কি যেন একটা সুর মনে করার ছিল দূরের থেকে ভেসে আসা বাঁশির মত কি? নাকি সকালে আধোঘুমে শোনা পাখির গান! গুনগুনিয়ে বেজে চলেছে অবিরাম- কিছুতেই কেন যে মনে পড়ছে না!
কি যেন ছিল সেই কবিতার কথা- বড়ই চেনা জানা শব্দ মালা, তুমি বললে শব্দ চেনা তো নয় সোজা- বললে তুমি ‘শব্দই ব্রহ্ম’ আমি বলতে পারিনি শব্দগুলো দুপুরের ফেরিওয়ালার ডাকের মত অবোধ্য অথবা টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার মত।
ভুলে যাওয়া গানের মত সুরের গুঞ্জন- দূরে ফেলে আসা স্মৃতির মত শব্দের কম্পন শব্দের সাথে সঙ্গীতের ,জীবনের সাথে নদীর বন্ধন ভুলে গেছি সব...ভুলে যাব বাকি সব।
বুকের মাঝে জমাট অভিমান মেঘ হঠাৎ যে কেন বৃষ্টি হয়ে গেল... ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ল বেদনা। যে না পাওয়াটুকু নিয়ে পূর্ণ ছিলাম তা যে একান্ত নিজস্ব। আজ কেন সে উন্মোচিত হল! একলা কাঁদার সুখটুকুও বৃষ্টি এসে ধুয়ে নিয়ে গেল বড় রিক্ততা...বড় শূন্যতা...
তোমার বুকে কুলকুল করে যে শীর্ণ ঝোরাটি নামছে সে যে আমি! তোমাকে বলিনি সে কথা পাছে নায়াগ্রা চেয়ে বসো!
তোমার মনের গহিন অরণ্যে যে পাখিটি আনন্দে ডানা ঝাপটায় সে তো আমিই... তোমাকে বলিনি তাও যদি উড়িয়ে নিতে বলো.....
তোমার দুচোখের টলটলে দীঘিতে যে বৃষ্টি ফোঁটা কাঁপন তোলে সে ও যে আমি! তোমাকে জানতে দিইনি সে কথা পাছে ভাসিয়ে দিতে বল! তবু একদিন আমি তোমায় ভাসাবো ভেজাবো, উড়িয়ে নিয়ে যাবো... ক্লান্ত তপ্ত দিনের শেষে আমার দুচোখে নামা সন্ধ্যায় তুমি হৃদয় জুড়িয়ো...।
গুলঞ্চ আমার বড়ই আপন; সেই সদ্যযুবতী বেলায় সঙ্গীতভবনের গাছের তলা থেকে গুলঞ্চ তুলে বেণী তে গুঁজে রসায়নের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস... মনে আছে সৌমী তোর? শুচিতার? গুলঞ্চের সুবাসে পচা ডিমের গন্ধ কাবু।
তারপর সব হারাবার দিন সফেদ গুলঞ্চ হারিয়ে গেল- জীবন জটিলতার ঘূর্ণিপাকে গুলঞ্চের স্নিগ্ধতা উধাও।
ওমা! এই তো আমার গুলঞ্চ... আবার সেই থইথই আনন্দ বুকে ছুঁয়ে দেখলাম আমার গুলঞ্চকে। আমার বুকের রক্তক্ষরণে সাদা গুলঞ্চ লালচে গোলাপী- তবু তো সেই রূপ, গন্ধ সেই সতেজতা, কোমলতা আত্মহননের ইচ্ছে কে মুছে গুলঞ্চ ফিরল মধুরতায়...
প্রথম তোমায় দেখে তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল- দুহাতে চোখ ঢাকি, না...এই জীবনে আর ভুল নয়। আঁধারে যেদিন পথ হারালাম তুমি স্নিগ্ধ মেদুর আলো দিলে, ঘরপোড়াকে জলভরা মেঘ তারপর..তারপর... তুমি সূর্য, চাঁদ তুমি... যেদিন ধ্রুবতারা হয়ে গেলে- এক অমোঘ টানে ছুটে গেলাম তোমায় কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ- অভিকেন্দ্র-অপকেন্দ্র-লব্ধি কিন্তু এ কি নিষ্ঠুরতা! ব্যাসার্ধ দূরত্বে আটকে দিলে কেন্দ্রীভূত হতে তো দিলে না, স্পর্শক ধরে ছুটে চলার ক্ষমতাও শেষ... বৃত্তের পরিধি হওয়াই কি আমার ভবিতব্য!!
লাগামহীন ঘোড়ায় চড়িয়ে সে আমাকে পাহাড় ডিঙিয়ে নিয়ে যাবে কাঁটার আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে বুনো ফুল তুলে আনবে হাসতে হাসতে উত্তাল সমুদ্রে ডুব দিয়ে শঙ্খবলয় তুলে আনবে আমার জন্য নিজের সমস্ত উত্তাপ দিয়ে দূর করে দেবে আমার শীতলতা সে আমার স্বপ্নপুরুষ অনেক খুঁজে তাকে পেলাম আমাকে সে বুকে টেনে নিল ঠোঁটে করে শুষে নিল চোখের জল হঠাৎ আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বলে “আমি যে মেঘ ভালবাসি তুমি মেঘ নও, জোছনাময়ী” মেঘ খুঁজতে হারিয়ে গেল দূরে স্বপ্নপুরুষ ছোঁয়া দিল…..ধরা দিল না...