কবি মিতুল দত্তর কবিতা
*
একটি স্বপ্নের অনুবাদ
কবি মিতুল দত্ত

আত্মহত্যা করাতে এনেছি বান্ধবীদের, ছাদে
রেলিঙের ধারে বিষ-মতলবী হাওয়া
গুটিসুটি মেরে বসে আছে আর টুঁ-শব্দ করছে না
গাছহীন টবে জল দিয়ে গেছে কেউ

আত্মহত্যা করাতে এনেছি যদিও মৃত্যুকালীন
শপথবাক্য বলছে না কেউ, কোনও
ভয় বা শীতের কাতরতা নেই, তেমন অস্থিরতাও
দেখছি না, তবু হাত পা কাঁপছে আমার

ওদের সবার বয়ফ্রেন্ড ছিল, প্রেমিক ছিল না কারও
যদিও তা একমাত্র কারণ নয়
ব্যাপারটা হল এই আমাদের বোধ বুদ্ধির জল
গল্পে গল্পে কোন জল ঘোলা করে

সেই জলে কারা সাঁতার, কাদের পাণপ্রবণতা বাড়ছে
কে চায় বৃষ্টি পরচর্চার মতো
ঝরুক দুপুর মেঘলা দুপুরে সমমনস্ক রঙ্গে
কে ভরতে চা নিজস্ব জলাধার

সে সব নেহাৎই গল্পের কথা, গল্পের আশেপাশে
বান্ধবীদের ভাবলেশহীন মুখে
শপথবাক্য নেই কোনও, ভয়ে হাত-পা কাঁপছে আমার

রেলিঙের ধারে পা বাড়িয়ে যদি বলে বসে---মরব না।

.    
       *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মুন্নার বাড়ি
কবি মিতুল দত্ত

জানলায় গল্প ঝুলছে
দরজায় কবিতা টাঙানো
তোর বাড়ি আসবো না আর কখনো

জানলায় গল্প উদাসী
দরজায় কবিতা অধীর
এর মাঝে তোর ধানসিঁড়িটির

আপাত সরল জল
মনে মনে চোরা কথা বলে
স্নান করি, ব্যার্থতা ঢেলে দিই জলে।

এ জল সে জল নয়
জল ছন্দ, জল পরিক্রমা ;
প্রবাহে চরিত্রদোষ সব করি জমা।

রেখে যাই। রেখে যাব।
ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে খুব।
দূর থেকে মনে মনে অন্তহীন ডুব

দিয়ে যাব, সেই ভালো,
বেশি কাছে আসা ভালো নয়।

মন এক অদ্ভূত জীব
কে জানে কখন নষ্ট হয়।

.    ********************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিদূষক ও রাক্ষসী
কবি মিতুল দত্ত

“মানুষ খাব না আর, এবারে মানুষ হব”
---এই ব’লে রাক্ষসী এলিয়ে পড়ল
বিদূষকের গায়ে
তার সারা গায়ে রক্ত চটচট করছে
চুল থেকে খ’সে পড়ছে লাল-নীল শুঁয়োপোকা আর
উড়তে না পেরে প্রজাপতি নেতিয়ে পড়েছে
আগুনের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কাছে
“এসব কি ঠিক হচ্ছে ?”
---বলতে গিয়ে বিদূষক একবার হোঁচট খেল
দু’বার হোঁচট খেল।
তিনবারের বার রাক্ষসীর মোটা ঠোঁটদুটো
ফেভিকুইক দিয়ে সেঁটে দিল
যাতে সে জন্মের মতো
মিথ্যেকথা গিলে নিতে পারে।

.  
    ********************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিলাস
কবি মিতুল দত্ত

প্রেম লিখতে লজ্জা নেই, প্রতিবাদ লিখতে, কেন পেলে ?
আমি সেই কবে থেকে সাদা পাতা হয়ে শুয়ে আছি
তোমার হাতের মন্ত্রে, তোমার আঁচড়ে জেগে জেগে
অভ্যেস করেছি বাঁচা, অভ্যেস করেছি প্রেমে পড়া . . .

প্রেম সহ্য হ’য়ে গেছে, প্রতিবাদও সহ্য হ’য়ে যাবে
তোমার কলম থেকে কালি নয়, ইচ্ছে ঝরে যদি . . .
তোমার ব্যর্থতা যদি কামড়ে ধরে আমার কৌতুক
গোপনে প্রেমের মধ্যে তুলকালাম কাঁটা বিঁধে যায়

সে কাঁটা সে কটু আমি আদরের মতো তৃপ্তি নিয়ে
শরীরে ছড়িয়ে দেব, এ শরীর তোমার-ই তো দেওয়া
আমি তো ক্যানভাস, তুমি কত রঙ, কত যত্ন ক’রে
আকাশ এঁকেছ . . .গাছ . . .নরনারী . . .আসঙ্গ চুম্বন . . .

সব যদি ভেস্তে দাও, আকাশ ভাসিয়ে গাছ উপড়ে দাও যদি
স্রোতের মতন জল ঢুকে যায় চুম্বনের অপ্রাপ্ত সীমায়

নরনারী ছেড়ে দেবে ? সহজে কি কেউ ছেড়ে দেয় ?
আসলে তুলির মতো কলম-ও তো ধরতে শেখা চাই।

তার চেয়ে সভ্যভাবে আজ একটু অন্য রঙে খেলনা, হে কবি,
যাকে তুমি প্রেম বলো, মনে কর প্রতিবাদ
.        তার-ই একটি অন্য . . .একটু উল্টো . . .একটি স্বাদবদল ছবি।

.    
             ********************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অমৃতকথন
কবি মিতুল দত্ত

রসের বস্তটি ওগো রসের বস্তুটি।
কিঞ্চিৎ মদিরা দাও ফুল হয়ে ফুটি॥

রসের বস্তুটি ওগো রসের কলিকা।
একজোড়া পক্কবিল্ব, ষোড়শী বালিকা॥

বালিকা ভঙ্গিমা আহা বালিকা মদিরা।
এ হাতে সূচাগ্র ছুরি, অন্য হাতে শিরা॥

আসবি না ? আসবি না ? তবে এই দিলাম কোপ।
মুহূর্তে বালিকা মূর্তি স্বপনে বিলোপ॥

স্বপনে পায়ের শব্দ, স্বপনে নূপুর।
জটিলা-কুটিলাবৃষ্টি টাপুর টুপুর॥

তাতে কী ? তাতে কী ? প্রেম তরুকল্পমূলে।
রেখেছে আশ্লেষচিহ্ন গৃহধর্ম ভুলে॥

গৃহ তো ছলনামাত্র, গৃহ মাত্র ভ্রম।
গৃহের গার্হস্থ ভেঙে তুমি-ই প্রথম॥

মাটিতে রেখেছ দু’পা, পায়ের শিকল
ধুলায় গড়াচ্ছে আর ছলছলাচ্ছে জল॥

জলের বস্তুটি ওগো জলের সরসী।
দু’-এক গণ্ডুষ দাও স্থির হযে বসি॥

.        ********************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নষ্টবীজ
কবি মিতুল দত্ত

চলো এই অন্ধকারে মেধার ফলন হোক এই অন্ধ আমাদের
চলো, অজ্ঞতা গোপন করি
জ্ঞানের গভীরে রাখি মধু ও মদের চক্রদোষ
চলো আজ পুরুষাঙ্গ হাতে নিই, নারীর শালীন  
শাড়ির আড়াল থেকে খুলে নিই তোমায় গোপন
তোমার গোপন গুহ্য-দ্বারে রাখি সকালবেলার
খবর-কাগজ, দুধ, ডিম, আর বাজারের থলে
চলো মন জল দাো বাগানের গাছে আর সরল আগাছা
তোমার দীঘল স্তন চুষে খাক সন্তানের মতো
চুষে খাক, শুষে নিক তোমার শরীর থেকে সঙ্গমের ক্ষুধা
ক্ষুধা এই সকালের রুটি আর আলুভাজা অমৃত অপার
অপার, অপার, আমি তোমায় কোথায় রাখি, কোন গর্ভাধারে ?
কোন ফুলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছ, কোন ঋতুরক্তমাখা
শরীর পেয়েছ তুমি, সুপুরির মতো, কোন দু’এক কুচিতে
আমাদের লিপ্সা, প্রেম, মৃত্যু আর ভয় লেগে আছে ?
ভয়ের শরীরে আমি লাথি মারি, সন্মোহন, আমাকে বাঁচাও
আণাকে বাঁচাও এই ষড়যন্ত্র থেকে এই অনন্ত হত্যার
নির্বিকার আয়োজন থেকে এই দু’দিন তিনদিনে
আমাকে সরিয়ে দাও ক্ষুধার যে-কোন প্রান্তে, যে-কোন মধুর
নিহিত চক্রের মধ্যে ছুঁড়ে দাো আমাদের স্বপ্ন, উন্মাদনা
আমাদের নষ্ট জন্ম . . .নষ্ট প্রেম . . .স্মৃতি ও সম্ভব . . .

.      
          ********************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তিন টুকরো
কবি মিতুল দত্ত

এক
বিশ্বাসের গায়ে একটা
শক্তপোক্ত ঢাকা দিয়ে দাও
যাতে না ছড়াতে পারে
যাতে আরো কিছুদিন বাঁচে।


দুই
আমি যার রেখা দেখে
কিছুটা এসেছি আজ
সে কি কোন বিন্দু দেখেছিল ?


তিন
তারপর গাছ তার বল্কল খসিয়ে
বললো জনৈককে প্রান্তরে বসিয়ে
“আমি একা বেঁচে আছি, বাকি সব পলাতক।
এই নে সবুজ দিন, আজ থেকে তুই যখ”॥

.          ********************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর