেঘদূত” প্রভৃতি।
তাঁর রচিত প্রাথমিক ভাষাশিক্ষা পুস্তক “শিশু শিক্ষা” (১৮৪৯-১৮৫৩) প্রকাশিত হয় বিদ্যাসাগরের “বর্ণপরিচয়”
(১৮৫৫) এর আগে। যদিও বিদ্যাসাগরের “বর্ণপরিচয়” বইটি আরও বেশী শিক্ষা প্রসারে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে,
মদনমোহনের “শিশু শিক্ষা”র ছড়া “পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল…”, “লেখা পড়া করে যেই…”, “সকালে
উঠিয়া আমি মনে মনে বলি…” প্রভৃতি কবিতা বিগত দেড়শো বছরের বাঙালীর মানসিক গঠনের বুনিয়াদ
হয়ে বিরাজ করছে।
বিদ্বজনেদের ভাবনা-চিন্তা ও তর্ক-বিতর্কের এও একটি বিষয় যে কেন মদনমোহনের শিক্ষা পুস্তকে কাব্যের
প্রয়োগ ছিলো এবং কেনই বা বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়ে তা অনুপস্থিত।
আমরা মিলনসাগরে কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের কবিতা তুলতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।
কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
উত্সঃ প্রফুল্লকুমার ভাবুক, বাংলাপেডিয়া , উইকিপেডিয়া , হারুন রংপুর এর ব্লগ |
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতা প্রকাশ - ১৮.০৪.২০১৩
...