কবি মনামী ঘোষের কবিতা
মূল্যহীনা
কবি মনামী ঘোষ

একাকীত্বের মাঝে ডুব দিয়েছি
সারাগায়ে হীরকচূর্ণ স্মৃতি
জানি, আমার সেদিন হারিয়ে গেছে
কোন এক গভীর অতলে
বুঝি, ক্রমশ মূল্য হারিয়েছি
শুধু জানিনা কেন? কেনই বা?
স্মৃতি হাতড়ে দেখি তোমার ব্যাকুলতা
আজ দেখি শুধুই অবহেলা
যে কথায় ফুল ফুটত
আজ সে কথা রক্ত ঝরায়
কী অপমান! কী তীব্র দহন!
প্রতিশোধের আগুন জ্বলে বুকে
ভাবি জ্বালিয়ে দিই তোমার সুখ
ছিঁড়ে দিই মুখোশ
ভালো সময়ের একপশলা বৃষ্টি
নিভিয়ে দেয় সে আগুন
আমি তো কখনও চাইনি নৈকট্য
তোমারই খেয়ালে একদিন
মূল্যবান করেছিলে
আজ কি তবে নিজের চাওয়াকেই
সস্তা করে দিলেনা?

.       ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অনুভূতির অন্তরালে
কবি মনামী ঘোষ

কি যেন একটা সুর মনে করার ছিল
দূরের থেকে ভেসে আসা বাঁশির মত কি?
নাকি সকালে আধোঘুমে শোনা পাখির গান!
গুনগুনিয়ে বেজে চলেছে অবিরাম-
কিছুতেই কেন যে মনে পড়ছে না!

কি যেন ছিল সেই কবিতার কথা-
বড়ই চেনা জানা শব্দ মালা,
তুমি বললে শব্দ চেনা তো নয় সোজা-
বললে তুমি ‘শব্দই ব্রহ্ম’
আমি বলতে পারিনি শব্দগুলো
দুপুরের ফেরিওয়ালার ডাকের মত অবোধ্য
অথবা টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার মত।

ভুলে যাওয়া গানের মত সুরের গুঞ্জন-
দূরে ফেলে আসা স্মৃতির মত শব্দের কম্পন
শব্দের সাথে সঙ্গীতের ,জীবনের সাথে নদীর বন্ধন
ভুলে গেছি সব...ভুলে যাব বাকি সব।

.             ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
শূন্যতার উন্মোচন
কবি মনামী ঘোষ

বুকের মাঝে জমাট অভিমান মেঘ
হঠাৎ যে কেন বৃষ্টি হয়ে গেল...
ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ল বেদনা।
যে না পাওয়াটুকু নিয়ে পূর্ণ ছিলাম
তা যে একান্ত নিজস্ব।
আজ কেন সে উন্মোচিত হল!
একলা কাঁদার সুখটুকুও
বৃষ্টি এসে ধুয়ে নিয়ে গেল
বড় রিক্ততা...বড় শূন্যতা...

.       ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তোমাকে বলিনি
কবি মনামী ঘোষ

তোমার বুকে কুলকুল করে
যে শীর্ণ ঝোরাটি নামছে
সে যে আমি!
তোমাকে বলিনি সে কথা
পাছে নায়াগ্রা চেয়ে বসো!

তোমার মনের গহিন অরণ্যে
যে পাখিটি আনন্দে ডানা ঝাপটায়
সে তো আমিই...
তোমাকে বলিনি তাও
যদি উড়িয়ে নিতে বলো.....

তোমার দুচোখের টলটলে দীঘিতে
যে বৃষ্টি ফোঁটা কাঁপন তোলে
সে ও যে আমি!
তোমাকে জানতে দিইনি সে কথা
পাছে ভাসিয়ে দিতে বল!
তবু একদিন আমি তোমায় ভাসাবো
ভেজাবো, উড়িয়ে নিয়ে যাবো...
ক্লান্ত তপ্ত দিনের শেষে
আমার দুচোখে নামা সন্ধ্যায়
তুমি হৃদয় জুড়িয়ো...।

.       ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
গুলঞ্চ
কবি মনামী ঘোষ

গুলঞ্চ আমার বড়ই আপন;
সেই সদ্যযুবতী বেলায়
সঙ্গীতভবনের গাছের তলা থেকে
গুলঞ্চ তুলে বেণী তে গুঁজে
রসায়নের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস...
মনে আছে সৌমী তোর? শুচিতার?
গুলঞ্চের সুবাসে পচা ডিমের গন্ধ কাবু।

তারপর সব হারাবার দিন
সফেদ গুলঞ্চ হারিয়ে গেল-
জীবন জটিলতার ঘূর্ণিপাকে
গুলঞ্চের স্নিগ্ধতা উধাও।

একদিন, শান্তির খোঁজে বেলুরমঠ
চন্দনা,সঙ্গীতা,প্রিয়া...॥

ওমা! এই তো আমার গুলঞ্চ...
আবার সেই থইথই আনন্দ বুকে
ছুঁয়ে দেখলাম আমার গুলঞ্চকে।
আমার বুকের রক্তক্ষরণে
সাদা গুলঞ্চ লালচে গোলাপী-
তবু তো সেই রূপ, গন্ধ
সেই সতেজতা, কোমলতা
আত্মহননের ইচ্ছে কে মুছে
গুলঞ্চ ফিরল মধুরতায়...

.       ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পরিধি
কবি মনামী ঘোষ

প্রথম তোমায় দেখে
তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল-
দুহাতে চোখ ঢাকি,
না...এই জীবনে আর ভুল নয়।
আঁধারে যেদিন পথ হারালাম
তুমি স্নিগ্ধ মেদুর আলো দিলে,
ঘরপোড়াকে জলভরা মেঘ
তারপর..তারপর...
তুমি সূর্য, চাঁদ তুমি...
যেদিন ধ্রুবতারা হয়ে গেলে-
এক অমোঘ টানে ছুটে গেলাম
তোমায় কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ-
অভিকেন্দ্র-অপকেন্দ্র-লব্ধি
কিন্তু এ কি নিষ্ঠুরতা!
ব্যাসার্ধ দূরত্বে আটকে দিলে
কেন্দ্রীভূত হতে তো দিলে না,
স্পর্শক ধরে ছুটে চলার ক্ষমতাও শেষ...
বৃত্তের পরিধি হওয়াই কি আমার ভবিতব্য!!

.             ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ধরা-ছোঁয়া
কবি মনামী ঘোষ

লাগামহীন ঘোড়ায় চড়িয়ে সে আমাকে
পাহাড় ডিঙিয়ে নিয়ে যাবে
কাঁটার আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে
বুনো ফুল তুলে আনবে হাসতে হাসতে
উত্তাল সমুদ্রে ডুব দিয়ে
শঙ্খবলয় তুলে আনবে আমার জন্য
নিজের সমস্ত উত্তাপ দিয়ে
দূর করে দেবে আমার শীতলতা
সে আমার স্বপ্নপুরুষ
অনেক খুঁজে তাকে পেলাম
আমাকে সে বুকে টেনে নিল
ঠোঁটে করে শুষে নিল চোখের জল
হঠাৎ আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বলে
“আমি যে মেঘ ভালবাসি
তুমি মেঘ নও, জোছনাময়ী”
মেঘ খুঁজতে হারিয়ে গেল দূরে
স্বপ্নপুরুষ ছোঁয়া দিল…..ধরা দিল না...

.          ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
setstats
হৃদমাঝারে
কবি মনামী ঘোষ
প্রাপ্তি ৮ই জুন ২০১৫

বলতে পারো
কেমন করে তাকাও তুমি!
যে চাহনি এক নিমেষে
ভালবাসার পদ্ম ফোটায়,
কেমন করে লুকোই তাকে
বলতে পারো?

কোন রঙেতে
ডুবিয়ে তুলি ভোর এঁকেছো
দুখের ঘন আঁধার শেষে!
শেখাও আমায় মেঘলা মনে
আঁকব ছবি রামধনুকের
কোন রঙেতে?

কেমন করে
সুর দিয়েছো তোমার গানে!
সোনার কাঠির যে ছোঁয়াতে
ঝিকমিকিয়ে হৃদমাঝারে স্বর্ণখনি,
পাহারা দিই অমূল্যধন
কেমন করে?

জানো কি তা
সঞ্চয়িতায় কোন সে মায়া!
যে জাদুতে মনোপথে বৃষ্টি নামে,
বানভাসি এই নদীটাকে
সামলে রাখি কেমন করে
জানো কি তা?

বলো দেখি
আমার তুমি কেমন মানুষ!
বুকের মাঝে অতল জলের
ডাক পাঠালে, কেমন করে
 শুকনো রাখি চোখের কোণা?
বলো দেখি!

.          ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পাগলামি
কবি মনামী ঘোষ
প্রাপ্তি ৮ই জুন ২০১৫

এ কেমন পাগলামি তোমার,
হঠাৎ কিনা ছায়া চেয়ে বসলে!
বুক জুড়ে প্রখর গ্রীষ্ম দেখলাম।
ছায়া খুঁজছি বটের তলায়
হিজল গাছের পাতার ফাঁকে,
আমিও যে ধূ ধূ বালির চর।

খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হতাশ
চোখের পাতায় মেঘ জমল,
খামে ভরে পাঠিয়ে দিলাম।
এ কেমন পাগলামি আমার!
তুমি ছায়া চাইলে যে-
আমি কিনা মেঘ পাঠালাম!

ভয় পাচ্ছো ভেসে যেতে?
ভয় পাচ্ছো?
পাগলামি...।

.          ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তুমি ছুঁলেই
কবি মনামী ঘোষ
প্রাপ্তি ৮ই জুন ২০১৫

তুমি একবার ছুঁয়ে দিলেই
জলতরঙ্গ বেজে ওঠে
হিমবাহের স্নায়ুতন্ত্রীতে
স্থানু বরফের দেশে গতি জাগে
ঝর্নার উচ্ছ্বল চঞ্চলতা

তুমি একবার ছুঁয়ে দিলেই
শান্ত শীতল দিঘীর বুকে
উন্মাদনার ঢেউ এক লহমায়
আকাশের  নিবিড় আভিমান
টুপ টাপ ঝরে পড়ে গান গেয়ে

তুমি একবার ছুঁয়ে দিলেই
মজা নদীটাও উথলে ওঠে
প্রলয় আসে দিকে দিকে
একবার ছুঁয়ে দিয়ে দেখো
নোয়ার জাহাজ তৈরী আছে।

.          ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*