সাম্প্রদায়িক বিষ!
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন

এপার বাংলা ওপার বাংলা
মাঝখানে তার দাগ।
স্বার্থের দুনিয়া স্বার্থের লাগিয়া---
করেদিল দুই ভাগ।
পূরব পশ্চিম দু’পারেতে---
কোটি মানুষের বাস।
সবার বুকে স্বপন এক
একই মনের আশ।
এক ভাষাতে দুঃখ বিলাপ
মান অভিমান খেলা।
বাউল গানের মিঠে সুরে
ভাসাই “জীবন ভেলা”।
এই ভাষাতে বাদ-বিবাদ,
প্রেম নিবেদন, সবি।
এক ভাষাতে দুই পারেতে---
কবিতা লেখেন কবি।
খাওয়া পরা ভিন্ন নয়
সব কিছুতেই মিল।
“হিন্দু ওরা, মুসলীম ওরা”,
বিষিয়ে চলেছে দিল।
বাংলা ভাষায় মাকে ডাকি
চাই তাঁরই আশিষ।
ভাঙতে মাকে ঢেলো না আর
সাম্প্রদায়িক বিষ!

.   ******************     
.                                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিনের কবিতা
*
উপবাস ব্রত
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন

গোটা কয়েক খেজুর গাছ---
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তার---
একমাত্র পূঁজি।
সংসার বাঁচাতে অর্থের লাগি,
খেজুর রস বেচা---
এই তার একমাত্র রুজি।

যেই কোন ঝাপসা ভোরে
শীতের কামড় উপেক্ষা করে
গাছে ওঠা।
তারপর খালি কলসি বদল করে
ভরা কলসি নামিয়ে, পুনরায়,
গাছ কাঠা।

সেদিন শীতের সকাল,
ঘন-কুয়াশায় ঢাকা।
দশহাত দূরে কিছুই---
স্পষ্ট যায় না দেখা।
গৃহ বন্দী যখন
গ্রাম শহর জনপদ,
স্বগোক্তি---
এতো শীত নয়, --- শয়তান।
জান কবজা করা আপদ।

টাটকা রসের ভারী কাঁধে
গাঁয়ের গরীব শিউলী-কাকা।
ঘরে তার অভুক্ত স্ত্রী ও সন্তান,---
তাদের খাওয়াতে চাই টাকা।

এই ভাবনার তাড়নায় তাই---
গামছা মোড়া মস্তক তার,---
নগ্ন দুখানি পা---
ভগ্ন পথের খোয়ায়
ক্ষত-বিক্ষত।

তবু! কোন দিকে তার
নেই হুঁস --- আর, তবু ?
চলার গতি রেখেছে
অব্যাহত!

গঞ্জের মোড়ে মগ-মাপে বেচে,
আয়! আশি নব্বই টাকা।
দিনান্তে এতেই চেষ্টা তার
জঠর অনল ঢাকা!

(কিন্তু) হায়! রস খেতো যারা,---
এই হাড়-কাঁপা শীতে
রস খাওয়া ছেড়ে তারা
চায়ের কাপ নিয়েছে হাতে।

ক্রমেই যত বাড়লো বেলা,
পাতলা হোল লোকের ভিড়,---
শিউলীর ঘরে আজ---
উপবাস-ব্রত, লিখন --- নিয়তির!

.  
      ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমার গ্রাম
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন


গাঁয়ের মাঝে
পাই না খুঁজে---
আম কাঁঠালের বাগ।
ছেলে বেলায়---
যেথা খেলায়
কাটতো বেশীর ভাগ!

রাখাব ছেলে
গাছের তলে
বাজাতো বাঁশের বীণ,
দিন দুপুরে
বাঁশীর সুরে
কাটতো আমার দিন!

পাখীরা সব
করত রব---
হাজার রকম বুলি।
দোয়েল ফিঙে---
লেজ নাচিয়ে---
উড়তো পাখনা খুলি।


সবুজ টিয়া
ঝাঁক বাঁধিয়া
জামের শাখে বসে।
কোকিল বধূ
একাই শুধু
কাঁদতো প্রিয়ার আশে।

নানা রঙের
নানা জাতের
হাজার রকম পাখী।
কোথায় তারা
হোল যে হারা
আমায় দিল যে ফাঁকি।

পাখ-পাখালী
গাছ-গাছালী
আমার খেলার সাথী।
ব্যথায় মম
আপন সম
ছিল যে ব্যথার ব্যাথী।


চড়ক-তলা
গাজন-মেলা
এখন হয় না আর
ছাউনি খড়
মাটির ঘর---
আঠচালা নেই আর।

নয়ান-জুল
শাপলা ফুল
মাটির পথের ধারে
দিঘীর জল
ছলাক্ ছল্---
মরাল মরালী চরে।

আজকে তাই
বৃথাই ভাই---
বেকার খুঁজে মরা।
হারিয়ে গেছে
শুকিয়ে গেছে
গাঁয়ের জীবন ধারা।

.  ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দূরন্ত
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন
(দূরন্ত ট্রেনের মধ্যে লেখা, ১৪/১২/২০১২)

দূরন্ত, আমি দূরন্ত।
শত সহস্র গ্রাম জনপদ,
পিছনে ফেলে
ছুটে চলেছি আমি,
দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত
দূরন্ত ; আমি দূরন্ত।

সাহস আছে কার ?
প্রতিরোধ করবার,
আমার চলার পথ।
উল্কার বেগে, চলেছি ছুটে---
সমস্ত দ্বিধা ভয় যাক ছুটে।
আমি দুর্বার বেগে,
ছুঁতে চাই শেষ সীমান্ত।
দূরন্ত, আমি দূরন্ত।

আমার উদরে রয়েছে
কত নরনারী একসাথে।
সারাদিন শেষে
ক্লান্ত অবনী
যখন থাকে ঘুমন্ত।
তখনও আমি জেগে একা,
না খেয়ে রই ছুটন্ত,
দূরন্ত, আমি দূরন্ত॥

.  ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাজা ও প্রজা
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন

একদিন যারা---
করে অবহেলা
দিয়াছে তোমারে গালি,

আজ দেখ তারা---
হয়ে দিশাহারা
মেখেছে মুখেতে কালি!

ক্ষমতার বলে
বলিয়ান হয়ে
ধরাকে ভেবেছে ‘সরা’!

তারা যেন আজ
মণিহারা ফণী,---
বিবেক-দংশনে জ্বরা।

ভালোবাসা ছাড়া
বৃথা আশা করা
মানুক্ সবাই মোরে।

রাজার রাজত্ব
থাকে না অটুট
কেবলি গায়ের জোরে।

রাজার ঘরণী
প্রজার জননী
সনাতনী ইতিহাস।

তবু দেখি রাজা
দেয় কত সাজা
করে কত পরিহাস।

জেনে রাখা ভালো
জনগণ হলো
সবার বড় ক্ষমতা।

বাঁধা রবে সবে
পায় যদি তবে
রাজার স্নেহ-মমতা॥

.  ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সাথীহারা
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন

জীবন যেন জেলে ডিঙি
.        নদীর বুকে ভাসা।
পেটের টানে সাগর পাড়ী
.        মিটে কি তার আশা।
জেলে বধূর বুকের ব্যথা
.        ক’জন বোঝে ভাই।
আঁধার ঘরে কাটায় একা
.        ভয়ের সীমা নাই।
দিনটা কাটে নদীর ঘাটে
.        দূরের পানে চেয়ে।
ওই বুঝি যে আসছে ফিরে
.        চেনা পানসি বেয়ে।
হায় রে হায় এতো সে নয়
.        প্রিয় মানুষ তার।
বুকের মাঝে ঝাঁজরা বাজে
.        নয়নে অশ্রুধার।
দিনের পর দিন যে যায়
.        আশায় বাঁধে বুক।
প্রাণের ধন ফিরলে ঘরে
.        ফিরবে তার সুখ।
পরবে টিপ, জ্বালবে দীপ
.        সাজন এলে ঘরে।
নিজের হাতে আসন পেতে
.        অপেক্ষা তার তরে।
ডুরে শারীর আঁচলখানি
.        মাথায় দেবে তুলে।
প্রিয় যে মুখ দেখেও সুখ
.        দুঃখ যাবেই ভুলে।
স্বপন কত মনের মত
.        সাজায় মনে মনে।
একলা ঘরে ভয়েই মরে
.        আঁধার গৃহ কোণে।
সাথারী সব এলো যে ফিরে
.        ক’দিন পরেতেই ;
সৌদামিনীর সুজন সখা
.        তাদের মাঝে নেই।
সবার কাছে খোঁজ নিয়েছে
.        বোবা সবাই তারা।
সুজন ভাই ফিরবে নাই---
.        তুই যে, সাথীহারা।

.
      ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
গরীব ও মধ্যবিত্ত
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন

রাজ-পথের ফুটপাথে এরা কারা ?
যত সব কাঙালের ভীড়,
রুটি রুজির খোঁজে আসা সর্বহারা---
তাই এদের জোটেনি নীড়।

এদের জন্য ভাববার নেই কেউ,
দীন – হীন – গরীব এরা।
অন্ন বস্ত্র বাসস্থান কিছুই নেই,
কেবলই ভিক্ষা মেগে ফেরা।

দশলাখী ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক---
তারাই নাকি মধ্যবিত্ত জন।
সরকার ও ভাবনা ভাবে অধিক,
তাদের লাগি যত আয়োজন॥

ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল বিদ্যালয়,
যেখানে গেলেই লাগে টাকা ;
নামী-দামী গাড়ীতে আসা মহাশয়,
তাদেরই শুধু যায় দেখা!!

.       ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
প্রভাত
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন

ভোরের পাখিরা জাগে
কাকলী কলরবে
টগর শেফালি ফোটে
কুসুম (কাননে) উত্সবে।

পুষ্প-মধু আহরণে
আসে দলে দলে।
শীতল সমীর বয়
আপন খেয়ালে।

নামাজী মসজিদে যায়
আজানের আহ্বাণে,
শঙ্খ-ধ্বনি বাজে শুনি
দেবালয় প্রাঙ্গণে।

সাধক গায়ক সাধে
গানের সুরের সাধনা
বাদক-বাঁশিতে জাগে
সব হারানো বেদনা।

গগনে তপন ওঠে
দিবসের আগমনে।
বারতা বিলায় যেন
ওঠো ওঠো শুভক্ষণে।

জাগো জাগো জগবাসী
শুরু করো কৃত কাজ।
দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ভয় ভীতি
ভুলে যাও যত লাজ।

মনের কালিমা সবে
মুদিতে পাবো যখন
সফল প্রভাত হবে
জীবনে জানো তখন॥

.   ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বদ্ধ-আশ্রম
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন

বৃদ্ধ মানেই --- বাতিল, . . .
ভাবছে সবাই বোঝা।
কইলে কথা বাতুল, . . .
চুপটি থাকাই সোজা।

@@@@@

বৃদ্ধ মানেই --- অসুস্থ, . . .
বাড়ায় বিড়ম্বনা।
সবাই রাখে তটস্থ, . . .
হাজার পাগলপনা।

@@@@@

বৃদ্ধ মানেই --- বালাই, . . .
কেবল করে বায়না।
খাবার চাইলে পরে, . . .
তিলেক ওর সয়না।

@@@@@

বৃদ্ধ মানেই --- হুকুম, . . .
বয়স কালের কাজ!
ক্ষুধার খাবার লাগি,
থাকতে নাই যে লাজ।

@@@@@

বৃদ্ধ মানেই --- জুলুম, . . .
বাঁচতে যদি চাস।
তবে দেনা চালান করে,
দূরে ‘বৃদ্ধ আবাস’।

.   ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বন্ধু-বিদায়
কবি মহম্মদ বসীরউদ্দিন

বৃদ্ধ বরেন ঘোষ
.        বন্ধু বিনোদ বোস।
নিত্য দুজন হাঁটে,
.        মুক্ত গড়ের মাঠে।

মনটা জখন চায়,
.        ক্লান্ত অচল পায় ;
কামান তলার পাশে,
.        বসেন দু’জন ঘাসে।

চা খায় মাটির ভাঁড়ে,
.        দুখের কাহিনী পাড়ে।
“আর ক’টা দিন আছি,
.        পাঠিয়ে দেবেন রাঁচি।”

বরেন বললো দুখে
.        “আমিও নেই রে সুখে!
আপন জনের রায়,
.        বইতে পারে না দায়।”

সহসা সেদিন ভোরে,
.        দেখতে পেলো না ‘ওরে’,
খবরে জানলো এই,---
.        বন্ধু বরেন নেই।

.  
    ******************     
.                                                                                        
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*