কবি মণীশ ঘটক-এর কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
আগুন তাদের প্রাণ
মণীশ ঘটক

কী রোদ্দুর, কা রোদ্দুর, আগুনের সমুদ্দুর যেন |

চিড় খাওয়া শুকনো মাঠ আগুনের হলকা তুলে ধোঁকে,
আগুনের ঢেউ লাগে আকাশে বাতাসে মুখেচোখে |
তেষ্টায় ফটিকজল পাখনা পুড়ে মাটিতে গড়ায়
পাঁকে মোষ নাক তোলে, সাধ্যি কার একটু নড়ায় |
রক্ত ঝরে পলাশের ন্যাড়া ডালে ঝর ঝর ঝর,
আগুন পারে না শুধু শুষে নিতে সে রক্তনির্ঝর |
আগুন পারে না নিতে কেড়ে কালো ছেলেটার বাঁশি,
আগুন পারে না নিতে মুছে কালো মেয়েটার হাসি |

মহুয়া ফুলের গন্ধ দিকে দিকে আগুন ছড়ায়,
মহুয়া ফুলের মদ রক্তে রক্তে আগুন ধরায় |
কালো ছেলে মেয়ে দুটো সাধ ক’রে সে আগুনে পোড়ে,
খল খল হেসে যায় লুটোপুটি গলাগলি ক’রে |
আগুন তাদের প্রাণ, তারা নিবে যায় নি এখনও ||

.                    ******************          
.                                                                          
উপরে    




মিলনসাগর   
১।
২।
৩।
৪।
৫।
*
ধীমহি
মণীশ ঘটক

সূচীভেদ্য অন্ধকার কোথায় পালাল ?
সৌর নয়, চান্দ্র নয়, এ কেমন আলো ?

ছোট বড় অগণন গ্রহতারা কত,
সবাই জ্বেলেছে দীপ যার ছিল যত ;
অকল্পেয় মহাশূন্যে তারই জ্যোতি-ধারা
এঁকে যায় একসাথে দ্যুতির ইশারা |

ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ || আলোর মালাতে
পৃথিবীও চায় প্রাণ-প্রদীপ জ্বালাতে ;
আপন মশাল হাতে, হয়ে সহচারী---
হতে নব সৃজনের পথের দিশারী |
এ-মাটির তুমি, আমি, সূপ্ত মৃত প্রাণ,
পলকে প্রদীপ্ত হয় | জানায় আহ্বান
---খোঁজো কোথা মর্ত্যবুকে গুপ্ত দীপাধার!

জ্বলে দীপ, বাজে শঙ্খ, পালায় আঁধার ||

.                    ******************          
.                                                                          
উপরে    




মিলনসাগর   
*
ঘোড়সাওয়ার
মণীশ ঘটক

কসাও চাবুক, কসাও ঘোড়সাওয়ার
হাতে থাক ধরা নাঙ্গা সে তলোয়ার,
বিজলী চমক ঝলসাক্ ইস্পাতে
চিরে, ছিঁড়ে যাক কালো রাত সাথে সাথে |

সবল পেশী কি গাহিয়া উঠে না গাথা ?
আগুন জ্বলে না শুষ্ক আঁখির কোণে ?
কলিজার খুনে ফোয়ারার হাহাকার ?
কসাও চাবুক, কসাও ঘোড়সাওয়ার,
পাছ-টান আজ কেন রবে তব মনে,
দুষমনে ভরা দুনিয়ার তুমি ত্রাতা!

হায় বেদুইন, জীবনের মরুপথে
নীল আকাশের হাতছানি জেগে রয়,
মরু মরীচির মায়া শেষ হতে হতে
তারার ইশারা সঙ্কেতে কি যে কয়!

.                    ******************          
.                                                                          
উপরে    




মিলনসাগর   
*
রবীন্দ্রনাথ
মণীশ ঘটক

আমরা দেখেছি যারা জলস্তম্ভ জাগে স্পর্ধি তকঙ্গনিগ্রহ
দেখেছি শার্দূলশৃঙ্গে গৌরীশংকরের ভালে দীপ্ত সূর্যোদয়
নৈশ সুপ্তি ভঙ্গে নিত্য নব নব কুসুমের জন্ম পরিগ্রহ
সেই আমাদেরো কাছে তব আবির্ভাব বন্ধু পরমবিস্ময় ||

আমরা দেখেছি যারা সঞ্চরণশীল পৃথ্বী, কাল বহমান
জেনেছি গতির নৃত্য বাঁধা ছন্দোবন্ধে দুশ্ছেদ্য বন্ধনে
মৃত্তিকার রসপুষ্ট চিত্ত নবোন্মেষ লভি’ চির ভ্রাম্যমাণ
তব ধ্যানে, হে মহান, ধ্বনিত সে দিব্যজ্ঞান প্রবুদ্ধ নিঃস্বনে ||

আমরা শুনেছি যারা, সম্বোধি অমৃতপুত্রে উদাত্ত আহ্বান
শুনেছি স্ব-কক্ষ পরে লক্ষ গ্হণক্ষত্রের পরিক্রমা গান,
আমাদের কানে পশে’ অনাগত বিধ্বংসের বীভত্স নিনাদ,
জানি আছে তারো পরে নবতর সৃজনের নেপথ্য প্রসাদ ||

শুনেছি তোমার কণ্ঠে, হে আদিত্য বৈতালিক, প্রণোন্মাদন
জীবনের জয়ধ্বনি, মৃত্যুস্নানে শুচিস্মিত সুনিত্য জীবন ||

.                    ******************          
.                                                                          
উপরে    




মিলনসাগর   
*
পরমা
মণীশ ঘটক

আর কেহ বুঝিবে না ; তোমাতে আমাতে
এ-বোঝাপড়ার পালা সাঙ্গ ক’রে যাবো আজ রাতে
অন্তরঙ্গ আলাপনে |
রাত্রির অঞ্চল সঞ্চালনে
শান্ততর, স্নিগ্ধতর হ’য়ে এল বায়ু,
তৃতীয়বার চন্দেরের প্রমায়ু
হ’লো শেষ | মেঘলোক হ’য়ে পার
ঘনিষ্ঠ আশ্লেষ রচে পরম আত্মীয় অন্ধকার |

হলা পিয় সহি,
জান্তব জিগীষা বক্ষে অতীতের সে-নিষাদ নহি আমি নহি
একদা যে-আসঙ্গের ক্রূর আক্রমণ
সবিদ্রূপে উপেক্ষিয়া কুমারীর আত্মরক্ষ-পণ
বধির বাসব-হস্তচ্যুত বজ্রসম
তোমারে করিল চূর্ণ, আমারি নির্মম
স্বার্থ-পরমার্থ-দ্বন্দ্বে আজি নির্বাপিত
সে-অনল, স্মৃতিভস্মস্তূপে সমাহিত |
অনলস কাল-আবর্তনে
মহীরুহ হয়েছে অঙ্গার | হয়তো পরম কোনো ক্ষণে
অঙ্গারে ফুটিবে হীরা | সে-প্রসঙ্গ আজি অবান্তর |

পূর্ণলোহু যৌবনের মধ্যাহ্নে ভাস্কর
সেদিন জ্বলিতেছিল এ দেহ-অম্বরে |
দিকে দিহন্তরে
সমীর শ্বসীতেছিলো অগ্নিবর্ষী শ্বাস |
চক্ষে ভরি ত্রাস,
তুমি কেন ঝাঁপ দিলে সে-ধ্বংস-উত্সবে ?
যৌবনগৌরবে
বল্কলশাসনমুক্ত তুঙ্গ স্তনদ্বয়
সহসা উদ্বেল হ’লো শুভ্র বক্ষময়,
শিহরিলো প্রবাল অধর
কেন্দ্রিভূত কামনার চুম্বকবিথারে থর থর |
অজ্ঞাত শঙ্কায়
অপাঙ্গে অনঙ্গতীর মুহুর্মুহু থমকিলো, হায়!
আশ্রম-আশ্রয় ত্যজি আজন্ম তাপসী কণ্বসুতা
নিষ্কলুষা কুরুঙ্গীর নৃত্যরঙ্গে হ’লে আবির্ভূতা |
নিষ্করুণ কিরাতের পরুষ সংস্পর্শে আচম্বিত
মদাপ্লুতা,---হারালে সংবিৎ |

হায় সখি হায়,
তুমি তো জানিলে নাকো সেই মৃগয়ায়
এক অস্ত্রে হত হ’লো মৃগী ও নিষাদ |
আদিরিপু উন্মোচিলো প্লাবনের বাঁধ,
সেই পথ দিয়া
প্রেম এল বন্যাসম দু-কূল প্লাবিয়া
সুগভীর সমারোহে |
অনাদ্যন্ত আজো তাহা বহে
দুর্বার প্রবাহে তুলি উন্মত্ত কল্লোল,
আমার নিখিল তারই উল্লাসে আজিও উতরোল |


.                    ******************          
.                                                                          
উপরে    




মিলনসাগর