মিলনসাগরে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের শাক্তগীতি -                                 পাতার উপরে . . .   
মিলনসাগরে এই পাতার প্রথম প্রকাশের সময়, মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের কয়েকটি খণ্ড-কবিতা এবং ১৯০৫
সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত, ২২৭ জন গীতিকারের লেখা ৫৬৬৩টি গানের সংকলন “বাঙ্গালীর
গান” থেকে ৩টি পূর্ণ গীত আমাদের হাতে আসে। আমরা তা এখানে তুলেছিলাম।

এর পরে আমাদের হাতে আসে ১৩২৭ বঙ্গাব্দে (১৯২০ খৃষ্টাব্দে) শরচ্চন্দ্র ঘোষাল সম্পাদিত, কোচবিহার
সাহিত্যসভা থেকে খাঁ চৌধুরী আমানতউল্ল্যা আহমদ কর্ত্তৃক প্রকাশিত, “মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের গ্রন্থাবলী,
১ম খণ্ড, গীতাবলী”। তাতে বেশ কিছু পাতা নেই।

এ থেকে বোঝা যায় যে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের গীত, লোকমুখে ভালভাবেই ছড়িয়েছিল। কারণ  
কোচবিহার থেকে তাঁর রচনাবলী প্রকাশ হবার অনেক পূর্বেই, ১৯০৫ সালে প্রকাশিত
, দুর্গাদাস লাহিড়ীর  
"বাঙ্গালীর গান" সংকলনে আমরা তাঁর তিনটি গান পাই, যদিও একটি গীত, "তার কী শমনে ভয় মা যার
শ্যামা" বা "হায় তার কী শমনে ভয় মা যার শ্যামা", খণ্ডিত অবস্থায় ছিল। এ ছাড়া "বাঙ্গালীর গান"-এ প্রাপ্ত
"দিগ্ বাস গলিত কেশ" গীতটি কোচবিহার থেকে প্রকাশিত “মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের গ্রন্থাবলী, ১ম খণ্ড,
গীতাবলী” তে নেই। অর্থাৎ গানটি অন্য কোন খণ্ডে থাকতে পারে যা আমাদের হাতে আসে নি, অথবা এই
গানটি এবং আরও কত গান লোকমুখে ছড়িয়েছে যার হিসেব আমাদের কাছে নেই।

দুর্গাদাস লাহিড়ী তাঁর "বাঙ্গালীর গান" সংকলনে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের ৩টে গান কোথা থেকে
পেয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন নি। তাই দুর্ভাগ্যবশত তা আর জানার উপায় নেই।

সম্প্রতি কোচবিহার রাজপরিবারের কুমার সুপ্রিয় নারায়ণ, কবি মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ-এর
ছবিটি আমাদের পাঠিয়েছেন। এর জন্য আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ

তাঁর ইমেল - kumarsupriya10@gmail.com   


আমাদের ইচ্ছে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের সব কটি গীত মিলনসাগরে তোলার। গীত তোলার কাজ চলছে।  



কবি মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


উত্স -



আমাদের যোগাযোগের ঠিকানা :-   
srimilansengupta@yahoo.co.in      


৩টি পূর্ণ গীত ও ১০টি খণ্ডগীত নিয়ে এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ০৮.২০১১।
কবির ছবির সংযোজন - ১৭.৮.২০১৯।
সব কটি খণ্ডগীতের পরিবর্তে ২২টি নতুন পূর্ণ গীতের সংযোজন, মোট পদসংখ্যা ২৫ - ১
.৮.২০১৯।

.
কবি মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ  -  কোচবিহারের মহারাজা ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণের পুত্র। তাঁর অভিষেক
হয় ১১৯০ বঙ্গাব্দে (১৭৮৩ সাল)। তাঁর রাজত্ব কাল ১৭৮৩ থেকে ১৮৩৯ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত।
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের রাজ্যাভিষেক   
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের শিক্ষা-দীক্ষা    
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালে উন্নয়ণ   
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের সাহিত্যানুরাগ ও রচনাসম্ভার    
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের শাক্তগীতি    
মিলনসাগরে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের শাক্তগীতি   
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের রাজ্যাভিষেক -                                           পাতার উপরে . . .   
১৭৮৩ সালে কোচবিহারের মহারাজ ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণ পরলোক গমন করেন। পুত্র কুমার  হরেন্দ্রনারায়ণ
তখন শিশু। প্রথা অনুযায়ী রাজ্যের নাজীরদেও রাজাভিষেকের সময় রাজছত্র না ধরলে অভিষেক সম্পূর্ণ
হোত না। কিন্তু রাজমাতা খবর পান যে নাজীরদেও নিজের ছেলে বীরেন্দ্রনারায়ণকে রাজপদে অধীষ্ট করার
ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন।

রাজমাতা যেকরেই হোক নাজীরদেওকে রাজি করিয়ে রাজদরবারে নিয়ে আসেন এবং রাজাভিষেক সম্পূর্ণ
করেন। রাজাভিষেকের সময়, নাজীরদেও নিজে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণকে কোলে নিয়ে সিংহাসনে বসেন
এবং তাঁর নিজের পুত্র পাশে দাঁড়িয়ে, রাজদণ্ড হাতে নিয়ে, রাজার মাথায় রাজছত্র ধারণ করেন। কিন্তু নতুন
মহারাজার সিলমোহর ব্যবহার করে লিখে নেন যে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর নাজীরদেওর ছেলে
বীরেন্দ্রনারায়ণ রাজা হবেন।

সেই দলীলটিকে বলপূর্বক নাজীরদেওর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার পর নাজীরদেও, রংপুরের ইস্ট ইণ্ডিয়া
কোম্পানির তত্কালীন প্রতিনিধি মিস্টার গুডল্যাণ্ড এর ভরসায় কোচবিহার আক্রমণ করে রাজমাতা এবং
মহারাজাকে গৃহবন্দী করে রাখেন। এমন কি তার সেই সময়ে বসন্ত (পক্স) হওয়াতেও কোনো চিকিত্সার
ব্যবস্থা করতে দেন নি।

এমতবস্থায় আর কোনো উপায় না দেখতে পেয়ে রাজমাতা, তাঁর রাজ্যের গোসাঁই এবং খাসনবিশকে
  
কলকাতায় গভরনর জেনারেলের সাথে দেখা করতে পাঠান। গভরনর জেনারেল নাজীরদেওর  কার্যকলাপ
শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে মিস্টার গুডল্যাণ্ডকে রংপুর থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং তার জায়গায় মিস্টার পিটার
মুর কে তাঁর প্রতিনিধি করে পাঠান। মুরের হস্তক্ষেপ এবং বহু রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে রাজমাতা এবং
রাজাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
.
এই পাতার কবিতার ভণিতা -
শ্রীহরেন্দ্রনারায়ণ,
হরেন্দ্রনারায়ণ, শ্রীহরেন্দ্র, ভূপ,
হরেন্দ্র, হরেন্দ্র ভূপ
, নররাজ
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের শিক্ষা-দীক্ষা -                                            পাতার উপরে . . .   
মহারাজা নাবালক দেখে, গভরনর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস হেনরি ডগলাসকে কোচবিহারের দেখভালের
 
জন্য পাঠান। ডগলাস সাহেব মহারাজার শিক্ষাদিক্ষার সুবন্দোবস্ত করেন। হরিশঙ্কর চক্রবর্তীকে নিয়োগ করা
হয় সংস্কৃত শিক্ষার জন্য। মুন্সি নরসিংহ কে নিয়োগ করা হয় বাংলা এবং ফারসী শিক্ষার জন্য। ডগলাস
সাহেব নিজে মহারাজার তালিমের তত্ত্বাবধান করতেন। প্রতি তিন মাস অন্তর মহারাজাকে চিঠি লিখতে
 
হোতো স্বয়ং গভরনর জেনারেলকে। মহারাজার শরীরচর্চা, ঘোড়সাওয়ারী প্রভৃতিও প্রতিদিনের শিক্ষা অঙ্গ
ছিল।
.
.
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালে উন্নয়ণ -                                      পাতার উপরে . . .   
১৮০১ সালে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ নিজের হাতে রাজ্যশাসনের ভার পান। তাঁর জীবনে এত মানুষের শুভ-
অবদান বৃথা যায় নি। মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ একজন সুশিক্ষিত, সঙ্গীতজ্ঞ, ধার্মিক, সাহিত্যানুরাগী এবং
প্রজাবত্সল রাজা হয়েছিলেন।

তাঁর উদ্যোগেই বর্তমান কোচবিহারের অনেক উন্নতিসাধন করা হয়। মনোরম “সাগরদিঘি” জলাশয়টি তাঁর
রাজত্বকালে খনন করা হয়, যা আজও কোচবিহারের দর্শনীয় স্থানের অন্যতম। ১৭৯৯ থেকে ১৮৪৩  এর
মধ্যে সিদ্ধনাথ মন্দিরটিও তাঁর প্রতিষ্ঠিত।

কোচবিহার শহরটির মাথায় আজও পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে সুপরিকল্পিত শহরের শিরোপা!
.
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের সাহিত্যানুরাগ ও রচনাসম্ভার -                       পাতার উপরে . . .   
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের পৃষ্ঠপোষকতায় বহু সাহিত্যকর্ম রচিত হয়েছে। তাঁর শাসনকালেই সংস্কৃত থেকে
বাংলায় বহু বই অনুবাদ করা হয়। “বিষ্ণুপুরাণ”, “ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ”, “ভাগবতপুরাণ”, “নৃসিংহপুরাণ” প্রভৃতি
তাদের মধ্যে অন্যতম।

তাঁর নিজের রচনার মধ্যে রয়েছে “বৃহদ্ধর্মপুরাণ”, “উপকথা”, “রাজপুত্র উপাখ্যান”, “কৃষ্ণ যোগসাগর”, “রামায়ণ
সুন্দর কাণ্ড”, “মহাভারত ঐশিক পর্ব” প্রভৃতি।
মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের শাক্তগীতি -                                                পাতার উপরে . . .   
কালের প্রভাবে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের রচিত শাক্তগীতি, লোকমুখে যা কিছু প্রচলিত ছিল তা বাদে আর  
সবই হারিয়ে যায়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে কোচবিহারের স্টেট কাউনসিলের মহাফেজখানার প্রাচীন দপ্তরগুলির
মধ্য থেকে একটি খাতা আবিষ্কৃত হয়। তাতে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রচিত ১৬৩টি গীত পাওয়া যায়।
সেই পুঁথির লেখকের নাম বিপিনবিহারী সরকার। পুঁথির রচনা কাল ১২৬৫ বঙ্গাব্দ (১৮৫৮ খৃষ্টাব্দ)।

১৩২৭ বঙ্গাব্দে (১৯২০ খৃষ্টাব্দে) শরচ্চন্দ্র ঘোষাল সম্পাদিত, কোচবিহার সাহিত্যসভা
থেকে খাঁ চৌধুরী
আমানতউল্ল্যা আহমদ কর্ত্তৃক প্রকাশিত হয় “মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের গ্রন্থাবলী”।

মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ তাঁর গীতের ভণিতায় শ্রীহরেন্দ্রনারায়ণ,
হরেন্দ্রনারায়ণ, শ্রীহরেন্দ্র, ভূপ, হরেন্দ্র,
হরেন্দ্র ভূপ, নররাজ ইত্যাদি উল্লেখ  করতেন। তাঁর রচিত বেশিরভাগ গীতই শ্যামা সঙ্গীত। যেগুলি শ্যামা
সঙ্গীত নয় সেগুলিও ভক্তিরস মূলক, প্রেম-বিষয়ক নয়। তিনি
কবিয়াল রাম বসু প্রমুখের সমসাময়িক হলেও,
দীনেশচন্দ্র সেনের “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” গ্রন্থেও রাজা হরেন্দ্রনারায়ণের নাম নেই।
.
.