জ্ঞান ও ধর্ম্মে স্ত্রী-পুরুষের সমান অধিকার কবি মধুমতী গঙ্গোপাধ্যায় বামারচনাবলী
হে বঙ্গদেশ-বাসিনী ভগ্নীগণ! পুরুষদিগকে যে পরমেশ্বর সৃষ্টি করিয়াছেন, আমাদিগকেও সেই পরমেশ্বর সৃজন করিয়াছেন। তাঁহাদিগকে যেরূপ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও মনোবৃত্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তি সকল প্রদান করিয়াছেন, আমাদিগকেও সেই সমস্ত বিষয়ে অধিকারিণী করিয়াছেন। তাহাতে তাঁহারা বিদ্যা ও জ্ঞান বলে বলবান্ হইয়া জগৎপিতার নিয়ম অনুযায়ী কর্ম্ম করিয়া তাঁহার প্রীতির পাত্র হইবেন ও অন্তে সদ্গতি লাভ করিবেন ; আর আমরা তাহা হইতে বঞ্চিত হইয়া থাকিব, ইহা কি আমাদিগের উচিত ? কখনই নয়। কেন না আমরা দেখিতেছি, ঈশ্বরের নিয়ম অনুযায়ী কর্ম্ম করাই পুণ্য ও তাহা লঙ্ঘন করাই পাপ ; এবং পুণ্যবান্ ব্যক্তিরা ইহকালে ও পরকালে আদরণীয় হন, পাপীরা ইহলোকে ঘৃণাস্পদ ও পরলোকে দণ্ডনীয় হয় । কিন্তু বিদ্যা ব্যতীত পরমপিতার সুনিয়ম সমুদায় সুন্দররূপে জানা যায় না, সুতরাং পদে পদে পাপাচরণ করিয়া ইহকালে অশ্রদ্ধার পাত্র ও ঈশ্বর-সমক্ষে দণ্ড-ভাজন হইতে হয়। এই সকল দ্বারা জানা যাইতেছে যে সেই সর্ব্বমঙ্গলাকারের ইচ্ছা কখনই অভিপ্রায় নহে যে পুরুষেরাই জ্ঞান-জনিত বিশুদ্ধ সুখ সম্ভোগ করিবেন, আর আমরা যাবজ্জীবন অজ্ঞানতানিবন্ধন অতি কষ্ট সহ্য করিব। বরং উভয় জাতিকেই সমান সমান দৈহিক ও মানসিক বিদ্যার্জ্জনোচিত গুণে বিভূষিত করিয়া ইহাই প্রকাশ করিতেছেন, যে উভয়েই সমান সমানরূপে জ্ঞানোত্পাদিত বিপুল বিমল সুখের অধিকারী হইবে। অতএব হে ভগ্নীগণ! এস আমরা বিদ্যোপার্জ্জনে যত্নবতী হই। আর আমাদের তাচ্ছিল্য করা উচিত হয় না।