কবি মনামী ঘোষের কবিতা
জ্বলন্ত অভিবাদন
কবি মনামী ঘোষ

আজ অনেকদিন পরে তোমাকে দেখলাম,
সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে
সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেওয়ার খেলায় রত।
ধারাল দুটি চোখে বিদ্যুৎ
মাথা নিচু করে আভিবাদন গ্রহণের
সেই চেনা ভঙ্গীটি বড় প্রিয়
সবার আড়াল থেকে দেখলাম
বুকের মধ্যে ড্রামের শব্দ......

তুমি কি আমাকে দেখলে?
না দেখার ভান করে এড়িয়ে গেলে?
আমি আঁতিপাঁতি করে খুঁজলাম
তোমার চোখে নিঃসঙ্গতা-
তোমাকে অসুখী দেখতে চাই-
কোনও অতৃপ্তি পেলাম না তো!
হাসিটা যেন আরও চওড়া,
আমি পুড়লাম আবারও।

তোমার চোখ কাকে যেন খুঁজছিল-
কি চাপা দিতে অত বেশী হাসি?
তুমি কি জানতে আমি যাব?
তাই কি আমার পছন্দের সাজে?
আমাকে পোড়াতে অমন সুখীর মুখোশ?
চোখে আমার কমলা আগুন
জ্বলে যাচ্ছি... পুড়ে যাচ্ছি...
আমার জ্বলন্ত আভিবাদন তোমাকে।

.            ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিজয়ী
কবি মনামী ঘোষ

তোমার তর্জনী সংকেতে
         আমি প্রস্তরীভূত
ভাবছ নিজেকে সর্বশক্তিমান!
বুকেতে আগুন জ্বলছে যে অবিরত
মুছতে পারোনি আগ্নেয়গিরি নাম।

অন্যায় আর অপমান গুলো নিয়ে
বুকের ভিতরে ধিকিধিকি করে জ্বলি
একদিন ঠিক গরম লাভার স্রোতে
মুছে দেব সব সৃষ্টির পদাবলী।

সাগরের পানে ছুটে চলা নদী স্রোত
আটকে দিয়েছো তামাশা দেখার ছলে
           অন্তঃসলিলা –
       বয়ে চলি তাই আজও
মিশবই ঠিক মোহনায় ঢেউ জলে।

অসম লড়াইয়ে ক্ষুদ্রের পরাজয়
পড়বেই তুমি বিজয়ীর সাজ সজ্জা-
           জানো তাও তুমি
       ভাঙতে পারোনি আমায়
বিজয়ীর সাজ গৌরব নয়- লজ্জা।

.            ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রঙবদল
কবি মনামী ঘোষ

তুমি আমার কমলা রঙ সকাল বেলা,
তোমার জন্য ভাবনা জুড়ে রঙের খেলা।
ভাবনা যখন প্রজাপতির রঙিন পাখা
বাইরে তখন দুপুর নামে হলুদ মাখা।
দুপুরটুকু গড়িয়ে যায় বিনা কাজে
বিকেল তবে আসবে কি আজ রঙিন সাজে?
হলদে -রাঙা উধাও হল প্রতীক্ষাতে
ফ্যাকাসে নীল সন্ধ্যা নামে উঠোনেতে।
নীচের ঠোঁট কামড়ে শাসন চোখের জলও
একলা ঘরে রাত্রি যেন মৃত্যু কালো...
আঁধার রাত্রি ফিকে হয়ে ভোর আসে-
ঠিক তখনই তোমার কথা দূরাভাষে...
তোমার ছোঁয়ায় বিবর্ণ রাত রঙিন হলো
তুমি আমার গোলাপী লাল ভোরের আলো।

.            ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঝরাপাতার চিঠি
কবি মনামী ঘোষ

ভোরের হাওয়া চুপি চুপি
বলে গেছে তুমি আসবে......
সারাটা সকাল উঠোনে
আলপনা দিয়েছি তাই,
তোমার পছন্দের পদ রান্নায়
দুপুর গড়িয়ে গেছে।
বিকেলে স্নান করে পড়েছি
তোমার প্রিয় হলুদ শাড়ি,
খোঁপায় ফুল আর লাল টিপ,
পায়ে আলতা, কানে ঝুমকো,
ফুলদানিতে পাতাবাহার-
সব তোমার ভাললাগার......
কাজল পড়িনি জানো!
তোমাকে দেখার আনন্দে
কাজল ধুয়ে যায়।
ঠোঁট অনাবৃত
ঠিক যেমনটি চাও...
তারপর থেকে শুধু ঘর- বার...
হাত থেকে বাসন পড়েছে আনমনে
যে পাখিটা খড় কুটো দিয়ে ঘর বাঁধছিল
ঝনঝন শব্দে ভয় পেয়ে পালাল,
আমার নিকানো দাওয়ায়
কখন বসবে এসে!
শেষ বাসের শব্দটাও মিলিয়ে গেল
ছাতিমতলায় আঁধার নামল
রাত নিঝুম হল,
আমার উঠোনে চাঁদের আলো আসেনা
আরও একটা প্রতীক্ষার দিন শেষ...
বাতাসে উড়ে এল ঝরাপাতার চিঠি,
জানালো, তুমি আর আসবে না।

.            ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঘুড়ির কথা
কবি মনামী ঘোষ

আকাশের কাছে অনেক দাবি
তারই হাতে সুখের চাবি,
হাতছানি দিয়ে ডাকে দূরে-
ঘর ছাড়ার বাউল সুরে।
আমায় খুঁজি তার চোখে
ভালোবাসার অথৈ সুখে,
ভোঁকাট্টা লাটাই সুতো
ভাসবো আমি, বুকটি পাতো।
যাচ্ছি আকাশ- তোমায় ছুঁতে,
মিশে যাবো অসীমেতে।
বলল আকাশ আনমনে
“ভাসতে দিলাম আমার গাঙে
আরও কিছু চাস নাকি!
কিছুতো পাবার নেইকো বাকি
যা দিয়েছি তাইতো ঢের
এককণা বেশী পাবিনা এর”।

.         ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আগুন খেলা
কবি মনামী ঘোষ

সূর্যের গনগনে আগুনে
আকাশের বুকে পোড়া ক্ষত
তবু সে সংযমী-
উদাসীন, নিরাসক্ত।

আমার বুকেও দগদগে ঘা
কবিতার আড়ালে জ্বালা
প্রতিটি দিনকে নিয়ে
আগুনের ছিনিমিনি খেলা।

প্রতিদিন ভোর হয়
আকাশ হাসিতে রক্ত ছড়ায়
একলাটি কাঁদে সে
শিশির আর বৃষ্টি ধারায়।

ব্যথাকে লুকিয়ে হাসি
ভালো আছি বলতেই হয়
জীবন মানে তো যুদ্ধ
বেঁচে থাকা -অগ্নিময়।

.      ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বাউল মন
কবি মনামী ঘোষ

কেন বাউল বারবার
পথশেষের গান গায়?
যে পথ দিয়ে চলে যায়
পথশেষে সে কার দেখা পায়!

কষ্ট কষ্ট ভালোলাগা
একতারাটির তারের টানে
কি এক ব্যথার সুর বাঁধা
বাউলের ওই উদাস গানে!

‘ভাঙা পথের  রাঙা ধুলোয়’
গেরুয়া হল এই গৃহী মন,
ঘর ছাড়ার গানটি শেখাও
দাও আমায় বাউল জীবন।

কার গোপন হাতছানিতে
ছুটে চলি সব ছাড়িয়ে...,
পথের বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে
বাউল আমার হাত বাড়িয়ে।

পথের শেষ জানতে চেয়ে
বাউল এ মন গৃহহারা
পথ হারিয়ে অবশেষে
গোলকধাঁধায় ঘুরে মরা।

.      ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দুজনের কাছ থেকে পাওয়া চিরকুট গুলোকে
তারিখ অনুযায়ী সাজালাম...
কবি মনামী ঘোষ


---এবার ফাগুনে আমাকে কৃষ্ণচূড়ার রঙ দেবে?
---কৃষ্ণচূড়ায় জয় আছে,নিবেদন নেই। আমি জয় চাইনা।
---তুমি তো আমার মন জয় করেছো
---জয় তো হয় যুদ্ধে... প্রেমে শুধু নিবেদন।
---আমি তো তোমায় সবটুকু নিবেদন করে বসে আছি।
---সবটুকু নিবেদন করা কঠিন, অন্য কারো দাবী থাকেনা।
---দাবী? সে তো জোর করে আদায় করতে হয়... প্রেমে তো
  জোর খাটে না...
---জোর করে আদায় নয়... স্বেচ্ছায় সমর্পণ –তবে দান গ্রহণেও
 আমার ঘোর আপত্তি
---তবে যুদ্ধ করে অধিকার কর- রক্ত দিয়ে মালিকানা এঁকে দাও।
---আমি যোদ্ধা নই... রক্ত ঝরাতে পারিনা, পদ্য ছড়াতে পারি।
---তবে এসো...... ছেলেবেলার মত ধুলো মাটি দিয়েই প্রেমের
রঙ মাখি।
--- ধুলো খেলার আয়োজন করতে চাও?
---খেলা? আমি বুঝি তোমার খেলার বস্তু হলাম?
--- ওহ ...আমাদের নতুন বাসা...প্রেমের খেলাঘর।আমি যে
    সারাটা রাত জেগে জেগে খেলাঘরের নকশা করি।
--- মাটির বাড়ি- খড়ের চালা...বাগান... উঠোন ...মনে থাকবে?
--- বেশ, তবে এসো... কবে আসবে আমার কাছে?
--- আমার তো সময় হয়েছে – তোমার সময় কবে হবে?
---কটি বছর পর... থাকতে পারবে আমার জন্য?
---দিনের পরে দিন কেটে যায় অপেক্ষায়
---তুমি দিনে দিনে সুন্দরতম হয়ে উঠছো
--- একা একা সুন্দর অপূর্ণ ...তোমায় নিয়ে পূর্ণ হতে চাই
---তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম
  ভবিষ্যতের ভার
 মাথায় দেব প্রেমের সিঁদুর
  দুহাতে সংসার।

.      ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কিছু কথা
কবি মনামী ঘোষ

---ব্যস্ততা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে তোমায়... মুঠোফোন ও অপেক্ষমান...
---আমি হাজার কাজের খড়কুটো দিয়ে বাসা বাঁধি যে
---ব্যস্ততা তো তোমার আগেও ছিল। তার মাঝেও তো কথার মালা গাঁথা হয়েছে
---আমার কাছে কিছু দাবী করোনা... না চেয়ে কিছু পেলে তাই নিয়ে খুশি থাকো।
                          
ঐ পাখিটিকে দেখছো?
---হ্যাঁ, ভারী মিষ্টি ওর ডাক। নাম কি গো ওর?
---স্বাধীনতা-
---ওকে ধরে দাও না... বেঁধে রাখি... আমার একাকীত্বের মাঝে একটা সঙ্গী তো পাই...
ওকে কথা বলতে শেখাই।
---বেঁধে রাখলে এমন গান আর গাইবে না।
---ওকে আমি আদর দেবো
---তবুও না- আদর দিয়ে কি আলোকে বাঁধা যায়? বাতাস কে?
---আলোকে বাঁধি যত্ন দিয়ে সাঁঝ পিদিমের শিখায় আর বাতাস কে ভালোবেসে
বাঁধি তালপাতার পাখায়
---আকাশ কে তো বাঁধতে পারোনা!
---পারি তো - আমার জানলার ফ্রেমে!
---ওই টুকু আকাশে মন ভরে তোমার?
---আমি ছোটো করেই চাই তবে একান্ত নিজের করে চাই- তোমাকেও-
---আমাকে? অধিকার করতে চাও?
---অধিকার নয়- ভালোবাসা দিয়ে বাঁধতে চাই।
---আমি তো তোমার একার নই- আমি সবার
---আকাশ- বাতাস- আলো ও তো সবার- সবার হয়েও আমার
---না, আমাকে অমন করে বাঁধতে চেওনা, দমবন্ধ হয়ে যায়...
---বন্ধন মুক্তি চাও? দিলাম-
--- স্বাধীনতা দাও
---তাও দিলাম- যাও উড়ে যাও ,মন পাখি
---আঃ- এবার আমি আলোয় ভাসবো
---একদিন এই আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাবে- চার দেয়ালের আঁধারটুকুকে
মনে পড়বে। সেদিন যদি আমার ঘরে আসো- পূর্ণ হবে সকল চাওয়া
পাওয়া।

.                 ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
“খেলা  যখন ছিল তোমার সনে”
কবি মনামী ঘোষ

---সারাটিদিন তোমার পথ চেয়ে কাটালাম...। কোনও কাজেই মন দিতে পারলামনা
---কেন?
---আজ যে বছরের প্রথম দিন
---তাতে কি?একটা তারিখ মাত্র,নতুন কিছু তো নয়!
---ওঃ, তোমার সাথে কথায় পারিনা। তোমার শুধু কথার খেলা, কথার ঘর বাঁধা, কথার হট্টমেলা
---তবে এসো খেলি ভাঙার খেলা
---না,না ,ভাঙার কথা বলোনা,এমন নিঠুর খেলায় মেতোনা।
---ভাঙন যে অমোঘ, খেলাঘর তো ভাঙতেই হবে
---ভাঙবে যদি গড়লে কেন তবে? আমি ত আপন খেলায় মগ্ন ছিলাম,
তোমার খেলার সাথী হতে তো চাইনি!কেন আমায় ডাক পাঠালে পথের খেলায়?
---রাঙা ধুলো মাখিয়ে তোমায় মৃন্ময়ী বানিয়ে পুতুল খেলবো বলে
---এখন আমায় পথের ধুলোর মাঝে ফেলে চলে যাবে?বাকি পথটা আমি কি করে পার হবো?
--- আমি তো কিছুটা পথ হাঁটার সাথী ছিলাম, সারাজীবনের খেলার সাথী নই।
--- এখন তবে নতুন খেলার ভাবনা করছো ?
---পুরনো খেলার আসর ভেঙে নতুন খেলার আয়োজনই তো জীবন
---আমাকে যে পাতার মুকুটে বনদেবী সাজিয়ে ছিলে সে খেলা ত শুরুই হল না!
--- ও পাতা শুকিয়ে গেছে, নতুন খেলার জন্য নতুন অলঙ্কার চাই
--- সে অলঙ্কার ও তো একদিন জীর্ণ হবে পাতার মুকুটের মতন
--- তখন আবার পাততে হবে নতুন খেলার আসন
--- বড় সর্বনাশের খেলায় মেতেছো তুমি...
--- সর্বনাশের পথ চেয়েই তো বসে আছি...তার মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই-

.                 ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*