কবি মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা "জখম"(শেষাংশ) যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই তা আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com
|
আমার সেই শ্রদ্ধেয় পূর্বপুরুষের কথা আমি ভাবছি
. যিনি এক টাকায় কোল্কাতাকে বেচে দিয়েছিলেন
চিঠি লেখার পর সারা কোল্কাতায় একটাও ডাকবাক্স খুঁজে পাচ্ছি না
সন্ধে হবার দরুন যাবতীয় নক্ষত্র এখন পৃথিবীর কাছাকাছি নেবে আসছে
আমি আমার রক্ত থেকে জাগুয়ারের চামড়ার রং টেনে তুলতে পার্ছি না
. নিজের চামড়ার জন্যে
ঝরাপাতার ভেতর দিয়ে ছুটে যাওয়া সাপ আমার দিকে ১ বারো চেয়ে দ্যাখেনি
মশার উড়ন্ত ব্লাডারে ঠাসা আমার ক্রূর-রক্ত আঙুলে পিষে ঘেন্না কোর্ছে
আমি গঙ্গার জলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব কোরে ফেলেছিলুম
. পৈতের দণ্ডিভাসানের দিন
হৃদয়ের জায়গায় ১টা বাদুড় ঝুলিয়ে ফুটপাথ দিয়ে বাড়ি ফিরছে সফল মানুষেরা
পাহাড়ের চূড়োয় দাঁড়িয়ে আমি দেখেছিলুম আমার দূর গাঁয়ের জ্বলন্ত বাড়িঘর
পাঁজরের শিক দিয়ে কবিতার পাণ্ডুলিপি গলিয়ে
. আমি কঙ্কালের ফসিল হবার অপেক্ষায় রয়েছি এখন
প্রথম-প্রেমিকার পাঠানো খাম আমি সাহস কোরে খুলতে পার্ছিনা
কিছুটা হাঁটার পর পেছনে ফিরে মনঃপূত কুকুরের থাবার ছাপ গুনে নিচ্ছি
দেখছি একটা ছুটন্ত ট্রেনের এলার্ম শেকল ধরে ঝুলছে তার সমস্ত যত্রীরা
জুতোর ভেতরে মোজার ছেঁড়া জায়গাগুলো লুকিয়ে পা ফেলছি এখন
জুতোর মধ্যেই ঘৃণা ও পূজনীয়তা আবিষ্কার কোর্ছে নীতিমেজাজ বিদগ্ধ মানুষেরা
৫.৩৮ ডি. সে. শীতেও আমি আগুন না পুইয়ে
. ইজি চেয়ারে চুপচাপ শুয়ে রইলুম
নীলার রোঁয়ায় জ্বলা-নেভা ১টা ছোট্ট হাই ভোল্টেজ ঘাম
. আমার রক্তকে তোল্পাড় কোরে দিচ্ছে
. জখম কবিতাটি হাংরি জেনারেশন বা হাংরিয়ালিস্ট সাহিত্য আন্দোলন (১৯৬১ ~ ১৯৬৫) -
এর সময়ে লেখা | এই কবিতাটি কবি নিজে অনুবাদ করেছেন ইংরেজীতে | এই কাজে তাঁকে সহযোগীতা
করেন ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হাওয়ার্ড ম্যক্ কর্ড, যিনি উইলিয়াম বারোস
এর সহ-ইন্টারভিউয়ার ছিলেন | বিদ্বজনেরা এই কবিতাটিকে কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান এর "Leaves of
Grass", কবি টি.এস.ইলিয়ট-এর "Ash Wednesday" এবং কবি এলেন জিনসবার্গ এর "Howl"
কবিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন | সমালোচকগন "জখম" এর উপর কবি ফেনটন জনসন এর "Tired",
কবি রিচার্ড রাইট এর "Between the World and Me" এবং কবি খৃস্টোফার স্মার্ট এর "Jubilet
Agnow" কবিতার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন |
. বাংলা দেশের অধ্যাপক শফিক আশরাফ "জখম" কে বাংলা সাহিত্যের একটি মাইল
স্টোন বলে উল্লেখ করেছেন, কবিতার ছন্দ, স্বরপ্রবাহ, শব্দবিন্যাস, রচনাশৈলী, প্রতীকি গভীরতা এবং
সন্মোহের জন্য | এই কবিতাটিকে পোস্ট-মর্ডান বাংলা কবিতার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিন্তু তা অন্যান্য
দীর্ঘ কবিতা থেকে ভিন্ন, যেমন রবীন্দ্রনাথ-এর "পৃথিবী", সুধিন্দ্রনাথ দত্ত-র "সংবর্ত", বিষ্ণু দে-এর
"ক্রেসিডা", অমিয় চক্রবর্তী-র "ইতিহাস", শামসুর রাহমান-এর "প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে", আল
মামুদ-এর "সোনালি কেবিন", পবিত্র মুখোপাধ্যায়-এর "ইবলিশের আত্মদর্শন", রুদ্র মহম্মদ শহিদুল্লা-র
"মানুষের মানচিত্র", আহমেদ ছাফা-র "বস্তি উজাড়" এবং শিমুল মামুদ-এর "পয়গম্বর নামা" | কবি ও
কাব্য সমালোচক অনুপম মুখোপাধ্যায় দাবী করেছেন যে "জখম", বাংলা ভাষা তথা যে কোনো
ভাষাতেই হোক, এমন একটি কবিতা যা চিরতরের জন্যে মনে রাখার যোগ্য |
. মিলনসাগর -এ আমরা এই কবিতাটি তুলতে পারার অনুমতি পেয়ে গর্বিত |
Click here to read the English Translation of this poem "Jakham"
কোল্কাতার আকাশ দিয়ে এখন উড়ে যাচ্ছে
. ২৭৬০ লক্ষ টাকার মানি অর্ডার ফর্ম
মানুষের ঘুম খুঁজে বের কোর্ছে
. রাত্তিরবেলার রোয়াক ফুটপাথ গাড়িবারান্দা
সফল মানুষেরা সন্ধেবেলায় প্রাতঃকৃত্য সেরে নিচ্ছে
৬৮০০০ প্রচারপত্র সকাল থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কোল্কাতার ফাঁকা দেয়াল
উত্সব আর ধর্মানুষ্ঠানের রুটিন মেনে
. ঘা বদল কোরে নিচ্ছে চাকুরিয়া ভিকিরি
রাদ্দুপুরে মাঝসড়কের ওপর লাল আলো রেখে
. জেব্রাদের রং ফেরাচ্ছে উন্নয়নকামী পেন্টার
রেডিওতে কবিতা আর ভোটের ফলাফল খোলসা কোরে ব্রডকাস্ট হচ্ছে
দাঁতে দাঁত চেপে আমি অপেক্ষা কোর্ছি চলন্ত ফুটবোর্ডে
আমার নিজের বাড়ির খোঁজে
. আমি রাস্তায় ২৫ বছর ঘুরে বেড়ালুম
বসতিবিরল এঁদো গলির মাটিতে ছড়ানো
জখম (শেষাংশ)
প্রশান্ত মহাসাগরের আকরিক মাটি
. একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে চাঁদ হয়ে গেল
আগে বা পেছন দিয়ে যাওয়া সীমান্ত
আমি জানতে পার্লুমনা কী কোরে মাটির ভেতরে নিস্পিস কোরে ওঠে
. বীজের গর্ভচর পোকা
প্রতি মিনিটে ৪০০০০ লোক দুঃখ কষ্টে ককিয়ে উঠছে
. কোল্কাতার পথ ঘাট গেরস্থালিতে
একাধখেপ লাগাম ছিঁড়ে ছিৎরে বেরিয়ে যাচ্ছে আমার হামলাদার আক্রোশ
নালির পাঁকে হাত-পা চুবিয়ে ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে ১ গেলাস জল খুঁজছি আমি
স্ত্রীলোকের ঠোঁট থেকে এঁটো এলকহল তুলে আস্তিনে পুঁছে নিয়েছিলুম
এখন এই রাত্তির বেলায় সমুদ্রের ঢেউএর উপর চিত হয়ে
. আলতোভাবে শুয়ে
লাজুক মাছদের শিস শোনার ইচ্ছে হচ্ছে আমার
পিয়ানো একোর্ডিয়ানের বেলোর ফুটো দিয়ে আমার দিকে উড়ে আসছে
. লাল উন্মত্ত জোঁকের মিউনিসিপাল দল
সারি সারি মরার শক্ত মুঠো খুলে আমি চকিত বোতাম জড় কোর্ছি
বিবরঘাটি খুড়ে আমার ৪ দিকে সঙিন উঁচিয়ে রেখেছে শান্তিকামী মানুষেরা
দাফনকরা লাশের ৮ দিকেপিল্পে গেঁথে পেছিয়ে যাচ্ছে অধ্যবসায়ী ঘাস
সাইকোথেরাপি আর বিদ্যুত্শকে বিবাহবিচ্ছেদ রুখে
. আজকাল সিঁদুরের খরচ বেড়ে গেছে
আমার ২৫ বছরের ক্ষয়ে-যাওয়া গোড়ালি
. বাঁক নিয়েআমাকে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে
কায়েমি স্বার্থের জোট জমিয়ে তুলছি আমি
. আমার হিসেবী ঘিলুর হুঁশিয়ারী খাপখোপে
আমার চামড়ার পাতলা চাদরের নীচে চলাফেরা কোর্ছে আমার কর্মফল
২০৬টা হাড়ের টাল সামলে
. মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছি আমি বৈধাবৈধ এঁটোকাটা সমেত
আমার কুরুচিকে আমি লেলিয়ে দিচ্ছি আমারি পেছনে
দুঃখ কষ্ট পাবার জন্যে মানুষেরা লায়েক হয়ে নিচ্ছে
আমার ডান হাতের ছেঁড়া শিরার ভেতর থেকে ভেসে আসছে
. ২০০০ কঙ্কাল ভাঙাভাঙির সালতামামি
মৃত্যুর টেন্ডার খাম খুলে আমারি ৩২ পয়েন্ট হাফটোন ছবি পাচ্ছি
নিজেরি চিঠি নিয়ে নিজের বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না ডাকপিওন
নিজের রক্তে লাল কেলাসিত টুকরোতে
. আংটির বাহার কেমন খুলতে পারে আমি ভেবে দেখছি এখন
শরীরের বিভিন্ন জায়গা কাঁপিয়ে শীতকে আমার গায়ে বসতে দিচ্ছি না
ঘুমের ভেতর আমি শিউরে উঠছি
১ই ব্যাপার থেকে তৈরি হচ্ছে সত্যিমিখ্যে
১ই ব্যাপার থেকে তৈরি হচ্ছে জ্ঞানী আর অজ্ঞান হবার মসলাপাতি
মাছমাংস তরকারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার রক্তমাংস
মাছমাংস তরকারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার শুক্রকীট ও কৃমিকীট
মাছমাংস তরকারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার মলমূত
মাছমাংস তরকারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার চোখের জল
আমাকে মানুষেরা যা কিছু শিখিয়েছে আমি সে-সব ভুলে যাবার চেষ্টা কোর্ছি
শীতকাল বলে আমি কোর্টের নীচে ময়লা শার্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছি
পৃথিবীর প্রতিটি পার্লামেন্টের ল্যাভটরিতে
. দৈনিক ৫০০ লিটার রাজনীতি সাংবাদিকদের নজর এড়াচ্ছে
মানুষই মানুষকে শেখাচ্ছে পড়াচ্ছে শৃঙ্খলার গুণ ও হিটলারের আত্মকথা
আমি মলয় রায়চৌধুরীকে একদম বুঝে উঠতে পার্ছিনা
দেশ বিদেশের ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুদ্ধ-বিরতি রেখা
গুনোগাত দিয়ে নাপিতের কাছ থেকে মানুষেরা মেজাজে আদর খাচ্ছে
সমুদ্রের একতলার হলঘরে মশাল জ্বালিয়ে
. আমি সাঁৎরে খুঁজে বেড়াচ্ছি ইং ও বাং ভাষায় আমার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
এখন ভারতবর্ষময় ৯০০০ লোক তাদের ছেলেপুলের
. বিয়ের পণ গুনছে বিবাহ আড্ডায় উবু হয়ে
অনেক উঁচুতে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি প্রতিযোগিতামূলক
. সাঁতার দিয়ে ফিরে যাচ্ছে ভাঁটায় মার-খাওয়া নদীর জল
টেবিলের নীচে ৩৫০০০০ আমলার ঘুষাঘুষময় স্বদেশি পা নেচে উঠছে রোজ
ডাকযোগে উচ্চশিক্ষা পেয়ে ফুলে উঠেছে বাঙালি মফস্সল
অন্ধকার ঘরে বসে আমি চুপচাপ সিগারেটের আগুন দেখছি
দিনকেদিন আমার কপালে দাগ পড়ে যাচ্ছে
আমি মরে যাব আমি মরে যাব আমি মরে যাব
আমার দুঃখ কষ্ট বুঝতে না পেরে
. ভেতরে-ভেতরে আমার হাড়গোড় চিঢ় খেয়ে যাচ্ছে
খারাপভাবে জড়ো করা গাগতর দিয়ে তৈরি হয়েছে আমার দেহাভিমান
সমস্ত বারণ অমান্য কোরে আমি আমার আত্মার কাছে যেতে চাইছি
মাটিতে ভিজে পায়ের ছাপ পড়ছে পায়ের চেটোয় উঠে আসছে ধুলোবালি
অবলা ভিতু জাহাজকে বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছে লাইটহাউস
নারীর বেহায়া লজ্জা হাঁটকে আমি বহুকাল শীতকাল গ্রীষ্মকাল ঠাওর করেছি
স্ত্রীলোকের চেয়ে ইউরোনিয়াম আজকাল বেশি দরে বিকোয়
আণবিক-ফোঁড়া কম্প্রেস করা হল বিজ্ঞান
শুক্রকে রজঃকীটের সঙ্গে মেলামেশা কোর্তে না-দেয়া বিজ্ঞান
নারীর গর্ভকে অকেজো কোরে দেয়া মানে বিজ্ঞান
কেন পৃথিবির মাটিতে আপেল নেবে আসে আমি জানলুম না
আমি গ্রন্থের বদলে মানুষকে দিয়েছিলুম জুতোর খালি বাক্স
নিজের খোঁজে ফিরে এলুম মেখলিগঞ্জ থেকে ধাপড়াহাট
১ জন হাফ-চেনা নারীর খোঁজে চলে গেলুম ধরমপুর থেকে পিপারিয়া
আমি ভোটের বাক্সের কাছে গিয়ে
. বুঝতে পারি হাত ২টো বাড়িতে ফেলে এসেছি
১ম / ২য় / ৩য় শ্রেণির ঠিকাদারদের কাঠ পৌঁছে যাচ্ছে শ্মশানে
লোথিয়ান দ্বিপ বা পাঙাসমারির চরের ওপরেও ছড়িয়ে থাকে
. বিলাতফেরত মানুষির উরুর হাড়
আমি দেখলুম হাতঘড়িরে পড়িয়ে রাখা দরদি কান্নামোছা হাত
আমি নালির পাঁক থেকে রংওঠা বেলুন তুলে ফুলিয়েছিলুম
পাখির গু থেকে বীজ বেরিয়ে এসে দেয়ালে জন্মাচ্ছে বিশাল বট
এখন আমি প্রত্যেকটা ব্যাপারে শব্দ শুন্তে পাচ্ছি
আমি আমার নিজের কাছে শুয়ে নিজেকে ভালোবাসলুম
উইলিয়াম ব্লেকের সঙ্গে শুয়ে রইলুম তার আঙুরমাচানের নীচে
হুইটম্যানের চটের ওপর শুয়ে
. মৌচাক থেকে বাড়তি মধু ঝরে পড়ায় গম্ভীর শব্দ শুনলুম
নীলার লেপের নীচে শুয়ে আদ্দেক রাত্তিরে উঠে এলুম নিজের ঠাণ্ডা বিছানায়
জীবনানন্দরে বিছানার খোঁজে
. রাসবেহারি এভেন্যুর ফুটপাথে ছুটোছুটি কোর্লুম ঘুমন্ত অবস্থায়
. নিজের গলা টিপে বন্ধ কোরে দিলুম কুকুরের গরররর চোখরাঙানি
মানুষ হবার দরিনই আমাকে খাবারের দোকানে লাইন দিতে হল
আমি কেন মানুষদের মারপ্যাঁচে আটকে রইলুম জান্তে চাই এবার
পুরোপুরি অক্ষরজ্ঞান শূণ্য হবার জন্যে
. আমি কানে তুলো ঝেড়ে খুঁজে দেখছি আমার প্রথম কাঁকর
নিজের শরীরে কেরোসিন বাঁচিয়ে রাখতে হয় চিতার বিছানা অব্দি
সিমেন্টের মেঝের ওপর বালিঘষার শব্দে আমার দাঁত শিউরে উঠছে
আমি কতৃত্বাভিমানকে লাথি মেরে চলে এলুম নিজের হৃদযন্ত্রের কাছে
নিজের হৃৎপিণ্ডের ওপরে রাখলুম আমার ২৫ বছরের ঘেয়ো ময়লা হাত
শরীরের ৯টা দরোজা খুলে রেখে
. ২৫ বছর কেবল টুথব্রাশের ব্যবহার কোর্লুম
পুরোনো দেয়ালের কাছে ২ হাত পেতে নিলুম নোনা ইঁটের ঝুরো ব্যর্থতা
দরোজার খিল এঁটে
. মাঝঘরে হাঁটু গেড়ে বসে রইলুম ইহলৌকিক গায়ের মধ্যে
স্টোভের পোকার দিয়ে খোঁচাতে হল আমার গায়ের সবকটা উদ্বিগ্ন লোমমুখ
আসল সংগীত শোনার জন্যে
. জেলের দেয়ালের ইঁট এনে তার ওপর কান পেতে শুলুম
অসীম বলতে আমি বুঝছি আমার নিজেরি গায়ের চামড়া
আমার সামান্য ফুঁ-এ
. পৃথিবীর সমস্ত গ্রন্থের অক্ষর উড়ে তালগোল পাকিয়ে যায়
প্রেমিকার বিয়ের নেমতন্ন খেয়ে আমার আঁচানো হল না
ভীষণ শীতেও আমি 3 1/2 ঘন্টা বাথটাবের ঠাণ্ডা জলে শুয়ে
. গায়ের গরম তুলে ফেলতে পার্লুমনা
মদ খেয়ে মাতলামো সারিয়ে তুলতে গেলুম খালাসিটোলায়
আজো আমার বোঝা হল না সুখ-দুঃখের আসল তফাত
আত্মার পচন নেই বলে আমি নিজের আত্মা ফেলে দিতে চাইছি
চোখ বুজে দেখতে পাচ্ছি মায়ের গর্ভের গোলাপি রং
শরীরের চাদ্দিকময় ২৫০০০ আঁতের অতিসূক্ষ্ম ঝুরি নেবে রয়েছে
রেডিয়োয় থিয়েটার শুনে কেঁদে ফেলছে কোল্কাতার নরমহৃদয় মানুষমানুষী
গাদাগাদি কোরে
. বিয়েতো-বিয়োতে গাঁ-মাঠ-পরগনার দিকে ছুটে যাচ্ছে কোল্কাতা
অস্থির রাস্তার ২ পাশ দিয়ে পেছোচ্ছে স্থির গাছপালা
উচ্চারিত কথার গা থেকে কার্বন ডায়ক্সাইড শুষে নিচ্ছে গাছের ভিনিগার
ছাদের ওপরে দাঁড়িয়ে পঙ্গপালের ঝাঁক দেখতে আমার ভালোলেগে যায়
পঙ্গপালের ঝাঁকের পেছনে উড়ে যায়
. ৮০০০০০ উদ্বোধনকারী মন্ত্রী ও তাদের কাঁচির দঙ্গল
প্রাচীন মায়াপুর থেকে উড়ো খামে চলে আসে
. ভারী আর বেয়ারিং ভালোবাসা
শীতের জন্য রঙিন কাপড়ের ট্রাউজারের ভেতরে উলঙ্গ হয়ে ঢুকে আছি
গায়ের সবকটা তিল আর আঁচিল ক্রমশ এঁটুলিতে বোদলে যাচ্ছে
দুমকার গেরুয়া কাঁকরের ওপর দিয়ে খালি পায়ে দৌড়ে
. মাথা ঠিক কোরে নিতে চেয়েছিলুম
এখন আমি এক এক কোরে ওড়াচ্ছি আমার রক্তমাখা চোখ
গাছের গায়ের ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে খিল দেরাজ ফাঁসিকাঠ
আমি এখন তৈরি কোর্ছি ৩য় বিশ্বযুদ্ধের খসড়া খেয়োখেয়ি
ভিড়ে ভেতরে ঢুকলে কনুই ২টো নিয়ে যেতে হয়
কোল্কাতার প্রতিটি রাস্তায় পড়ে রয়েছে ধস্তাধস্তির মুনাফাকারী চিহ্ন
লাইসেন্স করানো বেড়াজাল গিয়ে পড়ছে তোপসের কমার্সিয়াল আড্ডায়
সমদ্ধিবাহু ঢেউদের মাঝখান দিয়ে চলে যাচ্ছে পৃথিবীর শেষ নৌকো
শুশুক ডুবে যাবার পর ঢেউদের আঢাকা গর্ভ আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
মানুষদের বাড়িতে বেড়া লাগানো দরকার হয়ে থাকে
. সভ্যতার সার্টিফিকেট হিসেবে
আমি যেই বোসছি ঘরের প্রত্যেকটা ছবি আমার দিকে তাকাচ্ছে
মুখের ওপর স্ত্রীলোকের মুখ চেপে ধরে
. ডাবের ঠাণ্ডা জল খাবার ইচ্ছে হচ্ছে এসময়
স্নানের পর নীলার শীতল আর নরম চামড়ার কচি আতর ভেসে আসছে
ঘুম থেকে উঠে দেখছি সারা শরীর ছড়ে গেছে
ভারি বুট পায়ে অন্ধকার গলির মধ্য দিয়ে ছুটে যাচ্ছে
. আমার নৈতিক আত্মহত্যার খুনখারাপ আততায়ী
আমার শরীরে এখন চোলছে কেপমারি খুনজখম রাহাজানি ছিন্তাই
আমার হাত-পা দিয়েই আমাকে সকলে পেটাচ্ছে
তমসার কাছে মৃত্যু ভিক্কে চাইতে গিয়ে লুকিয়ে ফিরে এলুম
মলয়ের বুকের বাঁদিকে ছোরা বসিয়ে খুঁজলুম কার দেহাত্মবিবেক
পৃথিবীকেও কেন মাঝে মাঝে অচেনা লাগে জানি না
রোগীরা গলা ফুঁড়ে গ্লুকোজ যাচ্ছে
আবার তাকে হিঁচড়ে রাস্তায় নাবিয়ে জীবনের ধকল সওয়ানো হবে বলে
আজ জানিনা কেন ১ জনকে মৌলালিতে মারা মানে খুন
. রাজশাহিতে মারা মানে দেশপ্রেম
ভালো মানে ভালো কিনা বুঝে নিতে
. আমিআকন্দের রোঁয়ার সঙ্গে ঘুরে বেড়ালুম
কিচুদূর ঠেলে নেবার পর মানুষেরা স্টার্ট নিচ্ছে
শ্বেতপাথরের ঠাণ্ডা মেঝেয় উদোমগায়ে শুয়ে থাকার ইচ্ছে হচ্ছে এখন
হ্যাঙারে গায়ের চামড়া ঝুলিয়ে রেখে
. নিজের কঙ্কালের মধ্যে ঘুমোলাম ২৫ বছর
আমি আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি লোভ আর ঔদাসীন্য