কবি মল্লিকা সেনগুপ্তর কবিতা
*
স্বামীর কালো হাত
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

মশারি গুঁজে দিয়ে যেই সে শোয় তার
স্বামীর কালো হাত হাতড়ে খুঁজে নিল
দেহের সাপব্যাঙ, লাগছে ছাড় দেখি
ক্রোধে সে কালো হাত মুচড়ে দিল বুক
বলল, শোনো শ্বেতা, ঢলানি করবে না
কখনও যদি ওই আকাশে ধ্রুবতারা
তোমাকে ইশারায় ডাকছে দেখি আমি
ভীষণ গাড্ডায় তুমিও পড়ে যাবে,
শ্বেতার শ্বেত উরু শূণ্যে দুলে ওঠে
আঁকড়ে ধরে পিঠ, স্বামীর কালো পিঠ |

*************
*?
তেভাগার ডায়েরি
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

আমি বিলাসিনীদের কাপড়ে নক্সা তুলি, সামান্য জীবিকা
পোকা আলু আর আতপ দেয় হাত ভরে
ভাসুরের কাছাকাছি এলোচুলে থাকি না কখনও

খোঁপায় জড়িয়ে নেব লাল ফিতে, কাস্তের ফলক
ক্ষেতের ফসল তিন ভাগ হবে, দুই ভাগ গৃহমূষিকের
উনুনের চার পাশে বসে হাত গরম করছি |

দূরের চাষিকে শালপাতা মুড়ে খবর পাঠাও
আনো কেরোসিন, যদি দরকার হয় আগুন জ্বালাব

*************
*
সুজাতা, ১১ মে ১৯৯৮  
(ঐ তারিখে ভারত যে পরমানু বোমাটি ফাটায়, তার নাম স্মাইলিং বুদ্ধ)
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

কোথায়, কোথায় তিনি ?
ওরা যে বলল এই মরুস্থানে তিনি হাসছেন !

আমাকে তোমরা কেন যেতে দিচ্ছ না
এত পুলিশ পাহরা, লোকজন, অস্ত্রসম্ভার !
তোমরা বুঝতে পারছ না, উপোসি আছেন তিনি
আমি এই পরমান্ন নিয়ে তাঁর কাছে যেতে চাই
কয়েক শতাব্দি ধরে খুঁজতে খুঁজতে
আজ এত দিন পরে সন্ধান পেযেছি তাঁর এই মরুদেশে

বুদ্ধপূর্ণিমার রাত
ভয়ংকর শব্দ লেগে পরমান্ন চলকে পড়ল
চারিদিকে হৈ হৈ হাততালি, জনবিস্ফোরণ
সবাই বলল, দেখো, তিনি হাসছেন

তিনি হাসছেন ! এই ভয়-শব্ দ  তাঁরই হাসির |
কাকে তোরা বেদিতে বসালি
কাকে তোরা সৈন্যদল পাহারা দিচ্ছিস
এ তো আলোকসামান্য সে মানব নয় !
এত ধোঁয়া, এত শব্ দ  এত সৈন্যদল দিয়ে ঘেরা যে মানুষ
তাঁর পরমান্ন আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি
ওই যারা উর্ধ্বশ্বাসে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে
তাঁর পরমান্ন আমি সেই সব নিরন্নকে ভাগ করে দেব |

পারমানবিক বুদ্ধ এই দেশে থাকুক উপোসি |

*************
*
বালিকা ও দুষ্টু লোক
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত
বালিকাকে যৌনহেনস্থার দায়ে স্কুল বাসের ড্রাইভার ও হেল্পার ধৃত --
                                            সংবাদ, আগস্ট, ২০০১

স্কুলবাসের বাচ্চা মেয়ে
সবার শেষে নামে
সঙ্গীগুলো বিদায় নিলে
তার কেন গা ঘামে !

বাসের কাকু বাসের চাচা
কেমন যেন করে
হঠাত্ গাড়ি থামিয়ে দিয়ে
আমায় নিয়ে পড়ে

কাকু জেঠুর মতন নয়
দুষ্টু লোক ওরা
মাগো আমার বাস ছাড়িয়ে
দাও না সাদা ঘোড়া !

দুষ্টু কাকু দুষ্টু চাচা
থাকুক না তার ঘরে
বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে কেন
অসভ্যতা করে !

এই পৃথিবী সাদা কালোয়
মন্দ এবং ভাল
তবু কেন এই জীবনে
ঘনিয়ে এল কালো ?

আমার কিছু ভাল্লাগে না
স্কুলের বাসে ভয়
মাগো তোমার পায়ে পড়ি
ওই বাসে আর নয়

আমাকে আর কিছুতেই যেন
না ছুঁতে পারে ওরা
আমাকে দাও সবুজ মাঠ
পক্ষীরাজ ঘোড়া |

*********
*
অনাবাসির চিঠি
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

এখানে জীবন বড় মায়াময়
বদলে গিয়েছে সমাজ সময়
এখানে সুখের ঘর বানিয়েছি
তপ্ত দুপুরে সারা দিন এ সি
তবু মনে পড়ে ধূ ধূ বাংলায়
বন্ধুরা মিলে শিতে বরষায়
চায়ের কাপেই তুলেছি তুফান
রকে বসে বসে সিনেমার গান

মন খারাপের বিকেলবেলায়
একটি মেয়েকে মনে পড়ে যায়
দেশে ফেলে আসা সেই সুখস্মৃতি
ভোলা তো গেল না প্রথম পিরিতি
এ দেশে আরাম এ দেশে ডলার
ছেলে মেয়ে বৌ ফিরবে না আর
এখন এখানে নামছে শেকড়
জমিও কিনেছি দু-এক একর

এখানে অশেষ অঢেল খাবার
এখানে পিত্জা হ্যামবার্গার
তবুও মায়ের হাতের শুক্ তো
মনে পড়লেই ভিষণ দুখ তো !
এখানে বৌরা স্বয়ংসিদ্ধা
নিজে হাতে কাজ তরুণী বৃদ্ধা
তবু মনে পড়ে কলেজের সেই
ছিপছিপে রোগা তরুণীটিকেই
বুকে দাগা দিয়ে গিয়েছিল চলে
আজও ডাক দেয় স্মৃতির অতলে

এখানে সুখের ঘর বানিয়েছি
তবু মনে হয় কি যেন হল না
বুক খাঁ খাঁ করে, বলো না বলো না
সুখপাখিটিকে হারিয়ে ফেলেছি |

*************
*
রেডলাইট নাচ
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

ঊর্বশীর মেয়ে ওরা মধু মঞ্চে নাচতে এসেছে
সমস্ত শরীর যেন প্রতিবাদ, সালমা খাতুন
কালো সালোয়ার পড়া মেয়েটি দাঁড়াল মঞ্চে এসে
ওর কণ্ঠে কথা বলে উঠেছিল কথামানবীরা

দৃপ্ত কালো আগুনের মতো ওই মেয়েটিকে দেখে
বুঝতে পারেনি কেউ
ওর রক্তে ঢুকে গেছে পজিটিভ এইচ আই ভি
একটা একটা কোষ মরে যাচ্ছে পল অনুপল
আর মাত্র এক মাস আয়ু আছে ওর

বেবি সিং মঞ্চে এসে দাঁড়াল এ বার
রোগা ঝর্নার মতো তিরতিরে মেয়ে
নাচের মুদ্রায় এত তির্যক বিদ্রোহ !
বাপের হদিশ ঠিক বুঝতে পারেনি কোনও দিন
মায়ের ধারণা, কোনও সর্দারজিই হবে ওর বাপ
বেওয়ারিশ জন্মের লজ্জায় ঘৃণায়
হোমে থাকতে এসেও মাঝরাত্রে কেঁদে ওঠা বেবি
পচা সমাজের দিকে নাচের মুদ্রায় যেন লাথি ছুড়ছিল --

বীণা সর্দার খালি গলায় এমন গান গেয়ে উঠল যে
মধুসূদন মঞ্চের বাতাস করুন হয়ে এল
তেজী হরিণীর মতো সারা মঞ্চে নেচে বেড়াচ্ছে সে
কে বলবে, তিনবার ওকে বিক্রি করে দিয়েছিল ওর বাবা !
নেপাল বর্ডার থেকে পুলিশ উদ্ধার করে এখানে এনেছে
পুরনো কথার ঘায়ে মাঝে মাঝেই ওর মাথা খারাপ হচ্ছে |

গঙ্গা মল্লিক এই মঞ্চে এসে কী আশ্চর্য কবিতা বলছে !
কথামানবীর কণ্ঠে শাহবানু, বেহুলা, দ্রৌপদী
কী ভাবে গঙ্গার মধ্যে সব একাকার !
বালিকা বয়সে ওর কাকা ওকে নিয়মিত ধর্ষণ করত
দগদগো ক্ষত নিয়ে কথামানবীর মঞ্চে এখন সে বাঁচতে এসেছে
বীনা গঙ্গা বেবি বা সালমা, ফুটফুটে এই কিশোরীরা
যে কেউ আমার ছাত্রি হয়ে ব্যাগ কাঁধে এসে দাঁড়াতে পারত
মহারাণা কাশীশ্বরী কলেজের দরজায়
বদলে ওদের কোও স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে
মার খাওয়া জন্তুর মতো পালিয়ে এসেছে ওরা মাথা নিচু

ঊর্বশীর মেয়েগুলি আমাদের পৃথিবীতে বাঁচতে চাইছে |

*************
*
ভাষা
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

ভাষা মানে তুমি আমি
ভাষা মানে বাংলা
ভাষা মানে বরাকর
থেকে ভাতজাংলা
বাজারের দোকানের
রাস্তার এ ভাষা
কবিতার স্লোগানের
বচসার এ ভাষা
বাংলায় কথা বলি
বাংলায় ছন্দ
তাই নিয়ে এত কথা
এত কেন দ্বন্দ্ব !
আমাদের বেঁচে থাকা
দাঁড়াবার ভঙ্গি
আমাদের শিকড়ের
পিপাসার সঙ্গী
আজ যদি সেই ভাষা
পথে পথে ভিখারি
যদি তাকে তাড়া করে
নিষ্ঠুর শিকারি
তবু ঘুম ভাঙবে না
পশ্চিমবঙ্গী !
একবার জেগে ওঠো
যুদ্ধের সঙ্গী |

*******
*
মারের আগমন
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

সুগন্ধ পুরুষ এক এসেছে আমার দরজায় |
তাঁকে ভালবাসি কি না কী করে বুঝবো ?

চিত্রিত শার্দুল এক এসেছেন এই হিমঘরে
রূপবান না হলেও সে তো স্বয়ংশাসিত এক মহারাজ
চুপিচুপি চুরি করে সে এখানে থাকতে এসেছে
উজ্জ্বল পোশাকে তার সন্মোহন, অভিমান, রাগ

প্রশস্ত দরজাবাহু এসেছেন মৃত্যুরূপী মার
ওই কূপে ঝাঁপ দিলে মৃত্যু নিশ্চিত
এ কথা জেনেও আমি উঁকি দিই, রামধনু দেখি
দেখি রাত্রির গোলাপ, একটি একটি করে পরত খুলছে
শেষে শুধু বাকি থাকে পুরুষ কেশর

মহাকাল আসছেন আজ রাতে বরফ চৌকাঠে |

.              *******                                                                        
উপরে   
*
আম্রপালী
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

অন্ধকারে কালো কাপড় পরে
আম্রপালী পালিয়ে যায় বলিদ্বীপের খাঁজে
পেছনে তার সাংবাদিক, গুপ্তচর আর
গণসভার লোলুপ আততায়ী

ত্রস্ত চোখ | লাস্য তার আচ্ছাদিত বিষাদ কালো মেঘে
আম্রপালী বাঁচতে চায় | সমাজ চায় প্রমাণ লোপ হোক
সুনন্দিত কপালে তার সদ্য ক্ষত দাগ
ঢিল মেরেছে পুরুষ, যারা প্রেমিক ছিল আগে

ঢিল মারছে গ্রামের মানুষেরা
"নষ্ট মেয়ে, মেরে তাড়াও", রব তুলেছে পঞ্চায়েত
আম্রপালী ঘুরে তাকায়, দেখে
এরা সবাই রাতনাগর, ওই নন্দ, ওই যে শ্যাম সব
এরাই তাকে নামিয়েছিল চোরাবালির ফাঁদে

গণিকালয়, মীনাবাজার তৈরী করে কারা ?
প্রতি যুগেই ইন্দ্র কেন ঊর্বশীর অধীশ্বর হন ?
আম্রপালী প্রশ্ন করে, প্রশ্ন মুছে যায়---

অন্ধকারে সাদা কাপড় পরে
আম্রপালী শরণ নেয় অমিতাভর পায়ে
আছড়ে পরে শান্তি চায় | পেছনে ছুটে আসে
হাউস অব কমনস এর গুপ্তচর দল

হাসপাতালে আম্রপালী আরোগ্যের জন্য শুয়ে থাকে
তখনও তার চতুর্দিকে টেলিভিশন-চোখ
প্রত্যুষের আগেই তাকে বিম্বিসার অস্বীকার করে

এই পুরুষ, এই প্রেমিক, বৈশালীর সুনাগরিকগণ
গণসভায় রায় দিয়েছে---

"আম্রপালী পরম নারী, নিয়তি তার নগরনটী হওয়া"

আম্রপালী পালিয়ে যায়, পেছনে তার সমাজ তাড়া করে
আম্রপালী বাঁচতে চায়, সমাজ চায় প্রমাণ লোপ হোক |

.                         *******                                                              
উপরে   
*
মিথ্যার দশটি মাথা
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

যার সঙ্গে সহবাস করো তাকে মিথ্যা বোলো না
মিথ্যার দশটি মাথা দশ মুখে ছড়ায় জঞ্জাল

ভালবাসা মরে গেছে তাই মুখে জঞ্জাল লেগেছে
স্বরূপ বুঝেছে তার জীবমৃত যে দুটি মানুষ
তাদের শোবার ঘরে এপিটাফ লিখবে কবিরা
শাদা খই ঢেকে দেবে প্রণয়ের মতো অভিনয়
জীবন পালটে ফেলা যতটা কঠিন
ফুরনো প্রেমের শব কাঁধে রাখা শক্ত তার চেয়ে |

.                   *******                                                              
উপরে   
*
চোখ
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

কিছুতেই বোঝে না সে ভালবাসা শিয়রে এসেছে
বিছানার পাশে রাখা ছোট্ট সাদা আলো
ভালবাসা সন্তর্পণে সেখানে এসেছে |
আঁচল উড়তে দেখে যুবকটি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে উড়ে আসা ঘোড়া দেখে---
গবেষণাগারে ফেলে এসেছে সে আতস চশমা

আকুলতা স্পর্শ করে তাকে
তবু সে চেনে না চোখ, যে নয়নে তার জন্য রহস্য জমেছে

.                     *******                                                                     
উপরে   
*
ফ্রয়েডকে খোলা চিঠি
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

পুরুষের দেহে এক বাড়তি প্রত্যঙ্গ
দিয়েছে শাশ্বত শক্তি, পৃথিবীর মালিকানা তাকে
ফ্রয়েডবাবুর মতে ওটি নেই বলে নারী হীনমন্য থাকে
পায়ের তলায় থেকে ঈর্ষা করে পৌরুষের প্রতি

প্রকৃতি সদয় নয়
পুরুষ সদয় নয়
সন্তান সদয় নয়
মেয়েদের প্রতি শুধু ফ্রয়েড সদয় !

এই দয়া কে চেয়েছে ! চিত্রাঙ্গদা ! জোন অব্ আর্ক !
সিমোন দ্য বোভোয়া না শ্যামল দ্রৌপদী !

"পেনিস-এনভি" বলে একটি শব্দ
পৃথিবীতে এনেছেন ফ্রয়েড সাহেব
ওই যে বাড়তি শুধু পুরুষের থাকে
ওই নাকি মেয়েদের কমতি বানায়
তাই তারা শিশুকালে টলমল করে
বালিকা বয়সে তাই শিবলিঙ্গ আকন্দে সাজায়
খেলাঘর ভরে ওঠে পুতুলে ও বাসনকোসনে
কারণ সে নাকি তার মায়ের প্রতিভূ |

অন্যদিকে রোহিতের জন্য থাকে শৌর্যপ্রস্তুতি
জংলাসবুজ উর্দি মার্কিন সেনারা তার ঘরে
ছোটায় মেশিনগান, ট্রা রা রা রা শব্দে সুগঠিত
হয়ে ওঠে পুরুষের আক্রমণ
শাণিত নখরে যদি গাল চিরে দেয়
দিদিমারা খুশি হয় বারতি বীরত্বে |
ওই যে বাড়তিটুকু শরীরের, ওই ছাড়পত্র
ওই তাকে পৃথিবীর মালিক বানাবে

রোহিত মালিক হবে কোন পৃথিবীর ?

যেখানে রোহিতা তার সহকারী ! অধম লিঙ্গ !
ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠে খোলা তলোয়ার
বিশ্ববিজয়ে যাবে সম্রাট রোহিত
আর তাকে যুদ্ধ সাজ পরাবে তার মা বোন বউ
এই শুধু চেয়েছেন আপনি ফ্রয়েড !
উল্টোদিক থেকে যদি ঘোটকীর পিঠে কোনও নারী যোদ্ধা আসে
সে কী অস্ত্র ফেলে দেবে ভীষ্মের মতন---
"নারীর বিরুদ্ধে আমি অস্ত্র ধরবো না"
অর্থাত নারীকে আমি দেব না অস্ত্রের অধিকার---

এই লিঙ্গরাজনীতি আদি পুরুষের
ফ্রয়েড আপনি নিজে বাড়তির দলে বলে ধরেই নিলেন
মেয়েরা কমতি, তাই পুরুষের প্রতি তারা ঈর্ষাকাতর !

আমার শৈশবে কোনও লিঙ্গঈর্ষা কখনও ছিল না
আত্মপরিচয়ে আমি সম্পূর্ণ ছিলাম
আজও আমি দ্বিধাহীন সম্পূর্ণ মানুষী
তৃতীয়বিশ্বের এক স্পর্শকাতর কালো মেয়ে
আজ থেকে আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে
কে অধম কে উত্তম বাড়তি কে কমতি কোনটা---
এই কূট তর্কের মিমাংসা করবার ভার
আপনাকে কে দিয়েছে ফ্রয়েড সাহেব !


.                      *******                                                                  
উপরে   
*
মিলেনিয়াম
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

মিলেনিয়াম মিলেনিয়াম
চর্যাপদের পুঁথির পাতায়
আমিও ছিলাম,
অশ্বমেধের ঘোড়ার খুরে
আমিই ধুলো উড়িয়েছিলাম
গৌড় এবং বঙ্গ হলেও
বাংলা আমার আসল নাম
আমিই ওনার প্রথম পত্নী
ভারতবর্ষ বরের নাম

বাবু ভারত বুড়ো কুলীন
বাইশটা বৌ বাইশ ধাম
উঠতে বসতে তির শানাচ্ছে
সীমান্তে সব পরশুরাম
আমি বাবুর দুঃখীরানি
ঘুঁটেকুড়ানি মাথার ঘাম
টাকা পয়সা দেয় না কিছু
চাইলে বলে বিধিই বাম
এখনকার ভাঙা কুড়েয়
কেটে যাচ্ছে দিবসযাম

বরের দেওয়া লাঠি ঝাঁটায়
বঞ্চনাময় শহর গ্রাম
ডুবে যাচ্ছে ভেসে যাচ্ছে
আমার ঘরের দালান থাম
ভারতবাবুর হারেম ভর্তি
বহুবর্ণ রঙিন শাম
সবাই যদি পালায় তবু
আমি থাকব অহর্যাম

ভরতবর্ষ তোমার সঙ্গে
এত বছর কাটিয়ে দিলাম
এখন হাজার বছর পরে
বাংলা বউয়ের এই কি ইনাম

মিলেনিয়াম !


.    *******                                                                                 
উপরে   
*
মেয়েদের অ আ ক খ
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

অনেক তো হল মানবিকতার ভাষ্য
পৃথিবীটা তবু একচুলও এগোল না
এবার তাহলে মানবিকতাই হোক
একুশ শতকে স্বপ্ন দেখার চোখ
*
আগুন
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত

এ বার পেঁয়াজ আদা টক দই টাটকা রসুন
আলু আর শালগম দিয়ে
ডেকচিতে ঢিমে আঁচে তরুণীর মাংস কষুন
দাউ দাউ আগুনের মধ্য থেকে সিঁদুরের টিপ
একটি কাজল চোখ ভাসলেও
টাকার বান্ডিল ছুঁড়ে রুখে দিন পুলিশের জিপ
মেয়েটির কি কি দোষ ? বাপ দেয় নি যৌতুক
এ তো স্বতঃসিদ্ধ, কালো মেয়ে তবু
মারলেই প্রতিবাদ করে ওঠে এমনই কৌতুক !

ঠাকুরের ঘরে বসে শশুর লেখেন---
"এ মেয়েকে জলজ্যান্ত রাখা খুব মুশকিল ছিল
ভাগ্যবান ছেলে তাই বউটাকে আগুনে সঁপিল"


.                   *******                                                                   
উপরে   
স্বরবর্ণ





































অয় অজগর আসছে তেড়ে
ছোট্ট মেয়ের স্বপ্ন ঘেরে

আমার তোমার সবার চোখে
ময়াল সাপের মতন ও কে ?

ইঁদুর ছানা ভয়েই মরে
ধর্ষিত সে ভীষণ ঝড়ে

ঈগল পাখি দ্বিতীয় ভয়
থানা পুলিশ কোর্টে রয়

উট চলেছে উল্টোপুরাণ
মধ্যযুগে সে অভিযান

ঊনো জমির দুনো ফসল
বঙ্গদিশি মেয়ের দল

ঋতুবেলায় অশুচি নারী
অন্য সময় ঠেলবে হাঁড়ি

৯-কার কেমন ডিগবাজি খায়
লুপ্ত হওয়ার লাজ শঙ্কায়

একুশ থেকে ইচ্ছা-পোশাক
যে দেখে তার চক্ষু টাটাক

ঐ দেখো ওর ঘোমটা খোলা
বোরখা খোলা আপন ভোলা

ওল খেও না ধরবে গলা
ময়ালকে তা মিছে বলা

ঔষধে যে ময়াল মরে
সে ঔষধ কি আছে ঘরে !  
ব্যঞ্জনবর্ণ




































































































ড়


ঢ়














কন্যাশিশুর বিপদ বাড়ছে
যৌতুক যত সীমানা ছাড়ছে

খনার জিভ বাতাসে নড়ে
মুখ ফোটে না সাতাশ চড়ে

গণিকালয় কারা বানায়
ভিয়েতনামে হাড়কাটায়

ঘর তোমার রাজ তোমার
আমি পুতুলখেলা তোমার

ঙ নৌকা মাঝি ব্যাঙ
পুরুষতন্ত্র ড্যাডাং ড্যাং

চৌকাঠের ভাঙন ওরা
লাবণ্য সীতা ইলেকট্রা নোরা

ছবির মতো না, ওরা স্বয়ং
ছবি বানায় রং-বেরং

জরায়ু যার বাচ্চা তার
আধাফসল থাক পিতার

ঝগড়াঝাঁটি ঝিঁঝির ডাক
মেয়ে পুরুষ জড়িয়ে থাক

ঞিহার পূজা প্রণাম বন্ধ
"পরমেশ্বরে" মানুষ গন্ধ !

টাকার গরম ওঠা নামায়
দাদু একাই টাকা কামায়

ঠাকুরমার জীবনভর
পরিশ্রমের দাম তো ধর

ডিম আগে না মুরগি আগে
ইভ জাগে কি আদম জাগে !

ঢিসুম ঢিসুম পেশির জোর
আসমুদ্দুর পৃথিবী তোর

মূর্ধণ্য নাকের পরে
ইভ এখনও পচছে ঘরে

ত্র্যহস্পর্শে গেরস্থালি
মা হওয়া আর রূপের ডালি

থ হবেন না বাবুমশাই
ভালবেসেই এ চড় কষাই

দেরিদা জানে পাতায় পাতা
বিনির্মাণের খেরোর খাতা

ধর্মের কল পুরুষ নাড়ে
ধর্ম ছুড়ে ভীষণ মারে

নারীবাদের একুশ শতক
মেয়েরা চায় নিজস্ব হোক

পুরুষ তোমার এক ভাগ জল
তিনভাগ তুমি জলঅচল

ফেনার ভেনাস তোমার স্বপ্নে
আমি তবু বলি, "আমার সব নে"

বিবাহ মানে সারা জীবন
ভাঙাগড়ার অবগাহন

ভালবাসার গুপ্তধন
এক জীবন অন্বেষণ

মানবী সম্পদের দল
আমরা সব জলঅচল

যোনি আমার উপনিবেশ
শিবঠাকুরের আপন দেশ

ব়্যাডিক্যালিস্ট রাগিণী মেয়ে
পুরুষ তাকে পাবে না চেয়ে

লেসবিয়ান লেসবিয়ান
যৌনতার বিনির্মাণ

বিবাহ তবু শেষ আশ্রয় !
হতেও পারে প্রণয়ময়

শাখা সিঁদুর শাক ঢাকা মাছ
শয্যা শরীর শেকল গাছ

ষোড়শী কিছু আন্তিগোনে
বিদ্রোহের প্রহর গোনে

সাফো ছিলেন প্রথমা শ্লোক
সরস্বতী আশিরনখ

হিংসা যখন ঘরের ভেতর
প্রিয়তমই মৃত্যু যে তোর

"ড়" যন্ত্রের সামনে ষ
লিঙ্গ রাজনীতির দ

ঢ়-এর মাথা কামড়ে খায়
মেয়েপুঁথির সরলরেখা

ৎ-এ ক্রান্তিকাল
"পারসোনাল ইজ পলিটিকাল"

য় ছিল খুব নির্ভরশীল
সংসারে তার চেরনোবিল

ং টি ক্লোনিং শাবক
জনকহীনের জন্মছক

ঃ-এর বাবার নাম
ভিয়েতনাম লাল সেলাম

চন্দ্রবিন্দুর সংবিধান
অর্ধনারীশ্বরের গান